মুভি রিভিউঃ NOBODY KNOWS
মূল লেখা (ভিডিও ও ইমেইজ সহকারে): ত্রিভকাল.কম
আমি জাপানিজ ভাষা বুঝি না, কিন্তু প্রায়শই একটা গান শুনি... প্রথম শুনেছিলাম জাপানিজ মুভি Nobody Knows দেখার সময়। ১৯৮৮ সালের "Affair of the four abandoned children of Sugamo" ঘটনাকে উপজীব্য করে মুভিটির প্লট সাজানো হয়েছে। মুভিটির কাহিনী শুরু হয় ৪ জন ভাই বোনকে নিয়ে যারা কিনা একই মায়ের সন্তান হলেও তাদের বাবাদের সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না, জারজ সন্তান বলতে পারেন তাদেরকে। তাই তাদের মা তাদের ১২ বছরের ছেলেকে ভাই পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন বাসায় ভাড়া থাকতো, আর বাকি ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে আসতো বড় লাগেজে করে। বাহিরের কেউই যেন জানতে না পারে তাদের সম্পর্কে তাই তাদের বাহিরে যাওয়া নিষেধ ছিল, এমনকি বারান্দাতেও না। ৪ ছেলে মেয়ে সারাদিন অপেক্ষা করতো মায়ের জন্য। মা রাতের বেলা তাদের জন্য খাবার দাবাড় নিয়ে আসতো। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার। বন্দি জীবন হলেও তাদের মধ্যে সুখের কমতি দেখা যেত না বা ছোট ছেলে মেয়েগুলো বুঝতে পারবো না আসলে কষ্ট কি জিনিস। মাঝে মাঝে তাদের মা চলে যেত কয়েকদিনের জন্য, তখন গুরু দ্বায়িত্ব এসে পরতো ১২ বছরের আকিরার উপর। আকিরাই বাজার সদাই থেকে শুরু করে সব কিছু করতো মায়ের আসার আগ পর্যন্ত। একদিন তাদের মা আর আসলো না। আকিরাকে ফোন করে জানিয়ে দিল সে অন্য একজনকে বিয়ে করে ফেলেছে, আর আসবে না। ১২ বছরের আকিরা তাঁর ছোট ভাই বোনকে তা বুঝতে দিল না। আকিরা তার প্রোবাবেল বাবার কাছে যেয়ে অল্প স্বল্প টাকা নিয়ে এসে চালাতে থাকলো তাদের সংসার...
তাদের একেবারে পিচ্চি যেই বোন ছিল ৫ বছরের সে প্রায়শই বায়না ধরতো বিমান দেখার। আকিরাও বলতো একদিন দেখিয়ে আনবে তাকে... তার জন্মদিনে...। কিন্তু যেখানে টাকার অভাবে সংসার চলাই মুশকিল, আর ঘর থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা সেখানে বিমান দেখানোর বিষয়টা বলা হতো বুঝ দেওয়ার জন্যই... ৫ বছরের ছোট ইউকি তাতেই খুশি থাকতো। তাঁরা বন্দি জীবনের মধ্যেও সুখে ছিল বেশ। এরমধ্যে আকিরার দুইজন স্থানীয় সমবয়সী ছেলেদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে যাদের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটতে থাকে তার ভিডিও গেমস খেলে। জাপানিজ মুভিআস্তে আস্তে ভাইবোনদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে সে। একদিন তাদের বন্ধুরা তাকে দোকান থেকে গেমস এর ক্যাসেট চুরি করতে বললে আকিরা তাতে অস্বকৃতি জানায়, যার কারণে তাঁরা তাকে গালমন্দ করে চলে যায়। আকিরাও তার ভাইবোনদের নতুন করে সময় দিতে শুরু করে। কিন্তু ইউটিলিটিস বিল দিতে না পারায় তাদের বাসার কারেন্ট, গ্যাস আর পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়... আকিরা উপান্তু না দেখে তাদের ভাইবোনদের বাহিরের জগতে আস্তে আস্তে নিয়ে আসে। তাঁরা পার্কের পানিতে গোসল করে, কম দামি বড় খাবার কিনে ভাগ করে খায় আবার দিনশেষে বাড়ি চলে যায়... এভাবে একদিন তাদের সাথে পরিচয় হয় 'সাকি' নামের এক মেয়ের, সখ্যতা গড়ে উঠে তাদের সাথে। (স্পয়লার এলার্ট) তাদের অবস্থা দেখে সাকি আকিরাকে কিছু টাকা অফার করে যা কিনা সে উপার্জন করেছিল একজনের কাছে দেহ সঁপে দিয়ে। আকিরা তা নিতে অস্বীকার করে।
(স্পয়লার এলার্ট) এভাবেই কষ্টের আর অভাবের মধ্যে চলছিল তাদের সংসার। একদিন তাদের ছোট বোনটি ফ্রিজের উপরে খাবার আছে কিনা দেখার জন্য টুলের উপর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে তা উল্টিয়ে পরে মাথায় বেকায়দায় আঘাত পেয়ে মারা যায়। আকিরা সাকির কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে আসে। প্রচুর চকলেট আর ক্যান্ডিস কিনে ঠিক সেই লাগেজে বোনের নিষ্প্রাণ দেহের পাশে রেখে দেয় যেটা দিয়ে কিনা তাদের বোনটিকে নিয়ে এসেছিল তাঁরা। লাগেজে করেই আকিরা আর সাকি নিয়ে যায় এয়ারপোর্টের পরিত্যাক্ত জায়গায়।... সেখানে তার কবর দিয়ে আসে... গানটি ঠিক সেই সময় শুরু হয়...
বিদ্রঃ গানের লিঙ্কটি মূল লেখার সাথে দেওয়া আছে বা এখানে ক্লিক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:০৭