দিবানিশি : রাজ্যের নাম
সয়াহ্ন : মহারাজ
গোধুলী : মহারানী
শেয়াল ও মুরগী : রাজ্যের দুই জনগোষ্ঠি
.............................................
মুরগী সম্প্রদায়ের জরুরী রুদ্ধদ্বার বৈঠক, রাজ্যের মহামান্য মুরগী নেতৃবৃন্ধ স্ব-স্ব আসনে উপবিষ্ট হইয়াছেন। প্রতিবেশী রাজ্যে থেকে কুটনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাস নিয়ে আগত বনবিড়ালের প্রতিনিধিদল সবেমাত্র আসন গ্রহন করিয়াছেন। একমাত্র আলোচনার বিষয়, রাজ্যে মুরগী সম্প্রদায়ের জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করন। সাংবাদ কর্মিদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ. সবাইকে এই মর্মে সতর্ক করা হইয়াছে যে, এই আলোচনার কানাকড়িও যেন শেয়াল সম্প্রদায়ের কর্নকূহরে প্রবেশ করিতে না পারে.
আলোচনার প্রারম্ভেই চীফ মুরগী ভক্তি গদগদ কন্ঠে মেহমান দিগকে আভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে একটি চোট্র জ্বালাময়ী ভাষন দিতে সচেষ্ট হইলেন. কহিলেন.. শুকরিয়া ভিনদেশী উপকারীদের(?) যাহারা আমাদিগকে দিনের পর দিন স্বাধীনতা আন্দোলনে সহযোগীতা করিয়া আসিতেছেন। রাজ্যের অত্যাচারী শেয়াল সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরিয়া আমাদের অধিকার হরন করিতেছে অথচ আমরা তাহা বুঝিতে পারি নাই তাই আমাদের সহযোগী প্রতিবেশীগন আজ আমাদের পাশে এসে গায়ে হাত বুলিয়ে (লক লকে জিহ্বের লালা গোপন করে) আদর করে করে আমাদেরকে বুঝাচ্ছেন যে, আমরা মজলুম জাতি. আমাদের অধিকার হরন করা হইতেছে. আমরা রাতের বেলা গাছে গাছে উড়াল দিয় কুক কুরুকু গান গাইতে পারি না, শেয়ালদের মতো মাঠে ঘাটে নেচে গেয়ে সারাগায়ে পূর্ণিমার জোৎসনা মাখতে পারিনা, আমরা এখনো পুর্বপুরুষের মৌলবাদের শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে সন্ধ্যা হতে না হতেই খোপে ফিরতে হয়,, আর নয়... মৌলবাদের দিন শেষ.. এখন আমরা বূজতে পেরেছি.. আর আমাদের ঠকানো যাবে না.. আমাদের সহযোগী বনবিড়াল ভাইয়েরা আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন করে দিয়াছেন তজ্যন্য আমরা তাহাদিগের কাছে যারপরনাই কৃতজ্ঞ। তাহারা আমাদিগকে আরও বুঝাচ্ছেন যে, আমাদেরও ঈগলের মতো পাখা আছে তাই শুধুমাত্র নিচক মুরগীর মতো যাপিত জীবনে কোন সার্থকতা নেই... আমরা স্বনির্ভর হওয়ার জন্য জীবন সংগ্রাম করবো.. এমন দিন আসবে যখন আমরা ঈগলের মতো আকাশে গা এলিয়ে পৃথিবীকে উপভোগ করবো.. ধন্যবাদ সকলকে।
বিগত বৈঠকের আলোচনা সমূহ পর্যলোচনা শুরু হইলো... জনৈক বনবিড়াল নেতা কহিলেন-
:আমাদের এই স্থানে আমাদের বেশি সময় ব্যায় করা ঠিক হবেনা, লোকে জানিয়া ফেলিলে অসুবিধা হইতে পারে আর অমাদিগকে অনতিবিলম্বে অনত্র গমন করিতে হইবে।
মু: চী:- সে কি কথাগো বাপু. তোমরা আমাদের হইয়া ভিন দেশ থেকে এতদুর আসিয়াছ আবার কোথায় যাইবে।
জ: ব:- তা তোমাদিগের বুঝিবার কি কাজ? তোমরা উপকৃত হইতেছ এই ঢের।
মুরগী চীফ লাজুক হইলেন কহিলেন-
মু: চী:- তোমাদিগের উপকারের জন্য কৃতজ্ঞ। তাহা হইলে ভুমিকা ছাড়াই আলোচনা শুরু করি... আমাদের বিগত সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হইয়াছিল যে.
১. প্রতি বেঠকে একটি করিয়া অধিকার অদায়ের কর্মপন্থা গ্রহন করা হইবে.. এবং ক্রমান্বয়ে তাহা বাস্তবায়ন করা হইবে। প্রথম কর্ম পন্থা- দিবানিশি রাজ্যের সকল মুরগীকে শেয়াল সম্প্রদায়ের কঁাধে কঁাধ মিলিয়ে দিবারাত্রিব্যপী কাজ করার অধিকার আদায়ের লক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্যবিধি গ্রহন হইল:-
*অতীতে যেই সময়ে সবাই খেঁাপে ফিরিয়া আসিত, আগামী দিনে এই সময়টাকে একটু একটু করিয়া বর্ধিত করা হইবে।
*শেয়ালদের সমক্ষমতা অর্জন করিবার জন্য আগ্রহী মুরগীগন শেয়ালদের সাথে ব্যাপক মেলামেশা করিতে হইবে।
*শেয়ালদের আকৃষ্ট করিবার জন্য আমাদের শিখিয়ে দেয়া সাজ সজ্জা গ্রহন করিতে হইবে।
*তবে খেয়াল রাখিতে হইবে শেয়ালরা যেন বুঝিতে না পারে তাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
*মূল উদ্দেশ্য হইবে মেলামেশার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা দক্ষতা এবং কৌশালাদি অর্জন করা।
*দিনের বেলা অন্ধকার ঝোপ ঝাড়ের কাছে সেজে গুজে ঘুরা করতে হইবে।
*আলাপচারিতা. বন্ধুত্বপূর্ন মনোভাব এবং গভীর মেলামেশার মধ্য দিয়ে তাদের মন জয় করে দিবারাত্রি সমভাবে কাজ করিবার অধিকার আদায় করিতে হইবে।
২. প্রতি বৈঠকে বিগত দিনের যাবতীয় কার্যক্রম তুলিয়া ধরা হইবে।
২. জরূরী অবস্থায় যে কোন সময় সভা বসিবে।
মুরগী চীফ থামিলেন।
বিগত দিনের কর্মতৎপরতা তুলিয়া ধরিতে গোয়েইন্দা সাহেব উঠিলেন-কহিলেন...
প্রাথমিক ভাবে আমাদের কর্যক্রম ভালই চলিতেছিল.. দুখের বিষয় কিছুদিনযাবৎ তা শোচনীয় আকার ধারন করিতেছে।
*সন্ধ্যার পরে যাহারা খোপে আসে তাদের অনেকেরই গায়ে শেয়ালের আচড় থাকে।
*এই পর্যন্ত অনেকেই নিরূদ্দেশ হইয়াছেন। শোনা যায় তাহারা শেয়াল কর্তৃক,ধর্ষিত ভক্ষিত
* আরও দুখের কথা হইল যাহারা সুসজ্জিত হইয় দিনের বেলা শেয়ালদের সাথে মেলামেশ করিতে যায় তাদেরও অক্ষত ফিরিয়া আসিতে পারে না।
* অনেক শেয়াল মুরগীদেরকে রাতের বেলা ডেটিংয়ের জন্য অনুরোধ করে। এতে সাড়া না দিলে মধ্যরাত্রিতে খোপের পাশে এশে এসে এসিড নিক্ষেপ করে সর্বনাশ করে দেয়। যেখানে শান্তিকামি মুরগীরাও রক্ষা পায়না।
প্রতিনিধিগন কহিলেন- ভয় পেলে চলবে না কিছু পাইতে হইলে কিছু ছাড়িতে হইবে। দেখিবে তোমরাই জয়ী হইবে। আমরা নতূন কর্মপন্থা নিয়া আচিরেই ফিরিয়া আসিতেছি। এই বলিয় তাহারা বৈঠক ভঙ্গ করিলেন।
ক্ষানিক পর..... বনবিড়ালগন শেয়ালদের সাথে গোপন বৈঠকে মিলিত হইয়া কহিলেন- তোমাদের কে ধন্যবাদ গত কিছুদিন তোমরা আমাদের দেশে চুক্তি অনুযায়ী মুরগীর অংশ প্রদান করিয়াছ আশা ইহা ধারাবাহিক হইবে। আমরা মুরগীদিগকে উৎসাহ দিয়া আসিয়াছি। তোমরা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন কর।
শান্তিকামী কিছু মুরগী ছুটিল মহারাজের দরবারে: মহারাজ সব শুনিয়া কহিলেন আমি, আমার রানী, আমার রাজ্য সব প্রকৃতির অংশ। তোমরা অন্যের কথা ধরিয়া প্রকৃতি বিরুদ্ধ চলিলে ধ্বংশ হইবে । নিজদিগকে রক্ষা কর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮