somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ যে থাকে অস্তিত্বে!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি ঈপ্সিতা! এক সময় খুব চঞ্চল মেয়ে থাকলেও কি করে যেন একাকীত্বের সমুদ্রে ডুবে গেছি। যেই আমি এক সময় কোলাহল ছাড়া থাকতেই পারতাম না সেই আমি একাকী নৈঃশব্দে আসক্ত হয়ে গেছি! নিজেকে একাকীত্বের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়ে আমার একাকীত্বের জগতে মদির হয়ে থাকি!
এ জগতটা একান্তই আমার। এখানে আমি কাউকে আসতে দেইনি। এমন কি আমার স্বামী রিহানকেও না! একদিন MIND VIEWER যন্ত্রটি নিয়ে খেলার ছলে ও আমার মনের জগতে ঢুকে পড়েছিল। এসে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর শুরু করল তার মান্ধাত্বী আমলের সেই রেডিও বাজানো। অনবরত বক বক করে বলল,'' জান, বলো, তুমি আমাকে ভালোবাসো! বলো ভালোবাসো। বলো না! প্লিজ বলো। বলবা না?'' একেবারে শিশুদের খেলনা কিনে দেবার মত বায়না!

রিহানের এই স্বভাবটা আমি একদম পছন্দ করি না। ভালোবাসা কি এভাবে মুখের বলায় হয়ে যায়? ভালোবাসা হল বুঝে নেবার ব্যাপার। একজনের আরেকজনের হৃদয় পড়ে তাতে অবগাহনের ব্যাপার।

কিন্তু কে বোঝাবে রিহানকে এই কথা? তার কাছে সকাল সন্ধ্যা ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে চিৎকার করা মানেই ভালোবাসা! বেশি ভাবতে রিহান পছন্দ করে না। ও বিজ্ঞানী ধরণের মানুষ। অংকের খাতায় একশোতে একশো হলেও হৃদয়ের খাতায় ওর মার্ক্স জিরো! ওর মত সহজ সরল মানুষ হয়ত খুব কমই হয়। তাই আমার মত মেয়েকে সে বুঝতে পারেনি। আর এতে আমি খুশি। আমার ভালো লাগে না কেউ
আমাকে বুঝুক। আমার হৃদয় পড়ুক! এতে আমার নৈঃশব্দ নষ্ট হয়। আর তাছাড়া আমার হৃদয় পড়লে রিহান কষ্ট পাবে! কারণ আমি তাকে ভালোবাসি না!

ওহ বলছিলাম MIND VIEWER এর কথা। এটা রিহানের আবিস্কার! এটি TEAM VIEWER এর মত একটি সফটওয়্যার। TEAM VIEWER দিয়ে একজন আরেকজনের কম্পিউটার প্রবেশ করতে পারে। আর MIND VIEWER দিয়ে পারে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে! প্রসেস একই। শুধু একটা সফটওয়্যার
থাকতে হবে। তারপর TEAM VIEWERদিয়ে যেমন অন্যের মনিটরে ওঠা পাসওয়ার্ড নিয়ে তার কম্পিউটারে প্রবেশ করা যায় MIND VIEWER দিয়েও তাই। অন্যের মনের মাঝে যে পাসওয়ার্ড দেখাবে সেটা সে বললেই কেবল তার মনে প্রবেশ করা যাবে। সে পাসওয়ার্ড না জানালে কিছুতেই প্রবেশ করা যাবে না!

বিজ্ঞানরা এখনো জোর করে মানুষের মন পঠনের মত কোন যন্ত্র আবিস্কার
করতে পারেনি। কোন দিন পারবেও না বলে আমার ধারণা। এটা দিয়ে মাঝে মাঝেই আমি রিহানের মনে প্রবেশ করি। অবশ্য স্বেচ্ছায় নয়! কারো মনে ঢোকা আমার
ভালো লাগে না। কারণ বিনিময়ে যদি সে আমার মনে ঢুকতে চায়! আমি রিহানকে খুশি করতেই আমার ওর মনে প্রবেশ করি। রিহান আমাকে দেখাতে চায় কি করে ওর মস্তিষ্ক জুড়ে আমি স্থান করে নিয়েছি! সে আমাকে কত ভালোবাসে তা প্রুভ করতে চায়।

আমি MIND VIEWER দিয়ে রিহানের মনের সাথে কানেক্ট করলাম। প্রসেসটা খুব সহজ। দুজন দুটি ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকবো। তারপর হেডফোনের সাহায্যে একজন আরেকজনের মনে তলিয়ে যাবো। মন দেখার জন্য একটা বিশেষ ধরণের চশমাও আছে। ওটা চোখে পড়লে বাহিরে জগত অন্ধকার হয়ে যায়। শুধু দৃশ্যমান হয় মনের জগত! বিশেষ হেডফোন দিয়ে শোনা যায় হৃদয়ের সব অব্যক্ত কথাগুলো! আমি রিহানের কাছ থেকে ওর পাসওয়ার্ড জেনেনিলাম। ওর পাসওয়ার্ড হল ''ISHU'', আমার নাম ঈপ্সিতাকে ও সংক্ষেপে ঈসু করে নিয়েছে। এই নামেই সব সময় ডাকে।
আমি ওর central nervous system এ প্রবেশ করলাম। তারপর গেলাম BRAIN এ। তারপর সোজা গেলাম রিহানের Limbic system এর দিকে। মস্তিষ্কের এই অংশই আমাদের ভালোবাসতে শেখায়। এটিই হল আমাদের সব আবেগের কেন্দ্রবিন্দু! এত ভালোবাসা, এত হৃদয়ের টানা পোড়েন সবই এর খেয়াল! এটি হল আমাদের "emotional brain। এটি thalamus, hypothalamus, amygdala এবং hippocampus নিয়ে গঠিত। প্রথমেই আমি রিহানের amygdala তে আসি। এখানে অজস্র ভয় বিদ্যমান! সব আমাকে হারানোর ভয়!
এক জায়গায় বড় বড় অক্ষরে লেখা ''আমি ঈসুকে প্রচন্ড ভালোবাসি! কিন্তু কিছুতেই ওর মন বুঝতে পারি না! ও কি আদৌ আমায় ভালোবাসে! মাঝে মাঝে কেন যেন মনে হয় বাসে না'! ঈসু আমাকে ভালোবাসে না! ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! আমি কি করে বাঁচবো ওকে ছাড়া!'' কথাগুলো পড়ে আমি কিছুটা থমকে দাঁড়ালাম! এত কেন আমাকে ভালোবাসো রিহান? এত ভালো কাউকে বাসতে নেই! প্লিজ আমাকে এত ভালো বেসো না!

ওর hippocampusও আমাকে নিয়ে মেমোরি সেভ! আমাদের বিয়ে ডেট, কবে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, আমার প্রিয় রঙ কি, প্রিয় খাবার কি, আমি কি করতে ভালোবাসি সব! এখানে এসে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হল! আমি আজ পর্যন্ত জানলাম না রিহানের প্রিয় খাবার কি? ওর প্রিয় রঙ কি? ও কি করতে ভালোবাসে? স্ত্রী হিসেবে স্বামীর প্রতি কোন দায়িত্বই আমি পালন করিনি।
অবশ্য রিহানও কোন দিন জোর করেনি। ওর শুধু একটাই দাবি।''ঈসু তুমি শুধু আমাকে ভালোবেসো। খুব গভীর ভাবে ভালোবেসো! আর কিছু আমি চাই না!''

আমিও ওর ভালো মানুষীর সুযোগ নিয়ে নিজের মাঝে ডুবে থেকেছি! ওর hypothalamusএ এসে শংকিত হলাম! ভালোবাসার ব্যাপারে ওর নিজের উপর একদমই কন্ট্রোল নেই! অন্তত আমাকে ভালোবাসার ব্যাপারে তো নেই ই! চিন্তা করা যায় না ওর মত বড় বিজ্ঞানী এমন করে কাউকে ভালোবাসতে পারে! thalamus এ কিছু দুঃখ পেলাম! সব আমাকে নিয়ে লেখা। ওর চাইল্ডিশ আচরণ! ''ঈসু আজ সকালে আমাকে ভালোবাসি বলেনি!'' আমি কিছুক্ষণ পর ওর BRAIN থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার চোখ থেকে অঝোরে জল ঝরছিল!
''তুমি আমাকে এত ভালোবাসো রিহান! এত ভালো কাউকে বাসতে নেই! প্লিজ আমাকে এত ভালোবেসো না!'' আমার আবেগী কথায় রিহানের আহ্লাদ শুরু হল। সে আমার কোলের উপর মাথা রেখে নেকী সুরে বলল ,''ঈসু তোমাকে ভালোবাসিইইইই!''

তারপর থেকে আমিও সংসারে মনোযোগী হলাম। রিহানের ব্যাপারে যত্নশীল হলাম। ওর ভালো লাগা,খারাপ লাগাগুলো জানতে চেষ্টা করছিলাম। সকাল সন্ধ্যা রিহানের কানের কাছে গিয়ে বলি,''রিহান তোমাকে ভালোবাসি! অনেক অনেক ভালোবাসি!'' কিছু দিনেই মধ্য রিহান তার স্বপ্নের বধু পেলো। যেমন সে চেয়েছিল! কিন্তু আমি কতটুকু পেলাম! আমার মাঝে কেমন যেন একটা একাকীত্ব!

বার বার প্রতিটা স্পন্দন বলে ,''আমি তোমাকে ভালোবাসি না রিহান! তোমার প্রতি আমার অনুভূতি হল জাস্ট মায়া! আমি এভাবে ভালোবাসায় অভ্যস্থ নই। কবিতার জগতে আমার বাস। আর তোমার জীবন যান্ত্রিক! আমাদের মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব! আমাদের ভালোবাসার মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব! আমি কোন দিন তোমাকে মন থেকে ভালোবাসতে পারবো না। তবে স্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ঠিকই পালন করব।
তুমি কোন দিনও বুঝতে পারবে না আমি তোমাকে ভালোবাসি না!''

এদিকে রিহানের ধারণা তার মত আমারও অস্তিত্ব জুড়ে শুধু ওর বাস! এটা সে MIND VIEWER যন্ত্রটি দিয়ে মাঝে মাঝেই দেখার জেদ ধরে। কিন্তু আমি কখনো দেই না! কারণ আমি জানি এত বড় আঘাত ও সহ্য করতে পারবে না! তাই আমি সব সময় আমার লেপটপ নিজের মত করে পাসওয়ার্ড দিয়ে সেভ রাখি।
যদি কোন দিন এর থেকে রিহান কিছু জেনে ফেলে! এখানে আমার অনেক ডকুমেন্ট সেভ। এমনও হতে পারে সে আমার মস্তিষ্কের পাসওয়ার্ড কোনভাবে বের করে নিল! ও ব্রিলিয়ান্ট মানুষ! ওকে দিয়ে সবই সম্ভব!

এদিকে আমার আর বহুদিন নির্জনে আমার মনের ঘরে যাওয়া হয় না। জানটা খুব হাসফাস করছিল। আমি হাপিয়ে উঠেছিলাম। তাই একদিন সময় করে চলেই গেলাম। কিছুক্ষণ নিজের মাঝে ডুবে থাকলাম। সেদিন খুব প্রশান্তির ঘুম হল! ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি লেপটপ বন্ধ করিনি! কিছু দূরে গম্ভীর হয়ে রিহান বসা! রিহান কি আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করেছিল! ও কি জেনে গেছে সব! রিহানের মুখ দেখে কিছুই বোঝা গেলো না! কিন্তু তার পর দিন থেকে রিহান যেন কেমন হয়ে যেতে লাগল! আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না! আগের সেই উচ্ছ্বাস আর নেই। আগের মত আমার মুখে,''ভালোবাসি'' শোনার জন্য জেদ ধরে না। এখন ওর বিহেভিয়ার অনেক মেচিওরড। আমি খুশিই হলাম! যত তাড়াতাড়ি ও ছেলেমানুষি স্বভাবগুলো কাটিয়ে ওঠে ততই ভালো। কিন্তু আমার খুশি কিছু দিনের মধ্যেই শংকায় রুপ নিল! রিহান কেন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে! এক মাসে ওর ওজন দশ কেজি কমে গেছে! চোয়ালের হাড়টা স্পস্টহয়ে উঠেছে! আগের সেই নাদুস নুদুস রিহানটি আর নেই!

সে আমাকেও কিছু বলে না। নিজের মত করে কি যেন ভাবে! আমাকে এখন আর ওর মনে ঢুকতে দেয় না। নিজেও মুখ ফুটে কিছু বলে না! রিহান যেন তার সব জীবনী শক্তি হারিয়ে ফেলেছে! ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে! আমি ওর কাছে গিয়ে ওর মন ভালো করতে চেষ্টা করি। ওর কাছে গিয়ে গান ধরি,''মেনেছি গো হার মেনেছি! তব পরাজয়ে মোর পরাজয় বারে বারে তা জেনেছি!'' কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হয় না! একদিন আমার সব আশংকা , সব ভয় সত্যি করে দিয়ে রিহান অসুস্থ হয়ে পড়ে!কিছুদিনের মধ্যে কোমাতে চলে যায়। হসপিটালের ইন্টেনশিভ কেয়ার ইউনিটে ওকে রাখা হয়েছে।

এদিকে রিহানের পরিচর্যা করতে করতে আমার যেন কি হয়েছে! আমার স্পন্দনগুলো আর আগের মত বিদ্রোহ করে না। চিৎকার করে বলে না,''রিহান তোমাকে ভালোবাসি না!'' বরং সব ''না''কে এখন হ্যা মনে হয়! মনে হয় আমার চারদিকে শুধু রিহান! আমার অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই সে! আমার এখন একটাই ধ্যান যে করেই হোক রিহানকে সুস্থ করে তুলতে হবে! কিন্তু রিহানের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে! ডাক্তার ওর আশা ছেড়ে দিয়েছেন! ওর মাঝে নাকি বেঁচে ওঠার কোন ইচ্ছেই নেই! আমি ওর কানের কাছে গিয়ে বলি ,''কি হয়েছে তোমার রিহান? তুমি মরে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচব? প্লিজ এমন করো না! তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি রিহান! অনেক বেশি ভালোবাসি!'' রিহান আমার কথা শুনেছে কিনা বোঝা যায় না।

শুধু যখন বলি ,''তোমাকে ভালোবাসি'' ওর চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে জল পড়ে! না জানি সে কি ভাবছে! কেন সে কাঁদছে কিছুই বুঝতে পারি না! তবুও আমি ওর
সাথে কথা বলে যাই। একদিন ডাক্তার জানান দিল-রিহান শেষ নিঃশ্বাসের প্রহর গুনছে! আর কোন দিন সে উঠে দাঁড়াবে না। তার ব্রেইন ডেথ কিছুক্ষণেরই মধ্যেই ঘটবে!
আমার পৃথিবী যেন ভেঙ্গে চুড়ে আসতে চায়! তছনছ হয়ে যেতে থাকে চোখের সামনে সব! বুকের ভেতর ধ্বসে একটা বিশাল শুন্যতা তৈরী হয়! বেশ বুঝতে পারি এই শুন্যতা রিহান না থাকলে কোন দিন কাটবে না! আমি যে রিহান ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচবো না সেটা ঢের বুঝতে পারি! আমি চারিদিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম একটু আশার আলো দেখার আশায়। হঠাৎ চোখ গিয়ে পড়ল MIND VIEWER এর উপর! আমাদের ল্যাপটপ দু টো এনে রিহানের সাথে কানেক্ট করে দিলাম! আজ
আমি জানবোই কি হয়েছে রিহানের? কেন সে এভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে?

কিন্তু রিহান কোন রেসপন্স করছে না! তার মস্তিষ্কের পাসওয়ার্ড চাইলে সে বার বারই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু আমিও হার মানার নই। ''আমি তোমাকে এভাবে মরে যেতে দেব না রিহান!'' এক মুহূর্তের জন্য রিহানের সেই শিশুসুলভ কথাগুলো আমার মনে পড়ল ,''ঈসু তোমাকে ভালোবাসি! I LOVE U ISHU''। আমি ''I LOVE U ISHU'' পাসওয়ার্ডের ঘরে বসিয়ে ''ENTER'' চাপলাম। তাজ্জব হয়ে দেখলাম রিহানের মন খুলে গেছে! জীবনের শেষ মুহূর্তেও পর্যন্ত সে আমাকে ভালোবাসছে! আরেকবার কষ্টে পৃথিবী কালো হয়ে এলো।

আমি রিহানের মনের মাঝে এলাম! এসে জানলাম সেই রাতে সে আমার মনে এসেছিল! এসে বুঝেছে 'আমি তাকে ভালোবাসি না! আমার ভালোবাসার ঘরে বসত করে আছে অন্য কেউ! আমার প্রথম প্রেম। শুধু বাবা মায়ের ইচ্ছের কারণেই আমার রিহানের সাথে বিয়ে। তাই ভালোবেসে রিহানকে আমি কোন দিন দেখিনি। তার দুঃখগুলো যেন ডানা মেলে দিচ্ছিল! তার এতদিনের সাজানো বিশ্বাস ভেঙ্গে যাচ্ছিল! ভেঙ্গে যাচ্ছিল সব আস্থা! হঠাৎ আমাকে ঘিরে তার যে পৃথিবী ছিল সেটা নিঃস হয়ে গেলো!'

কাউকে উজার করে ভালোবাসলে যা হয়! অবশেষে নিজের জন্য কিছুই থাকে না! আর রিহান হল এতিম ছেলে। পৃথিবীতে তার কেউ নেই। বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে চেয়েছিল একটা নতুন পৃথিবী গড়তে। আর সেই পৃথিবীতে ধোকা সে সহ্য করতে পারে নি।

আমি এখন বুঝতে পারছি রিহানের কানের কাছে গিয়ে ''তোমাকে ভালোবাসি'' বললে কেন তার চোখ থেকে পানি ঝরতো! সে ধরে নিয়েছিল এটা আমার মনের কথা নয়। আমি শুধু মাত্র তাকে খুশি করতে ''ভালোবাসি'' বলছি! আমার এই প্রতারণায় রিহান কতটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল ভাবতেই বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠল!

নিজেকে আজ বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। একটা উচ্ছ্বল ছেলেকে আমি মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিলাম! তাও আবার এমন একজনকে যে পৃথিবীতে আমাকে সব থেকে বেশি ভালোবেসেছে! কিন্তু আমিও যে অপারগ ছিলাম।

পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা দেখে আমার ভালোবাসার মন মরে গিয়েছিল। আমি যাকে সব থেকে বেশি ভালোবেসেছিলাম সেই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে! তাই নৈঃশব্দের
মাঝে একাকীত্বে ডুবে গিয়েছিলাম! কিন্তু আজ সেই মন ভালোবাসতে জানে! রিহান
তাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।

আমি রিহানের কানের কাছে মুখ নামিয়ে বললাম,''তোমাকে ভালোবাসি রিহান! খুব খুব ভালোবাসি!'' আজ আমার মনের কথা আর মুখের কথা এক! রিহানও তাই বুঝতে পারছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে জেগে উঠল! মেডিক্যাল সাইন্সে এ হল এক বিস্ময়কর ঘটনা! সত্যি ভালোবাসার অনেক ক্ষমতা!

বিঃ দ্র ঃ কোন এক ভেলেন্টাইন ডে উপলক্ষে লিখেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:২৫
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×