প্রত্যেকদিন কাওকে এগিয়ে দিয়ে একা ফিরে আসাটা যথেষ্ট কষ্টকর। তারপরেও কাজটা প্রায়শই করতে হয়। কারন শেষ মাথার সেকেলে বাড়িটাই আফসানার বাবা মোহাম্মদ দীনউদ্দীন আলী জাকের এর।
আমি মাঝে মাঝেই ভাবি এতো বদসুরত একটা লোক মায়াবী মুখের নিষ্পাপ একটা মেয়ের বাবা হয় কি করে। তবে ভয়ে ওর সামনে আর কিছু বলা হয়ে উঠেনা। হাজার হোক সে আমার গার্লফ্রেন্ড। দুদিন আগে আর পরে এই লোকটা আমার শ্বশুর হবে। তবে মানুষটা ভালো, অনেকটা উঁচু মনের অধিকারী।
বাড়িটা শেষ মাথায় বলে কষ্টটা হয়না, হয় আফসানা কে রেখে একা চলে আসতে। আমার ও হয়তো সামনে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। সেজন্যি কিছুটা সামলে উঠার শক্তি পাই।
প্রায়শই যখন দিতে আসি এ জায়গাতে থামলেইই কিছুটা ঝিম ধরে। বিরক্ত হওয়ার কথা হলেও আফসানা কেন জানি বিরক্ত হয়না। ভালবাসার হয়তো এই সুবিধা। বিরক্তিকর ব্যাপার গুলো থেকেও আনন্দ পাওয়া যায়। তবে মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ করে। আমার কান্ড কীর্তি নাকি এখনো বাচ্চা মানুষের মতো।
_ তুমি আজকে আবার ঢং ধরছো? ভাগো তো এইখান থেকে। আমার ভালো লাগে না এইসব। সারাদিন অফিস করছো। এখন বাসায় যাও।
ঃ রাতে ঘুম হয়না তোমাকে ছাড়া। আর তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করেনা।
_ ছিঃ ছিঃ ছিঃ। তুমি ভাগো তো। আমার সত্তিই বিরক্ত লাগতেছে।
কিছুকিছু বিরক্তির মধ্যে মনেহয় ভালবাসার একটা ব্যাপার থাকে। এই বিরক্তি টা তে মনেহয় সেই সূত্রের প্রয়োগ ঘটে বারবার।
ঃ আচ্ছা আমি যাই।
_ ঠিক আছে। আর শোন...
ঃ কি?
ঃ কিছুনা। বাসায় যাও। বড্ড ভয় হয় তোমাকে নিয়ে। পাওয়ার চাইতে যে হারানো টা অনেক সহজ।
আমারও কেন জানি মনেহয় হারানোর নিয়ম টা জগতে সবথেকে সহজ নিয়ম গুলোর একটি। যে মানুষ টা কে আমি এতো সহজে পেয়েছি হয়তো এক নিমিষেই সব মিথ্যে হয়ে যেতে পারে। তবে আফসানা কে নিয়ে আমার সে ভয়টা নেই। ভালবাসাটাই যে বিশ্বাসের উপর। এই আয়নিক বন্ধন ভাঙা যে এতো সহজ নয়।
গল্পটা হয়তো এখনেই শেষ হয়ে যেতো। লাল কেরোসিন এর হারিকেন এ যেমন তেল কমে গেলে নিভু নিভু করেও নিভে না তেমনি আমরা যে হারাতে হারাতেও যে হারাই নি। শেষ বেলায় সন্ধ্যের সূর্যস্নান উপভোগ করার অধিকার যে আমিই পেয়েছিলুম।
কেউ কেউ বলে ভাগ্য তবে আমি অর্জন করে নিয়েছি। পৌষের ঝড়েও যে হারাতে দেইনি। আমি যে হারাতে কারো হাত ধরিনি। হেরে যাওয়া যে আমার রক্তে নেউ।
হয়তো যুদ্ধে জয় সহজ হলেও জীবন যুদ্ধে জয় করা কতটা সহজ সাধ্য তা আমার বোধগম্য নয়। হয়তো যুদ্ধে জয়ের পরেও হেরে গেছি। এটাই যে প্রকৃতির সহজাত নিয়ম গুলোর একটি। এর থেকে যে পালিয়ে বাঁচার যে কোন পথ নেই। তাই হয়তো আমিও হেরে গেছি। না চাইলেও যে হারতে হয়।
হুম... আফসানা চলে গেছে প্রায় তিন বছর। আমার ও হয়তো এক সময় চলে যেতে হবে। আমিও যে হেরে যাবো এক সময়।
শেষ তিন বছর হয়তো ঘুমাই নি। ক্লান্তি যে আমাকে ঘুমাতে দেয়না। আমি যে আবার দু-চোখ জড়িয়ে তোমার বুকের খাঁজে বেড়ে উঠা কালো তিলক টাতে আলিঙ্গন করতে চাই। নিজের প্রতিচ্ছবি তে যে আমি বিরক্ত।
তবে তুমি যেমন ছিলে ঠিক তেমনি আছো। আমি যে এখনো অনিদ্রা রাতে তোমাতে ছুটে বেড়াই। তোমার মেদ জমে উঠা ঘর্মাক্ত শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কবিতা লিখে বেড়াই। তুমি ছিলে, তুমি ছিলে, তুমি থাকবে অন্তরালে। আমি যে বড্ড ভালবাসি, ভালবাসি তোমাতে...