somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শর্মী কি মাতাল ছিলো ?

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিথুনের সাথে গত পড়শু শর্মীর দেখা হয়েছিলো। সন্ধ্যায়, এলাকায় কারেন্ট না থাকায় রাসেল এসে মিথুন কে ডেকে বের করে চায়ের দোকানে বসিয়ে বক বক করতেছিলো। এলাকার স্কাইভিউ বিল্ডিং এর চার তলায় থাকা খলিল চাচা আজ তিনমাস ধরে নাকি ডিশের বিল দেন না। ভদ্রলোক সম্ভবত আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন, তার মেয়ের নাম কণা।

কণা নামটা মিথুনের পরিচিত, আশেপাশে যারা থাকে সবাই কণাকে না চিনলেও তার গলা অতি সুমধুর সে সম্পর্কে সচেতন। প্রতিদিন নিয়ম করে ভোর বা সকাল ৭ টায় হারমোনিয়াম নিয়ে কণা বারান্দায় বসে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা করে। রাসেলের কাছ থেকে জানা গেলো কনা অনার্স পাশ করেছে বছরখানেক আগে, কিন্তু তার জন্য পাত্র পাওয়া খানিক কঠিন কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের সমাজে চরিত্র বা স্বভাব বা মুখের গড়নের আগেও দেখা হয় মেয়ের গায়ের বর্ণ। কণার ত্বক খানিক অন্ধকারের দিকে। খলিল চাচার নাকি উচিত রাসেলের সাথে কণার বিয়ে দেওয়া।

রাসেল কণার প্রতি বেশ দুর্বল। তবে নিজের অনার্স পাশ মেয়ের সাথে ডিশ ব্যাবসায়ী রাসেলের বিয়ে দেবেন এমনটা একদম অসম্ভব প্রায়। কণাকে পাওয়ার উপায় প্রেম করা বা প্রেমে ফেলানো। প্রেমে পড়া সহজ হইলেও প্রেমে ফেলানো অতি কঠিন কাজ। এ ব্যাপারে বহুবার মিথুনের সাহায্য চেয়েও রাসেল কোন সাহায্য পায় নাই। মিথুন জীবনের মানে জানে, কিভাবে জীবনের সৃষ্টি, বিবর্তন সহ নানা কেনো এর উত্তর জানলেও সোজা বাংলায় কিভাবে মেয়ে পটাইতে হয় এ ব্যাপারে কোন ধারনাই নাই।

এমন সময় শর্মীর ফোন, সে মোড়ে রিক্সায় দাঁড়িয়ে আছে। মিথুন পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাক, যেন দুই মিনিটের মধ্যে যেয়ে দেখা করে। শর্মীর থেকে এ ধরনের বাক্য শুনতে মিথুন অভ্যাস্ত না, শর্মী একজন আদর্শ নারী। "মিথুন, আমি এখানে আছি, তুমি কি একটু আসতে পারবা? " ধরনের বাক্য আজ হটাত কেনো বদলায় গেলো এটা একটা রহস্য। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে, নারীরাও রহস্য পছন্দ করে, এই হিসাবে প্রকৃতি হয়তো নিজেও নারী। কিন্তু পুরুষের রহস্য গল্প উপন্যাস পছন্দ হলেও জীবনে রহস্য পছন্দ না।

কোথাও কিছু একটা হইছে, স্বভাবমত সিগ্রেট না ধরিয়ে বেশ দ্রুত গতিতেই হেটে মোড়ে গিয়ে দেখা গেলো রিক্সায় বসা শর্মীকে। অন্ধকার রাস্তায় সাদাটে রোড লাইটের আলোয় শর্মীর মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে, সেই আদিম গ্রীক দেবীর মত খোদাই করা মুখ। বেশীক্ষন তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বালা করে উঠে, মিথুন যেয়ে বললো, চাপো, বসি।

রিক্সা ওয়ালাকে চলতে বলে শর্মী খানিক জড়ানো গলায় বললো, আজ আমার মন বেশ ভালো মিথুন। টেকনিক্যালী শর্মীর গলা এমনিতেই মাদকতাময়, আজ ডিরেক্ট মনে হয় কিছু খেয়েই আসছে।

তুমি কি খাইছো শর্মী ?
= মানে ? আমি কি খাবো ? দুপুরে ?
না, তরল কিছু খাইছো ?
= হ্যা খাইসি, পানি, সকালে একটা মাউন্টেন ডিউ। কেনো ?
আমি জিগেস করছি রংগিন পানি খাইছো ? লাল পানি ?
= না, মাউন্টেন ডিউ সবুজ পানি।
এরপরে আর বলার কিছু খুজে না পেয়ে মিথুন চুপ করে থাকলো মিনিট তিনেক। অস্বাভাবিক চুপচাপ শর্মী আজ চুপ করে না থেকে নিজে থেকেই বললো,

আমি কি অস্বাভাবিক আচরন করতেছি মিথুন ?
= অল্প, তোমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।

এতে তোমার মনে হইছে আমি মদ খেয়ে আসছি তোমার সাথে মাতলামী করতে ?
= মাতলামী করতে আসবা কেনো, মন ভালো, ঘোরার কেউ নাই, তাই আসছো সন্ধ্যা বেলায় রিক্সায় করে ঘুরতে।

রাজনৈতিক টাইপ কথা বলবা না, আমি কখনোই মদ খাই নি, গতকাল আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা উঠেছিলো তীব্র। বাসায় অষুধ ছিলো না, আব্বু ও সিলেটে, তামান্নার সামনে মেট্রিক, তাই একাই বেরিয়েছিলাম অষুধ নিতে।
= তারপর?

তারপর আমি মাইগ্রেনের ব্যাথা নিয়েই একা একা নিচে গেছি, অষুধ নিছি, এবং খাইছি।
= মাইগ্রেনের ব্যাথার অষুধ ?

ঘুমের অষুধ। এক পাতা নিয়ে ৬ টা খেয়েছি, আরো ৪ টা আছে। তুমি চাইলে খেয়ে দেখতে পারো, খেলে মন ভালো থাকে।
= আমার মন এমনিতেই ভালো আছে। খাবোনা।

খেলে কিন্তু ঘুম ও ভালো হয়, আমার এখন অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে মিথুন, আমি যদি ঘুমিয়ে যাই, আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারবা ?
= পারবো।

মিনিটখানেকের মধ্যেই মিথুনের কাধে মাথা রেখে শর্মী ঘুমিয়ে পড়েছিলো, কিন্তু তাকে বাসায় দিয়ে আসা হয় নাই। শর্মীর ঘুম মিনিট দশেক পর ই ভেংগে গেছিলো, মিথুন কে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। আগামীকাল সবকিছু আবার আগের মতন।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×