somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি দারুন দেখতে (মুভি রিভিউ, যা দেখলাম)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম শো শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষন আগেই হলে চলে গিয়েছিলাম। শীতের দিনে প্রথম শো তে তেমন একটা দর্শক হয়না। প্রায় ফাঁকা হলেই দেখতে ঢুকে গেলাম সিনেমা "কি দারুন দেখতে" ।
আব্দুল্লাহ জহির বাবুর চিত্রনাট্য এবং ওয়াজেদ আলী সুমনের পরিচালনায় বাপ্পী ও মাহী অভিনীত ছবি "কি দারুন দেখতে"

কাহিনী সংক্ষেপ: [স্পয়লার এলার্ট]
ঢাকায় এসেই দাদা মারা যায় ছোট ছেলে আপনের। ফলে তার আশ্রয় হয় পেশাদার এক বাটপারের ঘরে। বাটপার দম্পতি নি:সন্তান হওয়ায় আপন কে তাদের নিজের সন্তানের মত লালন পালন করে। আপনও তাদের বাবা মা বলেই ডাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে এই আপনই বড় হয়ে আমাদের নায়ক বাপ্পী তে পরিণত হয়। বাপ্পীর বাটপার বাবা বাপ্পীকে বাটপারি করে এক নামকরা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।

কলেজের দুই ছাত্র গ্রুপের নেতা সাগর এবং আগুন। নির্বাচনে আগুন কে প্রতিহত করার জন্য সাগর কলেজে অস্ত্রের মহড়া দেয়। এখানে বলে রাখা ভালো সাগরের "লুক" টা ভিলেন শব্দের সাথে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে যায়। কিন্তু তার আঞ্চলিক টানে শুদ্ধ ভাষা টা একটু বেমানানই লাগছিল। সাগর যতই অস্ত্রের মহড়া দিক আগুনের কাছে সে পরাস্ত হয় এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এই আগুনই সিনেমার অন্যতম মূখ্য চরিত্র।

সিনেমায় মাহী কে দেখা যায় তার চেহারা নিয়ে সে বড়ই ঝামেলার মাঝে আছে। সুন্দরী হওয়ায় দলে দলে ছেলেরা তার পিছু নেয়। ছেলেদের উতপাত থেকে বাচতে সে সারা গায়ে কালি মেখে কালো মেয়ের রুপ ধারন করে। তার কালো চেহারা নিয়ে বেশ কমেডী লক্ষ্য করা যায়।

এদিকে বাপ্পীর মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিতসার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে ৩০লক্ষ টাকা লাগবে। কিন্তু টাকা জোগাড়ের কোনো পথ না পেয়ে বাপ্পীও বাটপারি করে টাকা জোগাড়ের সিদ্ধান্ত নেয়। বড়লোকের মেয়েদের সাথে প্রেম করে তাদের বাবার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্ল্যান করে। বাপ্পীর এক সাথে তিন চারটা মেয়ের সাথে প্রেম করা মাহীও লক্ষ্য করে। ইতোমধ্যে বাপ্পী প্রথম মেয়ের বাবার কাছ থেকে ১০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে দ্বিতীয় মেয়ের বাবার কাছ থেকে টাকা হাতানোর সময়। বাপ্পীর অতিমাত্রায় ইমোশনাল সংলাপে মেয়ের বাবাই ইমোশনাল হয়ে পড়ে এবং বাপ্পীর সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে চায়। অবস্থা বেগতিক দেখে বাপ্পী এবং বাপ্পীর বাবা সেখান থেকে কেটে পড়ে। পুরো বিষয় টা কালো মেয়ে মাহী লক্ষ্য করে। মাহী বাপ্পীদের কাছে টাকার ভাগ চায়। পুলিশের ভয় দেখানো তে মাহী কে বাপ্পীরা তাদের পার্টনার করে নেয়।

এবার মাহীই বাটপারি করার জন্য মক্কেল জোগাড় করে। দুদকের কর্মকর্তা সেজে তারা কলেজের প্রিন্সিপালের বাসায় হানা দেয় এবং ২৫লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এদিকে মাহীকে কালো মেকআপ ছাড়া অবস্থায় দেখে বাপ্পী মাহীর প্রেমে পড়ে যায় এবং মাহীর পিছনে ঘুরতে থাকে। কিন্তু মাহী চিট বাটপার বাপ্পী কে পাত্তা দেয় না। সে ভাবে মাহীকেও সে ধোকা দেবে ।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সাগর আগুনের উপর হামলা করে। মাহীই আগুন কে গুলির হাত থেকে বাচায়। আগুনও মাহী কে দেখে মাহীর প্রেমে পড়ে যায়। সে মাহী কে তার ভালোবাসার কথা বলে। মাহী কাটা দিয়ে কাটা তোলার জন্য আগুন কে বলে সে বাপ্পী কে ভালোবাসে। একথা শোনা মাত্রই আগুন বাপ্পীর কাছে গিয়ে মাহীকে ভিক্ষা চায়। এ কথাও বাপ্পী কে মনে করিয়ে দেয় "তোর তো অনেক মেয়েই আছে। মাহীকে ছেড়ে দে" । বাপ্পী এতে রাজী না হওয়ায় বাপ্পীর সাথে আগুনের মারামারি হয়। বাগানের বাঁশের বেড়ার সাথে বাপ্পীর চোখে আঘাত লাগে। এসময় আগুন লক্ষ্য করে বাপ্পীর গলায় একটা লকেট। যেই লকেট টা সে ছোটবেলায় তার বন্ধুকে দিয়েছিল আগুনের জীবন বাচানোর জন্য। আগুন বুঝতে পারে বাপ্পীই তার ছোটবেলার বন্ধু। এবার সে নিজেই মরিয়া হয়ে যায় বাপ্পীকে বাচানোর জন্য। সিনেমার এখানে এসে কাহিনী বেশ জমে ওঠে।

হাসপাতালে চিকিতসাকালীন অবস্থায় মাহী বাপ্পীকে ভালোবেসে ফেলে। পুলিশ কেস নিতে হাসপাতালে আসলেও বাপ্পী কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেনা। এতে আগুন রেগে যায়। সে হাসপাতালে এসে বাপ্পীর মুখে বালিশ চেপে ধরে পরে বাপ্পীকে পানি খাওয়ায়। তার আক্রোশ কেন বাপ্পী তার নামে অভিযোগ করেনি । এদিকে আগুনের ভাই মিশা সওদাগর এবং মাহীর ভাই ওমর সানী মাহী এবং আগুনের বিয়ে ঠিক করে। আগুন যদিও মাহীকে ভালোবাসে তবুও সে বিয়েতে রাজী হয়না বন্ধুর ভালোবাসার জন্য। মিশা হাসপাতালে গুন্ডা পাঠায় বাপ্পীকে মেরে ফেলার জন্য, কিন্তু এখানেও আগুন এসে বাপ্পী এবং মাহী কে বাচায়।

সিনেমার শেষ দিকে ওমর সানী ভাড়া করা গুন্ডা নিয়ে যায় তার বোন কে উদ্ধার করার জন্য এবং বাপ্পী কে মারার জন্য। বাপ্পী অন্ধ অবস্থাতেই মারামারি করে। আগুন এসে বাপ্পীকে সহযোগীতা করে। এক পর্যায়ে বাপ্পীকে বাচাতে গিয়ে আগুন গুলিবিদ্ধ হয়। সে তার চোখ দুটো বাপ্পী কে দিয়ে যায়। আগুনের চোখে দেখতে পায় বাপ্পী মাহীকে। বন্ধুর চোখে দেখতে পায় বাপ্পী দুনিয়া।

সিনেমাটিতে প্রেম ভালোবাসার পাশাপাশি বন্ধুর প্রতি ত্যাগ ভালোবাসা বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।

যা ভালো লেগেছে:
সিনেমাটার কাহিনী অন্যান্য সিনেমা থেকে একটু আলাদাই লেগেছে। দেখার সময় বিরক্তি লাগেনি। পুরো সিনেমায় আগুনের সংলাপ এবং নতুন হিসেবে অভিনয় ছিল অনবদ্য। এক কথায় আগুনের উপস্থিতি সিনেমাটাকে উপভোগ্য করে তুলেছে। বাপ্পীর কাছে মাহীকে চাইতে আসা, হাসপাতালে বাপ্পীর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরার পর পানি খাওয়ানো, নিজের ভাইয়ের গুন্ডাদের হাত থেকে বাপ্পী মাহীকে বাচানোর অভিনয় টুকু বেশ দারুন ছিল। ক্যামেরার কাজ ভালো ছিল। কমেডী দৃশ্য গুলোও বেশ মজার ছিল। একশন দৃশ্য গুলো তে অহেতুক ওড়াউড়ির চেষ্টা করা হয়নি এবং কেবল কিংবা ওয়্যার দেখা যায়নি। কালার ঠিকঠাকই লেগেছে।

যা ভালো লাগেনি:
সিনেমার নামটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। ব্যক্তিগতভাবে সিনেমার গানগুলো আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি। তিনা, মিনা, শিলার সাথে প্রেম করে ধোকা দেয়ার পরও বেশ কয়েক বার বাপ্পীদের সাথে তাদের স্বাভাবিক ভাবে দেখা গেছে, যেন তাদের সাথে বাপ্পীর প্রেমই হয় নি। মাহী কে প্রথমে দেখা যায় কালো মেয়ে হিসেবে কলেজে আসতে। পরবর্তীতে সে স্বাভাবিক ভাবেই আসে। কিন্তু হুট করে একটা মেয়ে উধাও এবং আরেকটা মেয়ের আবির্ভাব দর্শকদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। বেশ কিছু জায়গায় মাহীকে কুচকুচে কালো দেখা গেছে আবার কিছু জায়গায় মাহীকে স্বাভাবিক কালো দেখা গেছে। সহশিল্পীদের অভিনয় ও সংলাপ জোরালো ছিল না। এটা বাংলাদেশের সিনেমার চিরায়ত সমস্যা। আরেকটা সমস্যা হল উতসুক জনতা নিয়ন্ত্রন করতে না পারা। হাসপাতালে যখন গুন্ডারা বাপ্পীকে মারার জন্য অস্ত্র নিয়ে আসে তখন ডাক্তার কিংবা নার্সদের আতঙ্ক হওয়ার মত কোনো দৃশ্য দেখা যায় নি। উচিত ছিল তাদের কিঞ্চিত আতঙ্ক হওয়ার দৃশ্য ধারন করা।
শেষ দৃশ্যে যখন আগুন গুলিবিদ্ধ হয় তখন সবাই তার সংলাপ শুনছিল এবং চিতকার করে কাদছিল। এবং সেখানেই আগুন মারা যায়। অথচ সেখানে বেশ কয়েকটি মাইক্রো ছিল। চাইলেই মাইক্রোর ভিতর তার মারা যাওয়ার দৃশ্য ধারন করা যেত। তার সংলাপও দেয়া হত, তাকে বাচানোর চেষ্টাও করা হত।

সিনেমা-কি দারুন দেখতে
কাহিনী-ওয়াজেদ আলী সুমন
চিত্রনাট্য ও - আবদুল্লাহ জহির বাবু
অভিনয়ে- বাপ্পী, মাহী, মিশা সওদাগর, ওমর সানী, শাহরিয়াজ, ডা: এজাজ প্রমুখ।
সঙ্গীত পরিচালক- আহমেদ হুমায়ূন
গীতিকার- সুদীপ কুমার দীপ
মুক্তি- ৩১জানুয়ারী ২০১৪

মন্তব্য: সব দিক বিচারে বলা যায় সিনেমা টা বেশ ভালো। দর্শক দেখলে হতাশ হবে না। বিনোদনের উদ্দেশ্যে দেখলে অবশ্যই বিনোদন পাওয়া যাবে। সবাইকে সুযোগ পেলে সিনেমাটা দেখার জন্য আমন্ত্রন জানাচ্ছি। :-) আশা করি ভবিষ্যতে আরো ভালো সিনেমা দেখা যাবে
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
১৩টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×