somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্জিনিটি কমপ্লেক্স

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিষয়টা জটিল৷ আমি চেষ্টা করছি চিন্তাকে একটু হলেও প্রভাবিত করতে পারে এমনভাবে উপস্থাপন করার৷ আপনাদের কারো যদি প্রথম কয়েক লাইন পড়ামাত্রই মাথার ভেতর তর্ক যুক্তি এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব কিলবিল করে ওঠে, তাহলে বলব, সে অধিকার আপনার অবশ্যই আছে, কিন্তু শর্ত হল, আগে আপনাকে পুরো লেখাটা পড়ে শেষ করতে হবে! কোন কিছু অর্ধেক শুনে বা জেনে সিদ্ধান্তে চলে আসা বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷

যাহোক, আলোচনায় আসি—
বিয়ের আগে বা বিয়ের সিদ্ধান্তে যাবার সময় অসংখ্য পুরুষের মনে এই প্রশ্নই জাগে— আমার হবু স্ত্রী ভার্জিন তো?

বিতর্ক কুতর্ক যা-ই বলেন, এক্ষেত্রে প্রথম কথাটি হল, আপনি নিজে ভার্জিন তো?
আমার মনে হয় এই একটা প্রশ্নেই সব থেমে যাবার কথা৷ এই প্রশ্ন অনেকবারই উঠতে দেখেছি৷ কিন্তু তর্ক থামেনি, তর্ক আরো বেড়েছে৷ সবাই নিজের ক্ষেত্রে অপরাজেয় উকিল, এবং অন্যের ক্ষেত্রে ততোধিক কঠোর জজসাহেব! আমরা নিজেদের রোজ ক্ষমা করি, কিন্তু নিজের মানুষদের সেভাবে ক্ষমা করতে পারি আদৌ? অন্য মানুষকে তো আরো না!
এটা পারলে নিশ্চিতভাবে জীবন যাপন—সহাবস্থান অনেক সহজ হত৷

প্রশ্নটা যেহেতু পুরুষের তরফ হতেই আসে, সেক্ষেত্রে পুরুষদেরই একটু ভেবে দেখতে হবে, বন্ধুদের আড্ডায় কে কজনের সঙ্গে শুতে পেরেছে, সেই গল্প হয় গৌরবের সাথে৷ যাদের সঙ্গে শোয়া হল, তাদের কি বিয়ে হবে না? কোথাও না কোথাও তো হবেই! তেমন একটি মেয়েই যে আপনার কপালে জুটবে না তার নিশ্চয়তা কী? আপনি নিজে এই শোয়াশুয়ির গর্বিত গল্প দিতে পারেন, আপনার বন্ধু বেশ কজনের সাথে শুতে পারলে সেখানে হাততালি বাহবা দিতে পারেন যখন, তখন এই ভার্জিনিটি নিয়ে মন খারাপ করা তো আপনার সাজে না! আপনার নিজের যদি ভার্জিনিটি হারিয়ে থাকে তা নিয়ে কি আপনি কুণ্ঠিত হন? আপনার গ্লানিবোধ হয়? মন খারাপ হয়?
যদি না হয়, তাহলে ব্যাপারটা কেবল নারীর জন্যই চাপিয়ে দেওয়া কেন?

এখন এর মানে এটা নয় যে আমি বিষয়টাকে উৎসাহিত করছি৷ আমাদের সময়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ বা পরিবেশ পাওয়াই কঠিন ছিল৷ কোনমতে একটু হাত ধরার সুযোগ করতে পারা বিশাল ব্যাপার ছিল! এখনকার জেনারেশনের গল্প যা শুনতে পাই তাতে একটা বিরাট অংশ বিয়ের আগেই যৌনতার অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে! আচ্ছা, আপনার পরিবারের বাচ্চারা কেউ ভার্জিনিটি লস করেছে এমন ভাবতে পারেন? সেটা কিন্তু কেউ কল্পনাও করতে চান না৷ আবার পরিবেশ চালচলনেও আপনার মনে হবে না, আপনার ঘরের কেউ এমনটা করার সুযোগ পাচ্ছে অথচ নিজেরাই বলবেন, এই জেনারেশনের নাইনটি পার্সেন্টই বিয়ের আগে করে ফেলেছে! স্ববিরোধিতা হয়ে গেল না?

তারপরও এটা সত্য যে মডার্ন সমাজের একটা বিরাট অংশ ভার্জিনিটি পরিত্যাগ করেছে৷ নিজের অনুভূতিকে উপভোগ করেছে৷ আপনার আমার কারোই সেটা গিয়ে ঠেকানোর উপায় নেই৷ আপনি নিজেও যে সেই জেনারেশনের অংশ নন, সেটাও আপনি বলতে পারছেন না!

আছেন, অনেকেই আছেন, যাঁরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারছেন যে আমি নিজেকে পবিত্র রেখেছি, আমার জীবনসঙ্গীও কেন আমার মতই পবিত্র হবে না?
বেশ যৌক্তিক এবং ইমোশনাল প্রশ্ন৷ আমি পবিত্র, আমার স্ত্রীও কেন পবিত্র হবে না?
ভাই, আমাদের কারো পক্ষেই অগ্রিম ভার্জিনিটি টেস্ট করা সম্ভব না! এখন ভার্জিনিটি দিয়ে কী হবে সেটাও একটা প্রশ্ন!
আমি অনেক আগে একবার লিখেছিলাম, প্রেমই যদি হয়, তাহলে সবচাইতে নির্ভেজাল প্রেম হল পতিতার প্রেম! কারণ— এই প্রেমে মোহ থাকে না৷ কাম থাকে না৷ একজন পতিতা মোহ কাম শরীরের লীলা এসব হাজার বার দেখে এসেছে! এরপরও যদি সে কাউকে ভালোবাসে তাহলে সে ভালোবাসায় আর ওসব কাম মোহ শরীরের তেজ ইত্যাদির বালাই থাকে না৷ সেই প্রেমটাতে মানুষ আর মনুষ্যত্বটাই মুখ্য হয়৷

একজন মেয়ে কোন কারণে ভার্জিনিটি হারিয়ে ফেললে, সে ঠিক কোন দিক দিয়ে অযোগ্য হয়ে যায়? এর উত্তর সম্ভবত কারো কাছেই নেই৷ আপনি একটা ভার্জিন মেয়ে বিয়ে করে আনলেন, সে যে পরে কোনভাবেই অন্য পুরুষের প্রতি অনুরক্ত হবে না— এই নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারেন?
কোনভাবেই পারেন না!
প্রথম জীবনে মানুষ ভুল করলে তার সঠিক পথে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ আর যে আগে কখনও ভুল পথ চেনেইনি, পাপের স্বাদ জানেইনি তার পক্ষে পাপের থ্রিল নেবার বাসনা জেগে ওঠার সম্ভাবনাও আছে৷ তাহলে নিশ্চয়তা কোথায়?

আচ্ছা, এমন যদি হয়, আপনার স্ত্রীর আপনি ছাড়া আর কারো সঙ্গেই মেশার কোন সুযোগ সম্ভাবনা নেই, এমনকি আপনার স্ত্রীর তরফ থেকেও তেমন কোন প্রবণতা নেই, তবে আপনার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কের সময় আপনার স্ত্রী ফিল করছেন অন্য কাউকে! আপনার এটা জানারই উপায় নেই! দিব্যি সংসার চলছে বছরকে বছর, অথচ বুকের ভেতর রোজ বসত করছে অন্য মানুষ! তখন কোনটা আগে? শরীর না মন?

এবার মাথা ঘোরাচ্ছে?
এই তো, এসব বিষয় নিয়ে অযথা ভাবতে গেলে আপনি জটিল থেকে আরো বেশি জটিলতায় হাবুডুবু খেতে থাকবেন, কিনারা বের করতেই পারবেন না৷ অতএব, অযথা এসব ভেবে কেন নিজের মনের শান্তি নষ্ট করবেন?
শরীরটা সব নয়৷ দুইজন মানুষ পাশাপাশি থাকার জন্য, একটি সংসার সাজানোর জন্য পরস্পরের প্রতি মায়া, টান, বিশ্বস্ততা এবং সাপোর্টটাই জরুরি৷ একটা মানুষ আগে কী ছিল তারচেয়ে বেশি জরুরি সে এখন কী, এবং তারচেয়েও বেশি জরুরি তার ভবিষ্যতের ভাবনা কী?

বিয়ে ভার্জিনিটি দেখে না করে বিয়ে করা উচিত উপযোগিতা দেখে! কী রকম উপযোগিতা?
সংসারের চার দেয়ালের দুই দেয়াল আমি হলে অপর দুই দেয়াল যেন আমার স্ত্রী হতে পারে, ওরকম শক্ত সাপোর্টিভ একটা মানুষ হওয়াই সবার আগে জরুরি৷ অর্ধাঙ্গিনী কেন বলে?
আপনার কদমে কদম মিলিয়ে চলতে পারবে এমন মানুষকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করা উচিত, হাইট বা শরীরের মাপ দেখে নয়! এমনকি সৌন্দর্য দেখেও নয়৷ অনেক সুন্দর চেহারা ফিগারের মানুষ, অথচ তার মনের চিন্তাভাবনা নেগেটিভ, সন্দেহগ্রস্ত, কুৎসিত যদি হয় তাহলে সে সুন্দর দিয়ে আপনি কী করবেন? আপনার সুন্দর বৌ যদি আপনাকে উঠতে বসতে প্যারা দেয় তাহলে সে সুন্দর দিয়ে কী করবেন? আপনার ভার্জিন বৌ যদি আপনার দুঃখ কষ্ট সমস্যা খুশি অখুশি না বোঝে তাহলে সে ভার্জিন দিয়ে আপনি কী করবেন? দুইটা মানুষ পাশাপাশি থাকার জন্য তাহলে জরুরি কোনটা??

যে কোন সম্পর্কেই যদি একজন আরেকজনকে জাজ করা আরম্ভ করেন, তাহলে ওই সম্পর্ক তার ছন্দ হারাবে, গন্তব্যও হারাবে৷
কোন সম্পর্কেই যদি আমি বড় না তুমি বড় বা ব্যক্তিত্বের দাপট এসে ঠাঁই নেয়, তাহলে সে সম্পর্কেরও ভাঙন অবধারিত৷
আর কোন সম্পর্কেই যদি সন্দেহ জায়গা করে নেয় তাহলেও সে সম্পর্ক ভাঙবেই৷

একটা ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন পরিবেশ থেকে বেড়ে ওঠা, ভিন্ন চিন্তা চেতনায় গঠিত হওয়া একটা মানুষের সঙ্গে নিজে একাত্ম হওয়া শুধু একটা কাগজে সই স্বাক্ষরের বিষয় নয়, এখানে আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর সাপোর্ট এই দুইটা টার্ম সবার আগে জরুরি৷ অতীতে কী ছিল, কে কী করেছিল ওসবের পেছনে মাথা খাটিয়ে অনুসন্ধান করতে থাকলে আপনার আর সামনে এগুনো হবে না৷ কার অতীত কী ছিল তা নিয়ে বসে থাকলে কেউ উন্নতি করতে পারবে না৷ উন্নতি করতে হলে বর্তমানকে কাজে লাগাতে হবে, ভবিষ্যতের লক্ষ্যটা স্থির করতে হবে৷ একটা সংসার তৈরি করে সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সন্তানের ফিউচার তৈরি করা, রোজকার খরচাপাতি সামলানো, সঞ্চয়ের ব্যবস্থা, বাজার সদায়— এসব নিয়ে একবার ডুবে গেলে কীসের অতীত আর কীসের পিছুটান— সব ভুলে যাবেন!

শেষ করার আগে আরেকটা চরম সত্যি বলি— হাত কেটে, মাতলামি করে, পাগলামি করে, জীবন দিয়ে দেবার মত ডেস্পারেট হয়ে কাউকে ভালোবাসতে পারেন, কিন্তু সব ভালোবাসার উর্ধ্বে হল সন্তানের প্রতি ভালোবাসা! কোলে সন্তান চলে এলে অতীতের সব প্রেমই হাওয়া হয়ে যায়! সন্তানের প্রতি এই প্রেমের কাছে লাইলী মজনু শিরিঁ ফরহাদ সব প্রেমই তুচ্ছ!

(এখন প্রশ্ন উঠবে সন্তান রেখেও তো কতজন ভেগে যায়, সন্তানই কেউ কেউ মেরে ফেলে পরকীয়ার জন্য, সন্তানের প্রেম বড় হলে তিন সন্তানের মা কেন পরকীয়ায় জড়ায়?— এ প্রসঙ্গের আলোচনা হবে পরকীয়ার শেকড় অন্বেষণ সংক্রান্ত লেখাতে৷ লিখব শিঘ্রই৷)

ট্যাবু থেকে বের হতে পারাই ম্যাচিউরিটি! কাউকে ট্যাবু থেকে বের করে আনতে পারা ম্যাচিউরিটির চেয়েও বড় কিছু!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×