somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহজাদা দারা শিকোর মৃত্যু

০৫ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেদিন বড়ভাই দারা শিকোকে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়, সেদিন আওরঙ্গজেব তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ‘যদি নিয়তি উল্টো হতো, তাহলে ঠিক কী হতো?’ দারা উত্তর দিয়েছিলেন নিয়তি উল্টো হলে তিনি আওরঙ্গজেবের শরীরকে চার ভাগ করে দিল্লীর প্রধান চার সিংহ-দরজায় একেকটি ভাগ ঝুলিয়ে রাখতেন।

সম্রাট শাহজাহান যখন সেজছেলে আওরঙ্গজেবের কাছে সাম্রাজ্য হারান এবং অন্য ছেলেদের খুন হতে দেখেন, ইতালির ইতিহাসবিদ নিক্কোলাও মানুচ্চি সেই সময়ে ভারতে ছিলেন। তাঁর 'স্তোরিয়া দো মগর' বইয়ে তিনি এই ঘটনা লিখেছেন।

মার্কিন ইতিহাসবিদ অড্রে ট্রাশকা মুঘল সাম্রাজ্যের উপর গবেষণা করেছেন বিস্তর। তিনি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের শিক্ষক ছিলেন। আওরঙ্গজেবের বদলে যদি দারা শিকো যদি ৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট হতেন, তাহলে কী হতো প্রশ্নের উত্তরে অড্রে ট্রাশকার তার বই দ্যা ম্যান অ্যান্ড দ্যা মিথে লিখেছেন "বাস্তবতা হলো মুঘল সাম্রাজ্য চালানো কিংবা জয় করার ক্ষমতা দারা শিকোর ছিলো না। আওরঙ্গজেবের মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁর ছিলো না।"

আওরঙ্গজেব আসলে - যো জিতা ওয়াহি সিকান্দার। তিনি চতুর ছিলেন, সমরকুশলে বাকীদের চেয়ে পারদর্শী ছিলেন ও বেশ কূটনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন।

মুঘল সাম্রাজ্যে এমন কোন নিয়ম ছিল না যে, সম্রাটের মৃত্যু হলে জ্যেষ্ঠ ছেলে সিংহাসনে অধীন হবেন। তাই ১৬৫৭ সালে সম্রাট শাহজাহান যখন অসুস্থ হন, তখন তার চার ছেলেই - বড় দারা শিকো, মেঝ শাহ সুজা, সেজ আওরঙ্গজেব, এবং ছোট মুরাদ বাকশ নিজেদের পরবর্তী সম্রাট হিসেবে জাহির করার চেষ্টা শুরু করেন।

দারা শিকোকে শাহজাহান আগ্রাতে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সিংহাসন দারা শিকোর হাতে চলে যেতে পারে এই আশঙ্কায় বাকী তিনজনই শাহজাহান অসুস্থ খবর পেয়ে সৈন্য সামন্ত নিয়ে দারা শিকোকে আগ্রা থেকে হটাতে রওনা হন। শুরু হয় চতুর্মুখী যুদ্ধ।

শাহ সুজা এবং মুরাদ বাকশ দিল্লী যেতে যেতেই নিজেদের মুঘল সম্রাট ঘোষণা করেন।

শাহ সুজাকে শায়েস্তা করতে দারাশিকোর ছেলে সুলায়মান ও আম্বরের রাজা জয় সিং এগিয়ে যান। বাহাদুরপুরে হয় যুদ্ধ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন শাহ সুজা। পেছাতে শুরু করেন। জয় সিং তাকে বাংলার সীমানা পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যান।

অন্যদিক দিয়ে আওরঙ্গজেব প্রথমে দিপালপুর আসেন। সেখানে মুরাদ বাকশ ছিলেন। আওরঙ্গজেব চুক্তি করেন মুরাদের সাথে যে তারা একজোট হয়ে দারা ও সুজার পরাজিত করে সমানভাগে সাম্রাজ্য ভাগ করে নেবেন। আওরঙ্গজেবের কূটনীতির প্রথম সাফল্য এটা। সাময়িকভাবে একজন বিরোধী তার হাতে চলে আসে।

মুরাদ ও আওরঙ্গজেবের মিলিত বাহিনী ধর্মাতে দারা শিকোর পাঠানো যশবন্ত সিং ও কাশিম খানের বাহিনীকে পরাজিত করে। কাশিম খানের অধীনস্থ কয়েকজন সেনাপতিকেও আওরঙ্গজেব নিজের দলে টেনে নেন।

এবার দারা শিকো ৫০,০০০ সৈন্য নিয়ে নিজেই এগিয়ে আসেন। সামুগড়ে হয় যুদ্ধ মুরাদ ও আওরঙ্গজেবের মিলিত বাহিনীর সাথে দারা শিকোর বাহিনীর। আওরঙ্গজেবের রণকৌশলের কাছে পরাজিত হন দারা। সহচর ও পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান দিল্লী।

আওরঙ্গজেব ও মুরাদ বিজয়ীর বেশে আগ্রায় পৌঁছান। বন্দী করেন বাবা বৃদ্ধ শাহজাহানকে। শাহজাহান তাঁর সাম্রাজ্যকে পাঁচ ভাগ করার প্রস্তাব দেন - চার ছেলে পাবেন সাম্রাজ্যের একেকটি ভাগ, আর পঞ্চম ভাগটি পাবেন আওরঙ্গজেবের বড় ছেলে মোহাম্মদ সুলতান। আওরঙ্গজেব ওই প্রস্তাবে রাজী হননি।

শাহ সুজা এবং মুরাদ বাকশ তখনো খায়েশ রাখেন তারা আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে সিংহাসন ছিনিয়ে নিতে পারবেন। আওরঙ্গজেব মুরাদ বাকশকে কৌশলে বন্ধী করেন। প্রহসনের বিচার ডেকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

বাকী থাকেন শাহ সুজা। তার সিংহাসন ছিনিয়ে নেবার খায়েশ তখনো বিদ্যমান। ১৬৫৯ সালে তিনি আবার বাংলা থেকে দিল্লী অভিমুখে রওনা হন। এবার আওরঙ্গজেব সেনাপতি মীর জুমলাকে পাঠান। মীর জুমলা উত্তর প্রদেশের খাজুয়ায় শাহ সুজাকে পরাস্ত করেন। শাহ সুজা আবার পালাতে থাকেন। মীর জুমলার তাড়া খেয়ে তিনি বাংলা ছেড়ে আরাকান রাজ্যের দিকে চলে যান।এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায় না।

আওরঙ্গজেবের বাহিনী এবার দারা শিকোর খুঁজতে বের হয়। কান্দারহার হয়ে পারস্যের পথে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পরেন দারা শিকো। একটি চর্মরোগগ্রস্ত রুগ্ন হাতির পিঠে বসিয়ে দিল্লীর রাস্তায় রাস্তায় ঘোরানো হয় তাদের। ফরাসি পর্যটক ফ্রান্সিস বার্ণিয়ে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। দারা শিকোকে এরপর হত্যা করা হয় নাস্তিক উপাধী দিয়ে। কোন কোন সুত্র দাবী করে আওরঙ্গজেব দারা শিকোর কর্তিত মস্তক সুন্দর করে পরতে পরতে মোড়ানো অবস্থায় উপহার হিসেবে শাহজাহানকে পাঠান।




* ব্যক্তিগত ব্লগেও প্রকাশিত

তথ্য সুত্রঃ

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব কি সত্যিই হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন?
https://www.bbc.com/bengali/news-43313235

আওরঙ্গজেব: উত্তরাধিকার যুদ্ধ ও এক সম্রাটের উত্থান
https://roar.media/bangla/main/history/aurangzeb-succession-war-and-rise-of-an-emperor/

আওরঙ্গজেব আলমগীর
http://onushilon.org/corita/aorongojeb.htm
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×