একটি ছেলের বিবাহ মানেই ৩০-৩২ বছর বয়স হতে হবে। বর্তমানে এটি আমাদের অধিকাংশ অভিভাবকদের চিন্তাধারা। এই চিন্তাধারা বা দৃষ্টিভঙ্গি কি আসলে আমাদের সমাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত??? এই সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের প্রতিটা সন্তান বা সমাজের উপর কতটা ভাল হচ্ছে??একটু বিশ্লেষন করে দেখা যেতে পারে....
দেরীতে বিবাহ এটি আমাদের শুধু পারিবারিক সমস্যা না, এটি আমাদের জাতীয় সমস্যা। তার জন্য শুধু মাত্র অভিভাবকদের দোষ দেওয়াও ঠিক হবে না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন যে, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি বা কর্মসংস্থান গড়তে গড়তে একটি ছেলের বয়স হয়ে যায় ২৯-৩০ বছর। আর নিজে কর্মসংস্থান ছাড়া বিবাহর কথা বলা বা ভাবা এক ধরনের অন্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সমাজে। অল্প কিছু সচেতন অভিভাবক ছাড়া এই বিষয় গুলো কেউ চিন্তাই করে না।
বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া অনুযায়ী একটি ছেলে বা মেয়ে যৌবনপ্রাপ্ত হয় ১২-১৩ বছর বয়সে। যৌনতা প্রতিটা মানুষের জৈবিক চাহিদা। ঠিক ক্ষুধার মত। আপনার ক্ষুধা লাগলে আপনি কিছু না কিছু অবশ্যই খেতে চাইবেন। সেটি কম হোক-বেশি হোক, বৈধভাবে হোক-অবৈধভাবে হোক। আর আকর্ষশনীয় খাবার হলে তো কোন কথাই নেই। আবার ক্ষুধা নিবারণের কিছু সময় পরে আবার ক্ষুধা দেখা দিবে তখনও আবার ক্ষুধা নিবারন করার চেষ্টা করবেন। যৌনতা এমনই শারীরিক চাহিদা যা সকলেই কম-বেশি, বৈধ-অবৈধভাবে নিবারণের চেষ্টা করবেই। ১ দিন, ২ দিন, ১ বছর, ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর এভাবে কত দিন?? র্দীঘদিন এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে অন্যায় দিকে ঝুকবেই। কারণ ছেলে মেয়ের জন্য এটি একটি আকর্ষনীয় ব্যাপার। তখনই শুরু হতে থাকে যৌন হয়রানী, ধর্ষন, ব্যাভিচার, অবৈধ্য সম্পর্ক, পরকীয়া, পার্ক থেকে লিটনের ফ্লাট ইত্যাদি। সমাজে শুরু হতে থাকে নানা রকম সমস্যা।
সাধারনত গ্রাম অঞ্চলে ছেলের বয়স ৩০ হলেও ১৭-২০ বছরের বা আরও কম বয়সের মেয়েকে বিয়ে করতে হয়। তখন ছেলে ও মেয়ের বয়সে ব্যবধান হয়ে যায় অনেক বেশি। তাছাড়া পরিপক্কতারও একটা বিষয় থেকে যায়। তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন হল দুজনের মনে সমন্বয়। সাধারনত কম সময়ের ভিতর ছেলে মেয়ে দেখে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়, তাতে ছেলে বা মেয়ের মনের সাথে সমন্বয় না হলে শুরু হয় নানা সমস্যা। আর পারিবারিক সমস্যা তো কম বেশি থাকেই।
মানুষের সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। বাংলাদেশের ছেলে মেয়েদের ১২-১৩ বছর থেকে যৌবনপ্রাপ্ত হলেও সাধারণত ছেলেদের ৩০ বছর ও মেয়েদের ২৫ বছর বয়সের পর থেকে যৌনতা হ্রাস পেতে শুরু করে। একজন ২২-২৫ বছরের বয়সের ছেলে যে পরিমান আবেগ, উৎফুল্ল, মনের শক্তি থাকে, সেটি ৩০ বছরের পরে আর সম্ভব না। অতএব ৩০ বছরের পরে বিবাহ করা ছেলেটি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময় উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার ছেলে মেয়ের বয়সের ব্যবধান বেশি হওয়ার ফলে ছেলে কিছু বছর হলেই ছেলের একধরনের অক্ষমতা বা নানা সমস্যা দেখা দেয় অথচ তখন মেয়েটি পরিপূর্ন যুবতী। চাহিদা অনুযায়ী যোগান না পাওয়ায় অনেক পরিবারে শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি, পরকিয়াসহ নানা সামাজিক সমস্যা।
এবার আসি গুরুত্বপূর্ন আলোচনায়, ধরুন আপনি ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন। আপনার প্রথম সন্তান জন্মলাভ করবে ৩২-৩৩ বছর বয়সে আর দ্বিতীয় সন্তান ৩৫-৩৬ হবে আপনার বছর বয়সে। এখন ভাবুন আপনার প্রথম সন্তান যদি ছেলে হয় তাহলে তারও লেখাপড়া শেষ করে একটি কর্মসংস্থানে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩০ বছর। তখন আপনার বয়স হবে ৬২-৬৩ বছর। আর দ্বিতীয় সন্তানের হিসাব বাদই দিলাম। এখন ভাবুন তো আপনি ৬২-৬৩ বছর প্রর্যন্ত বেঁচে থাকবেন কিনা, বা বেঁচে থাকলেও কতটুকু সুস্থ থাকবেন। তাদের কতটুকু সাপোর্ট দিতে পারবেন কিনা? আপনি ৩০ বছরের আগে যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারেন তাহলে ঐ সময় আপনার সন্তান কিভাবে দাঁড়াতে পারবে?? বর্তমানে ৪০ বছরের পরে আমরা চলে যাচ্ছি ডেঞ্জার লাইফ টাইমে। যেকোন সময় মারা যাচ্ছে ৪০ বছর পার হলেই। অতএব আপনি যদি ৬০ বছরের আগেও মারা যান তাহলে আপনার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কোন সাগরে পড়বে সেটা শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারবে।
অতএব আমাদের সকলের স্ব স্ব জায়গা থেকে আরও সচেতন হওয়া উচিৎ কারন আমরাও কারো না কারো অভিভাবক বা অভিভাবক হবো। হাদীসে দৈহিক ও আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্য ব্যক্তিদের বিবাহ করার কথা বলা হয়েছে। অতএব সামর্থ্য হলে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর বিবাহ করা বা বিবাহ দিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাতে পারিবারিক, ধর্মীয়, সমাজের নানা পাপ, অপরাধ, সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৬