somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাত্র-পাত্রীর দেখার রীত !:#P #:-S :#> ি

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব-মানবীর মিলনে যে সুখময় সংসার, এর রয়েছে অনেকগুলো পূর্বশর্ত। নিছক ভোগচাহিদা পূরণের জন্য তো বিয়ে নয়, বরং এ এক অমূল বাঁধন। বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার মধুময় সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর পরস্পরকে দেখে নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

জীবনের এ অমূল্য অধ্যায় সম্পর্কে মানবতার ধর্ম ইসলাম উদাসীন নয়। এর প্রমাণ- স্বয়ং প্রিয়নবী (সা.) আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন বিয়ের আগে নিজের জীবনসঙ্গীকে দেখে নেওয়ার জন্য, বেছে নেওয়ার জন্য।

রাসূল (সা.) বলেছেন, নারীর চারটি বিষয় দেখে মানুষ বিয়েতে আগ্রহী হয়। তার ধন-সম্পদ, তার মর্যাদা ও আভিজাত্য, তার রূপ-সৌন্দর্য, তার দ্বীন। তবে তোমরা নারীর দ্বীনকে প্রাধান্য দিও। (বুখারী ও মুসলিম)

তাই সবচেয়ে উত্তম হল, বিয়ের আগে প্রথমে পাত্রীর দ্বীনদারি জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া। এ ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক সংবাদ পাওয়া গেলে তারপর মহান আল্লাহ পাকের কাছে সাহায্য চেয়ে কনে দেখার পয়গাম পাঠানো। যদি পাত্রী পক্ষ এ ছেলের ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি প্রকাশ করে তখন দেখতে যাওয়া। নিজের বিশ্বস্ত কোনো নারী যেমন মা অথবা বোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের চরিত্র এবং গঠন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া ভালো। তারপর উভয়ে উভয়ের পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব এবং অতঃপর শুভ বিবাহ।

বুখারী, মুসলিম, তিরমিযীসহ অন্যান্য বর্ণনায় হযরত মুগিরা বিন শোবা (রা.) বলেন, আমি রাসূলের (সা.) কাছে গিয়ে এক নারীকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আগে যাও, তাকে দেখে নাও। কারণ এ দেখাদেখি তোমাদের বন্ধনকে অটুট রাখতে সহায়ক। (বুখারী-৪৮৩৩, তিরমিযী-১০৮৭, মুসলিম-১৪৩৪)

ইবনে মাজাহ এবং আহমদের বর্ণনায় মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক যখন কারো মনে কোনো নারীকে বিয়ের জন্য ইচ্ছা ঢেলে দেন, তখন ওই পুরুষের জন্য তার পাত্রীকে দেখে নেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই।

ইসলামী শরীয়তের বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরাম পাত্রী দেখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে কনের কোন কোন অংশ দেখা যাবে, তা নিয়ে সামান্য মতভেদ থাকলেও প্রায় সবাই একমত যে, পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দু’হাত দেখা যাবে। একাকী মেয়ে এবং ওই ছেলেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার বৈধতা ইসলামে নেই। কারণ তখনও তারা একে অপরের জন্য বেগানা (গায়ের মাহরাম)। বরং দেখাদেখির সময় সঙ্গে মুরব্বি অথবা অল্পবয়সী কেউ উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।

ইমাম আহমদের বর্ণনায় একটি হাদীস থেকে জানা যায়, বিশেষ প্রয়োজনে পাত্রীকে না জানিয়ে তাকে দেখে নেওয়া যাবে। তবে অগোচরে হোক কিংবা পাত্রীর সামনাসামনি হোক- সবসময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

পাত্র-পাত্রী দু’জনই দু’জনের জন্য উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হতে পারে- এমন সম্ভাবনা থাকলে তখনই কেবল পাত্রীকে দেখার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। পাত্র কিংবা পাত্রী- কারো পক্ষ থেকে যদি কোনোই সম্ভাবনা না থাকে, তবে এমন ক্ষেত্রে পাত্রী দেখার আয়োজন করা উচিত নয়।

পাত্রী দেখার সময় পাত্র বা ছেলের মনে যেন কোনো কুধারণা কিংবা কামনা না থাকে। ছেলেরও এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার যে, মেয়েটিকে পছন্দ হলে সে তাকেই বিয়ে করবে। শুধু দেখার জন্য দেখা নয়। দেখার মজলিসে অন্য কোনো পুরুষ যার সঙ্গে মেয়ের দেখা সাক্ষাত জায়েজ নেই, এমন কেউ থাকা যাবে না। চাই সে ছেলের বাবা কিংবা মামা-চাচা যেই হোন না কেন।

পাত্রী মাথা নিচু করে বসে থাকবে আর পাত্র তাকে দেখবে- মুরব্বিরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে, পাত্রীকে হাঁটতে বলা হবে, হাসতে বলা হবে- এসব কাম্য নয়। নারী বিয়ের পণ্য নয় যে তাকে এভাবে সবার সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, পাত্রীও তার পাত্রকে দেখে নিতে পারবে। তাই ছেলের চেহারা এবং গঠন দেখার অধিকার রয়েছে পাত্রীর। হযরত উমর (রা.) বলতেন, বিয়ের আগে পুরুষের যেমন নারীর কিছু বিষয় দেখে নেওয়ার রয়েছে, তেমনি নারীরও অধিকার রয়েছে তার সঙ্গীকে দেখে বেছে নেওয়ার।
মনে রাখতে হবে, মেয়ের গুণাগুণ ও মেজাজ মর্জি সম্পর্কে জানতে হলে অন্দরমহলের নারীদের মাধ্যমে আগে থেকেই খোঁজখবর নেওয়া ভালো। সবকিছু ঠিকঠাক হলে তারপর পাত্রী দেখার আয়োজন। এর আগে নয়। কারণ মেয়ে দেখা তো আর ছেলেখেলা নয়। তবে প্রথমবার দেখে আসার পরও যদি কোনো সন্দেহ কিংবা সংশয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সুরাহা করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবারও পাত্রীকে সামনাসামনি দেখার অবকাশ ইসলামে রয়েছে।

পাশাপাশি পাত্রীর আসল রং আড়াল করার উদ্দেশে অথবা অন্য কোনো দোষ ঢেকে রাখার জন্য ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। মানুষ হিসেবে স্রষ্টা যেভাবে যাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটিই তার জন্য মঙ্গলময়। বিয়ের মজলিসে সামান্য লুকোচুরি পরবর্তী জীবনে অসামান্য বিবাদ ও অসহনীয় দ্বন্দ্ব বয়ে আনার কারণ হয়ে থাকে। এমনটি কারো কাম্য নয়।

আরেকটি বিষয়ে রাসূল (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন। ধরুন কোনো ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে কিংবা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এমন সময়ে অন্য কেউ যেন সেখানে প্রস্তাব না পাঠায়। যখন নিশ্চিত জানা যাবে যে ওই প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তখনই নতুন কেউ সেখানে পয়গাম পাঠাবে। বুখারী, মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় নতুন করে প্রস্তাব না পাঠায়।

পাত্রীকে দেখতে আসা উপলক্ষে মিষ্টিমুখ কিংবা খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে একে উপলক্ষ করে যেন নারী-পুরুষের বেপর্দা সমাগম না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পবিত্র কুরআনের একটি বৃহৎ এবং পূর্ণাঙ্গ সূরার নাম আল্লাহ পাক নারীদের (সূরা নিসা) নামে রেখেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছে, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে প্রিয়নবী (সা.) নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের কর্তব্য।

বরপক্ষের সম্পদের প্রভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে যে বাবারা নিজের মেয়ের সম্মতি ছাড়াই তাকে তুলে দেয়, তারপর জীবনভর দু’জনের সংসারে লেগে থাকা মনোমালিন্যের দায়ভার তিনি কীভাবে এড়িয়ে যাবেন! মেয়ের মুখ বুঁজে সব সয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ পাকের কাছে পার পাওয়া নয়। সে হিসেব বড়ই কঠিন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×