আমার এক বন্ধু সবসময় বলে, "তোমাদের ঢাকা!!! সে তো গড'স ফরসেকেন সিটি!!!" ঈশ্বরের সেই পরিত্যক্ত শহরের ব্যস্ত মানুষগুলো আর তাদের চেয়েও ব্যস্ত মোটরযানগুলোর ভিড় কাটিয়ে যখন বাসার দিকে ছুটছি ঘড়ির কাঁটা তখন ৫টার কোটা ছুঁইছুঁই করছে। শেষ বিকেলের সোনালী আলো তখন শেষবারের মত এই পরিত্যক্ত শহরের ক্লান্ত মানুষগুলোকে পরম মমতায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তটা আমার অসম্ভব প্রিয়। শেষ বিকেলের কনে দেখা আলোয় যখন ঈশ্বরের পরিত্যক্ত শহরটা লজ্জাবতী কিশোরীর মত লালচে আভা গালে মাখে তখন কেন জানি মনে হয় পুরো শহরটাতে যেন আগুন লেগেছে!!! কিন্তু আজকে আমার এসব দেখার মত বিলাসিতার সময় নেই একদম। সময় যেন আজ বল্গা ঘোড়ার মত ছুটছে আর প্রতিমুহূর্তে বিদ্রূপ করছে আমাকে। এমনিতেই যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে তাই এইসব আবজাব চিন্তা মাথা থেকে সযতনে সরিয়ে আমি পাল্লা দিয়ে ছুটলাম ঘড়ির কাঁটার সাথে। কিন্তু বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে ৫:৩০ টার মত বেজে গেল এবং যথারীতি রুমে ঢুকে দেখলাম আমার ব্যাকপ্যাক আর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এলোমেলো ভাবে বিছানার 'পরে ছড়িয়ে আছে চরম অবহেলায়। আপুনি আমাকে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করার ব্যর্থ চেষ্টা করল আর আমি; আমিও আমার সহজাত ভরংবাজিতে "থ্রি জি"; জীবন, যৌবন, জীবিকার উপর সম্পূর্ণ বিতশ্রদ্ধ ভাব ফুটিয়ে তুলতে তারচেয়েও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম; ভাবখানা এমন যেন আমার এই অকাঙ্ক্ষিত দেরির জন্যে সেই দায়ী!!! অতঃপর আপুনি আমাকে "ভাল থাকিস" বলে DMC তে তার নাইট শিফটের ডিউটিতে চলে গেল। আমাকে বের হতে হবে ৭:৩০ টায়; হাতে সময় আছে আর ২ ঘন্টার কিছু কম অথচ গোছানো হয়নি কিছুই এখনও। তাই তাড়াহুড়ো করে ব্যাকপ্যাকটা গুছিয়ে নিয়ে যখন গোসল সেরে পুরোদস্তুর রেডি তখন ৭:৩০ প্রায় বাজতে চলেছে। শেষবারের মত পাসপোর্ট আর ডলারগুলো মিলিয়ে নিলাম। তারপর ব্যাকপ্যাকটা কাঁধে চাপিয়ে আমার প্রিয় "ক্যানন এস থ্রি - আই এস" কে বগলদাবা করে রওয়ানা হলাম কল্যাণপুরে শ্যামলী বাসকাউন্টারের দিকে...
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৩:০৭