somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামীলীগের দলীয় মিছিলে ভূত দর্শন

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হেডিং পড়ে কাল্পনিক কোনো বিষয়ের উপর লেখা মনে হতে পারে, তবে ঘটনাটি ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ এক বাস্তব অভিজ্ঞতা। যাকে আমি সংক্ষেপে ভূত হিসেবে উল্লেখ করেছি। লেখাপড়া শেষ করে খুলনা শহরে ব্যবসা করি, লাগাতার হরতালে ব্যাবসাপাতির নাকাল অবস্থা, সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকায় কিছুদিন বেড়ানো যাক এই সুযোগে। উত্তরাতে এক বন্ধুর বাসায় উঠে তার মটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে গিয়ে বাংলামটরের সামনে ট্রাফিক দাঁড় করালো। এক বিরাট হরতাল বিরোধী আওয়ামী লীগের মিছিল যাচ্ছে। মিছিলটি যাতে নির্বিঘেœ চলে যেতে পারে তাই ট্রাফিক আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিছিল দেখছি হঠাৎ করেই ভূতের দেখা। আমি অবাক বিস্ময়ে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, একে আমি ভালো করে চিনি, সে খুলনার একটি থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক। এটা কি করে সম্ভব? বিএনপি’র এক সক্রিয় কর্মী আওয়ামী লীগের মিছিলে যোগ দিয়ে শ্লোগান দিচ্ছে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, হাসিনা সরকার, বারবার দরকার, এহেন অনেক চটকদর শ্লোগান! মিছিলটি বাংলামটর পার হয়ে গেলে পুলিশ আমাদেরকে চলে যেতে বলে। আমি তখন মোবাইলে ঐ ছেলের নাম/নাম্বার খুঁজছি, পেয়েও গেলাম হঠাৎ করে। কল দেয়ার সময়ও আমি নিশ্চিত যে, সে হতে পারে না ‘এক্স’ নিশ্চয়ই খুলনা থেকেই উত্তর দিবে, কিন্তু না, সে কল রিসিভ করলো এবং আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি যে, মিছিলের শ্লোগান হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম তুমি কোথায়? উত্তরে সে বললো, ঢাকায়, আমি কথা না বাড়িয়ে শুধু বললাম, আমিও ঢাকাতে, সন্ধ্যার পরে উত্তরা এক নম্বর সেক্টরে আসতে পারবে? জবাবে সে হ্যা বলাতে বললাম, ওখানে এসে আমাকে কল দিও তোমার সাথে কাজ আছে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ওই ভুতকে নিয়ে এক রেস্টুরেন্ট রাতের খাবার খেতে বসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে আওয়ামী লীগের মিছিলে দেখলাম, বিষয়টা খুলে বলবে কি? চমকে উঠে বললো, ভাইজান আপনাকে তো লুকাবার কিছু নেই সব বলবো তবে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর যদি দিতেন? কি জানতে চাও? সত্যি আপনি আমাকে আওয়ামী মিছিলে দেখেছেন? হ্যাঁ, দেখেছি। গা ঝারা দিয়ে সে বললো, তবে বিষয়টা আপনাকে খুলেই বলি। মেট্রিকে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েও অভাবের কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে ব্যবসায় নেমেছি পিতার সংসার চালাবার জন্য, ভাই/বোনদের লেখাপড়ার খরচ চালাবার জন্য। লাগাতার হরতালে আমার ব্যবসার পুঁজি শেষ, খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছি কিছু একটা করে টাকা কামানো যায় কিনা ভাগ্য পরীক্ষা করতে। ৭ দিন থেকে ব্যর্থ হয়ে খুলনায় ফিরে যাবো এমনি সময় আমার এক পুরানো বন্ধু বললো। একটা কাজ আছে, ডেইলী ৩০০ টাকা আর দুপুরে কাচ্চি বিরিয়ানী। আমি সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলাম। পরদিন ভোরবেলায় সে আমাকে এই আওয়ামী মিছিলে নগদ ১০০ টাকা আমার হাতে দিয়ে যোগ দিতে বলে, ঠিক ঠিকই দুপুরে কাচ্চি বিরিয়ানী আর সন্ধ্যার সময় নগদ ২০০ টাকা।

প্রথম দিন আওয়ামী লীগ মিছিলে হাটতে খারাপ লাগলেও বিরিয়ানী আর নগদ ৩০০ টাকা পেয়ে ভালোই লাগলো। তারপর থেকে প্রতিদিন যোগ দিচ্ছি আওয়ামী লীগ মিছিল, মিটিংয়ে। রাজনীতি করে এতো টাকা কামাই করা যায় কস্মিনকালেও ভাবিনি। এখন আর খারাপ লাগে না। আমার প্রাণপ্রিয় নেতা জিয়াউর রহমানের কথা মনে হলে খারাপ লাগ বৈকি, তবে ভাই পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য আওয়ামী মিছিলে যোগদান করছি, চিৎকার করে শ্লোগান দিচ্ছি, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।” আমি জানি এভাবে চলতে থাকলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন আমাদের বলতে হবে ‘জয় হিন্দ, জয় বন্দেমাতরম’ কিন্তু কি করবো? পেটতো আর রাজনীতি মানে না। হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে বসলাম, তুমি কেন বিএনপি’র দলীয় মিছিলে সামিল হও না? ওর উত্তর শুনে আমার দুকান গরম হয়ে গেলো, কেন দলের মিছিলে যাবো? একে তো কোনো টাকা পয়সা নেই, সেই সাথে রাস্তায় নামলেই বৃষ্টির মতো পুলিশের গুলি। আর এখানে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা, মিছিলের সামনে পিছনে পুলিশের পাহারা আর দুপুরে কাচ্চি বিরিয়ানী। গোল্লায় যাক দেশ, আমার পেট বাঁচতে হবে, ভাই/বোনদের লেখাপড়া করাতে হবে।

ছেলেটা দুঃখভারাক্রান্ত মানসিকতা দেখে আমি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য প্রশ্ন করলাম, ঠিক আছে এখন বলতো মিছিলগুলোতে গিয়ে এ কয়দিন তুমি কি অভিজ্ঞতা অর্জন করলে? নতুন তেমন কিছু না, অন্যান্য মিছিলের মতই, তবে ওদের মিছিলের মধ্যে প্রায়ই দেখি ১০/১৫ জনের মত কিছু লোক যারা নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলে কিন্তু আমাদের সাথে বাংলাতে কথা বলে। আমি হঠাৎ করেই বিষয়টা বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলাম। আচ্ছা, ঐ লোকগুলো সম্বন্ধে আর কি জেনেছো তুমি? সে বললো ছাত্রলীগের একদল হিন্দু ছেলে সবসময় ওদেরকে ঘেরাও করে রাখে।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ওরা দেখতে কেমন এবং কি করে? এইবার সে সত্যিকারের ভূতের খবর দিতে শুরু করলো। ওদের মাঝে কিছু আছে হুবহু জামাত/শিবিরের মতো দাড়ি/টুপি এবং সবার পিঠে বেকপেক এবং তাতে আছে গান পাউডার, দেশী ককটেল ও বোতলে বানানো পেট্রোল বোমা। তাদের সাথে আছে ক্যামেরাম্যান, ৪/৫ জনের সাথে এমন কিছু অস্ত্র দেখেছি যার নাম আমি জানি না এবং পূর্বে কখনো দেখিনি। ওরা যে কাজ করে, তাহলো শিবিরটাইপ লোকগুলো বড় রাস্তায় মিছিল চললে আসেপাশের গলিতে কোন সিএনজি মানুষসহ জামে আটকে থাকলে হঠাৎ করেই এ পেট্রোল বোমা, গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় তারপর কিছু দেশী ককটেল ফুটিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়।

এদের কাজ কারবার দেখে আমার কেমন যেন সন্দেহ হতে শুরু করলো। আমি ওই হিন্দু পাহারাদার ছাত্রলীগের ছেলেদের মধ্যে একজনকে পেয়ে গেলাম খুলনার, আমাকে পূর্ব থেকে চিনে না। আমি কয়েকদিন তার সাথে খাতির করে পরে জানতে চাইলাম ওরা কারা? ও আমাকে সবরকম কিরা/কছম কাটিয়ে কাউকে না বলার শর্তে বললো, ‘ওরা ভারতীয় ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো, বাংলাদেশে এসেছে বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে আমাদের দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে। ঐ যে বিএনপি/জামাতের নামে পেপার/পত্রিকায় মানুষ পুড়িয়ে মারার যে অভিযোগ, সব হচ্ছে এদের কাজ। এদেরকে আমাদের সাহায্য করার দরকার, দলকে ক্ষমতায় আনতে হলে। রাজনৈতিক কারনে কিছু আম জনতা মারা গেলে তেমন কিছু না, দলের ক্ষমতায় যাওয়াটাই হচ্ছে গূরূত্বপূর্ন বিষয়”।

সেদিন থেকে খুঁজছি বিষয়টি আমার দলের কাউকে বলার জন্য। আজ আপনাকে বলতে পেরে মনটাকে হালকা লাগছে। এখন দেখেন দেশের স¦ার্থে এদের বিরুদ্ধে কিছু করা যায় কিনা। তবে ভাইজান আমার নাম যাতে কেউ না জানে, জানলে কিন্তু আমি ফিনিস। আমার তখন মনে হলো এর চেয়ে বড় কিংবা ভয়ঙ্কর ভূতের দর্শন আর কি হতে পারে? আমি জানবাজী রেখে বিষয়টি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম আপনাদেরও উচিত দেশকে টিকিয়ে রাখতে সবার সাথে শেয়ার করার। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলের সহায় হোন। আমীন।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×