somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাবনাগুলো।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছোট বোন তখন আড়াই বছর। বাসার হাজীগঞ্জের গৃহ কর্ম সহকারীর বদোউলতে সে তখন আধো আধো বোলে কিন্ত নির্ভুল হাজীগঞ্জী ঊচ্চারণে গান গায়ঃ

"আঁই চলি জারগেই
আঁই চলি জারগেই
আঁর লাগুল হাইত্তেন নঁ।"

চিটাগাং এ আমাদের আনা ফ্রাংকীয় জীবনে ওর এই গান অতি অপ্রতুল ভাল লাগার একটি।

রাতে আমরা আগে আগে খেয়ে নিয়ে বাড়ির সব লাইট অফ করে দিয়ে, দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে বসতাম গোল হয়ে। কখনো আসতো কামালপুর যুদ্ধের বর্ণনা আবার কখনো ঢাকার ক্র্যাক প্লেটুনের অসম সাহসিক কান্ড কারখানার খবর। মা আমার প্রতিদিন এই সময়ে অঝোরে কাঁদতেন, আর দোয়া দরুদ পড়ে অনবরত অদৃশ্য এই বীরদের ফুঁ দিয়ে যেতেন যাতে করে সর্ব শক্তিমান সমতটের হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিরাপদে
রাখেন।

বিবিসির খবরের শেষে ছোট বোনকে ঘুম পাড়ানো একটা বিশাল যন্ত্রণার কাজ ছিল। সে ঘুমুবেনা এবং "পূর্ব দিগন্তে" গানটি শুনবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার সেই ফরমায়েস পৌঁছুনোর কোন বন্দোবস্ত ছিলনা। তাই ওই গানও বাজতো না এবং সে ধনুক ভাংগা পণ করে বসে থাকতো ওই গান না শুনে ঘুমুতে যাবে না।

এক সময় তার ঘুমোনোর ব্যবস্থা করা গেল।

আল বদর তখন একটা ত্রাসের নাম। আজ যেমন জয়নাল হাজারী, এরশাদ সিকদার বা শামীম ওসমানের নাম শুনলে বা মনে আসলে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার সাধারন লোকজনেরা আতংকে দিশাহারা হয়ে যায় বা যেত সে সময়ে চিটাগাং এর মানুষদের মনে "মীর কাসেম আলী" ও ছিল একটি ভয়াবহ আতংকের নাম।

দেওয়ান হাট হোটেলকে যে কুখ্যাতি দিয়েছিল জবাইখানা ও নির্যানত কেন্দ্রের, যার খুব কাছেই ছিল তখনকার বিখ্যাত গরুর মাংসের দোকান, নন্দন কাননকে যে নরকের ভাগাড়ে রূপান্তরিত করেছিল, চাকতাইকে লোকে যার জন্যে তখন মনে করতো মানুষের চামড়ার গুদাম নাম সেই লোকটিই মীর কাসেম আলী।

আড়াই বছরের ওইটুকুন মেয়েও বুঝতো মীর কাসেম রাতের অন্ধকারের ভুতের মতনই ভয়াবহ একটা কিছু। তাকে ঘুম পাড়ানো হ'ত "ঘুমাও তা না হ'লে মীর কাশেম আসবে"

_____________________________

মানুষের পরিচিতি কিভাবে বদলে যায়। কিছু রূপান্তরিত হয় নিজ কর্ম ফলে বাকী গুলো দল, গোষ্টি, ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার্থে।

আজ তাই একাত্তরের অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, যিনি ভারতীয় সাহায্য ছাড়াই বিপুল বিক্রমে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র জীবিত বীর উত্তম, কিংবদন্তির জাহাজ মারা হাবীবের যিনি পরিচালক ছিলেন, তিনি, হ্যাঁ তিনিই নব্বুইয়ের দশকের চাঁন্দাবাবা, অসংখ্য সেতু আর কাল্ভার্টের কাজ না করে ফেলে রেখে বিল তুলে নেওয়া ঠিকাদার, আজকের রাজাকার শিরোমনিদের দোসর। "

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চট্টগ্রামের মেয়র হয়ে বাংলাদেশের একাত্তরের বৃহত্তম বধ্যভূমি গুলোর অন্যতম, ফয়েজ লেইককে প্রমোদ বিতানে রূপান্তরিত করাকে বন্ধ না করে সেই ঘৃন্য প্রকল্পের অন্যতম পৃষ্টপোষক, চিটাগাং এর অগ্নি কন্যা যার জন্যে সমগ্র চিটাগাং এর মানুষ গর্ব করতে পারে, সেই প্রীতিলতার স্মৃতি বিজড়িত অপর্নাচরন স্কুল গ্রাসের প্রচেষ্টার অন্যতম খল নায়ক।

সিপাই জনতা ভাই ভাই সুবেদারের /হাবিলদারের ওপরে অফিসার নাই" স্লোগানের জনক,নির্বিচারে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মেরে ফেলার আদেশ দাতা আজ ক্রাচের কর্নেল, জাতীয় বীর।

চট্টগ্রামের কসাই এখন "সহজ-সরল ও সাদা-সিদে জীবনের অধিকারী মীর কাশেম আলী ভাই"।মানুষ
৫৭টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×