somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তিচুক্তি-পরবর্তী পাহাড়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৭ বছর পূর্তি ও ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বরে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলোর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর মধ্যে। তখন সবাই আশা করেছিল, এই চুক্তি পাহাড়ি এলাকায় পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলো দীর্ঘ দিনের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি ঘটিয়ে তাদের দেশের মূলস্রোতে নিয়ে আসবে, পাহাড়ে বাঙালি-নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠিরা মিলেমিশে বসবাস করবে, বইবে কাঙ্ক্ষিত শান্তির সুবাতাস।

ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর কারণে পাহাড়ি বাঙালিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেসবুক পেজ CHT-Jummaland থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হল –

'সেটেলারদের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে ফেলাই উত্তম কাজ হবে। কারণ, ...(৫টি কারণ)...বাংলাদেশ সরকারের অনেক টালবাহানা সহ্য করেছি, অতএব আর নই! সেটেলারদের সাথে যুদ্ধ করে হয় জীবন দেবো, না হয় পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেটেলার মুক্ত অঞ্চলে পরিণত করবো!' কিংবা,

'এত সুন্দর সুন্দর পর্যটন বানানোর দরকারটা কি? কয়েকদিন পরেইতো সকল দখলকৃত পাহাড়িদের জমির সাথে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ফিরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙ্গালীদের সমতলমুখী হতে হবে। পাহাড়ে পাহাড়িদের জন্য স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সমতল থেকে পাহাড়ে আসতে চাইলে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে পাহাড়ে আসতে হবে। আর সেই ভিসা যে সহজে সেটেলার ও সেনাবাহিনীকে দেয়া হবে না তা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।'

উপরে দেয়া উদ্ধৃতি কোন বিচ্ছিন্ন স্ট্যাটাস নয়, পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠিগুলোর সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। পাহাড়ি নৃগোষ্ঠিগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে সরকার, পাহাড়ি বাঙালি ও সেনাবাহিনী তথা দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যা কোনভাবেই কাম্য ছিল না। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ এ সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগার ফিউশন ফাইভ 'পার্বত্য চট্টগ্রাম : ওয়েবে আমার বাংলাদেশ যেভাবে ধর্ষিত হচ্ছে প্রতিদিন' শিরোনামে এক অসাধারণ গবেষণামূলক পোস্ট দিয়ে দেখিয়েছিলেন তাদের বাংলাদেশবিদ্বেষী প্রচারণার বিবরণ। তখন ফেসবুক এত জনপ্রিয় ছিল না, এখন ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এই ঘৃণা ও কুৎসাপিডিয়ার দৌরাত্ম্য আরও অনেক বেড়েছে। চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জনের জন্য এক নজর আদিবাসী নিউজ, Kapaeeng Foundation, CHTBDBLOG, VOICE OF JUMMALAND, Jumma Net, Jummapeoples, জুম্মো ব্লগ, Jumma Peoples Network UK, Genocide in Chittagong Hill Tracts, UNREPRESENTED NATIONS AND PEOPLES ORGANIZATION (UNPO), Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM), Asian Centre For Human Rights (ACHR) এর Asian Centre For Human Rights, Present Jummaland এবং নৃগোষ্ঠিগুলোর ফেসবুকের ব্যক্তিগতসহ পেজগুলোতে তাদের বক্তব্যে চোখ বুলানো যেতে পারে। পার্বত্য উপজাতি তথা নৃগোষ্ঠিগুলোর লেখালেখি বা ভাষ্যে তারা 'পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি'কে বলছে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি'। খুব সচেতনভাবেই তারা 'শান্তি' শব্দটাকে বিলোপ করে দিয়েছে, স্পষ্টতই শান্তি শব্দটাকে তারা কখনও তাদের মনমানসিকতায় স্থান দিতে পারেনি বা হয়ত তারা শান্তি চায়ওনি।

ভূমিবিরোধ ছাড়া সরকার প্রায় সকল চুক্তির ধারা বাস্তবায়ন করার পরও পাহাড়িদের পৌনঃপুনিক অভিযোগ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এই ,ভূমিবিরোধের মূলে আছে পাহাড়ি গোষ্ঠির আদিম ভূমি-ব্যবস্থা, যা বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত নয়, সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণও নয়। তারা জমি দাবি করে, কিন্তু তার স্বপক্ষে দখলদারিত্বের প্রমাণ দেখাতে পারে না, দলিলতো নয়ই। স্মর্তব্য যে, ১৯৬৫ সালে CHT Regulation of 1900 এর ৩৪ ধারা রহিত করা হয়, ফলে ১৫ বছরের অধিককাল যাবত বসবাসরত অউপজাতিদের জমির মালিকানার অনুমতি দেয়া হয় – বাঙালিদের তাই অধিকাংশের রয়েছে মালিকানার সরকারি দলিল। অন্যদিকে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠি মালিকানার হাওয়াই দাবি করতে গিয়ে নানা স্থানে বনবিভাগের জমি দাবি করে বসছে, কোথাওবা খাস জমি, কোথাওবা অন্য বাঙালির জমি। কখনওবা ভুলে, কখনওবা মিথ্যা লোভে। পাশাপাশি তারা কাজ করে যাচ্ছে বাঙালি খেদানোর বিদ্বেষী এজেন্ডা এবং এরই আলোকে হঠাৎ উদ্ভাবিত আদিবাসী পরিচয়ের স্বীকৃতির ষড়যন্ত্রী ইচ্ছা। মূলত নৃগোষ্ঠিগুলোর বিরোধিতার কারণেই বারংবার ভূমিবিরোধের কোন সুরাহা হয়নি। এইখানে বাঙালি-নৃগোষ্ঠি সকলকে সাংবিধানিক নিয়মের আওতায় আসতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সকলের সমতাভিত্ত্বিক সততা ও ত্যাগের মনোভাব, সর্বোপরি, শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্তরিক ইচ্ছা। এছাড়া, চাকমাদের মূল ক্ষোভের কারণ যে কাপ্তাই জল-বিদ্যুৎ প্রকল্প, তা-ও পাকিস্তান শাসনামলের ঘটনা, এর দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের উপর বর্তায় না, এখানে সরকারকে দোষারোপ করে কোন ফলপ্রাপ্তি নেই, বরং তিক্ততা ও অবিশ্বাস বাড়বে, শান্তির পরিবেশ বিনষ্ট হবে। এই সমস্যার সমাধানে বাঙালি-নৃগোষ্ঠি সকলকে অসৎ নেতৃত্ব থেকে বেড়িয়ে এসে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে জলাঞ্জলি দিতে হবে। পাহাড়ি নৃগোষ্ঠিকে বুঝতে হবে, অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও শান্তিচুক্তিতে তাদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার মেনে নিয়ে তৎকালীন সরকার সাহসের সাথে চুক্তি করেছিল পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক বাঙালি জনগোষ্ঠি তথা 'জাতীয় স্বার্থ বিসর্জনের অভিযোগ' তুচ্ছ করে শুধুমাত্র শান্তি আনার লক্ষ্যেই (০২ রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ তারিখে বিবিসির সংবাদদাতা ফ্রান্সেস হ্যারিসনের রিপোর্ট দ্রষ্টব্য) এবং উপজাতীয় সংস্কৃতির স্বীকৃতির মাধ্যমে সাংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছিল এমএন লারমার স্বপ্ন।

শান্তিচুক্তির পরও সেখানে রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর কাছে। বেড়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীর গোষ্ঠির সংখ্যা আর তাদের তৎপরতা হয়েছে আরও অবাধ। চাঁদাবাজির ব্যাপ্তি বেড়েছে বহুগুণে। বছরে সেখানে চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়। বাঙালিরা এখনও তাদের জমিতে দল না-বেঁধে যেতে পারে না, অনেক স্থানেই তারা বন্দি গুচ্ছগ্রামের মানবেতর, নিগৃহীত জীবনে। তারা আপোষে চাঁদা দিচ্ছে অথবা অপহৃত হচ্ছে অথবা আহত-নিহত হচ্ছে, উৎখাত হচ্ছে ঘরবাড়ি ও জমিজিরাত থেকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৮ জন নিহত হয়েছে, ১২৬ জন আহত হয়েছে, ৮৭ জন অপহৃত হয়েছে, ৪৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে যার প্রায় সবগুলোর দায়দায়িত্ব পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠির। শান্তিচুক্তির শর্ত স্পষ্টতই লঙ্ঘিত হয়েছে, হচ্ছে। শান্তিচুক্তিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংবরন ও সন্ত্রাস বন্ধের ওয়াদা করেছিল – সেই অস্ত্র সংযত না হলে, সন্ত্রাস বন্ধ না হলে এই শান্তিচুক্তি অর্থহীন ও অকার্যকর হয়ে পড়বে। কেননা, কোন চুক্তিই কখনও একপক্ষীয়ভাবে পালিত হয় না, চুক্তি মানার সব দায় সরকারের না - পার্বত্য জাতিগোষ্ঠিকেও চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, নিজেদের করণীয়ের দায় নিতে হবে। দৃশ্যত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য পার্বত্য নৃগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে সন্তু লারমা উপযুক্ত একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না - পার্বত্য নৃগোষ্ঠির একটি বড় অংশ শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকে অদ্যাবধি শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে ও করছে এবং সর্বশক্তি দিয়ে শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এমনকি, বর্তমানে সেই বিরোধিতা আরও দল ও মতে বিখন্ডিত হয়েছে; পাহাড়ে আগে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদা আদায়, হত্যাকারী ছিল শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক দল, আর এখন তা দাঁড়িয়েছে তিন গ্রুপে – সন্তু লারমার অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে। এই সন্ত্রাসের শিকার সবাই পাহাড়ের নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি। পার্বত্যাঞ্চলে সেনাক্যাম্পগুলো ক্রমাগত কমে এসেছে এবং অনেক পরিত্যক্ত ক্যাম্পেই ঠাঁই নিয়েছে সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। আধিপত্যকামী পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলো চাঁদার মাধ্যমে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী মহলের অনুদানের অর্থে নিয়মিত ভারত ও মায়ানমারের রুট দিয়ে অস্ত্র নিয়ে আসছে। বস্তুত বিজিবি ক্যাম্পবিহীন অরক্ষিত ৪৫ কিমি দীর্ঘ পার্বত্য সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনা তেমন কোন কঠিন বিষয় নয়। গত বছর বিষয়টি নজরে আসে কতিপয় চাকমা সন্ত্রাসী কর্তৃক এমনই এক অস্ত্রের চালান ভারতের আসাম রাইফেলস ও মিজোরাম পুলিশ কর্তৃক আটকে দিয়ে চারজন বাংলাদেশী চাকমাকে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে (আসাম ট্রিবিউন-এ ১৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে আর দত্ত চৌধুরী লিখিত Smuggling of weapons from Myanmar worries authorities রিপোর্ট দ্রষ্টব্য)। এ ব্যাপারে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমন একটি ব্যাপক নৈরাজ্যময় সশস্ত্র কার্যক্রমের পরও পাহাড়ের সব সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার দাবি কতটা যৌক্তিক, তা পাহাড়ি নৃগোষ্ঠিকেই সুবিবেচনা করে দেখতে হবে। এটি একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলো তাদের অস্ত্র, গোলাগুলি, সশস্ত্র ক্যাম্প স্থাপন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-জখম ইত্যাদি বন্ধ না করলে সব সেনাক্যাম্প কোন যুক্তিতেই গুটিয়ে নেয়া যায় না। পার্বত্যাঞ্চলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় তিন যুগ ধরে ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে সেনাবাহিনীর অর্জিত সাফল্য কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসীর দাবির কাছে বিলিয়ে দেয়া য়ায় না – এটি নিশ্চিতভাবেই দেশবাসী তথা সরকারের ঐকান্তিক ইচ্ছা।

পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা খুবই শক্তিশালী, তাদের রয়েছে নিরঙ্কুশ আধিপত্য, বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব সেখানে নিতান্ত সংখ্যালঘু – এই ক্ষমতাকে অনেক সময় তারা পরিণত করেছে বাঙালি দলন-নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে। গোষ্ঠি ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষতাড়িত হয়ে তারা যখন বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ বা স্কুল প্রতিষ্ঠাকে পদে পদে আটকে দেন কিংবা বাঙালি পাড়া বা সেনাক্যাম্পে বিদ্যুতের লাইন দেয়ার বিরোধিতা করেন, সেটা ভূক্তভোগীদের নাগরিক অধিকারকে খর্বই শুধু করে না, বরং শান্তিচুক্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।
শান্তিচুক্তির পরে সরকার পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। একই সাথে ইউএনডিপি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এডিবি এবং প্রায় ১৫৩টি এনজিও ও বিভিন্ন উদ্যোক্তা সড়ক যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো, স্কুল, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, পর্যটন এবং চাকুরির সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন করেছে তা বাংলাদেশের অন্য যে কোন স্থানের উন্নয়নের হারের চেয়ে অনেক বেশি। পার্বত্য চট্রগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাস্তবায়তি উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রায় ৯৫ শতাংশই নৃগোষ্ঠিদের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিটি উপজাতীয় এলাকায় নির্মিত হয়েছে স্কুল-কলেজ, কিয়াংঘর, উপজাতীয় ছাত্রাবাস, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নৃগোষ্ঠিদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃগোষ্ঠি জনসংখ্যা ৬,৯৯,১৯৪ এবং বাঙালি জনসংখ্যা ৬,৪৫,১০৯ জন – অর্থাৎ উভয় জনগোষ্ঠি প্রায় সমান সমান। কিন্তু এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পার্বত্যাঞ্চলে জ্ঞাত ১০৯ টি এনজিওর কার্যক্রমের মধ্যে শুধুমাত্র বাঙালি জনগোষ্ঠিকে লক্ষ্য করে উন্নয়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে মাত্র ৩টি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জন্যে হয়েছে ৪৫টি এবং বাকি ৬১টি যেগুলো উভয় গোষ্ঠির জন্যে হয়েছে, সে সবের বাস্তব আওতা মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিকে কেন্দ্র করেই। অন্যদিকে শিক্ষা ও সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করে উপজাতি কোটা ভোগ করছে এই ১ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি, যার বড় অংশ ভোগ করে এককভাবে চাকমারা। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি, বিশেষ করে চাকমারা শিক্ষাদীক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়কাল ধরে সুযোগসুবিধাভোগী হয়ে সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি করে উপরোক্ত সকল একপক্ষীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও জেএসএস নেতা সন্তু লারমা এখনও দাবি তুলছেন, – ১) সাড়ে তিন লক্ষ বাঙালি অধিবাসীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়ার, ২) পার্বত্য বাঙালি দেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার, ৩) সমস্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নেয়ার, ৪) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনা-অভিযান পরিচালনা না করা ইত্যাদি। অন্যদিকে আছে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকার নানা অবমাননাকর নিষেধাজ্ঞা ও বিড়ম্বনা। বাঙালিরা এখন আওয়াজ তুলছে যে, নিজ বাসভূমে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে পড়ার যে আশংকা তারা শান্তিচুক্তিকালে করেছিল তা সত্য হতে চলেছে। শান্তিচুক্তির শুরুতেই বলা হয়েছে, '...গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখিয়া ...চুক্তিতে উপনীত হইলেন'। পার্বত্য নৃগোষ্ঠিরা চুক্তির বাস্তবায়নের দাবি আদায় করতে গিয়ে নিজেদের করণীয়ই শুধু ভুলে যান না, সংবিধানের আওতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখার ব্যপারটিও সচেতনভাবে ভুলে থাকেন। তাদের সাংঘর্ষিক দাবি মেটাতে গিয়ে পাহাড়ের বাঙালির ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৯ নম্বর (সুযোগের সমতা), ২৭ নম্বর (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ নম্বর (ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) অনুচ্ছেদ বলি দিতে হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নের যে কোন সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে 'সংবিধানের আওতা'-এর কাছে প্রত্যাবর্তনই আইনের শেষ কথা – সংবিধানের সার্বভৌমত্বের প্রতি এই আনুগত্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অঙ্গীকার।
দেশের একটি প্রধান কর্পোরেট প্রিন্ট মিডিয়া ও চিটাগং হিল ট্রাক্টস কমিশন (সিএইটি কমিশন)-এর সহযোগিতায় উপজাতি শব্দতে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিরা সাম্প্রতিক সময়ে আপত্তি জানাচ্ছে 'উপ' প্রত্যয়টি তাদের জাতিগত তুচ্ছতার প্রকাশ বলে (যদিও ইংরেজিতে ট্রাইব বললে 'উপ' প্রত্যয়ের বিষয়টি থাকে না)। তাদের এই আপত্তি মেনেই সরকার তাদের জাতিগত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে - সরকারের এই অবস্থান খুবই যথাযথ। রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায় 'পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ক্ষুদ্র জনসংখ্যার জনগোষ্ঠিসমূহকে কেন আদিবাসী হিসাবে অভিহিত করা উচিত' জাতীয় নানান ভাষায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে যাচ্ছেন মূলত গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সরকারি প্রজ্ঞাপন ও নথিতে কিছু আদিবাসী শব্দের উল্লেখের বরাত দিয়ে। তিনি ভাল করেই জানেন, উপজাতি, আদিবাসী, নৃগোষ্ঠি ইত্যাদি শব্দগুলো ইংরেজি প্রতিশব্দের হুবহু অর্থবহ অনুবাদ নয় এবং এতদিন এগুলোর সার্বজনীন, সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছিল না, বরং কখনও কখনও একটিকে অন্যটি দিয়ে উল্লেখ করা হত। এই শব্দগুলোর আইন-সচেতন ব্যবহার খুবই সাম্প্রতিক ঘটনা।

জাতিসংঘের অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169)-এর আর্টিকল ১ এর (a) অনুসারে 'একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্নতর যারা যাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আইন দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচলিত, তারা হল উপজাতি'। এখন আইএলও’র এই সংজ্ঞার আলোকে যদি আমরা বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও অন্যান্যদের সাথে বিচার করি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় এরা উপজাতি। অন্যদিকে, ঐ কনভেনশনের আর্টিকেল ১ এর (b) অনুসারে 'যারা একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে বংশানুক্রমে বসবাস করছে বা অধিকৃত হওয়া ও উপনিবেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকে বসবাস করছে এবং যারা তাদের কিছু বা সকল নিজস্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ধরে রাখে'। অর্থাৎ, কোন জনগোষ্ঠি যদি মানুষের জ্ঞাত ইতিহাসপূর্ব অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কোন এলাকায় বংশপরস্পরায় বসবাস করে থাকে এবং তা অন্যান্য জনগোষ্ঠির ইতিহাসে লিপিবদ্ধ সময়কালে তাদের আগমন ও বসতি স্থাপনের পূর্বে বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদেরকে ঐ এলাকার আদিবাসী হিসেবে গন্য করা হবে।

জাতিসংঘের আদিবাসীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিরা কোন অজুহাতে নিজেদের আদিবাসী দাবি করতে পারে না, এর ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক কোন সত্যতা, বাস্তবতা নেই। এই জনপদে হাজার বছর ধরে বাঙালিরা ছিল, আছে – বাঙালিরাই এ মাটির ভূমিপুত্র। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির আগমনের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম সুবে বাংলার অর্থাৎ বাংলাদেশের তথা ৯৯ শতাংশ বাঙালির অধীনে ছিল। এ ব্যপারে বিশিষ্ট সেকুলার বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমানে ডেইলি সান পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, 'বেশিরভাগ উপজাতি জনগোষ্ঠি এই এলাকায় মায়ানমার (সাবেক বার্মা) থেকে ১৫ শতক থেকে মধ্য-১৯ শতকে এসেছে। এই উপজাতিরা কুকি গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত যারা প্রথমদিকের বসতি স্থাপনকারী, এবং চাকমারা এসেছে আরও পরে' (ওয়ার এন্ড পিস ইন দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস, পৃষ্ঠা ৫, প্রকাশক – আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৯)। সতেরো শতকেই আদি বাঙালিরা চাষাবাদ ও বসবাসের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে যেতে শুরু করেছে। পাহাড়ি এলাকায় বাঙালিদের জনবসতি অবশ্য সমতলের মত ঘনবসতিপূর্ণ ছিল না। এমনকি, বাস্তবে কোন বাঙালি বসতি না থাকলেও এই সুবে বাংলাভূক্ত এলাকা বাঙালিদেরই। বাঙালি জাতিগোষ্ঠির পাহাড়ি এলাকার জমিজিরাত অনাবাদি, পড়ো হয়ে থাকলেই বাঙালির মালিকানা খারিজ হয়ে যায় না। বহু শতাব্দী ধরে বাঙালির মালিকানার বিষয়টি বাদ দিলেও জাতিসংঘের আদিবাসী সংঙ্ঘার 'প্রাগৈতিহাসিক কাল'-এর শর্তই তারা পূরণ করতে পারে না। আর চাকমারা বার্মার অজ্ঞাত চম্পকনগর থেকে তাড়া খেয়ে কয়েক শতাব্দি আগে এই পার্বত্য এলাকায় এসে এই ভূখন্ডে বসত স্থাপন করায় তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের দাবিদার বটে, কিন্তু কোন যুক্তিতে তারা আদিবাসী বলে দাবি করতে পারেনা। চাকমারা এই জনপদে বাঙালি উচ্ছেদ করে সেটেলার হয় নাই বরং বাঙালিদের অনাবাদি-পড়ো জমিতে বসতি গড়েছে একথা যেমন সত্য, একইভাবে বাঙালিরাও এই জনপদে হাজার বছর ধরে বসবাসের পাশাপাশি ৮০-র দশকে চাকমাদের উচ্ছেদ করেও সেটেলার হয় নাই বরং সরকারি খাস জমিতে বসতি গড়েছে - সেটাও সমান সত্য। পৃথিবীর সবচে ঘনবসতিপূর্ণ এবং নদীভাঙন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগপূর্ণ এই বাংলাদেশে প্রতি বছর যেখানে হাজারো মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে, যেখানে এতটুকু আশ্রয়ের খোঁজে জীবন বাজি রেখে নৌকায় পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ক্রীতদাসের জীবন বেছে নিতে কসুর করছে না, সেখানে এইসব ছিন্নমূল মানুষকে সামান্য ঠাঁই করে দেয়ার জন্য সরকার খাস জমিতে বন্দোবস্ত দেবে - এই বিষয়টি অতি মানবিক ও যৌক্তিক। বাংলাদেশের মোট দশ ভাগের এক ভাগ আয়তনের এই পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যা যেখানে মাত্র এক শতাংশ, সেখানে খাস জমি যে বেশি, সে তো বলাই বাহুল্য।

সাদাসিধা যারা চিন্তা করেন, তারা ভাবতে পারেন যে, না হোক ভুঁয়া, জাল দাবি, তারা যখন এত করে চাইছে, আদিবাসী ডাকলে এমন ক্ষতি কী? জাতিসংঘের Declaration on the Rights of Indigenous Peoples তথা আইএলও কনভেনশন ১৬৯ মোতাবেক 'আদিবাসী' হতে পারার সুবিধা হল 'আদিবাসীর ভুমি অধিকার সংরক্ষণ'-এর আইন! আদিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘ যে কোন সময় আদিবাসীদের, মানবাধিকার সংগঠনের ডাকে বা আহবানে নিরপেক্ষ (জাতিসংঘের তত্বাবধানে) প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে তাদের স্বায়ত্বশাসন বা স্বাধীনতা ঘোষনা দিতে পারে। যেমন করেছে কসোভোতে, ইস্ট তিমুর ও দক্ষিণ সুদানে। আমাদের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিরাও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সহযোগীতায় আদিবাসী হয়ে সেই সুযোগ নিয়ে সমতলবাসীদের উচ্ছেদ করতে চায়।

সিএইচটি কমিশনের সাথে মিলে আদিবাসী স্বীকৃতির নামে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে তারা। কিছু উচ্ছিস্টভোগী বুদ্ধিজীবীকে অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এতদিন বিষোদ্গার করিয়েছে খুব, এখন বিজিবিকেও এর সামিল করেছে। বিজিবির ক্যাম্প স্থাপনের বিরুদ্ধে মিথ্যার বেসাতি দিয়ে কিছু উঠতি বুদ্ধিজীবিকে পোষ্য মিডিয়াসহ নিয়ে গিয়ে প্রতিবাদের মহড়া ভিডিও করিয়ে এনেছে, দু-চার লাইন লিখিয়েও নিয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে অরক্ষিত দীর্ঘ সীমান্ত দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ, বিশেষ করে বর্তমানে মায়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-এর শক্তিবৃদ্ধি ও সীমান্তজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর সরকারের জন্য বিজিবি-এর শক্তিবৃদ্ধি অত্যাবশকীয় হয়ে উঠেছে যা দেশবাসীর জানা খুব প্রয়োজন। এই নাজুক পরিস্থিতিতে অস্ত্র কিনে এনে সশস্ত্র সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের আয়োজন করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলো। এই গোষ্ঠিগুলোর এত ক্ষোভের মূল কারণ হল, সীমান্তজুড়ে ক্যাম্প স্থাপিত হলে তাদের সশস্ত্র চলাচল, ক্যাম্প স্থাপন ও চাঁদাবাজির পথ রুদ্ধ হবে, সুগম হবে শান্তিস্থাপনের পথ – কোনটাই তাদের কাম্য নয়। পাহাড় থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ ও উৎখাত করার এক অসম্ভব ও অন্যায় সুখস্বপ্নে বিভোর তারা। বিদেশে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে রেপিস্ট, ধর্মান্তরকারী, ক্ষমতালোভী ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে, প্লাকার্ড প্রদর্শন করছে, নানান সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ধর্ণা দিচ্ছে, সর্বোপরি সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্বেষী প্রচারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেটে। পর্যটন এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের মত বিষয়ের বিরুদ্ধেও অযৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের উন্নয়ন যেন তাদের চক্ষুশূল!

শান্তিচুক্তি-পরবর্তীকালে দেড় যুগের অভিজ্ঞতার আলোকে সকল প্রকার সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন ও ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কালাকানুন ও ব্রিটিশ আমলের হিলট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল ১৯০০-কে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে শান্তি স্থাপনের পথে হাঁটার বিকল্প নেই। নৃগোষ্ঠি-বাঙালি ভেদাভেদ দূর করে সকলের সম-অধিকারভিত্তিক শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দময় সহাবস্থান নিশ্চিত করা জাতীয় স্বার্থের জন্য অতীব জরুরি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবিচার দূর করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় ও সংসদীয় কমিটি দ্বারা পার্বত্য পরিস্থিতি ও চুক্তির মূল্যায়ন করে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া জাতীয় স্বার্থেই অত্যাবশ্যক।

এই শান্তিচুক্তি অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রমের ফসল – একে বিদেশী ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে একগুঁয়েমি দিয়ে ব্যর্থ করে দেয়া কারও জন্য লাভজনক হবে না। বরং স্বাধীন বাংলাদেশের এক পতাকাতলে একত্রিত হয়ে সকল বৈষম্য ভুলে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রয়াস।

[আমার বন্ধু আব্বাস তরফদার-এর লেখাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির উপর দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে আজ চুক্তির ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে. জনকণ্ঠের সম্পাদকীয় হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে.
০২ ডিসেম্বর ১৪ তারিখের ই-জনকণ্ঠের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×