somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দীঘি

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সকাল দশটা। এই সময়টাতে অফিসে রাজ্যের কাজ থাকে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখি। খুব সকালে কিছু খেতে পারি না তাই দশটার দিকেই পেটের মধ্যে গুড়গুড় করে ক্ষিধা লাগে। একটু চা/ সিংগারা না খেলে অস্বস্তি লাগতে থাকে, কাজে মন বসে না অথচ চা-সিংগারার ব্রেক হয় এগারোটার দিকে। ততক্ষণ কোনমতে ক্ষুধা পেটে চোখমুখ শক্ত করে কাজ করে যাই।
ফোন ভাইব্রেট করে উঠল, স্ক্রিনে দীঘির নাম। এই সময় দীঘি ঘুমিয়েই থাকে, সচারচর এগারোটার আগে ও ঘুম থেকে উঠে না। ফোন উলটে রাখলাম, এখন ফোন ধরার কোন মানেই হয় না। একগাদা কাজ জমে আছে, অফিসে প্রচন্ড ভিড়। ব্রেকটাইমে কল ব্যাক করলেই হবে। অত জরুরী নিশ্চয়ই কিছু নয়।
দীঘি ফোন দিয়েই যাচ্ছে। ওর এই একটা বদ অভ্যাস, ফোন দিলে যতক্ষণ না পর্যন্ত রিসিভ না করবো কল দিয়েই যাবে। ভাইব্রেশন মোড থেকে সাইলেন্ট মোডে নিয়ে রাখলাম ফোন। ব্যাঙ্কের কাজে কনসেন্ট্রেশনটা খুব ইম্পরট্যান্ট তা এই মেয়েকে কে বোঝাবে? কাজের চাপ, ক্ষিধা এবং বিরক্তিতে মনটা তেতো হয়ে উঠছে।
সোয়া এগারোটার দিকে কাজের চাপ একটু কমলো। মামুন বেশ কিছুক্ষণ আগে টেবিলে চা সিংগারা দিয়ে গেছে। তা ঠান্ডা হয়ে গেছে অনেক আগেই। ঠান্ডা চা খাওয়ার কোন মানেই হয় না। আজ বেশি ক্ষিধা লেগেছে আর আজকেই চা ঠান্ডা হয়ে কাঁদা, দেখা যাবে সিংগারা মুখে দিলেও বাসি বাসি গন্ধ করবে। তেতানো মন নিয়ে ঠান্ডা সিংগারায় কামড় বসালা্ম, আজকের সিংগারাটা বাসি নয় বরং বেশ ভালো... গরম গরম খেলে নিশ্চয়ই আরো ভালো লাগতো। পিওন মামুনকে ডেকে আরেক কাপ চা দিতে বললাম। ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। উনচল্লিশটা মিসড কল! মেজাজই খারাপ হয়ে গেলো। এই মেয়েটা নির্ঘাত পাগল। ঘরে কি ডাকাত পড়েছে নাকি একঘন্টায় উনচল্লিশটা ফোন দিতে হবে!
- হ্যালো (দীঘির উচ্ছসিত আদুরে কন্ঠ)
- হুম দীঘি বলো... এতবার ফোন দিচ্ছিলে কেন? জানো না আমি ব্যস্ত থাকি... (কন্ঠে আমার বেশ বিরক্তি ঝরে পড়ল)
- স্যরি তোমাকে বিরক্ত করলাম। আসলে একটা নিউজ দেয়ার জন্য এতবার ফোন করেছি।
- নিউজটা কি মেসেজে বলা যেত না? অথবা একবার ফোন করলেই তো হতো... আমি ফ্রি হয়ে কল ব্যাক করতাম না তোমাকে?
- অর্নব, এত বিরক্ত হয়োনা প্লিজ, আমার কথাটা তো শুনবে...
- হুম বলো... আমি কাজের অনেক প্রেশারে থাকি। এই সময় এতবার ফোন দিলে আমার কনসেন্ট্রেট নষ্ট হয়... হিসাবে গোলমাল হয়... এই জন্য বিরক্ত হই। তুমি কবে বুঝবে?
- আহ, আমি স্যরি বললাম তো... বারবারই একই কথা কেন বলছো? আমি তোমাকে যে নিউজটা দিব... তোমার সমস্ত বিরক্তি কেটে যাবে...
- কি বলো... জলদি!
- তুমি অনুমান করো তো...
- আহ দীঘি এখন এইসব অনুমান ফনুমান খেলা খেলতে পারবো না... যা বলার বলে ফেল।
- আগে চুমু দাও, তাহলে বলবো!
- দীঘি আমি অফিসে, এই ছোট্ট ব্যাপারটা কি তোমার মাথায় কখনো ঢুকবে? অবাক হয়ে যাই তোমার ব্যবহারে! সামান্যতম কমনসেন্সও কি তোমার নেই? আমি রাখছি ফোন!
টেলিফোনের মত খটাস করে মোবাইল ফোন রাখার কোন সুযোগ নেই। সুযোগ থাকলে আমি খটাশ করে ফোনটা রেখে দিতাম। বিরক্তিতে আমার সমস্ত শরীর ঝাঁ ঝাঁ করছে!
নাহ, দীঘির সাথে রাগ করে আমার ওর জন্যে একটুও খারাপ লাগছে না। আমি জানি দীঘি আজ দুপুরে কিছু খাবে না। সারাটি দিন অভিমান করে বিছানায় পড়ে থাকবে। থাকুক... একটু যদি শিক্ষা হয় ওর। এইসব ছেলেমানুষী আমার কখনোই ভালো লাগে না...

ভুল বললাম... ভালো লাগতো! আজ থেকে আট বছর আগে, আমিও কি এমন ছেলেমানুষ ছিলাম না? অনুপমার সাথে আমিও কি এমন ধরনের ছেলেমানুষী করতাম না? অনুপমা ক্লাসে থাকুক, কি বাসায় থাকুক, কি রাস্তায় থাকুক! ফোন করেই সবার আগে বলতাম চুমু দাও তারপর বাকি কথা।
অনুপমা খুব সন্তর্পনে 'উম' জাতীয় একটা শব্দ করতো... খুব বিরক্ত হত তাও আমাকে খুশি করতে যেখানে সেখানে অস্বস্তিকর মুহুর্তেও আমাকে 'উম' করে ফোনে চুমু দিত! আমি আর অনুপমা বড্ড বেশি ছেলেমানুষ ছিলাম। আজব আজব সব ছেলেমানুষী করতাম আমরা। একদিন আমার ইচ্ছে হলো রিক্সা চালাবো... অনুপমা হবে যাত্রী! বৃষ্টির দিন একটা রিক্সা ঠিক করে ফেললাম... সেই রিক্সা নিয়ে বৃষ্টির মাঝে উত্তরার এ গলি ও গলি ঘুরে বেড়িয়েছি... অনু খিলখিলিয়ে হেসে উঠত। শুধু ওর এই খলখলে হাসি শুনার জন্য আমি কী না করতাম! অনু রাস্তা পার হবে, ওর জন্য আমি সিনেমার নায়কের মত বুক চিতিয়ে দু'হাত প্রসারিত করে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়তাম। অনু আমায় পাগল বলতো! ওর মুখের এই পাগল ডাক শুনার জন্য আমি যে কত শত পাগলামি করতাম! মাঝে মাঝে খুব আদুরে গলায় অনু আমাকে 'বোকা-বুদ্ধু' বলতো। অনুর বোকা-বুদ্ধু হয়ে থাকার জন্য রাজ্যের সব বোকামী করতাম ইচ্ছে করে!
সেই অনুর যখন বিয়ে হয়ে গেল অন্য একটি ছেলের সাথে আমি সত্যিকার অর্থেই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম...
অনুপমার বিয়ের দু'বছর পর আমার দীঘির সাথে পরিচয়। আমি সবেমাত্র অনুপমাকে ভুলে বাঁচতে শিখেছি। ওকে ভুলতে সিগারেট ধরেছি। জীবন নিয়ে তখনও ভাবা শুরু করিনি। কেবল ক্ষত কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু বাবার অসুস্থতার কারণে চারিদিক থেকে মেয়ে দেখা শুরু করেছিল সবাই। কিছুটা নিমরাজি হয়েই দীঘিকে দেখি। প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছে মেয়েটা স্বচ্ছ, দীঘির জলের মতন স্বচ্ছ! বিয়েতে রাজি হয়ে যাই... বাবা মা ধুমধাম করতে চেয়েছিল বিয়েতে কিন্তু আমি কোন ধুমধাম করতে দেইনি!
দীঘির সাথে আমার বিয়ে পাঁচ বছরের কিছু বেশি হতে চললো। এই কয় বছরে আমি কেবল দায়িত্ব পালনই করে গিয়েছি। দীঘির মত প্রাণোচ্ছল মেয়েকে আমি ধমকিয়ে ধামকিয়ে নিথর করে রাখি। প্রথম পাঁচটি বছর পর্যন্ত ওকে তেমন স্পর্শ করতাম না। গভীর রাতে দীঘি যখন চোখে ঘন কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর উগ্র পারফিউম দিয়ে গভীর আবেদন নিয়ে আমার পাশে বসত আমি তখনও নির্দ্বিধায় ওর সমস্ত আবেদন উপেক্ষা করে যেতাম। আমার তেমন কষ্ট হতো না... আমার ইচ্ছে করতো না কখনো দীঘিকে জড়িয়ে ধরে গভীর করে চুমু দিতে... ইচ্ছে করতো না দীঘির জলে গভীর আবেগে ডুব দিতে।
প্রথম প্রথম দীঘি কোন অনুযোগ না করলেও পরে বেশ অনুযোগ করতো। আর বাসা থেকেও মা বাবা কেবল বাচ্চা নাও বাচ্চা নাও বলে অতীষ্ট করে ফেলছিল। দীঘিকে কেবল বুঝাতাম, আরেকটু সেটেল হয়ে নেই... তারপর নিব!
দীঘি কি বুঝতো জানি না... তবে কিভাবে কিভাবে যেন প্রথম পাঁচটি বছর আমার কেটে গেলো! দীঘি আর আমাকে বাইরে থেকে কেউ দেখলে ভাববে 'মোস্ট হ্যাপি কাপল'! দীঘি কাউকে বুঝতে দিত না যে আমাদের মাঝেরকার দুরত্বের কথা। বিয়ের পঞ্চবার্ষিকীতে দীঘির কাছে জানতে চেয়েছিলাম- 'তুমি কি চাও আমার কাছে?'
দীঘি গভীর আবেগে দু'চোখ ভর্তি জল নিয়ে আমার কাছে একটি স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন চেয়েছিল!
আমি কেবল 'হুম' বলেছি!
দীঘি চোখ মুছে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। সেই প্রথম ওর স্পর্শে আমি কেঁপে উঠেছিলাম। কিন্তু আমি আমার আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি... দীঘি আমাকে জাগিয়ে তুললেও আমার আড়ষ্টতা ভাংতে পারেনি। অনুপমাকে আমার কখনোই আর মনে পড়ে না... কিন্তু তারপরেও আমার আড়ষ্টতা ভাঙ্গে না। দীঘির শরীরের ভাজে আমি কোন ছন্দ খুঁজে পাইনা বললে ভুল হবে। দীঘি ছন্দময় ছিপছিপে এক উচ্ছল অদমনীয় তরুণী! আর আমি নির্মোহ নির্জীব! দীঘির শরীরের কারুকার্য আমাকে তেমন টানেনা।
ওর বন্ধুরা যখন ওকে বলে -'দীঘি তুই তো সে সেক্সি হচ্ছিস দিন দিন...' দীঘি তখন কেবল মুখ বাঁকিয়ে হাসে! আমার বেশ কয়েকটা ফ্রেন্ডও দীঘিকে দেখে বলেছে সেই হট একটা বৌ পেয়েছি! বন্ধুরা কিঞ্চিত ঈর্ষাও করে আমার দীঘিকে দেখে! এত সুন্দরী বৌ সচারাচর কারো ভাগ্যে নাকি জোটে না!
না, এর কোনটাই আমার মনকে এতটুকু মোহাবিষ্ট করতে পারেনি। দীঘি তো আমার নাম দিয়েছে 'রোবট'!

আজ সারাদিন অফিসে বসে কেবল এইসব ভাবছি। বাসায় ফিরে আরেক দফা অশান্তির মাঝে পড়তে হবে মনে হলেই প্রমাদ গুনলাম! আজ বাসায় দেরী করে যাবো। ভালো লাগছে না কিছু... এমন রোজ রোজ মেকী করে কারো মন ভুলাতে ইচ্ছে করে না। সামান্য একটু রাগ হয়ে কথা বলেছি, আর ও বিরক্ত না করলে তো রাগ হতাম না। সেই রাগ কেন আমাকে ভাঙ্গাতে হবে?

অফিস শেষ করে হাতিরঝিলের এসে বসে রইলাম। হাতিরঝিল এলাকাটা সুন্দর করেছে। বিভিন্ন রঙের কপোত-কপোতী দেখা যায় এখানে। আমি এদের কারো দিকে তাকাই না। নির্মোহ চোখে লেকের দিকে তাকিয়ে রইলাম ঘন্টার পর ঘন্টা! কখন রাত আটটা বেজে গিয়েছে আমার খেয়াল নেই। আমার ধ্যান ভেঙ্গেছে এক ফুলওয়ালী কিশোরীর ডাকে।
- স্যার মেডামে লিগা পুলের মালা লিবেন? বেলি পুল...
- আমার কোন মেডাম ফেডাম নাই, যা ভাগ...
- মিছা কতা কন কা? ও বুজছি গোসসা হইছেন? একটা মালা লেন মেডামরে দিবেন গোসসা ভাংবো। হি হি হি
মেয়েটার কথায় কি ছিল জানি না... আমি একসাথে সব কয়টা ফুল কিনে নিলাম... বিবাহিত জীবনে এই প্রথম দীঘির জন্য আমি ফুলের মালা কিনলাম! দীঘি প্রায়ই আমাকে বলত... ওর খুব শখ আমি ওর জন্য ফুল কিনে নিয়ে যাই... সেই ফুল ও ওর চুলে গুঁজবে!
কখনোই সেই শখ পূরণের ইচ্ছে জাগেনি। আজ কিনলাম, কেন কিনলাম নিজেও জানি না... এর মাঝে কোন মেকীত্ব নেই তবে উদাসীনতা রয়েছে! ফুল কিনে সিএনজিতে উঠলাম। রাত প্রায় নয়টা। দীঘি কি এখনও না খেয়ে শুয়ে আছে?

বাসায় ফিরে দেখি দীঘি নীল রঙের একটি শাড়ি পরে আছে, বেশ সাজগোজ করেছে। খুব হাসি খুশি ঝলমলে চেহারা। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো না দেরী করেছি কেন এত... খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো,
- এই দেখো তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
- ভাল দেখাচ্ছে, কোথাও গিয়েছিলে নাকি?
- উহু কোথাও যাইনি।
- তাহলে এত সেজেছো যে!
ওর চোখ এতক্ষনে আমার হাতের বেলী ফুলের মালার দিকে পড়লো!
- ওমা এতগুলো ফুলের মালা কার জন্য?
আমি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বললাম... এক বাচ্চা মেয়ে বিক্রি করছিল... আমার খুব মায়া হল তাই কিনে ফেললাম।
- তাও বলবা না আমার জন্যে কিনেছো! তুমি এমন আজব ক্যান?
দীঘি আমার হাত থেকে ফুলের মালা নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে বললো- আমার কত দিনের শখ তুমি আমার জন্য ফুলের মালা কিনে আনবে... কখনো আনোনি... আজ এনেছো... আজ খুব স্পেশাল একটা দিন তুমি জানো?
আমি মনে করতে পারলাম না আজ কি? আজ কি দীঘির জন্মদিন? কিংবা আমাদের ম্যারিজ ডে? মনে করতে পারছি না... শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম। জানার আগ্রহবোধও করছি না। এই মেয়ের অদ্ভুত অদ্ভুত দিবস বানানোর বাতিক আছে! আমি টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে রওনা হচ্ছিলাম... দীঘি এসে পথ রোধ করলো... ঠোঁটে দুষ্টু হাসি,
- জিজ্ঞেস করলে না যে আজ বিশেষ দিনটা কি?
- বলো...
- উহু আগে চুমু দাও, তাহলে বলবো!
- আহ দীঘি কি শুরু করেছো? মাত্র বাইরে থেকে আসলাম। প্রচন্ড টায়ার্ড! ফ্রেশ হয়ে আসছি।
- উহু এখনি দাও...
আমি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে দীঘির ঠোঁটে আলতো চুমু দিলাম, কিন্তু ও আমাকে আঁকড়ে ধরলো! হঠাৎ করেই হু হু করে কেঁদে উঠলো দীঘি!
ওর জন্য বেশ মায়া হতে লাগলো। করিডরের নীলাভ আলোয় ওর চেহারা বড্ড মায়াময় লাগছে! দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই মায়াবতী মেয়েটাকে আমি চরম অবহেলা করে গিয়েছি। কিন্তু তাতেও তার আমার প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। মাঝে মাঝে আমি ভাবি, সত্যিই কি ও এমন? নাকি আসলে ও অভিনয় করে চলছে এতটা মায়াবতী হবার? নয়ত আমার মত এমন কাঠখোট্টা স্বামীকে এতটা ভালোবাসার কি আছে? ও চাইলেই আমাকে ছেড়ে যেতে পারতো, সেই দরজা আমি সব সময়ই ওর জন্য উন্মুক্ত রেখেছিলাম!
খুব মমতা নিয়ে দীঘিকে আমি বললাম- কেঁদো না দীঘি, আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করি তার জন্য স্যরি! আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
- অর্নব, তুমি কি আমাকে ভালোবাস?
- কেন দীঘি? এ কথা কেন বলছো?
- না, বলো... আজ আমি তোমাকে যে কথাটি বলবো তা বলার আগে এটা জানা আমার জন্য খুউব জরুরী।
- হুম বাসি তো!
- সত্যি বলছো?
- হুম...
- যদি মিথ্যে বলো তবে কি হবে?
- মিথ্যে বলছি না দীঘি... এই মুহুর্তে আমি সত্যি বলছি... তোমাকে আমি ভালোবাসি! আমি জানি আমি তোমাকে অনেক অবহেলা করি... কিন্তু তোমাকে আমি ভালোবাসি... আমার ভালোবাসা আমি প্রকাশ করতে পারি না...
- অর্নব, তোমার মুখ থেকে এই কথাটি শুনার জন্য আমি জনম জনম ধরে অপেক্ষা করেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে কত প্রার্থনা করেছি, কত কেঁদেছি... কত যে চেয়েছি তোমাকে... কখনো কখনো মনে হয়েছে সব ছেড়েছুড়ে চলে যাই। আবার মনে হয়েছে না আমি এর শেষ দেখবো!
- দীঘি, আমি খুব স্যরি, তোমাকে কষ্ট দিয়েছি... কিন্তু সত্যি বলছি তোমাকে আমি ভালোবাসি! আমাকে ছেড়ে তুমি কখনো যেও না।
- না, অর্নব তোমাকে ছেড়ে আমি যাবো না... তোমার আমার বন্ধন অটুট করতে আমাদের ঘরে অতিথি আসছে!
- কী? মানে? কী বলছো তুমি?
- হুম, আমি আজকেই জানতে পারলাম... সকালে টেষ্ট করেছি... জানার পর থেকেই তোমাকে ফোন দিচ্ছিলাম... তুমি তো আমার কথাই শুনলে না... জানার পর থেকে আমি অনেক কেঁদেছি... আর সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়েছি তোমাকে... একবার শুনতে চেয়েছি 'ভালবাসি' কথাটি তোমার মুখ থেকে... ভেবেছি যদি আজও যদি তুমি আমাকে 'ভালবাসি' কথাটি না বলো তবে আমি তোমাকে কোনদিনও জানতে দিব না আমাদের বেবির কথা... আমি অনেক দূরে চলে যাব আমার বেবিকে নিয়ে...
কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমার প্রার্থনা শুনেছেন... তিনি আজকের দিনে তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন!

আমি দীঘিকে প্রবল আবেগে জড়িয়ে ধরলাম। এই আবেগে কোন মেকীত্ব নেই, দায়িত্ববোধ নেই, উদাসীনতা নেই... কেবল রয়েছে ভালোবাসা... প্রগাঢ় ভালোবাসা! এই মেয়েটিকে যে আমি কতটা ভালবাসি এই প্রথম আমি অনুভব করলাম... আমার সমস্ত অনূরণে দীঘি ছড়িয়ে পড়লো!
দীঘি আকুল হয়ে কাঁদছে...
আমি দীঘির চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম- কেঁদো না দীঘি... আজ থেকে সব নতুন করে শুরু হবে! আমি আর কখনো তোমার চোখের জল পড়তে দিবো না!

দীঘি চোখে জল নিয়ে হাসছে... কারো হাসি এত সুন্দর হতে পারে?




সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×