somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবরাহা’র হস্তী রোড এবং দর্পচূর্ণের কাহিনী-১ (আরব ডায়েরি-১০৮)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আল কোরআনের ১০৫ নম্বর সূরা ফীল এ হস্তীবাহিনীর ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। আবরাহা কা’বাকে ধ্বংস করার জন্য ৬০ হাজার সৈন্য ও হস্তীবাহিনী নিয়ে মক্কায় অভিযান পরিচালনা করেছিল। আল্লাহ্‌ নগণ্য পাখির মাধ্যেমে তাদের বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেন।

সূরা ফীল এ বলা হয়েছে-
আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন?
তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি?
তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী,
যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল।
অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।

সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চল এক সময় ইয়েমেনের অন্তর্ভূক্ত ছিল। আমার জানা ছিল না যে, আবরাহা মক্কা অভিযানের সময় আবহা’র পাশের একটি শহর ‘দাহরান আল জুনুব’ দিয়ে তার হাতী বাহিনী নিয়ে যায়, তার জন্য একটি রাস্তাও তৈরি করে এবং সেই রাস্তাটি এখনো টিকে আছে। ৩ বছর পূর্বে উসামা, আসপিয়া ভাই ও হাবীব স্যার সেই রাস্তায় কিছু ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেন। পরে জানতে পারি আযম ভাইও রাস্তাটি দেখে এসেছেন।

আমি অবাক হই। এত কাছে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, অথচ আমি জানতেই পারিনি। জায়গাটি এত অবহেলিত যে অনেক সৌদিও এর খোঁজ জানেনা। গুগুল ম্যাপ খুঁজে আমিও এর হদিস বের করতে পারিনি। উসামা আমাকে নিয়ে যাবে বলে ৩ বছর পার করে দিল। কিন্তু মনের মাঝে ৩ বছর ধরে হাতী’র রাস্তাটি দেখার আগ্রহ লালন করে রেখেছিলাম।



এবার জানুয়ারি’র শেষ সপ্তাহে আমাদের সেমিস্টার ব্রেক শুরু হল। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করলাম, পাহাড় চড়লাম, এক রাতে রেড সিতে মাছ ধরতেও গেলাম- সে গল্প আরেকদিন লিখব। এর মাঝে আবু সাঈদ ভাই নাজরান “আল উখদুদ” দেখতে যেতে চাইল। আমিও রাজী হয়ে গেলাম। আমাদের যাবার কথা শুনে শাহরিয়ার ভাইও যোগ দিলেন।

আমার মনে তখন অন্য প্ল্যানঃ নাজরান যাবার পথেই ‘দাহরান আল জুনুব’, আর ওখানের এক ওয়াদিতেই –তরিক আল ফিল/হস্তী রোড/ The Elephant Road। সবাইকে নিয়ে হস্তী রোডের সন্ধান করাটা সহজ হবে।



১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ফজর নামাজ শেষে আমি, আবু সাঈদ ভাই, শাহরিয়ার ভাই, ভাবী এবং তাদের ২ বাচ্চাসহ আবু সাঈদ ভাইয়ের গাড়ীতে করে নাজরানের পথে রওনা হই। উসামার কাছ হতে কিছু তথ্য নিয়ে নিয়েছি, তবুও কাজটা এত সহজ নয়। মনে উত্তেজনা-কাবা ধ্বংস করতে যাওয়া আবরাহা’র পথটি নিজ চোখে দেখতে পাবার উত্তেজনা। পরাক্রমশালী আবরাহা’র বিশাল বাহিনী কাবাকে ধ্বংস করতে পারেনি। সেই পথ আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে।

ইতিহাসটুকো জেনে নেই-

আনুমানিক ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ইয়েমেনের শাসক ছিলেন ইহুদী সম্রাট যু –নাওয়াস। ইহুদী শাসক যু -নাওয়াস খৃস্ট ধর্মের অনুসারীদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করে,এক পর্যায়ে খ্রিস্টধর্মের অনেক অনুসারীদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। জায়গাটি বর্তমানে সৌদি আরবের নাজরানে অবস্থিত যা “আল উখদুদ” নামে পরিচিত।

অপরদিকে আবিসিনিয়া ও রোম সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় রোম সাম্রাজ্যের সহায়তায় আবিসিনিয়ার শাসক ইয়েমেনে আক্রমণ চালায়। তখন আবিসিনিয়ার কোন প্রতিষ্ঠিত নৌ বাহিনী ছিলনা। রোমান নৌ বাহিনীর সহায়তায় আবিসিনিয়া নিজেদের ৭০ হাজার সৈন্য ইয়েমেনের উপকূলে নামিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

আবরাহা ছিল হাবশার (বর্তমান ইথিওপিয়া) আদুলিস বন্দরের একজন গ্রীক ব্যবসায়ীর ক্রীতদাস। সে ঐ সেনাবাহিনীতে ছিল। নিজের বুদ্ধিমত্তার জোরে সে ইয়েমেন দখলকারী হাবশী সেনাদলে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। অতঃপর সে নিজেকে ইয়েমেনে নিযুক্ত আবিসিনিয়া সরকারের গভর্নর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং ধীরে ধীরে ইয়েমেনের স্বাধীন বাদশাহ হয়ে বসে।

সে ইয়েমেনের রাজধানী সানা'য় একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করে। আরব ঐতিহসিকগণ একে 'আল কালীস' বা 'আল কুলীস' অথবা 'আল কুল্লাইস' নামে উল্লেখ করেছেন। এটি সম্পন্ন করার পর সে আবিসিনিয়ার বাদশাহ্‌কে লিখে জানায়, আমি আরবদের হজ্জকে মক্কার কা'বার পরিবর্তে সানা’র গীর্জার দিকে ফিরিয়ে আনব। কাবা’র কারনে সেখানকার লোকজন বিশেষ মর্যাদা ভোগ করত এবং ব্যবসায় বাণিজ্য হত। তারপর ৫৭০ খৃষ্টাব্দে সে ৬০ হাজার পদাতিক, ১৩টি হাতি সহকারে মক্কার পথে রওয়ানা হয়। এজন্য এবছরটিকে আরবরা “হস্তী বছর” বলত।



আবরাহা মক্কায় প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে যায়। তার হাতি মাহমুদ ছিল সবার আগে, সে হঠাৎ বসে পড়ে। আঘাত ও নির্যাতনের পরেও সে একটুও নড়লনা। এ সময় ঝাকে ঝাকে পাখিরা ঠোঁটে ও পায়ে পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে। তারা সেনাদলের ওপর পাথর বর্ষণ করতে থাকে। যার ওপর পাথর কণা পড়ল তার দেহ সংগে সংগে গলে যেতে থাকল। আবরাহা নিজেও এই অবস্থার সম্মুখীন হয়। বিশৃংখলা ও হুড়োহুড়ি করে তারা ইয়েমেনের দিকে পালাতে শুরু করে। আবরাহা সানা'য় পৌঁছে মারা যায়। তার প্রতাপ ও শক্তিশালী বাহিনী কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ প্রেরিত পাখি তাদের ধ্বংস করে দেয়। আবরাহা’র হস্তী রোড কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে।

(পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×