somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অবিবাহিত জাহিদ
আমি মৌলবাদী মুসলিম।ইসলামের সাথে অন্য কিছু মিলাতে রাজি না।আমি সেই ইসলামে বিশ্বাস করি যা মধ্য যুগে এসেও সর্বাধুনিক। যারা কুরআন হাদিসের আধুনিকায়ন চায় তারা মুনাফিক।

কিছু জাল হাদিসের ব্যাখ্যা

০১ লা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যেতে হলেও যাও


ইবন জাওযি এবং ইবন হিব্বান এটি জাল বলে প্রমাণ করেছেন। আলবানির সংকলিত ৫০০০ টি দুর্বল হাদিসের সংগ্রহে এটিকে জাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে [সিলসিলাতুল আহাদিথ আল যায়িফা, ভলুম ১, পৃষ্ঠা ৪১৩]। এই জাল হাদিসটি মানুষকে জ্ঞান অর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয়—যা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্দেশ্য। কিন্তু সে জন্য নবীর ﷺ নাম ব্যবহার করে ধর্মের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করা একটি বিরাট গুনাহ।

যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নামে মিথ্যা ছড়ায়, তার পরিণতি জাহান্নাম—সাহিহ বুখারি

জ্ঞান অর্জন একটি ধর্মীয় দায়িত্ব এবং আল্লাহ আমাদেরকে কু’রআনে বহু জায়গায় জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন।

হে প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (২০:১১৪) [রাব্বি যিদনি ই’লমান]

যারা জানে এবং যারা জানে না, কিভাবে তারা একে অন্যের সমান হতে পারে? (৩৯:৯)

আল্লাহ তাদের অন্তর কলুষিত করে দেন, যারা বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করে না। (১০:১০০)

তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে এবং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে অনেক সন্মানিত করবেন। (৫৮:১১)

কু’রআনের এত আয়াত থাকতে আমাদের জাল হাদিস প্রচার করার কোনো প্রয়োজন নেই।

জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে বেশি পবিত্র

এই হাদিসটি আল-খাতিব আল-বাগদাদি তার The History of Baghdad 2/193 বইয়ে বর্ণনা করেছেন এবং একে জাল বলে প্রমাণ করেছেন।

এই হাদিসটি ইসলামের দাওয়াতের কাজকে ইসলামের জন্য সংগ্রাম করা থেকে বেশি সন্মান দেয়। এটি আগেকার দিনের কাপুরুষরা, যারা জিহাদে যেতে ভয় পেত, তারা প্রচার করতো, যাতে করে তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে পালিয়ে থাকতে পারতো। কু’রআনে এর সম্পূর্ণ বিপরীত বাণী রয়েছেঃ

শারীরিকভাবে অক্ষম ছাড়া যে সব বিশ্বাসীরা ঘরে বসে থাকে, তারা কোনোভাবেই তাদের সমান নয়, যারা নিজেদের জান এবং সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। যারা ঘরে বসে থাকে, তাদের থেকে মুজাহিদদের পদমর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি সকল বিশ্বাসীদেরকেই সুন্দর প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু যারা ঘরে বসে থাকে তাদের থেকে মুজাহিদদেরকে আল্লাহ অকল্পনীয় বেশি প্রতিদান দেন। (৪:৯৫)

তবে মনে রাখবেন, জিহাদ মানেই “আল্লাহু আকবার” বলে অমুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া নয়। জিহাদ শব্দের অর্থ আপ্রাণ চেষ্টা করা, কোনো কিছু অর্জনের জন্য সংগ্রাম করা। যেমন, কুপ্রবৃত্তি দমনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাটা একটি জিহাদ। পরিবার, সমাজ ও দেশের অন্যায় সংস্কৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাটাও জিহাদ।

একইভাবে নিজের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ যে সর্বোত্তম জিহাদ বলে একটা হাদিস প্রচলিত আছে, সেটাও ভুল। ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেন—

কিছু লোক একটা হাদিস প্রচার করে যে, নবী মুহাম্মাদ ﷺ নাকি তাবুকের যুদ্ধের পর এসে বলেছিলেন, “আমরা একটা ক্ষুদ্রতর জিহাদ থেকে ফেরত এসে একটা বৃহত্তর জিহাদে আসলাম।” এই হাদিসের কোনো ভিত্তি নেই, ইসলামিক শিক্ষার সাথে জড়িত কোনো পণ্ডিত এই হাদিস বর্ণনা করেননি। কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মহৎ কাজ, এবং শুধু তাই না, এটি মানবজাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। [ইবন তাইমিয়্যাহ — আল ফুরকান, পৃষ্ঠা:৪৪-৪৫]

দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ

ইবন জাওযি একে জাল হাদিস বলে প্রমাণ করেছেন।

এই হাদিসটি মুসলমানদের মিথ্যা আশা দেয় যে, তারা দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা না করেও, শুধুই দেশ প্রেমের জন্য জান্নাতে যেতে পারবে। যেই দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং যেই দেশের সরকার ইসলামের নিয়ম অনুসারে দেশ পরিচালনা করে না, সেই দেশের জন্য প্রেম ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না। ঈমানের একটি অত্যাবশ্যকীয় দাবি হচ্ছে: আল্লাহ ﷻ যেটা আমাদের জন্য সঠিক বলেছেন, সেটাকে মনে প্রাণে সঠিক মানা এবং আল্লাহ আমাদের জন্য যেটাকে খারাপ বলেছেন, সেটাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করা।

এই ধরণের জাল হাদিস ব্যবহার করা হয় ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশের মুসলমানদের মধ্যে দেশের প্রতি অন্ধ ভালবাসা সৃষ্টি করার জন্য। কাফির সরকার দ্বারা পরিচালিত কাফির শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত একটি দেশের প্রতি প্রেম আর যাই হোক, অন্তত আল্লাহর প্রতি ঈমানের অঙ্গ নয়।

তবে এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, দেশের আইন মেনে চলা এবং দেশের উপকার করা মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, যতক্ষন না সেটা ধর্মের বিরুদ্ধে না যাচ্ছে। কু’রআনের এই আয়াতগুলো দেখুন—

হে বিশ্বাসীরা, তোমরা সকল অঙ্গীকার পূর্ণ কর। … [৫:১]

… তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই তোমাদেরকে অঙ্গীকারের ব্যপারে জিজ্ঞেস করা হবে। [১৭:৩৪]

… নিশ্চিত করার পরে কোন অঙ্গীকার ভাংবেনা কারণ তোমরা আল্লাহকে সাক্ষি করেছ। … [১৬:৯১]

আমরা যখন যেই দেশে থাকছি, আমরা সেই দেশের আইন মেনে চলার অঙ্গীকার করে সেই দেশে থাকার অনুমতি পাই। সুতরাং ধর্মীয় সীমা না ভেঙ্গে দেশের আইন মেনে চলতে আমরা বাধ্য, যেহেতু আমরা অঙ্গীকার করেছি।

আল্লাহ সেই বান্দাকে ভালবাসেন যে তাঁর ইবাদতে ক্লান্ত, নিস্তেজ হয়ে পড়ে


আদ-দার কুতনি একে জাল বলে প্রমাণ করেছেন।

এটি কু’রআনের পরিপন্থী। আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কু’রআনের বেশ কয়েকটি জায়গায় বলে দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের জন্য সহজ, স্বাচ্ছন্দ্য চান, তিনি মোটেও আমাদের জন্য কষ্টকর কিছু চান না।

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ-সাচ্ছন্দ চান, তিনি তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। [২:১৮৫]

আল্লাহ তোমাদের জন্য কষ্ট কর কিছু চান না, বরং তিনি শুধুই তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের উপর তাঁর অনুগ্রহকে পূর্ণ করতে চান, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। [৫:৬]

এই ধরণের হাদিসকে সাধারণত ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত ইবাদতে মানুষকে ব্যস্ত রাখার জন্য। এধরনের হাদিস সারা রাত জেগে শবে বরাতের নামায পড়া, বা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে শক্তি নিঃশেষ করে ফেলা ইত্যাদি বাড়াবাড়িকে অনুপ্রাণিত করে। অনেকে এই ধরণের ভুল ধারনায় অনুপ্রাণিত হয়ে হজ্জের সময় এক দিনে দুই বার তাওয়াফ-সায়ি করে নিস্তেজ হয়ে পড়েন, আর ফজরের ফরয নামায পড়তে পারেন না। এধরনের বাড়াবাড়ি বা ধর্মের জন্য ‘নিঃশেষে আত্মত্যাগ’—এই ধরণের আত্মহত্যা মানসিকতা মোটেও কু’রআনের শিক্ষা নয়।

ধর্মীয় উপাসনা এবং হালাল ভাবে জীবন যাপনের জন্য যা কিছু করা দরকার, তার মধ্যে সুন্দর ভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে শান্তির, সাচ্ছন্দের জীবন পার করাটাই কু’রআনের শিক্ষা।

মুহাম্মাদ ﷺ সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। মুহাম্মাদ ﷺ এর নূর থেকে সমস্ত সৃষ্টি জগত সৃষ্টি হয়েছে


আয-যাহাবি বলেন, এই হাদিসের বর্ণনাকারির মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন মুসলিম আল ফিরি আছে, যে একজন কুখ্যাত মিথ্যাবাদী। ইবন হিব্বান বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন মুসলিম অনেক হাদিস জাল করে প্রচার করে গেছে, যেগুলো সে দাবি করতো সে লাইথ এবং মালিক এর কাছ থেকে শুনেছে। আলবানিও এই হাদিসটিকে জাল বলে প্রমাণ করেছেন। ইমাম যাহাবি এবং ইবন তাইমিয়াহ একে বাতিল-মিথ্যা হাদিস বলেছেন।

এই হাদিসটি একটি বড় হাদিসের অংশবিশেষ, যেটার ঘটনা হচ্ছে এরকম—যখন আদম ﷺ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে অন্যায় করলেন, তখন তিনি আল্লাহর ﷻ কাছে ক্ষমা চেলেন এই বলে যে, “হে প্রভু, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই, তোমার উপর মুহম্মদের ﷺ এর অধিকারের দোহাই দিয়ে।” তখন আল্লাহ ﷻ নাকি বলেছিলেন, “হে আদম, তুমি মুহম্মদের ব্যপারে কিভাবে জানলে, যাকে আমি এখনও সৃষ্টি করিনি?” আদম ﷺ নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “হে প্রভু, তুমি যখন আমাকে তোমার নিজের হাতে বানিয়েছিলে এবং তোমার রুহকে আমার ভেতরে ফুঁ দিয়েছিলে, আমি তখন মাথা উচু করেছিলাম এবং দেখেছিলাম তোমার কুরসিতে লেখা—আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তার রাসুল। সেখান থেকে আমি বুঝেছিলাম যে—তুমি তোমার পাশে কারো নাম ব্যবহার করবে না, যদি না সে তোমার সবচেয়ে পছন্দের কেউ না হয়।” তখন নাকি আল্লাহ ﷻ বলেছিলেন, “ও আদম, তুমি ঠিক কথা বলেছ। আমার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ হল মুহাম্মাদ। আমার উপর তার অধিকারের দোহাই দিয়ে আমাকে ডাকো। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আর যদি মুহাম্মাদকে না বানাতাম, তাহলে আমি তোমাকে বানাতাম না।”

এটি একটি সম্পূর্ণ জাল হাদিস। শুধু এই হাদিসটিই নয়, এধরনের আরও অনেক রূপকথার হাদিস রয়েছে, যেখানে মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর ﷻ কাছাকাছি একজন অতিমানবীয় অলৌকিক সৃষ্টি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে বেশ কিছু সুফি মতবাদ আছে, যারা এই ধরণের অনেক জাল হাদিসকে ব্যবহার করে নবী ﷺ—কে উসিলা করে তার মাধ্যমে আল্লাহর ﷻ কাছে দাবি করার জন্য। এই ধরণের ভুল তাওয়াসসুল (আল্লাহর নিকটবর্তী হবার চেষ্টা) হারাম। যেমন, “হে আল্লাহ, তোমার পেয়ারের নবীর কসম, আমরা তার উম্মত, তার উসিলায় আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দাও”, “হে আল্লাহ, তুমি তোমার নবীকে অমুক দিয়েছিলে, তার উসিলায় আমাদেরকে তমুক দাও” ইত্যাদি। আমরা কখনই নবীর ﷺ কোনো গুণ বা অবদানের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে পারবো না। শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ইবাদতের বদলে আল্লাহর ﷻ কাছে চাওয়া যাবে। যেমন, “আমার রোজার বিনিময়ে আমার সব গুনাহ মাফ করে দিন”, “আমার হজ্জের বিনিময়ে আমাকে সুস্থ করে দিন” ইত্যাদি। মনে রাখবেন, আমাদের আল্লাহর ﷻ উপর কোনই অধিকার নেই, কারণ আমরা কেউই আদর্শ মুসলমান নই যে, আমরা আল্লাহর ﷻ কাছে কোনো দাবি রাখার মত মুখ করতে পারি।

উপরের জাল হাদিসটি কু’রআনের বিরোধী, কারণ আল্লাহ ﷻ নিজে আদম ﷺ এবং তার স্ত্রীকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে তাঁর কাছে মাফ চেতে হবে এবং তারপর তিনি তাদের দুজনকেই ক্ষমা করে, তাদের উপর রহমত করেছিলেন এবং তাদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান দিয়েছিলেন। আল্লাহ ﷻ নিজে আদমকে ﷺ এই দু’আটি শিখিয়েছিলেন তাঁর কাছে সঠিক ভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য—

প্রভু, আমরা আমাদের নফসের প্রতি অন্যায় করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের উপর আপনার রহমত না দেন, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে যাবো। [৭:২৩]

আর যেসব হাদিস বলে নবীকে ﷺ সৃষ্টি না করলে আল্লাহ ﷻ কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, তারা কু’রআনের এই আয়াতগুলোর বিরোধিতা করে –

আমি মানুষ এবং জ্বিন সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার দাসত্ব করার জন্য। [৫১:৫৬]

যারা বলে আল্লাহ ﷻ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নবী ﷺ এর জন্য এবং তাকে না বানালে তিনি মানুষ, জ্বিন কিছুই বানাতেন না—তারা শিরক করে। একইভাবে যারা বলে, আল্লাহ ﷻ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নবী ﷺ এর নূর থেকে, তাদের এই দাবির কোন সমর্থন কু’রআনে নেই, কারণ আল্লাহ ﷻ কু’রআনে পরিস্কার বলে দিয়েছেন তিনি কেন এবং কিভাবে সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন। কু’রআনের কোথাও নবী ﷺ এর নূরের কোন উল্লেখ নেই।

অবিশ্বাসীরা কি দেখেনা যে আকাশ এবং পৃথিবী একসাথে সংযুক্ত ছিল এবং ‘আমি’ তাদেরকে বিদীর্ণ করে আলাদা করেছি এবং আমি সকল প্রান সৃষ্টি করেছি পানি থেকে? তারপরেও কি তারা বিশ্বাস করবে না? [২১:৩০]

তিনি আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এক বিশেষ উদ্দেশে। যেদিন তিনি বলবেন হও, সেদিন তা (ধ্বংস) হয়ে যাবে। … [৬:৭৩]

তিনি আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। যখন তিনি কিছু আদেশ করেন, তিনি শুধু বলেন “হও” আর তা হয়ে যায়। [২:১১৭]

আর যারা দাবি করে যে, তারা জানে আল্লাহ ﷻ কিভাবে বা কিসের থেকে সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করেছেন, তারা মিথ্যা বলেঃ

আমি তাদেরকে আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টির সাক্ষি রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃষ্টিরও সাক্ষি রাখিনি। যারা অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদেরকে আমি আমার সহকারী হিসেবে নেই না। [১৮:৫১]

সুতরাং কেউ জানেনা সৃষ্টি জগত কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এমন কি কেউ জানে না সে নিজে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ জানে না মানুষ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, জ্বিন জানে না জ্বিন কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ কাউকে তাদের সৃষ্টির সময় সাক্ষি রাখেননি অর্থাৎ তারা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা তারা দেখেনি, শুনে নি এবং জানেও না।

যে শুক্রবার আমার প্রতি ৮০বার দুরুদ পাঠাবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে


এই হাদিসটি আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণীত বলে দাবি করা হলেও এটি একটি জাল হাদিস। তাবলীগ জামাতের কিছু বইয়ে এই ধরণের হাদিস অনেক পাওয়া যায়, যেখানে দুরুদের নানা ধরণের মাত্রাতিরিক্ত সওয়াব, ফজিলত ইত্যাদি বর্ণনা করা থাকে। আল্লামা সাখায়ি একে দুর্বল এবং আলবানি একে জাল হাদিস বলে চিহ্নিত করেছেন। এটি কু’রআনের পরিপন্থি কারণ আল্লাহ ﷻ স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেনঃ

যে একটি ভালো কাজ নিয়ে আসবে, আল্লাহ তাকে তার দশ গুণ বেশি প্রতিদান দিবেন এবং যে একটি খারাপ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে তার সমান প্রতিদান ছাড়া কম-বেশি দেওয়া হবে না। কারো সাথে বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না। [৬:১৬০]

সুতরাং যখনি কোন হাদিস পাবেন যে, অমুক করলে ১০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, তমুক করলে ১০ বছর নফল নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যাবে, ধরে নিতে পারেন সেগুলো হয় দুর্বল হাদিস, না হয় জাল হাদিস।

যদি নারী জাতি না থাকতো, তাহলে আল্লাহর যথাযথ ইবাদত হতো

এই হাদিসের বর্ণনাকারিদের মধ্যে আব্দুর রাহিম ইবন যায়িদ আছে, যাকে হাদিস বিশারদরা মিথ্যাবাদী এবং একজন প্রতারক বলে চিহ্নিত করেছেন।

নারীদেরকে চরম অপমান করে, এমন হাদিসের কোনো অভাব নেই। আপনি যে কোন হাদিসের বই খুললেই শ’খানেক হাদিস পাবেন, যেখানে নারীদেরকে পুরুষদের থেকে অধম, ধর্মীয় ভাবে পশ্চাদপদ, পুরুষদের অধীন করে রাখা হয়েছে। আপনি কু’রআন ভালো করে পড়লেই বুঝতে পারবেন আল্লাহ ﷻ নারীদেরকে কত বড় সন্মান দিয়েছেন এবং তাঁর কাছে পুরুষ এবং নারী উভয়েই সমানভাবে সন্মানিত (কিন্তু দায়িত্ব ভিন্ন) এবং উভয়কেই সমান পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—

নিশ্চয় আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করা পুরুষ, আত্মসমর্পণ করা নারী, বিশ্বাসী পুরুষ, বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। [৩৩:৩৫]

আমরা ভুলে যাই, প্রথম মুসলিম হয়েছিলেন যিনি, ইসলামের জন্য নিজের সকল সম্পত্তি যিনি উৎসর্গ করেছিলেন— সেই খাদিজা (রা) একজন নারী। প্রথম যিনি ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন, তিনি একজন নারী—সুমাইয়া (রা)। ইসলামের চারজন অন্যতম হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে আয়েশা (রা) একজন নারী। সর্বপ্রথম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘আল-কারাওয়িন’ এর প্রতিষ্ঠাতা একজন নারী—ফাতিমা আল-ফিহরি। শেখ মুহম্মাদ আকরাম আল-নদভি তার ৫৩ ভলিউমে প্রায় ৮০০০ মহিলা হাদিস বিশারদের (মুহাদ্দিথাত) জীবনী সংগ্রহ করেছেন।

ইসলামে নারীদের অবদানের কোনো অভাব নেই। যদি সত্যিই নারী জাতি না থাকলে আল্লাহর ঠিকমত ইবাদত হতো, তাহলে আল্লাহ ﷻ খামোখা নারী জাতি সৃষ্টি করতেন না, কারণ মানুষকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত (দাসত্ব) করা। নারী জাতিকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যও হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা। এধরনের কথা যারা বলে, তারা আসলে বলছে, আল্লাহ ﷻ নারীদেরকে সৃষ্টি করে একটা ভুল করেছেন—নাউ’যুবিল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×