somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ আব্দুল করিমের আরেকদিন।

২১ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৪২ সালের এক চৈত্রের দুপুর।
উজানধল নামে একটা গ্রাম আছে সুনামগঞ্জে, সে গ্রামের হাওয়ারের পাশে মুখ অন্ধকার করে বসে আছেন করিম সাহেব। এই ভর দুপুরে ভাতঘুম না দিয়ে এইখানে এসে বসে থাকার কারন টা অবশ্য মন খারাপের, মন খারাপ করে দেওয়ার। বাসায় রান্না হয় নি, বউ সরলা তাকে ঠিক খোটা দেন নাই, বাসায় রাধার মত এক দানা চাল ও নাই এটুকু মনে করায় দিছিলেন।
দিনের শুরুটা মন্দ হয় নাই, ডাক পেয়েছিলেন ধান কাটার, সেই ভোর থেকে যেয়ে মালিকের জমিতে ধান কেটে দুপুরের দিকে প্রচন্ডে গরমে কাজ করতে না পেরে মালিক বলেছেন আজ আর না করতে, আগামীকাল এসে শেষ করে টাকা নিয়ে যাইতে। টাকা বলতে কয়েক পয়সা, তা দিয়ে দিন তিনেকের চাল কেনা যাবে।
সরলা ঘরে চাল নেই জানানোর পর জিগেস করেছিলেন মুড়ি মুড়কি কিছু আছে কিনা, তাও নেই শুনে কেন জানি নিজের উপর খুব অভিমান হইলো আমাদের করিম সাহেবের। সরলাকে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি।
সেইবার, ১৯৩৫ সালের বর্ষার এক দিনে বড় একটা নৌকা নিয়ে বিয়ে করতে যাওয়ার সময় সময় খানিক নার্ভাস ছিলেন বোধকরি, তার বয়স আর কত তখন ১৭/১৮ হবে, সেদিন প্রথমবারের মত ১৪ বছর বয়সী সরলাকে দেখে তার অসম্ভব মনে ধরেছিলো। সেদিন বিয়ে সেরে রাত টা সেখানে থেকে পরদিন ই বউ সহ চলে এসেছিলেন বাসায়। সরলার আসল নাম কিন্তু সরলা না, এই নামের পেছনে মজার গল্প আছে।
ভদ্রমহিলার নাম আফতাব-উন-নেসা। বিয়ের রাতে মজার ছলেই করিম সাহেব বলেছিলেন নেসা, তোমারে দেখলে আমার নেশা হয়। বউ মুচকি হেসেছিলেন, করিম সাহেব হটাত করেই বললেন তোমার নাম দিলাম সরলা। সেই থেকেই এই নাম।
যাহোক, আজ দুপুরে বেশ ক্ষিদা পেটে বাসা থেকে বের হবার সময় হাতে করে একতারা টা নিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে আমার অতি পছন্দের একজন মিউজিশিয়ান লিখছিলেন, আমি তো কান্তে পারি না, আমার হয়ে আমার গিটার কান্দে। করিম সাহেব ও কি তেমন কিছু ভাবছিলেন?
খাতা কলম সাথে নাই, হাওয়ের পাশে বসেই একতারায় সুর তুলে নিজ মনে গান ধরলেন
" আমি কুলহারা কলঙ্কিনী,
আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী"
এটুকু গেয়ে থামলেন, তিনি নিজে অর্থকষ্টে আছেন, ভালোবাসার সরলার পেটেও তো গতকাল থেকে কিছু পরে নাই। তিনি সরলা হইলে কি করতেন? গেয়ে উঠলেন
" প্রেম করে প্রাণবন্ধুর সনে,
যে দুঃখ পেয়েছি মনে।
আমার কেঁদে যায় দিন-রজনী"
বাউল সম্রাট, বাউল শাহ আব্দুল করিমের চোখের কোনে পানি চিকচিক করতেছিলো চৌত্রের রোদে, তিনি আবার গাইলেন
" সখি আমায় উপায় বলোনা,
এ জীবনে দূর হলোনা,
বাউল করিমের পেরেশানি।
আমারে কেউ,
আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী।"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৩৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×