খুন, ধর্ষন, দূর্নীতি অন্যয়ের বিচারের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা একটা নিয়মে পরিনত হয়েছে। ছাত্র, সাধারন জনগন রাস্তায় না নামলে যেন বিচার পাওয়া যাবে না এমন একটা অবস্থার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বাস থেকে নামার পরে ধর্ষন হয়েছে। সাধারন নিয়ম ছিল প্রশাসন ধর্ষকদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের ধরা এবং দেশের আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি দেওয়া। কিন্তু তা করতে প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারীয় নেতারা ২৪ঘন্টা-৪৮ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়ে খালাস, তারপর ২৪-৪৮ মাসেও আর কোন খবর পাওয়া যায় না। সাগর-রুনি, তনু, বিশ্বজিৎ হত্যা থেকে সাধারন মানুষ শিক্ষা নিয়ে আজ বারবার রাস্তায় নেমে আসে। আস্থা হারিয়েছে প্রশাসন, রাজনীতি নেতাদের উপর।
একটু ঘুরে আসি বিচার ব্যাবস্থা বিবর্তন থেকে। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি গ্রাম মহল্লায় কেউ কোন অন্যয় করলে তাকে গ্রাম বা মহল্লার মাতবর বা মুরব্বিরা বিচার করতেন। তখন বিচারের জন্য থানা পুলিশ কোর্টে পর্যন্ত খুবই কমই যেত। মাতবর-মুরব্বিগন বংশ-দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে যে ব্যাক্তি অন্যয় করতো তাকে কঠিন শাস্তি দিতেন। মাঝে মাঝে তাকে একঘরে করে রাখা হতো। ফলে অন্যায়কারী ভবিষৎতে অন্যায় করার সাহস পেতেন না আর ঐ বিচারের ভয়ে অন্য কেউও এমন অন্যায় করার সাহস দেখাতো না। আস্তে আস্তে মাতবর-মুরব্বিগনের বিচারে শকুন পড়লো। বিচার ব্যাবস্থা চলে গেল গ্রাম বা মহল্লার অসৎ বড় ভাইদের হাতে। শুরু হলো বংশ-দল-মত-ধর্ম পক্ষপাতিত্ব। তাতে যারা ভুক্তভোগী তারা হতাশ হতে শুরু করলো আর অন্যায়করীও অন্যায়ে শাস্তি না পাওয়ায় কোন ভয় নেই ফলে অন্যায় বেড়ে গেল। সাধারন মানুষ থানা পুলিশ কোর্ট চিনতে শুরু করলো। এটি ছিল সাধারন মানুষের শেষ ভরসা। দিন দিন সেখানেও হতাশ হয়ে পড়েছে মানুষ। তাই সমস্যা তৈরি হলেই কোন উপায় না পেয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছে।
খুবই হতভাগ হওয়ার মত ব্যাপার যে, একটা খুন, ধর্ষন, অন্যায় হলে প্রশাসন সাথে সাথে ব্যাবস্থা নিবে, আইন অনুযায়ী বিচার হবে কিন্তু তার জন্য প্রশাসন সরকার প্রধানের দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে অন্যায় কখনোই কমানো যাবে না। অন্যায়ের উপযুক্ত শাস্তি না হলে অন্যায় দিন দিন বাড়বে। ভুক্তভোগী সহ সাধারন মানুষ ততই রাস্তায় আন্দোলনে নেমে আসবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেত্রী সকলেই নারী। এমন কোন গুরুপ্তপূর্ন জায়গায় বাকি নেই যেখানে উচ্চ পদে নরী কাজ করছেনা। তবু দুঃখজনক হলেও সত্য এদেশে নারীরাই ধর্ষিত হচ্ছে। এসকল ধর্ষনকারীসহ সকল অন্যায় কারীকে দল-মত-ধর্ম ভুলে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এমন শাস্তি হবে যেটা দেখে অন্য কেউ এমন অন্যায় করার সাহস না পায়।
ছবি: ইন্টারনেট