somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়না-কোরিয়া ও আমাদের শিল্প-প্রযুক্তি

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় বরাবর চাইনিজ পেন্সিল ব্যবহার করতাম. একদিন কোরিয়ান একটা পেন্সিল কিনে আনলাম. দেখি, খসখসে লিড, কিছু লেখা যায় না, আর কাঠের উপর রঙ না দিয়ে কাগজ মুড়িয়ে দিয়েছে. কোরিয়ান জিনিসের প্রতি একটা অশ্রদ্ধা জন্মেছিল. এখন দেখি কোরিয়ান শিল্প-প্রযুক্তি কোথায় গেছে - স্যামসাং সমানে পাল্লা দিচ্ছে সনির সাথে!

আমার ছোটবেলায় চাইনিজ ফিনিক্স সাইকেল, ফ্লাইং ইগল ব্লেড (লোহার, জং ধরে যেত), নানান কার্টুন আঁকা পেন্সিল, ৫৫৫ পেন্সিল ব্যাটারি, রোডহার্ট ইস্ত্রি, জ্যামিতি বক্স, মোরগ মার্কা কয়েল, পান্ডা রং পেন্সিল - এসব হাতে গোনা পণ্যের সাথ পরিচিত ছিলাম. এসব পণ্যতালিকা বহুদিন বদলায়নি. ৯৪ সালে চায়না ছিলাম প্রায় ৫ মাস। একদিন খবরে দেখাল, চায়নায় ভিসিআর তৈরির খবর। আগে ভিসিআর-এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করত, এখন পুরা ভিসিআর বানাচ্ছে -– সেটা নিয়ে প্রতিবেদন। আমার আফ্রিকান সহকর্মী ইয়া ঢাউস চাইনিজ একটা টু-ইন-ওয়ান কিনে আনল, সপ্তাহ না যেতে তার ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা প্র্যাকটিকালের প্রায় স্থায়ী সুযোগ করে দিল, এমন জঘন্য কোয়ালিটি। তখন ওয়ান-টাইম ক্যামেরা ছাড়া কেনার মত চাইনিজ কোন ক্যামেরা ছিলনা। পুরো চায়নার ৫% লোকও তখন দাঁত মাজত না। বাংলাদেশে যে গোল্ডফিশ ব্রান্ডের টয়লেট পেপার আসত, সেটাই সবচে ভাল মানের, সাধারণ চাইনিজরা যে টয়লেট পেপার ব্যবহার করত তাতে পশ্চাদদেশের চামড়া উঠে আসার ভয় ছিল. একদিন পাবলিক টয়লেটে গেছি পেশাব করতে, দেখি সিমেন্টের তক্তায় পাসাপাশি বসে গর্তে পায়খানা করছে আর নিউজপেপার পড়ছে – কাজ শেষে ঐ পেপার তাদের টয়লেট পেপার! চায়না থেকে আনার মত কোন ইলেকট্রনিক্স আইটেম ছিল না। কিন্তু তখন দেখেছি, কীভাবে প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে চীন - এখানে সেখানে এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন গড়ে উঠছে। সেই থেকে চাইনিজ ইলেকট্রনিক্স আইটেমের প্রতি একটা দারুন উন্নাসিকতা ছিল। ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে গেলাম ইউএসএ-তে, পরিকল্পনা ল্যাপটপ কেনার. কেনার সাধ্যের মাঝে সবই চাইনিজ, কিনলাম আমার ডুয়েল-কোর সনি ভায়ো. মাত্র কিছু বছর -– ভিসিআর থেকে সনি ভায়ো, কী অসাধারণ উত্তরণ! আর আমাদের উত্তরণ টয়লেট পেপার আর মশা-বান্ধব (!) কয়েল বানানোতে!!

যে জিনিসটা বলা হয়নি, তা হল উদ্যম, উদ্যোগ আর সাহস। এখানে আমরা বিস্তর পিছিয়ে। সেই ষাটের দশক থেকে গাড়ির ব্যাবসা করে নাভানা এখন আচার-বিস্কুট বানাচ্ছে, রিয়েল এস্টেটে পড়ে আছে। তারা গাড়ি বানাবে না, তার চেয়ে আমদানিটা অনেক সহজ, রিস্ক-ফ্রি। হিসাব নিয়ে দেখুন, বাংলাদেশে দৈনিক গড়ে কমপক্ষে ৫০০টা মটরসাইকেল বিক্রি হয়, এমন মটরসাইকেল কারখানা একবছরে পয়দা করতে পারেন এমন ধনী আঙ্গুলে গুনে কুলানো যাবে না, কিন্তু সেই উদ্যম, উদ্যোগ, রিস্ক নেয়ার লোক এ দেশে নাই। আমি মনে করি নাভানা, ইসলাম গ্রুপ, বেক্সিমকো, ৱ্যাংস, বসুন্ধরা, আনোয়ার, উত্তরা, এইচএস -– এসব কোম্পানি দেশে টেক-ট্রানসফার না করে অপরাধ করছে. বাংলাদেশে দেশপ্রেমের সাথে শিল্প-ব্যবসা যায় না, নাকি দেশপ্রেমের অভাব –- বুঝতে পারি না. তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে না, বোঝা গেছে –- আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে তাদেরকে বাধ্য করার. সরকারের উচিত - সুনির্দিষ্ট টেক-ট্রান্সফার, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে প্রয়োজনীয় পলিসি-সাপোর্ট ও ইনসেনটিভ দিয়ে তাদের টাইমফ্রেম বেধে দেয়া.

মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে কৃষিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে. শিল্প ও প্রযুক্তি বিষয়ে এমন একটা অনুষ্ঠান খুব উপকারি হতে পারে. কিন্তু এখানেও নকল –- অন্ধ অনুসরণ, সব চ্যানেলেই কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান - শিল্প ও প্রযুক্তি নিয়ে, বিশেষত কুঠিরশিল্প ও প্রযুক্তি বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান কেউ করছে না. কেউ একজন এগিয়ে এলে দর্শকপ্রিয়তা পেলে তখনই কেবল অন্যরা এমন অনুষ্ঠান করবে! আমরা মাঝে মাঝেই শুনি অমুক-তমুক এই-সেই আবিস্কার করেছে. তার কোন পেট্রোনাইজেশন নাই! সবাই সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে. আমাদের অথর্ব প্রশাসন, অথর্ব প্রশাসন, কিন্তু কর্পোরেট দায়িত্ব হিসাবেও কারও সহায়তার কথা শুনি না. হায়, কবে যে আমরা দেশি প্রযুক্তির একটা কিছু কিনে গর্ব করতে পারব!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৪৩
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×