মাস দেড়েক আগে রোজার ভেতর সারাদেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউটা আসলো, তখন পরীমনি দুবাই গিয়েছিলো অবকাশ যাপন করতে । সোশ্যাল মিডিয়ায় সে তখন এমন কিছু আয়েশী জীবনের ছবি পোস্ট করে, যেটা বাংলাদেশের সে সময়কার করোনা পরিস্থিতি এবং রমজানের ভাবগাম্ভীর্যের যাতে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। একটা ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সে একটা বিলাসবহুল প্রমোদতরীর ড্রাইভিং সিটে বসে আছে এবং ক্যামেরার ঠিক সামনে একটা বোতল Blur করে তোলা। তার উদ্দেশ্যই ছিলো, তার এসব কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হোক, মিডিয়াতে লেখালেখি হোক, এবং সমালোচনার মাধ্যমে হলেও কিছুদিন আলোচনায় থাকুক। এবং সে এ ব্যপারে সফল।
বিপত্তিটা ঘটলো কয়েকদিন আগে বোটক্লাবে গিয়ে। এটা নিয়ে মিডিয়ার সামনে কান্নাকাটি করে ঘটনার বিচার চাইলো, ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে “মা” সম্বোধন করে জড়িয়ে ধরার খায়েশ প্রকাশ করলো ইত্যাদি ইত্যাদি । এরপর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের অনেক বুদ্ধিজীবিরাই মায়াকান্না করে ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো। কিন্তু এই ঘটনার জন্য যে পরীমনির অনিয়ন্ত্রিত জীবনও দায়ী , সেইসব মানুষ সেটা বলছেনা। এমনকি খোদ পরীমনিও তার দুবাই ট্যুরের ছবি থেকে এই ছবিটা ডিলিট করে দিয়েছে। তার ফেসবুক প্রোফাইলে হাজার খুজেও এই ছবিটা আর পেলাম না। কিন্তু মুখের কথা/ বন্দুকের গুলির মতো ফেসবুকে পোষ্ট করা ছবিও যে পরে আর ধামাচাপা দেওয়া যায়না, সেটা ওই সুন্দরী নারীর মাথায় একদমই নাই। শুধু তাই না, এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মদের বোতলটার ছিপি দেখেই যে তার ব্র্যান্ড বের করা যাবে, এটাও সেই বোকা মেয়েটার মগজের আওতায় নাই । ব্র্যান্ডের নাম হলো Chivas Royal Salute. গুগলে সার্চ দিলেই এর বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।
পরীমনির সাথে যা ঘটেছে তার নিন্দা আমিও জানাই। কিন্তু এটাও বলি, তার বেলেল্লাপনা জীবন, অশ্লীলতায় ভরপুর লাইফস্টাইল, সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্ধনগ্ন ছবিগুলোও এর জন্য দায়ী। আর দায়ী হলো, সেইসব ছাগল মার্কা বুদ্ধিজীবি, যারা নারী স্বাধীনতার নামে ওয়েস্টার্ন কালচার এদেশে আমদানি করতে চায়, কুকুরের জীবনে তো বছরে একবার ভাদ্রমাস আসে, তারা চায় মানুষের জীবনে যাতে সারাবছর ভাদ্রমাস লেগে থাকে। তারই সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের শেষ পরিনতি হলো সেদিনের সেইসব ঘটনা। একজন সুস্থ এবং বিবেকবান মানুষ অবশ্যই স্বীকার করবেন, একটা মেয়ের পক্ষে কোনভাবেই ওই সময়ে ওই জায়গায় থাকার কথা নয়। নিজের দেহটাকে ওইসব শকুনের মুখে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার দায় পরীমনিকেই উপরেও একটু আকটু পড়বে বৈকি। এছাড়া তার মনে যদি সততা থাকতো তাহলে এই ঘটনার অভিযোগ তোলার আগে কিংবা পরে মদের বোতলের ওই ছবিটা সে ডিলিট করতোনা। নিশ্চই ঘটনার পেছনে আরও ঘটনা আছে জন্যই সে এই কাজটা করেছে। তবে আমাদের আল্ট্রা মর্ডান বুদ্ধিজীবি সমাজ এটা বেমালুম চেপে গেছে।
এই ঘটনায় আরেকজনের দায় আছে। এটা হচ্ছে তার অবিভাবকের । তারা যদি ছোট থেকে ধর্মীয় এবং এই দেশের সামাজিক শিক্ষাটা দিতো , তাহলে তাদের মেয়ে আজ এতোটা বখে যেতোনা এবং আজ এই দুর্ঘটনার দেখতে হতোনা।
যাইহোক, আমি পরীমনির সাথে ঘটা ঘটনার বিচার চাই, প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এবং সেইসাথে দেশে এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সকল অবিভাবক এবং জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা গজিয়ে উঠুক, এই কামনা করি। আর চাই, “বাংলাদেশ থাকুক বাংলাদেশের মতোই।“ এদেশকে যারা থাইল্যান্ডের পাতায়া কিংবা আমেরিকার লাস-ভেগাস বানাতে চান, তারা দয়াকরে সেসব জায়গাতেই চলে যান। এদেশ ষড়ঋতুর দেশ, সারাবছর ভাদ্রমাসের দেশ না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৪৪