somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

একটি মিসকল
আমি কিন্তু কেউ না। সময়ে অসময়ে পাওয়া কতগুলো মিসকল শুধু। যে মিসকল হয়তো আপনার কাছের কেউ দিয়েছিল, কিংবা আপনার অপরিচিত। ভালো থাকুক আমার শত্রুরা আর সুস্থ থাকুক আমার প্রিয়জনেরা। - একটি মিসকল

নীল শাড়ী

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল সারা রাত ঘুমোতে পারেনি অবাক। মনের মধ্যে কি যেন একটা ঘুরপাক খাচ্ছে.. নিজেকে খুব বিচ্ছিরি লাগছে। অন্য কোন সময় হলে হয়তো কতগুলো ঘুমের পিল খেয়ে শুয়ে পড়তো, কিন্তু আজ ঘুমোতে ইচ্ছা করছে না তার। সজাগ থাকতে চায় সে, সকালে তার মস্ত বড় একটা কাজ আছে। নীরার সাথে প্রায় ৪/৫ দিন কথা হয় না, তাদের মধ্যে ছোট একটা ঝগড়া হয়েছিল। সেই ঝগড়াটা কাল শেষ করতে চায় অবাক। এই ৪/৫ দিন সে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়াও করেনি। আর সে এটাও বিশ্বাস করে নীরাও ঠিক মতো খায়নি, সারা দিন ঘুমিয়ে আর গান শুনে সময় কাটিয়েছিল। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে ৬:৩০ মিনিট হয়ে গেছে অবাক তা বুঝতেই পারেনি, নীরর সাথে কাটানো সময় সময়গুলো এমনি। কখন যে সময় চলে যায়, অবাক বুঝতেই পারে না।

৭টা বাজতেই বেড থেকে উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নীরার দেয়া লাল রঙ্গের পাঞ্জাবিটা পড়লো, পারফিউম মেখে নাস্তা না করেই চুপচাপ মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিল। মনটা খুব খুব ভালো তার এখন, নীরাকে নিয়ে সার্কিট হাউস পার্কে যাবে সে। একটা আইসক্রিম কিনে শেয়ার করে খাবে দু'জনে। আজ নীরাকে ফুচকা খাওয়াবে অবাক, নীরা যতটুকুন চায়। নীরা খাবে আর অবাক তার ফুচকা খাওয়া দেখবে। ফুলের দোকানের সামনে দিয়ে যেতেই রিক্সা থামিয়ে দোকান থেকে নীরার জন্য কতগুলো লাল গোলাপ কিনেছে। লাল রংটা নীরার খুব পছন্দ। আজ নীরাকে নীল রঙের শাড়ি পড়তে বলবে অবাক। নীল রংটা নীরাকে খুবই মানায়। এইসব ভাবতে ভাবতেই নীরার বাড়ির সামনে চলে এলো অবাক। রিক্সা থামিয়ে ভাড়া চুকিয়ে নীরার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। নীরার ফোনটা অফ দেখাচ্ছে। মনে মনে ভাবলো নীরা ঘুমে হয়তো। দুপুর বারো'টা বেজে যাচ্ছে, নীরার ফোন এখনো অফ। না আর সহ্য হচ্ছে না অবাকের, খুব চিন্তা হচ্ছে অবাকের। বাসার সামনে গিয়ে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে, বাসার কলিং বেল বাজালো, ভেবেছিল নীরা হয়তোবা দরজা খুলবে কিন্তু না তা হলো না। নীরার মা দরজা খুলতেই অবাক সালাম দিয়ে বললো, "খালাম্মা, নীরা"। "ওতো সকালেই বের হয়ে গেছে, বললো তোমার বাসায় যাবে।" নীরার মা বললেন। অবাক বললো,"আচ্ছা খালাম্মা তাহলে আমি আসি, পরে আসবো আবার।" এই বলেই সিঁড়ি ধরে নেমে গেল... তার মাথা ভন-ভন করছে। নীরা কিছু হলো নাতো? রিক্সা করে তার বাসার দিকে ছুটলো, আসে পাশের সব রাস্তা দেখছিল অবাক, নীরাকে খুঁজছিল। বাসায় এসে দেখে তার মা রান্না ঘরে কাজ করছে। একটু মুচকি হেঁসে মা বললো,
: কিরে কোথায় ছিলিরে?
: এইতো মা আশে পাশেই। আচ্ছা মা, নীরা কি বাসায় এসেছিল?
: নাতো, কেন কি হয়েছে?
: না এমনিতেই, আচ্ছা তাহলে আমি বের হচ্ছি আবার। একটু কাজ আছে।
: ভাত খেয়ে পরে যা।
: না মা, এখন খাবো না। ক্ষিদে নেই।
: আরে খেয়ে যা, নয়তো...
: নয়তো কি?
: কিছু না, আয় আগে খেয়ে নে।
: আচ্ছা দাও, তবে আমি আগে ফ্রেস হয়ে আসি।
: আচ্ছা যা, সবাই ওয়েট করছে।
: আচ্ছা ঠিক আছে।
ওয়াস রুমে ফ্রেস হয়ে, হাতমুখ মুছে টেবিলে গেল অবাক। খেতে ইচ্ছে করছিল না তার। তবুও মায়ের কথা রাখার জন্যই খেতে বসলো।


নীরা অবাকের মায়ের প্লেটে বেড়ে দিচ্ছিলো। অবাক নীরাকে দেখে পুরোপুরি চুপ। কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। নীরা অবাকের দেয়া নীল রঙ্গের শাড়ীটাই পড়েছে। অবাক এক মনে, চেয়ে আছে নীরার দিকে। কিছুই বলছে না আর। কোন কথা ছাড়াই ভাত খেয়ে রুমের দিকে গেল অবাক। একটু পরেই, নীরা এলো অবাকের রুমে, সবে মাত্রই সিগারেটটা শেষ করেছে ও। নীরা রাগ করে পাশে এসে বসলো অবাকের। অবাক কিছুই বলছে না। সব স্তব্ধতা ভেঙ্গে নীরা বললো,
: কোথায় ছিলে?
: বাহিরে।
: ফুল গুলো কে দিয়েছে?(টেবিলের উপরের লাল গোলাপ গুলো দেখিয়ে)
: দিয়েছিল একজন। তোমাকে বলাটা কি জরুরি?
: হ্যাঁ বলতেই হবে। কেন বলবা না তুমি, আমার জানতে হবে।
: না তোমার জানার কোন দরকার নাই। ভালোই তো আছো, আমারতো আর কোন দরকার নাই।
: হুম, তাতো বটেই আমার দেয়া পাঞ্জাবি পরে কার সাথে দেখা করতে যাও সেটা তো আমার জানতেই হবে।
: নীরার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
: আমার সাথে?
: না তুমি না, অন্য একজন।
: ওহ আচ্ছা দেখা করেছো?
: হুম, এক সাথে বসে একটা আইসক্রিম শেয়ার করে খেয়েছি।
: আচ্ছা ওকে আমি যাচ্ছি।
: এই শোন বিকালে বাসায় যাও, একটু পরে বের হবো। তোমাকে নিয়ে পার্কে যাবো। আর এখন আমার পাশে বসো।
: না বসবো না। তুমি থাকো ওই মেয়েটাকে নিয়ে।
: আরে বসো। (হাত ধরে টেনে বসালো নীরাকে)
: হুম বলো।
: সেদিনের জন্য আমি সরি। আর কখনো এমন হবে না।
: ঠিক আছে। কোথায় ছিলে সারা সকাল?
: তোমার বাসার সামনে। তোমার ফোন অফ কেন?
: এমনিতেই, সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
: খুব টেনসনে ছিলাম।
: কেন মনে করেছিলে অন্য কারো সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম?
: আরে না, রাস্তায় প্রবলেমওতো হতে পারতো? এ্যাকসিডেন্টের কি মা-বাপ আছে?
: ও আচ্ছা, তার মানে আমাকে নিয়েও কেউ টেনসন করে।
: হুম করি, তোমার প্রবলেম?
: না নাই। আমার কোন প্রবলেম নাই। আমারতো আরো ভালো লাগে...
: আর আমার ভালো লাগে তোমার রাগ ভাঙ্গাতে, তোমাকে নিয়ে ভাবতে, তাকিয়ে থাকতে তোমার চোখের দিকে। তোমাকে আমি সারাজীবন এভাবেই আমার পাশে দেখতে চাই নীরা...
নীরা আর কিছু বলতে পারলো না, চুপচাপ অবাকের দিকে তাকিয়ে রইলো... তাদের দু'জনের চোখের কোনে কয়েক ফোঁটা অশ্রুই রয়ে গেল সেই মুহূর্তের সাক্ষী....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×