somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেদিন বৃষ্টি ছিল | ভৌতিক নয়, কৌতুক সিনেমা | মুভি রিভিউ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[স্পয়লার এলার্ট]

ইদানিং বাংলাদেশের কিছু কিছু সিনেমার পোস্টারে "ডিজিটাল সিনেমা" "রেড ক্যামেরায় নির্মিত সিনেমা" "প্রথম অমুক সিনেমা" "ব্যয়বহুল সিনেমা" ইত্যাদী কথাবার্তা বিশেষ ভাবে লেখা থাকে। যখনই এসব লেখা চোখে পড়ে তখনই বুঝে নিতে হবে ঘাপলা আছে। হলে নতুন সিনেমা আসছে "সেদিন বৃষ্টি ছিল"। এটার পোস্টারে আবার বিশেষ ভাবে লেখা আছে "দেশের প্রথম ডিজিটাল ভূতের সিনেমা"। আমি ভাবছিলাম ডিজিটাল ভূত হয়তো কোনো প্রোডাকশন হাউজের নাম। পোস্টারের আরেকটা বিশেষত্ব হল বিশাল একটা কঙ্কাল টাইপ মাথা বসায়া ভৌতিক ব্যপার স্যপার ফুটায়া তোলা হইছে।

ভৌতিক ব্যপার স্যপার টা কেমন তা দেখতে চলে এলাম সিনেমা হলে। সিটে বসার পর পাশের জন বলল, "ভাই পোস্টারের ভূত দেইখাই সিনেমা দেখতে চইলা আইছি"। তারে কইলাম, "ভূত তো যে সে দেখতে পারে না, আপনার চোখে নাও পড়তে পারে" ওমনি "ক্য্য্য্য্য্য্যা" করে একটা সাউন্ড হওয়ায় পাশের জন নেচে উঠলো। আহ সাউন্ডেই বুঝা গেল আইজ সেই লেভেলের ভৌতিক সিনেমা উপভোগ করতে যাইতেছি। সিনেমার দুই তিন মিনিটের মাথায় শুরু হইলো মাইর পিট। বহুদিন পর বাংলা সিনেমার মাইর পিটে ঢোল তবলার বাড়ি শুনলাম। সিনেমা ডিজিটাল হইলেও অতীত ভুলেনাই।

সিনেমার প্রযোজক, গল্পকার এবং নায়িকা হওয়ার সুবাদে রত্নার কিঞ্চিৎ মেদ যুক্ত শরীর দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারন দর্শক জানে তারা ভূতের সিনেমা দেখতে এসেছে ;-) । ভূতের সিনেমায় মুখ নড়বে সাউন্ড হবেনা আবার সাউন্ড হবে মুখ নড়বে না এই বিষয়টাকে স্বাভাবিক ধরে ডাবিং এর ত্রুটিটাকে হজম করে নিলাম। নায়িকা একজন ছাগল প্রেমী। নায়কের সাথে পরিচয়ও এই ছাগল কেন্দ্রীক। নায়কের কোটি টাকার গাড়ির মাঝেই নায়িকার ছাগল দুইটা নাদুস নুদুস ছাগলের বাচ্চা প্রসব করলো কোনো রকম ম্যা ম্যা ডাক ছাড়াই।

নায়িকার সাথে নায়কের বিয়ে হওয়ার পর তারা তাদের পুরাতন জমিদার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সিনেমার অনেক খানি হয়ে গেছে, আমাদের চোখও ভূত দেখার জন্য নিশপিশ করছিল। যাক এবার বুঝি সুযোগ পাওয়া গেল। জমিদার বাড়িতে আইসা কাউয়া দেখলাম বিলাই দেখলাম কিন্তু ভূতের দেখা এখনো পাইলাম না। হঠাত হঠাত জমিদার বাড়ির একটা স্টিল ছবি দিয়া আর জোরে "ক্য্য্য্য্যা" কইরা একটা সাউন্ড দিয়া পরিচালক মনে করাইয়া দিতেছিল "ভয় নাই এইটা ভূতের ছবি"। এইভাবেই শেষ হল ভূত বিহীন ভৌতিক প্রথম পর্ব।

বিরতির পর সাদা শার্ট আর পায়জামা পরা নরম চেহারার এক সুদর্শন যুবক এসে ধরলো দু:খের গান, শিল্পী মনির খান। সাদা পোশাক দেখে ধরে নিলাম এইটাই মেবি ভূত। নায়িকা একবার ছাদে কাপড় চোপড় তুলতে গিয়ে এই নিরীহ চেহারার ভূত টাকে দেখে ভয়ে চিল্লায়ে কান ঝালাপালা করে ফেলল। এত জোরে চিল্লানি দিছে যে ভূত ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আর পরিচালক তো মাঝে মাঝেই জমিদার বাড়ির স্টিল ছবি আর ক্যা কু চিৎকুর থেরাপী দিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিল এটা ভৌতিক ছবি।

নায়িকার উপর যেহেতু ভূতের আছড় হয়েছে তাই ওঝার ব্যবস্থা করা হল। ওঝা আসার আগেই নায়িকার মাঝে ভূত ভর করে নায়কের গলা টিপে উচু করে ধরলো। গলা টিপে উচু করে ধরা যেন তেন নায়ক পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকলো। যেই কেবল দিয়ে নায়ক কে ঝোলানো হয়েছিল সেটা মুছতে গিয়ে নায়কের শার্টের কলারও খেয়ে ফেলছে এডিটর সাহেব। ওঝা এসে অবশেষে ভূত কে শান্ত করলো। কিন্তু এই ব্যাটা খালি "লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোলেমিন" এই এক দোয়া পড়ে "পুফ" শব্দ করে ফুঁ দিয়ে তার ওঝাগিরির কারিশমা দেখাতে লাগলেন। নায়িকা রত্না কোথায় গেল তা জানা যায়নি তবে ওঝার কারিশমায় বিছানায় ভূত কে শুয়ে থাকতে দেখা গেল।

সুদর্শন ভূত এবার ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে তার ভূত হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করতে লাগলো। মানতেই হবে ভূতের ব্রেইন যথেষ্ঠ শার্প। এই ভূত হল সিনেমার আরেক নায়ক যার নাম বিশাল। ফ্ল্যাশব্যাকের কাহিনীতে দেখা গেল বিশাল কলেজের পরীক্ষা পেছানোর জন্য পিঠে ছুরি খেয়ে পরীক্ষার হলে পড়ে আছে। আর বিশালের বন্ধুরা পুলিশ সেজে এসে প্রিন্সিপালকে ভয় দেখাচ্ছে। এই পুলিশ গুলার কারো প্যান্টের চেইন খোলা, কারো মুখে এক খাবলা আলগা দাড়ি, কারো দৈত্যের শিং এর মতো নাকের দুই পাশ দিয়ে গোঁফ, কেউ আবার এক পায়ে স্যান্ডেল এক পায়ে জুতা, কেউ আবার পাঞ্জাবীর উপর পুলিশের পোশাক পরে চলে এসেছে। সম্ভবত স্কুলের কোনো নাটকে পারফর্ম করতে যাচ্ছিল তাদের ধরে আনা হয়েছে।

বিশাল ভূত হয় এই জমিদার বাড়িতে পিকনিক করতে এসেই। বৃষ্টিভেজা রাতে জমিদার বাড়ির ছাদে বিশাল নায়িকাকে ভালো বাসার কথা বলবে। অতি উত্তেজনায় সে আই লাভ ইউ বলতে গিয়ে পিছলা খেয়ে ছাদ থেকে পড়ে গেল। এই মর্মান্তিক ঘটনা দেখেও দর্শক হো হো করে হেসে দিলো। এই কারনেই ভূতের রাগ বেশি। এদিকে বিশাল মরে ভূত হওয়ার পর গাড়ি এক্সিডেন্টে নায়িকার মেমোরির কিছু কিছু ফাইল ডিলেট হয়ে গেল যার ভিতর বিশাল ফাইলও ছিল। ভাগ্যিস পুরা ফর্মেট হয়নাই।

ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বাস্তবে ফিরে আসার পর দেখা গেল নায়িকা ছাদে হাটাহাটি করছে। সেই সময় বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টিতে ভিজেই নায়িকার অতীতের কথা বিশালের কথা মনে পড়ে গেল। আগে দেখতাম স্মৃতি হারায় বাড়ি খাইয়া আবার স্মৃতি ফিরেও বাড়ি খাইয়া, আর এখন দেখতেছি বৃষ্টির ফোটাতেই স্মৃতি ফিরে আসে। ভূত তাড়ানোর জন্য ওঝা একটা তাবিজ দিয়েছিল। কিন্তু নায়িকা স্বপ্নেই সেই তাবিজ খুলে ফেলল। আর যায় কই, তাবিজ নাই, ভূত কি এখন তোমারে ছাড়বো চান্দু? ভূত ছাড়েনাই, নায়িকারে উপরে তুলতেই আছে তুলতেই আছে। কাহিনী হইলো নায়িকারে শূন্যে ভাসালো ঠিক আছে, কিন্তু যেই কেবল দিয়া উঠাইলো সেই কেবল মুছতে গিয়ে পিঠে উপর থেকে বাকি অংশের বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা বানিয়ে ফেলল। আরে বাপ, শূন্যে ভাসানোর দৃশ্য যদি চিত্রায়নই না করতে পারিস তবে কি দরকার সেই দৃশ্য রাখার?

তবে শেষ দৃশ্যে ভাললাগছে ভূতের সাথে নায়কের মারামারি, এক বার ভূত নায়করে মাইরা কাইত কইরা ফালায় আরেকবার নায়ক ভূতরে মাইরা উল্টায়া ফালায়। ভূতের লগে কিল ঘুসি লাত্থি গুতা চলতেই থাকে। শেষমেশ নায়িকা ভূতের পা চেপে ধরে অনুরোধ করে নায়ক কে ছেড়ে দিতে। এই ভূত নামেই ভূত। সে বৃষ্টির পানিতে ভিজে, মানুষের সাথে মারামারি করে, চেহারাতেও ভৌতিকতা নেই, আবার মন টাও নরম। নায়িকার অনুরোধেই সে নায়ক কে ছেড়ে দিল। বিটিভিতে আগে শক্তিমান নামে একটা সিরিয়াল হইতো। ভূত সেই সিরিয়ালের শক্তিমানের মত ঘুরান্টি দিয়া শূন্যে ভেসে বিদায় নিল। এই সিনেমার একেকটা শূন্যে ভাসার দৃশ্য মাস্টার পিস। যেই শূন্যে ভাসে, তারই পিঠের উপরে পিরামিড, পিরামিডের উপরের রশি মোছার বৃথা চেষ্টা, আর যে ঝোলে তার পুরো শরিরের অবস্থা দেখে মোটেও এইটারে ভৌতিক ব্যপার মনে হয়না।

আসছিলাম ভৌতিক সিনেমা দেখতে, কিন্তু সিনেমার একেকটা দৃশ্য দেখে মনে হয় কৌতুক সিনেমা। পাশের জন একটা কঙ্কালের মাথা দেইখা চইলা আইছিল। আহারে বেচারা :-/
কঙ্কালের চুল টাও দেখতে পেল না। পুরা সিনেমায় ডাবিং এর যথেষ্ঠ সমস্যা ছিল। অভিনয় বিরক্তিকর। আড়াই ঘন্টার সিনেমায় ভূতের উপস্থিতি ১৫মিনিটের বেশি না, কিন্তু তাকেও আমাদের ভূত বলে ধরে নিতে হবে, এমনিতে দেখে বোঝা যাবে না। ভৌতিক সিনেমা হলেও ভয়ঙ্কর কিছু নেই। আর ঝোলাঝুলির দৃশ্যগুলা ছিল হাস্যকর। আমার কাছে এইটারে ভৌতিক সিনেমা মনে হয়নাই, কৌতুক সিনেমা মনে হইছে।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×