somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওদেরকে বাঁচান!!!

২৫ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলা মানুষের পদভারে ক্লান্ত ঢাকার রাজপথ। সবার ভেতরে লক্ষ্যে পৌঁছানোর অঘোষিত প্রতিযোগিতা। এ যেন নিজের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য ছুটে চলা। কোন লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে কী ছুটছে তারা? না। কোটি মানুষের এই শহরে অনেকেরই কোন গন্তব্য নেই। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কোন কাজ নেই, লক্ষ্য নেই, স্বপ্ন নেই, তবুও তারা পথ চলছে বারোরকম মানুষের পাশ ঘেঁষে আপন কক্ষপথে।
পথের মানুষ। পথই তাদের ভালবাসা, দুঃখ বেদনার গান, ভবিষ্যতের স্বপ্ন, সুখময় সংসার। পরিবর্তনের দোলায় দুলে নিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী। সরকার বদলায়, মানুষের চেহারা বদলায়, বদলায় ঢাকা, বদলায় বিশ্ব। কিন্তু ওদের জীবনযাত্রার মান বদলায় না। ওরা রাস্তায় কাজ করে, রাস্তায় খায়, উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং রাস্তাতেই কোন এক সময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে। তার জীবিকা কিংবা আশ্রয় যা-ই বলি সবই তার এই পথে।
প্রতিদিন অফিস শেষ করে মগবাজার ওভারব্রিজের উপর দিয়ে রাত ১০/১১ টার দিকে যখন বাসায় ফিরি তখন একটি অযাচিত ঘটনায় আমার মনকে সাংঘাতিক বিমর্ষ করে। দেখি, ব্রিজের উপরে ৭/৮ জন অল্পবয়সী বালক কাদামাখা গায়ে, নোংরা অবস্থায়, ঢুলু ঢুলু ঘুমানো চোখে বসে আছে। অল্প ৩/৪ বছর বয়সী একজনকে দেখি তাদের পাশে উলঙ্গ অবস্থায় নির্বিগ্নে ঘুমিয়ে আছে। তাদের আশপাশ আর কাউকে না দেখে জিজ্ঞাসা করতেই ওরা বলল, ওদের কেউ নেই। ওরা ওখানেই থাকে। দিনের বেলাতে ওরা টোকাই হিসেবে নানা জায়গায় নানা ধরনের কাজ করে এখানে এসে রাত কাটায়। ওদের দলের মধ্যে যে ছেলেটি একটু বয়সে বড় বলে মনে হল তার নাম আনোয়ার। বয়স ১০/১২ বছর। বাড়ি মানিকগঞ্জ। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে চতুর্থ। তার বাবা এক সময় ঢাকাতে ছিল। অসুস্থ্য হবার পর মানিকগঞ্জে ফিরে যায়। তারপর আর ফিরে আসেনি। মৃত্যু তার বাবাকে নিয়ে গেছে পরপারে। বাবার মৃত্যুর পর অন্য ভাইবোনরা কেউই তার দায়িত্ব নেয়নি। অভাব তাকে এ পথে নিয়ে এসেছে। সে কী কী করে এবং কীভাবে তার দিন চলে এ প্রশ্ন করলে সে বলে, কাওরান বাজার, বাংলা মটর, কখনো বা শাহবাগ অঞ্চলে কাগজ কুড়িয়ে থাকে। মাঝে মাঝে আয় ইনকাম ভাল না থাকলে অন্যদের কাছে হাতও পাততে হয় পেটের খাবারের জন্য। এর ব্যতিক্রমও আছে। কোন রাতে হোটেলের ভাত ব্যবসা করে কিছু আয় হলে সামনের কয়েকদিন একটু আরাম আয়েশে কাটে। প্রশ্ন করেছিলাম হোটেলের ভাত ব্যবসা কি রকম। তখন সে বলল, কাওরান বাজার অথবা শাহবাগের ভাতের হোটেলগুলোতে রাতে গিয়ে অপেক্ষা করে। হোটেলের অবিক্রিত ভাত কমদামে ওদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ওই ভাতগুলো কোনো পলিথিনের মধ্যে কিছু পানি দিয়ে মাটির নীচে ৫/৬ দিন পুঁতে রাখে। পরবর্তিতে সেগুলো এক প্রকার দেশী মদ হিসেবে এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বিক্রি করে, তাতে ৫০/৬০ টাকা আয় হয়। ইদানিং হোটেল মালিকরা আর ভাত দিতে চায় না।
আনোয়ারের বন্ধুরা বেশিরভাগই তারমত এ ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ কেউ বাদাম বিক্রি করে। কেউ আমড়া বিক্রি করে। আবার কেউবা হয়তো পুরোনো সিরিঞ্জ কিংবা লোহালক্কড় সংগ্রহ করেও বিক্রি করে। আবার দুয়েকজন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমারের মত অপকর্মের সাথেও জড়িত। সামান্য টাকার জন্য অথবা একবেলা পেটপুরে খেতে পায় এমন আশায় এসব কাজ করে। কাজের মধ্যদিয়েই সহকর্মীদের কাছ থেকে শোনা এসব গল্প আনোয়ার শুনায়। এভাবেই সে জীবনের গল্প করে।

তাদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে বিবেক দ্বারা দংশিত হয়েছি, দগ্ধ হয়েছি বার বার। ছা-পোষা মানুষের এছাড়াতো আর কিছুই করার নেই। যারা এই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করে তাদের অনেকেই ওদের দিকে বাঁকা চোখে তাকায়। কখনো তাদের মনের কোণে উঁকি দেয় না ওই সব শিশুদের এমন অবস্থার জন্য দায়ী কারা? কারণ খুঁজতে গেলে এর পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক বঞ্চনার কথা।
সারা বিশ্বের প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন শিশুর মধ্যে ১৩৫ মিলিয়ন (বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০০০-ইউনিসেফ) শিশুই আজ স্লাম কিংবা স্ট্রীট চিলড্রেন হিসেবে বিভিন্ন দেশে অর্ধাহারে-অনাহারে রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে রাত কাটাচ্ছে। যারমধ্যে বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ (সমাজ সেবা অধিদপ্তর তথ্য মতে) এবং শুধু ঢাকা শহরেই রয়েছে প্রায় দুই লক্ষ ১৫ হাজার (ইউএনডিপি তথ্যানুযায়ী)। এরা শুধু স্নেহের অভাব আর পেটের ক্ষুধার জন্য এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হিউম্যান রিসোর্স রিপোর্ট অনুযায়ী ৪-১২ বছরের পথশিশু শুধুমাত্র খাবারের অভাবে অন্যের বাড়িতে কাজ করে থাকে। যারা এই কাজ করে তাদের বেশির ভাগই নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। তারা একদিকে যেমন পাচ্ছে মানুষের অবজ্ঞা আবার অন্যদিকে স্বার্থান্বেষী একদল মানুষ তাদেরকে দিয়ে করাচ্ছে নানা ধরনের অপকর্ম। যার কারণে তাদের ভেতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রতি বিশ্বাস। জন্ম নিচ্ছে ঘৃণা।
এরাই দিনদিন এক দিকনির্দেশনাহীন নাগরিক হিসেবে সমাজের একটা বড় অংশ দখল করে ফেলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ ও জাতির জন্য এক অশনি সংকেত এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পথশিশুদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এইসব স্ট্রীট চিলড্রেনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। যা জাতির জন্য ক্রমেই এক ভয়াবহ সমস্যারূপে আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অনেক সমস্যা আছে তবুও বর্তমানে 'বদলে যাও, বদলে দাও' পরিবর্তনের এই শ্লোগানকে মনে প্রাণে ধারণ করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। তবে একথা বলতেই হবে, পরিবর্তন যেমন নিজেকে করতে হবে পাশাপাশি অন্যকেও পরিবর্তন হবার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে স¤প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, 'যে শিশু ভবিষ্যত রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে তাকে যথাযথভাবে গড়ে না তুললে পরিবর্তন সামনের দিকে না গিয়ে পেছনগামী হবে'। সুতরাং এইসব ভবঘুরে পথশিশুদেরকেও পরিবর্তন করতে হবে। তাদেরকে আরো কার্যকরী এবং দ্রুত বাস্তবমুখী পরিবর্তনের মাধ্যমে বদলে দিয়ে সুন্দর আগামী পৃথিবী গড়া এখন সময়ের দাবি।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×