somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন আরেক বার বেঁচে উঠি

০৩ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এস এস সি ,এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্টের পর বা অন্য কোন কারণে আমাদের সমাজের মানুষগুলোর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। এটা নিয়ে বিভিন্ন মানুষের মনের সারসংক্ষেপ হল,''একটা মানুষ কখন আত্মহত্যার মত ভয়াবহ পথ বেছে নেয়? যখন তার মনে হয় পৃথিবীতে তাকে ভালোবাসার মত কেউ নেই,তাকে বোঝার মত কেউ নেই তখনই পৃথিবীটা তার কাছে বিষাদময় হয়ে উঠে। বেছে নেয় আত্মহত্যার নিকৃষ্ট পরিণতি।'' এই কথাগুলো আমাদের বেশির ভাগ মানুষের জন্য সত্যি। কেননা আমরা সব সময় অন্যের চোখে নিজেকে দেখে নিজেকে জাজ করি। আর এখানেই হয় সব থেকে বড় ভুল। অন্যের হিংসাত্মক চোখে সব সময় নিজের প্রতিচ্ছবি হয় বিকলাঙ্গ মানুষের মত যার নিজেকে বিকশিত করার কোন ক্ষমতা নেই। প্রতিহিংসুকরা আমাদের ঠিক যেভাবে দেখতে চায়,সেভাবেই আমাদের উপস্থাপন করে। আর ওমনি আত্মবিশ্বাস হারানো কিছু মানুষের আত্মহননের গল্প রচিত হয়।

আমাদের বিকৃত মানসিকতার সমাজে যারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে চায় অনেক সময় তাকে উস্কে দিতে বলা হয় ,''যারা মুখে বলে আত্মহত্যা করব,তারা কখনো করে না। যারা মরার তারা কখনো বলে মরে না। ''এখানে উস্কানি দাতাও হয়ত চান না মানুষটা সত্যি সত্যি তার নিজেকে মেরে ফেলুক কিন্তু অজ্ঞতা বশত এবং নিজের মধ্যকার জেদের আগুণকে তা দিতে ঠিকই একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষের আত্মহননের মত ভয়াবহ কাজ সম্পাদনের দুঃসাহস সঞ্চয় করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছেন। আত্মহত্যার ভয়াবহ পদক্ষেপ নেয়ার সাহস একটা মানুষের একদিনে গড়ে উঠে না। হতাশারা দিন দিন কুড়ে কুড়ে খেয়ে একটু একটু করে আত্মহত্যার রশদ যোগায়। তাই আত্মহত্যা প্রবন মানুষগুলোকে দুঃখের সময় নিজেকে হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। ৩০-৭০% মানুষ ভয়াবহ রকম হতাশায় ভুগে এই নিজেকে হননের সিদ্ধান্ত নেয়।

আত্মহত্যার ওয়ার্নিং (WARNING) সাইন গুলো হলো ঃ

• Verbal suicide threats such as, “You’d be better off without me.” or “Maybe I won’t be around.”
• Expressions of hopelessness and helplessness.
• Previous suicide attempts.
• Daring or risk-taking behavior.
• Personality changes.
• Depression.
• Giving away prized possessions.
• Lack of interest in future plans.


এবার জিপিএ ৫ না পাওয়া এক ছাত্রের আত্মহননের নোটটাই দেখুন নাঃ

'' আমি জানি না আজ আমি ঠিক কি ভুল কাজ করছি তবে এখন এটা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। আসলে ছেলে হয়ে এ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করাটাই আমার দূরভাগ্য। তা না হলে ছোট থেকে এ পর্যন্ত মেয়ের মতো সব সময় পরিবারের কাজ করতেই হয়েছে। আর কখনো পরিবার থেকে আমাকে খেলাধুলার সময় বা খেলতে দেওয়া হয়নি। আর আমিও মেয়ের মতো সব সময় মায়ের আঁচলের নিচেই ছিলাম।
আর আমি আদো জানি না যে আমি কি? এই পরিবারের বা আমার মা-বাবার সন্তান, তা না হলে সব সময় এ রকম শাসন আর কড়া শাসনের উপর আমাকে রাখা হয়েছে। কোন বাবা-মা তার সন্তানকে পড়া লিখার খরচে খোটা দেয় না। কিন্তু আমার মা বাবা সব সময় আমাকে বলে তোর জন্য মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা খরচ করছি। এভাবেই প্রতি নয়ত বকাঝযকা করা হয়। সব সময় বাবার থেকে শুধু খারাপ ভাষার গালি আর গালি শুনতে হয়। যা আমার একটু বালো লাগতো না। কিন্তু আমি এতো দিন সহ্য করে ছিলাম। কারণ কোন কিছু করার কথা ভাবলে মনে হতো এ দুনিয়ায় তো বাবা-মায়ের আদর ভালোবাসা পেলাম না। পেলাম না শুখ শান্তি। আসলে মানুষ বলে যে ঠিক টাকা পয়সা ও ধন সম্পদ মানুষকে সুখী করতে পারে না। আর যদি আমি নিজের হাতে আত্মহত্যা করি তা হলে মরর পরও শান্তি পাবো না। আর মরার পর আমাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হতো। তাই এখন আমার আর এসব কিছু সহ্য হচ্ছে না। … ''

এই অংশটুকু ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। এক দিনের সিদ্ধান্তে ছেলেটি নিজেকে শেষ করে দেয় নি। বার বার নিজেকে বুঝিয়েছে আত্মহত্যা করলে তাকে জাহান্নামের আগুণে জ্বলতে হবে। বার বার সে বাবা মায়ের কাছে আরেকটু সহনীয় আচরণ প্রত্যাশা করে মুখ কালো করে ফিরে এসেছে। হয়ত এর আগেও কয়েকবার আত্মহননের কথা চিন্তা করে আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছে। বার বার বেঁচে থাকার সাহস সঞ্চয় করতে করতে যখন সে ক্লান্ত তখন কালবৈশাখী ঝড়ের মত তার জীবনে আঘাত হেনেছে এস এস সি র রেজাল্ট। এবার আর সে টিকে থাকতে পারেনি। চারিপাশ থেকে লোকজন তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছে ,''তুমি অপদার্থ! তোমাদের মধ্যে জীবনে সাইন করা কোন উপাদান নেই।'' ব্যস! সবার কথাকে সত্যি ধরে নিয়ে সেও তার জীবনকে শেষ করে দিয়েছে।

এখন কথা হল তার বাবা মা এ ক্ষেত্রে কতখানি অপরাধী? আসলে কি কোন বাবা মা চান সন্তানের এমন পরিণতি? চোখের সামনে এত বড় সন্তানের লাশ দেখা কি তাদের জীবনের সব থেকে দুঃখের ঘটনা নয়? তাহলে গলদ কোথায়? গলদ হল আমাদের সমাজের পেরেন্টিং ব্যবস্থায়। বেশির ভাগ বাবা মাই বুঝতে চান এই বয়সী সন্তানদের সাইকোলজি। ''তুই পারিস না। তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।'' গালি গালাজ,বকাঝকা, তিরস্কারের পর তিরস্কার। এতে করে তার মধ্যে ধারণা বদ্ধমূল হয় সে আসলেই পারে না। বার বার একই কথা শুনতে শুনতে তার ব্রেইনও তাতে বিশ্বাস শুরু করে দেয়। পরে নিজের মাঝে তৈরী হয় ভয়াবহ রকমের ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। সেখান থেকে তিক্ততা,জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা। অথচ বাবা মা চাইলেই একটু পিছিয়ে পড়া সন্তানের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন। মানুষের জীবনে বার বার হেরে গিয়ে জিতে যাবার গল্পগুলো বলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মাতে পারেন। এতে করে কম তুলনামুলক কম মেধাবী সন্তানটিও এক সময় ভালো কিছু করে দেখাতে পারে।

আমার একজন সাইকিয়াট্রির স্যারকে দেখেছি প্রতিনিয়ত তার কাছে আসা রোগীদের উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিয়ে বেঁচে থাকার অর্থকে বোঝান। তার কাছে আসা একজন পেসেন্টের হিস্ট্রি ছিল এমন সে এইচ এস সি পাশ করে সেনাবাহিনীতে বাছাই প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে আসলে তার কলেজের প্রিন্সিপাল বলেছিল সে মাদকসেবী ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তারপর তাকে বাদ দেয়া হয়। তখন সে আসলেই মাদকসেবন করে দেখিয়ে দিয়েছে। আমার স্যার এই ছেলেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সাহায্য করে নেশার ভয়াবহ জগত থেকে ফিরিয়ে আনেন। তারপর আরো শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করেন। সেই ছেলে শিক্ষিত হয়ে বিদেশে ভালো জব পেয়েছে। হয়ত সেনাবাহিনিতে গেলেও সে এত ভালো থাকত না

আমি ভাবি এই স্যারকে নিয়ে। আমাদের সমাজের সব শিক্ষক, বাবা মায়েরা যদি তার মত হতেন তবে আত্মহত্যার গল্পগুলো আমাদের সমাজে রচিতই হত না। তারপর আছে আমাদের অন্যের চোখে দেখে নিজেকে যাচাইয়ের প্রবনতা। যেটা কিনা সব থেকে ভয়াবহ। ''আমরা পারি'' এই বিশ্বাসটুকু কেন অন্যের কাছে শুনে আমাদের জন্মাতে হয়! কেন নিজের মধ্যকার বিশ্বাসটুকু আমাদের জীবনী শক্তি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত নয়? যখন আত্মহত্যা করে মরে গেলে কেবল একারই মরে যেতে হয়,কেবল একারই সব যন্ত্রণার বোঝা বহণ করতে হয় তবে কেন একার ইচ্ছা শক্তিই বাঁচার পাথেয় হয় না! তাই আসুন আগে নিজেকে ভালোবাসি। নিজেকে ভালোবেসে নিজেকে আকর্ষণীয় যোগ্যতায় সাজিয়ে গুছিয়ে অন্যের সামনে দাঁড়াতে পারলেই অন্যের ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব। আর আত্মহত্যার মত দুঃসাহসিক কাজ করতে হলে যতখানি সাহস প্রয়োজন তার সামান্য অংশ দিয়ে যদি জীবনে ভালোভাবে বেঁচে থাকার দিকে অগ্রসর হওয়া যায় তবে অনেক ভালোভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব। তাই আসুন বেঁচে উঠি আরেকটি বার। প্রতিহিংসুক পৃথিবীকে দেখিয়ে দেই আমাদের জীবনী শক্তি।
১৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×