somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দয়া-দাক্ষিণ্য একজন নাগরিকের চাহিদা হতে পারেনা, হিজড়াদের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, এমপি, বলেছেন, আইনগত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজড়াদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে কোথাও কোন ধরণের বৈষম্যের অবকাশ রাখা হয়নি। এই বৈষম্য আমাদের সমাজ তৈরি করেছে। কোন হিজড়া বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, আশ্রয়ের অভাবে গাছতলায় রাত্রি যাপন করবে অথবা বিনা পোষাকে থাকবে, এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
গতকাল (২৯ এপ্রিল, ২০১৫) বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে “তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ করনীয়” শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, অন্যান্য নাগরিকের মতোই হিজড়াদের সকল অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায় হিজড়ারা মাথা উঁচু করে সকলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশ উন্নতির শিখরে পৌছাতে সক্ষম হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (জামাকন) এবং বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের করণীয় নির্ধারণ নির্ণয়ের সম্ভাব্য দিকগুলো খুঁজে দেখা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট তারানা হালিম, এমপি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূপন কান্তি শীল, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মিস. নিরূপা দেওয়ান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব মো: আমজাদ হোসেন খান এবং বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র চেয়ারপারর্সন আনিসুল ইসলাম হিরু।
বিশিস্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হেসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াদের যে স্বীকৃতি তার আইনি রূপ দেওয়া দরকার। রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন সেবা ও সুযোগে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই প্রান্তিকতা ঘুচিয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা, সমাজে তাদের স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং তাদের জীবনমানে লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব। ভুলে গেলে ভুল হবে যে, প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে নিজের জেন্ডার বা লিঙ্গীয় পরিচয় বেছে নেওয়ার এবং এই যৌনপ্রবণতা ও লিঙ্গীয় পরিচয়ের কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে কাউকে বৈষম্য করার কোনো সুযোগ নেই। বঞ্চিত করা হলে তা হবে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
রোবায়েত ফেরদৌস তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, বাংলাদেশ কোনো মনোলিথিক রাষ্ট্র নয়; এটি একটি বহুজাতি, বহুধর্ম, বহুভাষা ও বহুলিঙ্গ ও বহুসংস্কৃতির বৈচিত্র্যপুর্ণ রাষ্ট্র; রাষ্ট্র পরিচালনায় ও সংবিধানের ধারায় এই বহুত্ববাদী নীতির প্রতিফলন থাকতে হবে। এই বহুত্ববাদই বিউটি অব ডেমোক্রেসি Ñ গণতন্ত্রের আসল সৌন্দর্য। কাজেই রাষ্ট্রকে কেবল ধর্মনিরপেক্ষ হলেই চলবে না, একে একই সঙ্গে জাতিনিরপেক্ষ, ভাষানিরপেক্ষ, লিঙ্গনিরপেক্ষ ও যৌননিরপেক্ষ হতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, সংখ্যা দিয়ে মানুষের মর্যাদা পরিমাপ করা যায়না। দয়া-দাক্ষিণ্য একজন নাগরিকের চাহিদা হতে পারেনা। প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তারানা হালিম, এমপি, বলেন, হিজড়াদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তাদের সংখ্যা নির্ণয় জরুরি। এ লক্ষ্যে আদম শুমারীতে হিজড়াদের অন্তুর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবী।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূপন কান্তি শীল বলেন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৩৫ জেলায় হিজড়াদের উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর স¤প্রসারিত করেছে এবং তাদের জন্য বরাদ্দ বাজেটকে আগামী অর্থবছরের জন্য চার কোটি থেকে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৮ জন হিজড়াকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র চেয়ারপার্সন আনিসুল ইসলাম হিরু বলেন, হিজড়াদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বন্ধু গত ১৮ বছর যাবৎ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সেমিনারে হিজড়া প্রতিনিধি, সমাজ সেবক, উন্নয়ন কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবি, শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র পক্ষ থেকে লাবণ্য হিজড়া ও নদী হিজড়াকে সাহসিকতার সন্মাননা পদক প্রদান করা হয়। স¤প্রতি তারা দু’জন হত্যাকারীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।

*সেমিনারে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়।
উলে­খযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে -
- হিজড়াদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে; এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদকে কাজ করতে হবে।
- সংরক্ষিত নারী আসনের মতো হিজড়া সমাজের জন্য কমপক্ষে ০৫টি আসন সংরক্ষণ করা দরকার।
- সরকারি/বেসরকারি ফর্ম বা কাগজ যেমন ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য আলাদা বক্স/ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে।
- সরকারি হাসপাতাল/কমিউনিটি ক্লিনিকে হিজড়াদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে হিজড়াদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়, এটি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- হিজড়াদের জন্য পরিকল্পিত আবাসনের ব্যবস্থা করা; খাসজমির বন্টনে বয়স্ক হিজড়াদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার আইনে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার যাতে তারা বঞ্চিত না হয়। আইন ও নীতিমালা থাকার পাশাপাশি তার বাস্ত­বায়নেও যথাযথ পদক্ষেপ দরকার।
- পাঠ্যপুস্তকে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত ও সঠিক তথ্য দিয়ে হিজড়াদের ইস্যু যেমন তাদের পরিচয়, অস্তি­ত্ব, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য উপস্থাপন করতে হবে।
- গণমাধ্যমে হিজড়াদের বিকৃত, কৌতুককর ও অপমানজনক রিপ্রেজেন্টেশন বন্ধ করতে হবে; সঠিক ও ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে নিয়ে খবর ও অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
- হিজড়াদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। হিজড়াদেরকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করা।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে হিজড়া কোটা চালু করা দরকার। চাকুরির সুযোগ দরকার এবং ‘আদিবাসী’দের মতো হিজড়াদের জন্য চাকুরিতে বিশেষ কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

 যোগাযোগ: জাহিদ আল আমীন, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।
 ফোন: ০১৭৭৮৩১২৩৪৫। ই-মেইল: [email protected]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×