somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বজ্র ড্রাগনের দেশ ভূটান-৬

২৯ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব


পাহাড়ের পেচানো পথ পেড়িয়ে কর্মা আমাদেরকে টাকিন প্রিজার্ভেশন সেন্টারে নিয়ে এল। এই সাইটগুলো মোটামুটি কাছাকাছি। ৫ মিনিটের মতো লেগেছে সেখানে পৌছতে। চিড়িয়াখানার প্রবেশপথের পাশ হতে পানির শব্দ আসছিল, সেখান দিয়ে একটি ছোট ঝর্ণা বয়ে গেছে। নানা অনেক হাটাহাটি করে কিছুটা ক্লান্ত। উনি আর ভেতরে ঢুকতে চাইলেন না। আমি, শাকিলা, মিলন ও লিজা ভেতরে ঢুকলাম। নেপালীদের জন্য ১০ রুপি’র টিকেট, আমাদেরকে ৩০ রুপী’র টিকেট কাটতে হল।



চিড়িয়াখানা দেখে হতাশ হলাম। বনের মাঝে কিছু জায়গা ঘেরাও করে ৩/৪টি টাকিন ও গোটা পাঁচেক হরিণ রাখা আছে। ভূটানের জাতীয় পশু টাকিন। ধারণা ছিল না ওটা ঠিক দেখতে কেমন। তবে দেখতে যে অদ্ভুত তা আগেই জেনেছিলাম। টাকিন দেখে মনে হল-গরুর শরীরে ছাগলের মাথা বসানো। টাকিন নিজ চোখে দেখার ইচ্ছা ছাড়া এখানে আসাটা বিফল মনে হল।

টাকিন সম্পর্কে একটি মিথ প্রচলিত আছে-



এক গ্রামে লাম দ্রুকপা কুনলে নামক এক সাধু বাস করত। একদিন গ্রামবাসী সাধুকে অলৌকিক কিছু ঘটাতে বলল। সাধু তাদের বলল, সে তা করে দেখাবে যদি গ্রামবাসী তার খাবারের জন্য একটি গরু ও ছাগল আনে। গ্রামবাসী রোস্ট করা গরু ও ছাগল পরিবেশন করল। দশ মিনিটের মাঝে সাধু তা খেয়ে সাবাড় করে দেয়, হাড় ছাড়া আর কিছুই বাকী থাকে না। সাধু তখন ছাগলের মাথা নিয়ে গরুর হাড়ে লাগিয়ে হাততালি দেয়। গ্রামবাসী অবাক হয়ে দেখে, ছাগলের মাথা নিয়ে গরুর দেহটি পূর্ণাঙ্গ অবয়ায়ব নিয়েছে এবং দৌড়ে ঘাস খেতে থাকে।

চিড়িয়াখানায় ১০ মিনিট থেকে আমরা বেরিয়ে এলাম। ঠিক বের হবার পথেই একটি রেস্টুরেন্ট। সেখানে বিখ্যাত মমো’র অর্ডার দিলাম। প্রতি পিস ১০ রুপী। মমো’র স্বাদ নিয়ে চিড়িয়াখানার হতাশা কিছুটা ভুলে গেলাম। মিলন ততক্ষণে বগুড়ার এক লোকের সাথে আলাপ জুড়ে দিয়েছে। কলকাতার এক ফ্যামিলির সাথেও আলাপ হল। আজকে সকালে বিভিন্ন স্পটে ওনাদেরকে দেখেছি।
চিড়িয়াখানা নিয়ে আমাদের হতাশার কথা শুনে নানা খুব খুশী হলেন। নানা’র সাময়িক বিশ্রাম বৃথা যায়নি।


মমো

আমরা এরপর একটি ভিউ পয়েন্টে গেলাম। সেখান হতে থিম্পু জং, রাজবাড়ি, পার্লামেন্ট ও সরকারি প্রশাসন কেন্দ্রগুলো দেখা যায়। খয়েরি রংয়ের ছাদে সোনালী চূড়াগুলো আলোর প্রতিফলনে আরো উজ্জ্বল ও অভিজাত লাগছিল। সবুজ গাছপালার আড়ালে রাজার বাড়ীটি খুবই ছোট। কর্মা জানাল, রাজাকে আরো বড় এবং অভিজাত একটি বাড়ী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজা দেশের সড়ক ব্যবস্থা উন্নত করার আগে নিজের জন্য বাড়ী বানাতে রাজী হননি। আমরা সবাই মিলে সেখানে কিছু ছবি তুললাম। থিম্পু জংয়ে বিকালে ঢুকতে দেয়, আমরা বিকালের জন্য সেটি রেখে দিলাম।




পার্লামেন্ট


রাজবাড়ি

ভিউ পয়েন্টের ঠিক উল্টো পাশে একটি টেম্পল- লেডি মঙ্ক টেম্পল। কর্মা জানাল, এখানকার সব মঙ্ক মহিলা তাই এই নামকরণ। আমরা সুন্দর একটি পথ বেয়ে মন্দিরে পৌছলাম। মন্দিরে অনেক সূর্যমুখী ফুল ফুটে আছে। ছিমছাম ছোট একটি মন্দির। এক লেডি মঙ্ক বের হয়ে আসল। আমাদের বয়সী, ছাটা চুল, পূর্ণ যৌবনা, ফর্সা গোলগাল চেহারার মঙ্ককে দেখে নানা’র সামনে বিব্রত বোধ করলাম।





বেলা অনেক হয়ে গেছে। ক্ষুধা লেগেছে বেশ। আমাদের প্যাকেজের মাঝেই খাবার আছে। কর্মা এজেন্সির সাথে আলাপ করে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। রেস্টুরেন্টটি খুবই উন্নত মানের ছিল। আমরা দোতলায় বসলাম। কোন ধরণের মাংস দিতে মানা করে দিলাম। তারা গরম গরম অমলেট, মিক্সড সবজি, ডাল ও মাশরুম ডাটসি পরিবেশন করল। দেশ হতে এমা ডাটসি’র সুখ্যাতির কথা শুনে এসেছিলাম। ডাটসি মানে পনির। মাশরুম পনির খেতে খুব ভাল লাগল। এমা ডাটসি নিশ্চয়ই আরো মজার হবে। গত দুই দিনে এই প্রথম মজা করে খেলাম। ঘন ডাল, ঠিক যেন বাংলাদেশের রান্না। খাবার শেষে অবাক করে তারা দারূণ স্বাদের পায়েস দিল।







খাওয়া দাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে আসলাম। বিশ্রাম করে বিকাল ৫টায় থিম্পু জং দেখতে যাব। জং মানে হচ্ছে দূর্গ।




(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×