somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ছেলেটির প্রেমে পড়েছিলামঃ বৃষ্টি পর্ব

০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস শেষ হয়েছে ঠিক নয়টায়। অন্যদিন গুলোতে সাড়ে আটটায় শেষ হয়ে যায়। কলেজ থেকে বের হতেই প্রবল বাতাস। ঝড় আসবে। আকাশের দিকে তাকালাম। রাতের আঁধারেও আকাশে ভারি মেঘের অস্তিত্ব বুঝা যায়। তাড়াতাড়ি পা চালালাম। ছাতি নাই সাথে, বৃষ্টি আসলে ভিজতে হবে, ভিজলে আবার বিছানায় ফ্ল্যাট হবার ভয় (যদিও কখনো হই নাই), ক্লাস মিস, পরীক্ষা মিস, পুরা ক্যাচাল লেগে যাবে!
সুরমার এক পাড়ে আমার কলেজ, অন্য পাড়ে বাসা। সুরমা পার হচ্ছি যখন, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। সিএনজি থেকে নেমেই চারপাশে তাকাই সিএনজি বা টম টম, এটলিস্ট একটা রিক্সার খোঁজে। ব্যস্ত সুরমা পয়েন্ট কত ফাঁকা হঠাৎ বৃষ্টিতে! আমার মত কিছু মানুষ ভিজছে শুধু।
বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। এপ্রোন মাথায় দিয়ে রেনকোটের মত পড়ে থাকলাম। একটার পর একটা সিএনজি যাচ্ছে, আমার রুটে যাবে না। একটা রিক্সাও নাই। হঠাৎ বৃষ্টিতে মনে হয় হতভম্ব সবকিছু!

ধ্যাত! আর ভিজার বাকি রইলো কি! একটু আড়াল নিলাম, ব্যাগের ভেতরে একটা পলিথিন থাকার কথা। যাক, আছে! ফোন, একটা মাত্র খাতা আর পকেটের টাকাগুলো পলিথিনে ভরে ব্যাগে রেখে দিলাম।
তার কথা মনে পড়ে গেছে, হাটবো সিদ্ধান্ত নিলাম।

যে সময়টার কথা এখন বলতে যাচ্ছি, তখন আমি স্কুলে পড়তাম। ক্লাস শেষে স্যারের বাসায় যেতাম, ফেরার পথে প্রায় তার সাথেই ফিরতাম। ভিজে যাওয়ায় তার কথা মনে পড়ে গেল। সে শিখিয়েছিল ভিজতে। নাহলে, আমার কোন শখ ছিল না। বৃষ্টিতে ভেজা আর শাওয়ারে ভেজা ক্লোজ এনাফ!

সেদিন স্যারের বাসা থেকে বের হয়েছি, হেঁটে হেঁটে ফেরা আমার অভ্যাস। অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়েছি, এমন সময় নামলো বৃষ্টি। এক দোকানের সামনে আড়াল নিলাম। চোখ পড়লো তার উপর। সেও ফিরছিল, তবে অনেক ধীরে।
মাথায় আর্মি স্টাইলের ক্যাপ, শর্ট শার্ট, রঙ চটা জিন্সের প্যান্ট, আর চামড়ার স্যান্ডেল -এই বেশ তার। পুরো ভিজা। আমাকে দেখে ডাকলো। তার সাথে হাটার আমন্ত্রন। আমি না করলে হবে না, দেখে ফেলেছে যখন ভিজাবেই। একটু আতংকিত, আম্মু ঝাইড়া ধুয়ে ফেলবে! আমার বই খাতা একটা পলিথিনে ভরে ব্যাগে রাখলো। বাহ! ভাল বুদ্ধি তো!

নামলাম তার সাথে রাস্তায়। চারপাশ সাদা করে বৃষ্টি হচ্ছে, শব্দে কথাই শোনা যায় না। রাস্তার পাশের মানুষ ভ্রু কুঁচকে তাকায়, এই বৃষ্টিতে ইচ্ছা করে ভিজে কেউ!
চুল বেয়ে বৃষ্টিধারা নামছে, চোখ খুলতেই পারছি না স্রোতে। তাকাই তার দিকে। ক্যাপের বারান্দা বেয়ে পানি পড়ছে তার চোখের সামনে। শিষ দেয়ার চেষ্টা করছে, পানি মুখে ঢুকে শিষ নষ্ট করে দেয়ার মনে হচ্ছে অনেক খুশি! তাকে বলি,
"তুই ক্যাপ পড়ে থাকলে বৃষ্টির মজা পাবি ক্যামনে?"
"হাহাহা! খুললে তোর মত চোখের উপর হাত রেখে পানি আটকাতে হবে খালি! এই দ্যাখ, আমার সুবিধা, সব দেখছি!"
তার ক্যাপ খুলে মাথায় দিলাম। আসলেই তো! ক্যাপের বারান্দা বেয়ে পানির ধারা নামে। আমার চারপাশ, এমনকি আমিও ভিজছি, শুধু আমার চোখ ভিজে না। চোখের সামনে ঝুম বৃষ্টিতে সব কিছুর ভেজা দেখি!
সে চোখের উপর হাত দিয়ে ঠেকাচ্ছে স্রোত, হাসছে। কত আনন্দ তার! ঈর্ষা হয় আমার।

বাসায় যখন পৌছলাম, মনে হল, সব যেন ধুয়ে মুছে গেছে। পড়ে গেছি প্রেমে!

তারপর থেকে অপেক্ষা, কবে বৃষ্টি হবে, নেমে পড়বো! মনের সব জমানো অভিযোগ কখন যেন ধুয়ে নিয়ে যায়, বুঝা যায় না, ভুলিয়ে দেয় কিছুক্ষণের জন্য। মনে মনে কৃতজ্ঞতা বোধ করি তার প্রতি, বৃষ্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য!

কোচিং করতাম মিরাবাজারে। বাসা ছিল অনেক দূর। একদিন কোচিং'এ যাওয়ার আগে ফোন,
"আজকে ব্যাগ আনবি না।"
"ক্যান?"
"দরকার নাই, তাই।"
আসলেও দরকার নাই, আজকে পরীক্ষা। তবু, স্টুডেন্ট কি ব্যাগ ছাড়া মানায়? ঝাড়া হাত পা নিয়ে কোচিং এ গেলাম, একটু অস্বস্তি নিয়ে।
ক্লাস শেষ হবার আগেই বৃষ্টি! ক্যামনে জানলো বৃষ্টি হবে!

ক্লাস শেষ হওয়ার একটু পর এক বান্ধবীর ফোন,
"আতিক, গলির মুখে আছি, রিক্সায়। তাড়াতাড়ি আয়।"
কোচিং'র বারান্দায় দাড়িয়েছি। আজও চারপাশ সাদা করে ঝুম বৃষ্টি। অনেক দূর বাসা, বৃষ্টি না থাকলেও রিক্সা নিয়ে যাওয়া উচিৎ। তার উপর রিক্সা রেডি। পা নামাতে যাবো, সে পাশে এসে দাড়ালো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, "বৃষ্টি অনেকক্ষণ থাকবে, তোর বাসাও অনেকদূর। আজকে আরও ভালো লাগবে।"
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। ফোন করলাম, "হ্যালো, আমার লেইট হবে রে, কোচিং'র স্যার দেখা করে যাইতে বলছেন।"
"আচ্ছা, আমি চলে যাচ্ছি তাহলে।"
"ওকে।"

নেমে পড়লাম তার সাথে। ২ পা এগোতেই ভিজে গেলাম পুরো।
"কিভাবে জানলি, আজকে বৃষ্টি হবে? দুপুরে তো রোদ ছিল।"
"বৃষ্টির গন্ধ পাওয়া যায় বাতাসে।"
মেইন রোড ফাঁকা হয়ে গেছে, পিচ ঢালা রাস্তা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজকেও হঠাৎ বৃষ্টি।
"তুই পাস?"
"কথা বলিস না, ফিল কর, তোর ভেতরে নিয়ে যা ফোঁটার স্পর্শগুলো।" চোখ বুজে হাটছে।
শালার ভাব! ভিজতে ভিজতে এগোলাম। ফোন বেজে উঠলো,
"ভিজতেছোস?"
হতভম্ব হয়ে চারদিকে তাকাই, "তুই কই?"
"রিক্সায়। এই জন্য তোর কখনো গার্লফ্রেন্ড হবে না।"
কুট কুট কুট! লাইন কেটে গেল।

"কি বললো?"
"আমার কখনো গার্লফ্রেন্ড হবে না।"
গলা ছেড়ে হেসে উঠলো সে, "তবে বৃষ্টি হবে, চিন্তা করিস না!"

তাকে হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগে। অনেককেই হারিয়েছি, তবে তাকে হারানো উচিৎ হয়নি। এখনো বৃষ্টি হয়। আমার ভেজা হয় না। আমি শুধু দেখি, জানালার পাশে বসে। সানসেট বেয়ে স্রোত নামে, আমি ভিজি না, চারপাশের সব কিছুর ভেজা দেখি।
বুঝতে পারি, কেন ক্যাপটা খুলে নেবার সময় বাঁধা দেয়নি সে!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×