somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মান্ধ ও বাগ জনিত সমস্যা

২১ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ সময় চোখ বন্ধ করে ভাবতেছিলাম যেকোন ভালো অনূভুতির খারাপ দিক নিয়ে আর খারাপ অনূভুতির ভালো দিক নিয়ে। চোখ বন্ধ করে রাখার পিছনে কারণ হচ্ছে আমি সকাল থেকেই বুঝার চেষ্টা করছি জন্মান্ধ হওয়ার ভালো দিক গুলো ঠিক কি কি হতে পারে। জগতের সব কিছুই যদি অন্ধকার হতো তাহলে কেমন হতো আমার চারপাশ, চারপাশের মানুষগুলো, কেমন হতো তাদের সাথে আমার সম্পর্ক, বা কেমন হতো আমার দৈনন্দিন জীবন। বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে এটা উপলব্ধি করার মতো বিষয় না। উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে কমপক্ষে ১ সপ্তাহ অন্ধের মতো জীবন যাপন করতে হবে।

১০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে দুই জায়গায় ধাক্কা খেয়ে কোনমতে হাতরিয়ে বিছানায় আধাশোয়া হয়ে পাশের জানলাটা কিছুটা খুলে দিয়েছি। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। ইচ্ছা করছে চোখটা খুলে একবার দেখি। ইচ্ছা দমানোর জন্য অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করা উচিত, কিন্তু পারছি না।

২ বছর আগেও চাওয়া মাত্র যেকোনো বিষয় নিয়ে আকাশ কুসুম কল্পনা করতে পারতাম। স্কুলে থাকতে পেটকা শাহজাহান স্যার হয়তো বোর্ডে ম্যাথ করাচ্ছে, আমি কল্পনা করতাম শাহজাহান স্যার এক হাত মাথার পিছনে আরেক হাত তার ভূরি সংবলিত পেটের উপর রেখে 'আখিও সে গোলি মারো ' গানের তালে তালে নাচতেছে। আমি একগাল হেসে দিতাম দৃশ্যটা দেখার পর। শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলতো 'কিতারে পাগলা হাসস কিল্লাই? ' আমি ওর কথার জবাব না দিয়ে দেখতাম শাহজাহান স্যারের সাথে শুভ্ররও নাচা শুরু করছে। শুভ্রর পেটের চর্বি প্রতিটা স্টেপে থরথর. করে কেপে উঠছে ... আমার হাসি আরো দীর্ঘায়িত হতো ...

এখন আমার কল্পবিলাসী মন যথেষ্ট বুড়া হয়ে গেছে অথবা বলা যায় আমার কল্পনা শক্তি স্বাধীনতা হারিয়েছে। প্রোগ্রামিং এর ভাষায় বললে বলতে হবে কল্পনা শক্তিতে 'বাগ' দেখা দিয়েছে। আমি এখন যা কিছুই কল্পনা করিনা কেনো সেখানে কোনো রকম কারণ ছাড়াই তন্দ্রার উপস্থিতি অসস্তি নিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। আমি জানলাটা খুলে দিয়ে কল্পনা করার চেষ্টা করছি অন্ধদের অনূভুতি নিয়ে। কিচ্ছু দেখে না তারা, দেখেনা সূর্য, দেখে না তারা, এমনকি দেখতে পারেনা আয়নাতে নিজেকে। অসহায়ত্ব নিয়ে একটা সময় হয়তো মানিয়ে নেয় পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সাথে নিজেকে বা নিজের সাথে পরিবেশ এবং পরিস্থিতিকে। চেষ্টা করছি নিজেকে অন্ধ ব্যাক্তি হিসাবে হালকা ঘাড় বা নিকাষ কুচকুচে অন্ধকারে শব্দ শুনে চলতে থাকার অভিজ্ঞতার কথা। কিন্তু আমার মাথায় ভেসে আসছে সেদিনের কথা যেদিন কিনা আমি চোখ বন্ধ করে চোখে সানগ্লাস পরে তন্দ্রার সাথে কুমিল্লার রাস্তায় হাটছিলাম। তন্দ্রার বিশাল বড় কাঁধের ব্যাগের কোনা ধরে রেখেছিলাম ডান হাত দিয়ে, তন্দ্রা হাঁটছিল সোজা, আমি হাটছিলাম তাঁর পিছু পিছু। তন্দ্রা হাটতে হাটতেই আমাকে বলতেছে,

- বাবু তোরে তো সবাই অন্ধ মনে করতেছে।
- আমি তো অন্ধই, না হয় তোর মতো ভোটকুর সাথে প্রেম করতাম নাকি!
- একটা থাপ্পড় দিবো।
- অন্ধ মানুষকে থাপ্পড় দিলে তোর ভগবানও তোকে মাফ...

কথা শেষ করার আগে মুখের মধ্যে একগাঁদা পানির ছিটা অনুভাব করলাম। বুঝলাম থুতু মারছে আমার মুখে। চোখ বন্ধ থাকার কারণে আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে পারিনাই।

...বাম হাত দিয়ে মুখের মধ্যে বৃষ্টির ছিটায় আসতে থাকা পানিগুলো মুছার চেষ্টা করছি...কম্পিউটারের মতো একটা এন্টিভাইরাস মাথায় ইন্সটল করতে পারলে ভালো হতো। অবশ্য এন্টিভাইরাস দূর করে স্প্যাম বা ভাইরাসজনিত প্রোগ্রাম। উইন্ডোজের কোনো প্রোগ্রামারে মধ্যেকার একটা দুইটা স্ক্রিপ্ট ধরতে পারার ক্ষমতা এন্টিভাইরাসের নাই। তাই এর পার্মানেন্ট সলিউশন হচ্ছে নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা। একেবারে হার্ডডিস্ক ফরম্যাট দিয়ে বুট থেকে ইন্সটল করা।

...চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারছি ব্লেডের সার্পনেস...অন্ধরা মনে হয় একমাত্র এই জিনিসটা খুব ভালো ধরতে পারে, কোনো বস্তুর বাহ্যিক সার্পনেস

ত্রিভকাল.কম
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×