somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে জ্বলেছে বাঘাইহাট : একজন জুনিয়র অফিসারের ব্যক্তিগত মতামত

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


DISCLAIMER: ইতোপূর্বে আমি খাগড়াছড়ি থেকে একজন সেনা অফিসার কর্তৃক তার উদ্বিগ্ন সহকর্মীদের কাছে পাঠানো ইমেইলটি খানিকটা সম্পাদনা করে উদ্বৃত করে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম. Click This Link

এখন অকুস্থল থেকে পাঠানো আরেকটি ইমেইল ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে উদ্ধৃত করলাম. এটি একজনের ব্যক্তিগত মতামত, পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক না. কিন্তু, প্রথম আলো গং (সামুর মাঠসহ) যেভাবে একচোখা, পরিকল্পিত ও ব্যপক সেনাবিদ্বেষী প্রচারণা চালিয়েছে তার সাথে মিলিয়ে ঘটনাটা অন্যদৃষ্টিতেও দেখুন এবং নিজের সিদ্ধান্তে আসুন – এই কামনায় ...ধন্যবাদ
------------------------------
বাঘাইহাট জায়গাটি খাগড়াছড়ির রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যে পড়েছে. এখানে বাঙ্গালি দু-রকমের. আদি বাঙ্গালিরা ১৯৪৭ সালের পূর্ব থেকেই ছিল. অধিকাংশ বাঙ্গালি, যারা সেটলার বাংগালি হিসাবে পরিচিত তারা ২০০৬ সালে এসে পূণ:সেটেল করেছে. উপজাতিরাও সেটেলার এখানে, তফাত্ শুধু, তারা বিভিন্ন সময়ে এসে সেটেল করেছে. রিজার্ভ ফরেস্ট হওয়ায় পার্বত্য অন্যান্য এলাকার মত এখানে আইনত কোন ব্যক্তিগত জমি ছিল না. তারপরও একটি স্থিতাবস্থা বজায় ছিল. শুরু থেকেই ইউপিডিএফ বাঙ্গালিদের বসতি স্থাপনের ঘোর বিরোধিতা করে আসছে. তাদের ধারণা, বাঙ্গালি বসতি যখন শুরু হয়েছে তখন তাদের বসতি বাড়তেই থাকবে এবং ইউপিডিএফ-এর আয়ে আরও বেশি করে ভাগ বসবে. তাদের প্রধান আয়ের উত্স হল কাঠ; বনবিভাগের জনবল স্বল্পতা ও উদাসীনার ফলে তাদের আয়রোজগার ছিল রমরমা. বাঙ্গালি সেটেলারদের যেহেতু জোর করে উচ্ছেদ সম্ভব না, তাই তারা অন্য পথ ধরলো – স্থায়ীভাবে বাঘাইহাট বাজার বন্ধ করে দেয়া. কারণ, বাঙ্গালিরা অধিকাংশই ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, আয়রুজির পথ বন্ধ হয়ে গেলে তারা নিজেরাই বাঘাইহাট ছেড়ে যাবে. একই পরিণতি ঘটবে গঙ্গারামপাড়ার অতি দরিদ্র বাঙ্গালিদেরও – তাদেরও এক সময় স্বাভাবিক বিলুপ্তি হবে. আর দৈনন্দিন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বাঙ্গালি বিতাড়ন পর্ব আরও জোড়ালো হবে বড় কোন দাঙ্গা ছাড়াই. এই দৈনন্দিন নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতেই ইউপিডিএফ স্থানীয় উপজাতিদের তুচ্ছ কারণে উস্কানি দিত. এবারও একই ঘটনা ঘটেছে.
পাথরমনি চাকমা নামে এক পাহাড়ি তার বিরোধপূর্ণ জমি বিক্রি করেছিল শাহআলম নামে এক বাঙ্গালির কাছে. ইউপিডিএফ পাথরমনিকে চাপ দিচ্ছিল যেভাবেই হোক তার জমি ফেরত্ নিতে. শাহআলমকে টাকা সাধা হয়েছে, হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, কিন্তু সে অনড়, জমি ছাড়বে না. হঠাত্ করেই একদিন ‘সাজেক নারী সমাজ’ ব্যানারে এক উপজাতি দল ইউপিডিএফ-এর টাকায় হলুদ চাষ প্রকল্পের উদ্দেশ্যে সেই সামান্য জমিতে কুড়েঁঘর তোলা শুরু করে. বনবিভাগের লোকেরা ঘর তোলায় বাধা দেয়, শেষ পর্যন্ত ইউপিডিএফ-কে চিঠি দেয় বিরোধপূর্ণ জমিতে কোন প্রকল্পের টাকা না দেয়ার জন্য. এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ায়ই পাহাড়িরা ক্ষেপে দাঙ্গার পথে পা বাড়ায়. জানা গেছে, জোসনা চাকমা ও স্বপনিকা চাকমা নামের দুই ওয়ার্ড মেম্বারকে ঐ প্রজেক্টের জন্য ৫-লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছিল. ব্যর্থতার এই পর্যায়ে ইউপিডিএফ বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জন্য তাদের ২-লাখ টাকা দেয়. পাহাড়িরা কোন বাস্তব কারণ ছাড়াই বাঘাইহাট বাজার বয়কটের ডাক দিয়ে লিফলেট ছাড়ে ও বয়কট শুরু করে.

এ সময় বাঙ্গালিরা চান্দের-গাড়ি হিসাবে পরিচিত পরিবহণ সার্ভিস বন্ধ করে দেয়, কারণ অধিকাংশের তারাই মালিক. ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পর এবার পাল্টা-প্রতিক্রিয়া দেখায় পাহাড়িরা, তারা দা-লাঠি নিয়ে আর্মির গাড়ি চলা বন্ধ করার পথ নেয়. পাশাপাশি, সশস্ত্র ইউপিডিএফরা বাঙ্গালিদের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে.

এই পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসন সমাধানের জন্য হস্থক্ষেপ করে. তারা উভয় পক্ষের লোক নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন করে সংলাপ শুরু করে. তারা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যায়. শেষ মিটিং হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে. পরবর্তি মিটিং হওয়ার কথা ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে. কিন্তু, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আনুমানিক ২২৪৫ ঘটিকায় একদল দুষ্কৃতিকারি গঙ্গারামপাড়ায় ১২টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় (৮টি পাহাড়ি ও ৪টি বাঙ্গালি). রাতেই সেনাবাহিনী অকুস্থলে গিয়ে আগুন নেভায় এবং লোকজন বাড়ি ছেড়ে যায়. পরের দিন সকালে ০৮০০ ঘটিকার দিকে ৪-৫ শত পাহাড়ি পরিকল্পিতভাবে বাঙ্গালি পাড়ায় সকল বাড়িতে একযোগে আগুন লাগায় (বাড়িগুলো অনেকটুকু জায়গা নিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল). এ সময় সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট রেজাউল পোস্ট থেকে বেড়িয়ে তাদের সাথে কথা বলতে গেলে থাকে তাকে মারাত্মকভাবে দা দিয়ে কুপিয়ে তাদের জখম করে. প্রায় ২০০ পাহাড়ি তখন বাঙ্গালি পাড়ার এক প্রান্তে থাকা ঐ পোস্টটি ঘিরে ফেলে. এমন পরিস্থিতিতে তাদের পিছু হটাতে পোস্ট থেকে আকাশের দিকে দুই রাউন্ড গুলি করা হয়. এর মাঝে সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসিরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি করতে থাকে. এমন কি, আহত সার্জেন্টকে আনার জন্য এম্বুলেন্স (পিকআপ) গেলে তাতেও গুলি করে, গাড়ির উইন্ডশিল্ড ভেঙ্গে যায়. পাহাড়িদের অন্য একটি সশস্ত্র দল গুচ্ছপ্রামে জড়ো হয়ে সেনাবাহিনীর জোন সদরের উপর গুলি বর্ষন করে (পার্বত্য চট্টপ্রামের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম, ২৩ বত্সরের গৃহযুদ্ধকালীন এমন সাহস তারা করেনি). এ সময়ে সেনাবাহিনী পাড়ায় টহল পাঠায়, ক্রসফায়ারে মারা যায় এক পুরুষ ও এক নিরাপরাধ মহিলা (ঐ পুরুষের ব্যপারে জোর ধারণা, সম্ভবত সন্ত্রাসিদের গুলিতে সে মারা গেছে. কারণ, ঘটনা ঘটেছে গোরাগ্রামে, গুলির চিহ্ণ তার ছিল পিঠে, পোস্টের ফায়ারে মারা গেলে তা সামনে হওয়াটাই যৌক্তিক হত). এর মাঝে পাহাড়ি জ্বালিয়েছে বাঙ্গালি পাড়া আর বাঙ্গালি জ্বালিয়েছে পাহাড়িদের – সবকিছু জ্বলেপুড়ে শেষ.
২০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×