somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থ সংকটে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে হাফ ডজন ব্যাংক

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান:

ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট প্রকট হচ্ছে। বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। ব্যয়ের তুলনায় আয় অনেক কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে টাকার বিপরিতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী দেশে প্রয়োজনীয় রিজার্ভ নেই। ব্যাংকগুলোতে কমে যাচ্ছে সঞ্চয়ী আমানতের পরিমাণ। বেশি পরিমাণে সুদ দিয়েও গ্রাহকদের টাকা ধরে রাখতে পারছেনা ব্যাংকগুলো। সরকারের অতিমাত্রায় ঋণ নেয়ার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন ব্যাংকগুলোতে তীব্র অর্থ সংকট চলছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে খুব বেশি দেরি হবে না হাফ ডজন ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষণা করতে। আমানত কমে যাওয়ায় কমছে আয়ের পরিমাণ। কিন্তু ব্যাংক চালাতে আগের মতোই ব্যয় করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের বেতনাদি পরিশোধ করতে। অর্থাৎ আয় কমলেও ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমেনি। মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক ব্যাংককে। এমতাবস্থায় অর্থ সংকটে দেওলিয়া ঘোষণা করতে হতে পারে হাফ ডজন ব্যাংক মালিককে।

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কোন দেশের ব্যয় মেটানোর জন্য সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তিন মাসের রিজার্ভ থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য প্রায় এক মাসের রিজার্ভ সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনিভূত হচ্ছে। দিন দিন ডলারের বিপরিতে টাকার অবমূল্যায়ন বাড়ছে। টাকার বিপরীতে বাড়ছে সকল প্রকার বৈদেশিক মুদ্রার মান। ব্যাংকগুলো ডলার সংকট কাটাতে খোলাবাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে তড়িত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। কমে যাচ্ছে বৈদেশিক আয়। বাড়ছে আমদানি ব্যয়। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে গভীর সংকটের দিকে এগুচ্ছে। এদিকে সরকারের সাথে বিভিন্ন টানাপোড়নের কারণে দাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋণ অবমুক্ত করছে না। যেটুকু করছে তার বেশির ভাগই ঋণ পরিশোধে ব্যয় করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট বৈদেশিক ঋণ কম এসেছে ৬৩ শতাংশ। গত বছরের চার মাসে নিট বৈদেশিক ঋণ এসেছিল ২১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। আর চলতি বছরের চার মাসে এসেছে মাত্র ৮ কোটি ডলার। গত চার মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৩৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি ডলার। আগের বছরে ৪১ কোটি ডলারের বিপরীতে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল সাড়ে ২২ কোটি ডলার। পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এক হাজার ১৭৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করা হয়েছে যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চার মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এদিকে আমদানির পরিমাণ যে হারে বাড়ছে সেই পরিমাণ আয় হচ্ছে না। লেনদেনের ভারসাম্য ঠিক রাখার বড় সহায়ক শক্তি রফতানি আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবার যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হচ্ছে সে আয়ের একটি অংশ দেশে আসছে না। গত চার মাসে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে এক হাজার ১৭৬ কোটি ডলার। আর রফতানি আয় হয়েছে মাত্র ৮১১ কোটি ডলার। রফতানির তুলনায় আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে গেছে। ফলে লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ বাড়ছে।

এদিকে তীব্র ডলার সংকট সামাল দিতে না পেরে ব্যাংকগুলো এখন কার্ব মার্কেট তথা খোলাবাজার থেকে পরোক্ষভাবে ডলার সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। আইনগতভাবে খোলাবাজার থেকে ডলার কেনার সুযোগ ব্যাংকের না থাকায় গ্রাহকদের খোলাবাজার থেকে ডলার কেনার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকের এলসি খোলা ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে পর্যাপ্ত ডলার না থাকা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা না পাওয়ায় শেষ ভরসা হিসেবে এ ব্যবসা বেছে নিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক। আর এ সুবাদে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। ডলারের চাহিদা মেটাতে এতদিন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনা হতো। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলোর নিজেদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা আর আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন করতে পারছে না। এখন বাধ্য হয়ে প্রয়োজন মেটাতে খোলাবাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করতে পরামর্শ দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ সহায়তা করা হচ্ছে বর্তমানে এরচেয়ে বেশি করা সম্ভব হবে না। আবার যা করা হচ্ছে এটাও হয়তো বেশি দিন চালানো যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সামগ্রিক আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এরমধ্যে সঞ্চয়ী আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৯ ভাগ। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৫৭ ভাগ। আর মেয়াদি আমানত কমে হয়েছে ৪ দশমিক ৭ ভাগ যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৩৩ ভাগ। ব্যাংকারদের মতে সঞ্চয়ী আমানত কমে যাওয়ার অর্থ হলো সাধারণ মানুষ অভাবের তাড়নায় সঞ্চয় করতে পারছেন না। বরং ব্যাংকে যেটুকু ছিল তা তারা ভেঙ্গে খাওয়া শুরু করেছেন। আর মেয়াদি আমানত কমে যাওয়া লাল সংকেত এর অর্থ হলো ব্যবসায়ীরা আগের মতো আমানত রাখতে পারছেন না। যেটুকু আয় হচ্ছে প্রয়োজন মেটাতে তা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে একই বেতন পেয়ে সংসার চালিয়ে অর্থ ব্যাংকে রাখতে পারতেন বর্তমানে সেই বেতন দিয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে না। আগের সেই জমানো অর্থও অনেকের শেষ হয়ে গেছে। আয়ের উৎস না বাড়া বা বেতন বৃদ্ধি না পাওয়ায় অনেকের সংসার চালাতে হচ্ছে ধারদেনা করে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে বিশেষ আমানত সংগ্রহ করতে রীতিমতো ব্যাংক কর্মকর্তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। কিন্তু কাংক্ষিত হারে আমানত সংগ্রহ করতে পারছেন না। দিন দিন বাড়ছে কলমানি রেট। অর্থনীতিবিদরা এ অবস্থায় উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ঘটাতে না পারলে সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তারা বলেন, আমানত কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

বতর্মান পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, আমরা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে কমতে থাকা বিদেশী বিনিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রহে স্থবিরতায় সরকার দুশ্চিন্তায় আছে। সরকারের ব্যয় মেটাতে অনেক ক্ষেত্রে কষ্ট হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। কমছে রেমিটেন্স প্রবাহ। আসছে না বিদেশী সহায়তা। সময় মতো পাচ্ছে না বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ। বেড়েছে অধিক ব্যয়ের প্রবণতা। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার শতকরা ৯৯ ভাগই ঘাটতি। ব্যাংকে মানুষের জমানো টাকা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এদিকে ব্যাংকগুলোতে বিরাট তারল্য সংকট। ক্রমেই ঘনিভূত হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামাজিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে হাফ ডজন ব্যাংকে দেওলিয়া ঘোষণা করতে হতে পারে।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×