somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাইলেই পারা যায়। বিশ্বাস করুন, আপনিও পারবেন।।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি মেয়ে চাইলেই যে সব করতে পারে, আমার কাছে সে বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছিল অনেক আগে আমার মামাতো বোন নেহা আপুর একটা সামান্য ঘটনার ভেতর দিয়ে। মনে হচ্ছে আজকের এই নেহা সেই দিনই জন্ম নিয়েছিলো। এখানে যারা মেয়েরা আছেন তাদের হাতে সামান্য সময় থাকলে সংক্ষিপ্ত এই লেখাটি পড়তে পারেন। এ লেখা থেকে কিছু শেখবার আছে কিনা জানি না। তবে "চাইলেই পারা যায়" শব্দটিকে হয়তো বিশ্বাস করার বিশ্বাস ফিরে পাবেন।
যতদুর মনে পরে তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি আর নেহা ক্লাস নাইনে। নেহাপু বয়সে আমার বড় হলেও সেই ছোটবেলা থেকেই এই এক পিস মেয়ে আমার সাথে বন্ধু হয়ে আছে আজঅব্দি। কখনো আপু, কখনো টাপু ইত্যাদি ইত্যাদি বলেই ডাকতাম। এতটাই ফ্রি মাইন্ডেড ছিলাম দুইটা একে অপরের একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয়গুলাও শেয়ার করতাম। কখনোই মনে হত না যে, আমি তো ছেলে আর সে তো মেয়ে। মামার বাসা আর আমাদের বাসা একই ফ্ল্যাটে ছিল বিধায় সারাটা দিন বিরতিহীন ভাবে চলত আমাদের দুষ্টামি। যাই হোক এবার আসি মূল কাহিনীতে....
আমাদের মামার বাসায় একদিন মামার বন্ধু মহলের একজন এসে উঠলো মাস খানেক থাকার উদ্দেশ্যে। ভদ্রলোকের নাম এমদাদ। আমি আর নেহাপু চাচা বলেই ডাকতাম একই সুরে তাল মিলিয়ে।
এক বাসায় থাকাতে কিছু দিনের ভেতর তিনি আমাদের মামার বাসার পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন।
বলাই বাহুল্য যে, সেই ছোটবেলা থেকেই নেহাপুর ভীষণ কাতুকুতু। গায়ে হাত না দিয়ে কেউ দূর থেকেও যদি তার দিকে আঙ্গুল নাড়ায় তাহলেও হেসে কুটি কুটি হত। আর আমি তো সামান্য সিগনাল দিলেই কাজ সফল(হাসিতে নিহত) হত। এ জন্য সবচেয়ে ভয় পেত আমাকে(কাতুকাতু দেওয়ার ক্ষেত্রে)।
তার এই দুর্বলতার সুযোগ সবাই বড় আনন্দের সাথে গ্রহণ করত। এমদাদ আঙ্কেলও অল্প সময়ের ভেতর এই বিষয়টি জানলেন এবং সকলের মত তিনিও সুযোগ পেলেই নেহাপুকে কাতুকুতু দিতেন।
একদিন....
একদিন মামার বাসায় সবাই উপস্থিত কোন এক আয়োজনে ঠিক মনে নেই, কি নিয়ে যেন খুব হাসাহাসি হচ্ছে তারই ভেতর আমি দেখতাছি এমদাদ আঙ্কেল নেহাপুকে আরও হাসাবার জন্য পায়ের তলায় কাতুকুতু দিচ্ছে আর নেহাপুটাও হেসে লুটোপুঁটি খাচ্ছে। তারই মধ্যে হঠাৎ এক মুহূর্তের জন্য নেহাপু থেমে গেল। আমার চোখগুলো উল্টে যাওয়ার উপক্রম!! ওমা নেহাপু হাসে না কেন? স্ট্যাচু এর মতন আমার দিকে থাকিয়ে আছে। তার কাছে গেলাম - " এই তর কি হইছে হুট করে দেখি হাসি অফ "। কিন্তু মনে হল - এই স্পর্শ স্বাভাবিক নয়, চাচা শুধু মাত্র নেহাপুকে হাসাবার জন্য এটি করছেন না। তিনি স্পর্শ করছে অন্য ভঙ্গিতে। হ সেদিনকার আমার ধারনাই ঠিক ছিল!! এক সেকেন্ডের মধ্যে নেহাপু পাথর হয়ে গেল, মনে হল নেহা আক্ষরিক অর্থেই হাসি বন্ধ করে স্থির হয়ে গেছে। আমার পুরাটাই মনে আছে সেদিন নেহা বরফ চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল -"আমার কাতুকুতু লাগে না। হাত সরান।"
তিনি ভ্যাবাচকা খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার নেহাপুর পায়ের তলায় আঙ্গুল নাড়লেন, হায় আল্লাহ সেই নেহাপু পাথর হয়ে আবার চাচাকে বলতে লাগলো -" লাগে না কাতুকুতু, দেখলেন তো। অযথা আর গায়ে হাত দেয়ার দরকার নেই"।
কি হয়েছিল নেহাপুর সেদিন?
এক মুহূর্তের জন্য শুধু সে মনে করছিল -"তার একটা দুর্বলতা একজন মানুষকে সুযোগ তৈরি করে দেবে তার গায়ে হাত দেবার। কক্ষনো না।"
এই গল্প বিশ্বাস না করে আমাদের অনেক রিলেটিভস , নেহাপুর অনেক বান্ধবী, মামা এমনকি আমার আম্মু নিজেও নেহপুকে কাতুকুতু দিয়ে দেখেছে সে হাসে কি না। তাদের কাছে এটা অবিশ্বাস্য, এটা হতেই পারে না, সম্ভব না। আর আমি তো সেদিনের পর থেকেই তার কাছে হেরেই গিয়েছিলাম(কুতুকুতু দিয়ে হাসাতে না পারায়)।
অথচ সেদিনের পর রিয়েলি আর সে হাসেনি। কোনদিন আর হাসেনি(আজ পর্যন্ত)।
এই ঘটনাই নেহাপুকে আমুল বদলে দিয়েছিল। নিজেকে সেই প্রথম সে চিনল। বুঝলাম -"সে চাইলেই পারে"।
চারিদিকে যখন অসংখ্য নির্যাতিতা নারী দেখি তখন আমি ভেঙ্গে পরি না। যখন দেখি বারংবার চেষ্টা করেও একটা মেয়ে পারছে না কিছু করতে তখনও ভেঙ্গে পরি না। নারী অধিকার পায় না, বিচার পায় না, সম্মান পায় না দেখেও ভেঙ্গে আমি পরি না।
আমি ভেঙ্গে পরি তখন যখন দেখি একজন নারী নিজের শক্তির ওপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না।
"আপনি পারেন", "আমি পারি" এই শব্দটা আপনাকে সকল অনিয়ম অনাচারের উর্ধে নিয়ে যাবে। একবার বিশ্বাস করে দেখুন। আপনি পারবেন।
আপনার চোখ আর মনের সর্বশক্তি এক করে একবার বলে দেখুন -"অনেক হয়েছে, এবার থাম"। দেখবেন সকল ঝড় থেমে গেছে।
_______________________________________________-স্পর্শনীল
ফেসবুকে আমি_ https://www.facebook.com/sparshonil
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×