রিয়েল লাইফে খুব প্রানবন্ত এবং মনখোলা টাইপের মেয়ে হলেও সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর ক্ষেত্রে একটুও ইন্টারেস্ট নেই তিশার।ঘন ঘন সেলফি তুলে আপলোড দেওয়া,কোথায় আছি,কি করছি,কি খাচ্ছি এইসবের চেক ইন দিয়ে সবাইকে জানানো- সব কিছুই মেকী মনে হয় তিশার কাছে।ওর কাছে এইগুলার কোন ভ্যালু নেই।অবশ্য আরও একটা কারণও আছে।সাধারণ অর্থে সুন্দর বলতে যা বোঝায় তিশা তা নয়।একটা মোটা,কৃষ্ণবর্ণ মেয়ে ফেসবুকে আইডি খুললে হাজারো সমালোচনার মুখোমুখি হতে হত।এমনিতেও সেই ছোটবেলা থেকেই গায়ের রঙ আর ফিগারের জন্য তাকে অনেক হেস্তনেস্ত হতে হয়েছে।অনেক কথা মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়েছে।কলেজে ওঠার পর থেকে বান্ধবীদের যখন দেখত তারা তাদের ছেলেবন্ধুদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যায় অথবা কোন গিফট কেনে, তিশা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর মনে মনে বলে,‘আমার জীবনে কেউ কোন দিন আসবে না,আমাকে কেউ পছন্দ করবে না।’
তিশার খুব কাছের বান্ধবী সামিহা।সারাটা দিন ফেসবুকে থাকে সামিহা। তিশাকে অনেকবার বলেছে ফে্সবুকে আইডি খুলতে কিন্তু প্রতিবারই তিশার একটাই কথা,‘না!!!’কিন্তু কি মনে করে যেন ফেসবুকে আইডি খুলে ফেলে তিশা।অবশ্য নিজের কোন ছবি দেয় না প্রোফাইলে কিংবা কভারে।ফেসবুকেই ওকে রিকুয়েস্ট পাঠায় রবিন। হটাৎ করেই তিশাকে একদিন অনলাইনে পেয়ে নক করে রবিন।টুকটাক কথাবার্তা হয় ঐদিন। তিশার সবসময়ই খুব সাধাসিধে টাইপের পছন্দ। রবিনের সাথে চ্যাট করে সাধাসিধে টাইপেরই মনে হয়েছে তিশার কাছে।কিন্তু রবিনের ফেসবুকের ছবিগুলো দেখে ওর স্টাইল একদমই পছন্দ হয়না তিশার।মাথার চুল সবসময় খাঁড়া করে রাখা,অদ্ভুত ডিজাইনের টিশার্ট পরা নিয়ে একদিন তিশা রবিনকে বলে।সাজেসট করে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য।তিশার কথা শুনে রবিন নিজেকে পরিবর্তন করে।আগের সেই স্টাইল বাদ দিয়ে একদম ফরমাল হয়ে একদিন ক্যাম্পাসে যায় রবিন।এমন কি নিজের ফেসবুকের প্রোফাইলে আর কভারেও ছবি পরিবর্তন করে।সবাই পছন্দ করে রবিনের এই বদলে যাওয়া। তিশাকে ধন্যবাদ জানায় রবিন।
একদিন রবিন তিশাকে রিকুয়েস্ট করে নিজের একটা ছবি আপলোড করার জন্য। তিশা সন্দিহানে পরে যায়।কি করবে বুঝতে পারছিলনা না।পরে ওর বান্ধবী সামিহাকে ফোন করে জানায় বিষয়টা।সামিহা ওকে অভয় দিয়ে ছবি আপলোড করতে বলে।পরে তিশা ওর আর সামিহার একটা গ্রুপ ছবি আপলোড দেয়।ছবি আপলোড হওয়ার পর রবিন জিজ্ঞেস করে,‘এই দুজনের মধ্যে কোনটা তুমি?অবশ্য যেটাই হও না কেন আমার কি তাতে?মানুষ হিসেবে তুমি অনেক ভালো।’ তিশা জিজ্ঞেস করে,‘তুমি কি করে বুঝলে?’ রবিন বলে,‘আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি।’ ঠিক ঐদিন থেকে তিশা বুঝতে পারে, হয়ত সে রবিনের প্রেমে পড়েছে।হয়ত রবিনও তিশাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।
ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে তিশা রবিনের পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করে।নিজের বাবা,মা আর একমাত্র বড় বোনের কথা বলে।বোনের কয়দিনের মধ্যে বিয়ে হবে এটাও জানায়।‘আসলে বোনের বিয়েটা হবে নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথে।আমার হবু দুলাভাই মানুষ হিসেবে ভালো।দেখতেও অনেক হ্যান্ডসাম।আপুর অনেক কেয়ার করে,অনেক গিফট কিনে দেয়।আপু আর দুলাভাইকে একসাথে দেখলে মনে হয় তারাই দুনিয়ার সেরা জুটি।’-তিশাকে বলে রবিন।
একদিন তিশার কাছে ফোন নাম্বার চেয়ে বসে রবিন।সামান্য গড়িমসি করলেও শেষ পর্যন্ত নাম্বারটা দিয়ে দেয় রবিনকে। এভাবেই কয়েক মাস কথা বলার পর রবিন দেখা করতে চায় তিশার সাথে।কবে দেখা করতে পারবে সেটা রবিনকে পরে জানাবে বলে ঐ দিনের জন্য কথা বলে ফোন রেখে দেয়।কিছুক্ষন পর সামিহাকে ফোন দেয়। সামিহাকে সব কিছু জানায় তিশা। সামিহা বলে দেখা করতে। তিশা বলে,‘যদি আমাকে পছন্দ না করে?’ সামিহা তিশাকে অভয় দিয়ে জানায়, ‘রবিন তো অলরেডি বলে দিয়েছে মানুষ হিসেবে ও তোকে পছন্দ করেছে।তো এখানে অপছন্দ করার কি আছে?আর ফেসবুকে তোর আর আমার যে ছবি আপলোড দেয়া হয়েছে সেখানে তো ও কখনও ঐভাবে জিজ্ঞেস করেনি কোনটা তুই...তাই না?তো ভয় কেন পাচ্ছিস? কালই তাহলে দেখা কর। আর একটু সেজে যাস।অল দ্যা বেস্ট।’পরেরদিন দেখা করার কথা এসএমএস করে জানিয়ে দেয় তিশা।
পরেরদিন একটা রেস্টুরেন্টে দেখা হয় রবিন আর তিশার। রবিনই আগে আসে। অপেক্ষা করে তিশার জন্য। কিছুক্ষণ পর তিশা আসে। দূর থেকেই রবিনকে দেখে চিনতে পারে তিশা। রবিনের কাছে যেতেই রবিন তিশার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায় সিট থেকে। আর ঐ সময়ই রবিনের আসল রূপ ফিরে আসে। উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে,‘তুমি তিশা? আমি তো ভেবেছিলাম ফেসবুকে তোমার পাশে সুন্দর করে যে মেয়েটি ছিল আমি এত দিন তার সাথে চ্যাট করেছি,ফোনে কথা বলেছি। তুমি কিভাবে পারলে আমার সাথে এইভাবে প্রতারণা করতে?আমার সাথে রিলেশন করার আগে তো তোমার নিজের দিকে তাকানো উচিত ছিল। তুমি তো আমার নখেরও যোগ্য না।’ হটাৎ করে রবিনের কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করেনি তিশা।এইরকম অপমানজনক কথা শুনে তিশাও চুপ থাকেনি, সেও বলে উঠল, ‘আমি কখনও তোমার সাথে প্রতারণা করিনি,তুমি কখনও ঐভাবে জানতে চাওনি আর তুমি তো বারবারই আমাকে বলেছিলে "মানুষ হিসেবে তুমি আমমাকে পছন্দ করো, আমার চেহারা দেখে নয়"। তাহলে এখন আবার দেহকে প্রাধন্য দেও কেন? বুঝলাম তুমি একজন 'দেহ প্রেমী'। 'তুমি যে এটা বলবা সেটা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল!!
ইয়েস, এই ভার্চুয়ালে অনেক কিছুই ঘটে থাকে যাহা আপনার আমার কল্পনার বাহিরে। সো টুট টুট টুট..
বালিকা,একটু সাবধান। নইলে পুড়ে যাবে সব সুখ!
________________________________________-স্পর্শনীল
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬