somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিজাল আলমা’র প্রাচীন প্রাসাদে-১ম পর্ব (আরব ডায়েরি-৬২)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের আবহা’র পাশেই সৌদি আরবের সর্বোচ্চ চূড়া “জাবাল আল সুদা” (The Black Mountain)। ওখান থেকে নীচে তাকালেই পাহাড়ের পাদদেশে “রিজাল আলমা” গ্রাম। উপর থেকে দেখলে মনে হয় ছবির মত সুন্দর একটি গ্রাম। কিন্তু সেখানে যাবার উপায় নেই। উপায় নেই বললে ভুল হবে, উপায় একটা অবশ্যই আছে। ভয়ংকরতম একটা রাস্তা ধরে নীচে নামতে হবে।


পাহাড়ের উপর হতে রিজাল আলমা গ্রাম

গত দু’বছর ধরে অপেক্ষায় আছি যদি কোনভাবে সেখানে যাবার সুযোগ হয়। কিন্তু কোন বাংলাদেশি ড্রাইভার আমাদেরকে নিয়ে সেখানে নামতে সাহস করেনি। সৌদি ড্রাইভারদের বিশ্বাস করতে পারছিলাম না- ফ্যামিলি নিয়ে যাব, যদি কোন সমস্যা করে? আর আমাদের মাঝে যাদের গাড়ী আছে তাদেরতো সেখানে নামার সাহসই হবে না।





এভাবেই কেটে গেল ২ টি বছর। ঘটনাক্রমে এক সৌদি’র সাথে পরিচয় হল। তার নাম মহসিন, আমার পরিচিত এক টিএ’র বড় ভাই। সে নিজে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। ইংরেজি একদমই বুঝে না, ২/১ টি ইংরেজি শব্দ হয়তোবা বুঝে। ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলতে হয়। আলাপে আলাপে জানতে পারলাম তার গ্রামের বাড়ী “রিজাল আলমা”। আমি এই সুযোগ নিতে ভুল করলাম না। তার কাছ থেকে কথা আদায় করলাম যে, আমাদেরকে “রিজাল আলমা” নিয়ে যেতে হবে। সে রাজী হল কিন্তু কোন নির্দিষ্ট দিন তারিখ বলতে পারল না।

একদিন দুপুরে সে আমার অফিসে এসে হাজির। জিজ্ঞেস করল, আজ তার গ্রামে যেতে পরব কিনা। কোন কিছু না ভেবেই আমি এক বাক্যে রাজী হয়ে গেলাম। সে জানাল, বিকাল ৩ টায় আমার বাসার সামনে অপেক্ষা করবে। সাঈদকে ফোন দিলাম, ২ ঘণ্টার নোটিশে একমাত্র সেই তৈরি হতে পারবে। সাঈদ রাজী। মহসিন যথা সময়েই আমার বাসার নীচে হাজির হয়েছে। সাঈদ, শিমু এবং আমি ও শাকিলা রওনা হলাম রিজাল আলমা’র পথে।

১৩৩১-১৩৩২ সালে মুসা আল কেনানি’র শাসনামলে রিজাল আলমা “হালা” প্রদেশের রাজধানী ছিল। ১৯৮৪ সালের দিকে রিজাল আলমাবাসীরা তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে রাখতে “আল আলওয়ান” প্রাসাদকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে। ৪০০ বছর প্রাচীন “আল আলওয়ান” প্রাসাদকেও সংরক্ষণ করাটা জরুরী হয়ে গিয়েছিল। গ্রামের সবাই তাদের কাছে যা কিছু ছিল তাই দিয়েই জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করে। মহিলারা তাদের প্রাচীন অলংকার জাদুঘরে দিয়ে দেয়। আর এভাবেই রিজাল আলমা এখন অন্যতম পর্যটন স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার টুরিস্ট গ্রীষ্মের ছুটিতে রিজাল আলমা বেড়াতে আসে।

জাবাল সুদা’র উপর হতে রিজাল আলমা যাবার রাস্তাটি দেখতে একদম সাপের মতো লাগে। আমরা সেখানে যাচ্ছি মূলতঃ ২ টি উদ্দেশ্য- ভয়ংকর রাস্তা ধরে নামার অভিজ্ঞতা ও ৪০০ বছর প্রাচীন প্রাসাদটি দেখা।

আবহা থেকে ১ ঘন্টা’র পথ। সাঈদকে মহসিনের পাশে বসালাম। সাঈদ টুকটাক আরবি বলতে পারে, মহসিনের সাথে কথা চালিয়ে নিতে পারবে। মহসিনের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ী, ফোর হুইল ড্রাইভ। রাস্তার প্রতিটি বাঁক তার চেনা। বীর বীক্রমে সে রিজাল আলমা রাস্তায় নেমে পড়ল। আমরা সিট বেল্ট বেঁধে সতর্ক রইলাম। কিন্তু মহসিন খুবই দক্ষতার সাথে নীচের গ্রামে পৌছে গেল। নীচে নেমে যাওয়ায় একটু গরম লাগছিল। মহসিন বার বার দুঃখ প্রকাশ করল তার গাড়ীতে এসি নেই বলে। সে তো আর জানেনা, এখানে আসতে পেরেছি তাতেই আমরা খুশী।






গ্রামের পথে

আমরা গ্রামের ভেতরে ঢুকে গেলাম। রাস্তার পাশে সব্জি চাষ করা হয়েছে। এখানে ওখানে পুরনো কিছু বাড়ীও আছে। এমন জায়গায় আমাদের ইউনিভার্সিটিরও একটা ক্যাম্পাস আছে। রাস্তায় প্রাণ চাঞ্চল্য খুব একটা দেখলাম না। এখানকার প্রত্যেকেরই উপরে ঠান্ডা এলাকায় বাড়ী আছে, মাঝে মাঝে তারা গ্রামে বেড়াতে আসে। মহসিন আমাদেরকে নিয়ে একটি টানেলের ভেতর ঢুকে গেল। টানেল শেষ করে কিছুদূর এগোতেই দেখতে পেলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে “আল আলওয়ান” প্যালেস।


“আল আলওয়ান” প্যালেস


(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×