somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবরাহা’র হস্তী রোড এবং দর্পচূর্ণের কাহিনী-২ (আরব ডায়েরি-১০৯)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১ম পর্ব


ভোরের মেঘ কেটে আমরা আবহা হতে বের হয়ে এলাম। একাটানা গাড়ী চালিয়ে যখন ‘দাহরান আল জুনুব’ পৌছলাম তখন প্রায় ১০ টা বাজে। মূল শহর থেকে কিছুটা এগিয়ে একটি বড় পেট্রল স্টেশনে থামলাম। নাস্তাটা এখানেই সারতে হবে। গতবার যখন নাজরান যাই, তখনো নাস্তার জন্য এখানে থেমেছিলাম। সবার জন্য স্যান্ডউইচ ও চায়ের অর্ডার দিয়ে আমি, শাহরিয়ার ভাই ও আবু সাঈদ ভাই বিভিন্ন জনের নিকট ‘তরিক আল ফিল’ এর খোঁজ করলাম।

এক সৌদি ফ্যামিলি নাস্তা নিচ্ছিল। তাদের জিজ্ঞাসা করে কিছুই জানতে পারলাম না। তারা ভাবল আমরা বোধয় রাস্তা হারিয়েছি, তাই ‘তরিক আল ফিল’ নামক রাস্তাটির খোঁজ করছি। আমাদের কথাবার্তা শুনে স্যান্ডউইচ বিক্রেতা আগ্রহ দেখাল। তাকে আবরাহা ও তার মক্কা অভিযানের কথা জানালাম, আশেপাশেই কোথাও সেই রোডটি আছে। কিন্তু সে তার সহকর্মীদের সাথে গবেষণায় লিপ্ত হল, কোন কিছু উদ্ধার হল না।

পাশের স্টোরে এক কেরালান দোকানীর কাছে রোডটির খোঁজ করতে সে বিজ্ঞের মত শুনে গেল, মুচকি হাসি দিল। ভাবটা এমন সে রোডটা সম্পর্কে জানে কিন্তু ঠিকানাটা জানেনা। আমি বের হয়ে আসতেই সেই কেরালান শাহরিয়ার ভাইকে জিজ্ঞাসা করে-“এ ‘তরিক আল ফিল’ ক্যায়া হোতা হ্যায়?”

আরেক জন্য সৌদি ছেলে, একজন সিকিউরিটির লোককে জিজ্ঞাসা করে সদুত্তর পেলাম না। এক মাঝবয়েসি সৌদি পেট্রল নিতে এসেছে। তাকে এই জায়গার মনে হল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করায় সে জানতে চাইল-‘তরিক আল ফিল’ দিয়ে কি দরকার? আমরা ভাঙ্গা ভাঙ্গা আরবিতে আমাদের উদ্দেশ্য জানালাম। এই প্রথম কাউকে পেলাম যে ‘তরিক আল ফিল’ এর নাম জানে। কিন্তু সে জানাল সেখানে গাইড ছাড়া যাওয়া যাবে না। দূর্গম পথ, বিপদ হতে পারে। আমরা চাপাচাপি করাতে সে একটি পথ দেখিয়ে দিল। কিন্তু আমি কনভিন্সড না, উসামা যে ধরণের বর্ণনা দিয়েছে তার সাথে মিলে না। আমি প্রকৃত অর্থেই হতাশ হয়ে পড়লাম। এবারো বোধয় রাস্তাটি দেখা হবে না।

এমন সময় আবু সাঈদ ভাই হাসিমুখে একটি খবর দিলেন। এক বৃদ্ধ সৌদি জায়গাটির কথা জানিয়েছে যার বর্ণনা উসামার বর্ণনার সাথে মিলে যাচ্ছে। আমি এবার অন্ধকারে আলো পেলাম। স্যান্ডউইচ ও চা শেষ করে আমরা পরবর্তী পেট্রল স্টেশনে চলে যাই। এর আশেপাশের একটি রাস্তা ধরে আমাদেরকে কোন এক পাহাড়ের ভ্যালিতে ঢুকতে হবে। সেখানের এক ইয়েমেনি লোক আমাদেরকে একটি পিচঢালা রোড ধরে সামনে আগাতে বললেন। এই পেট্রল স্টেশন পর্যন্তই উসামার বর্ণনা, এর পর কিভাবে যেতে হবে আমরা কেউ জানিনা। স্বয়ং উসামা গাইড নিয়ে রোডটির কাছে গিয়েছিল।


পুরনো বাড়ীঘর

আমরা ধীরে ধীরে গাড়ী চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বাড়ীঘর বেশ ভালোই আছে, কিন্তু কোথাও লোকজন নেই যে জিজ্ঞাসা করব। একজায়গায় এসে দুটি রোডে ভাগ হয়ে গেছে। আমরা একটি রাস্তা ধরে এগুতেই একটি গাড়ী দেখে থামালাম, ছেলেটি অন্য রোডে যেতে বলল। আমি অস্থির হয়ে পড়েছি। অনেকদূর এগুতেই আমাদের বয়সী এক ইয়েমেনিকে দেখতে পেলাম। সে সুনির্দিষ্টভাবে ওয়াদিতে নামার পথটি দেখিয়ে দিল। এই প্রথম বাস্তব একটি আশা দেখতে পেলাম।

ওয়াদি হচ্ছে পাহাড়শ্রেনীর মধ্যবর্তী সমতল জায়গা যেখান দিয়ে বর্ষাকালে পানি প্রবাহিত হয় কিন্তু অন্যান্য সময় শুকনা থাকে। ওয়াদি’র মুখে পিচঢালা পথ শেষ হয়ে গেছে। আমরা কিছুদূর গাড়ী নিয়ে গেলাম। কিন্তু আরো সামনে গাড়ী নেয়াটা রিস্ক হয়ে যাচ্ছিল। পায়ে হাটা ছাড়া উপায় নেই। শাহরিয়ার ভাই, ভাবী ও বাচ্চাদের গাড়ীতে রেখে আমি ও আবু সাঈদ ভাই ‘তরিক আল ফিল’ খুঁজতে বের হলাম। এই পাহাড়ের অলিগলিতে ভাবী ও বাচ্চাদের নিয়ে অনির্দিষ্ট ঘোরাঘুরি করাটা নিরাপদ নয়। এসব পাহাড়ে বেদুঈন, উপজাতীয় লোকজন বাস করে যাদের সাথে অস্ত্র থাকে। আমরা যদি রাস্তাটি পেয়ে যাই তখন ওনারা আমাদের সাথে যোগ দিতে পারবেন।




নুড়ি বিছানো রাস্তা

আমি ও আবু সাঈদ ভাই নুড়ি বিছানো কাচা রাস্তা ধরে হেটে চলেছি। ইয়েমেনি ছেলের কথমতো হাতের ডানে একটি ফসলি জমি পার হলাম। চারদিকের রুক্ষ পাহাড়গুলো যেন ভেংচি কাটছে। হাটছি তো হাটছি। রোদের তাপ বাড়ছে। ভুলে গাড়ীতে আমার ক্যাপ ফেলে এসেছি। পথের রেখা ধরে ১০ মিনিট হাটার পরও কোন হদিস পেলাম না। এই পথে ‘ফোর হুইল ড্রাইভ’ গাড়ী আসা যাওয়া করে। আশেপাশে কিছু ফার্মহাউজ দেখতে পেলাম, কিন্তু মানুষের দেখা নেই। আরো কিছুক্ষণ হাটার পর রাস্তার পাশে পাথরের নীচু দেয়াল দেখতে পেলাম, যেমনটা ছেলেটি বলেছিল। কিন্তু দুটি রাস্তা, কোনদিকে যাব ভেবে পেলাম না। একটি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আমি বুঝতে পারলাম- এভাবে খোঁজা অর্থহীন। এই বিস্তীর্ণ পাহাড়ের মাঝে রাস্তাটি কোথায় খুঁজে পাব? রাস্তাটি কতদূর তাওতো জানিনা।


পথের শেষ কোথায়?

তারপরও মনকে শক্ত করে অপর রাস্তায় হাটতে থাকি। এটাই শেষ প্রচেষ্টা। মনে হচ্ছিল আবু সাঈদ ভাইও আশাহত। মিনিট পাঁচেক বাদেই একটি পাহাড়ের পাদদেশে একটি সিমেন্টের পিলার দেখতে পেলাম। সেখান হতে একটি ভঙুর পাথুরে রাস্তা পাহাড়ের উপরে উঠে গেছে। বুঝতে বাকী রইল না- পেয়ে গেছি।


হস্তী'র রাস্তা


(আজ শেষ হলো না)


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×