জাগতিক কঠিন কঠিন বিষয় গুলো বুঝতে আমি বরাবরই অপারগ। এই ব্যাপারটার ক্ষেত্রেও আমি তাই ছিলাম। কিন্তু এখন আর নই। এখন আমি আমি বিশ্বাস করি, নারী অধিকার আদায় ছাড়া আমরা কেউ কখনো সুখ-সমৃদ্ধির শিখরে পৌছাবো না। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে এই অধিকার। সবগুলা হইলো, আর একটা দুইটা হইলো না, তাইলে কিন্তু হবে না, উলটো পস্তাতে হবে।
নারী অধিকারের এই যে আন্দোলন চলছে, কেন? তাদের অধিকার কি হরণ হয়েছে? কে করেছে হরণ? চোখ বুজে যে কেউ বলে দিবে, পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ, পুরুষই হরণ করছে। কিন্তু, আমি একমত নই। নারীরাই হরণ করছে নারী অধিকার।
ব্যাখ্যা করছি কিভাবে আমি অন্যতম এই কঠিন বিষয় সহজে বুঝে গেলাম।
কলেজ থেকে ফিরছি গত পরশু। ক্বিন ব্রীজের মুখে যানজটের সাথে জানও জট লেগে গেছে। ব্রীজের গোড়ায় দাঁড়িয়ে বন্ধুবর সৌরভের সাথে পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলাম, যানের জট ছোটার অপেক্ষা। হঠাৎ বন্ধুবরের কাঁধের উপর দিয়ে চোখ পড়লো পেছনের এক রিক্সার রমণীর দিকে।
ভুল দেখলাম? আমার দিকেই তো তাকাচ্ছে দেখি! কিভাবে সম্ভব! চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয়ায় বুঝলাম, তাকিয়েই ছিল।
শয়তানি ভর করলো মাথায়। বন্ধুবরকে একটু সাইডে সরিয়ে দৃশ্যপথ পরিষ্কার করলাম।
হিজাব করলে মেয়েদের সৌন্দর্য্য যে কি পরিমাণ বাড়ে, সেটা কম মেয়েই জানে।
যা হোক, চারপাশের সব কিছু স্থির, আরেকবার চোখ তুলে তাকাতেই ধরা পড়ে গেল। হালকা একটা হাসি উপহার পেলাম, পালটা জবাব দিতে গিয়েই ছ্যাত করে উঠলো বুক।
চোখ পড়লো পাশে বসা মেয়ের মায়ের দিকে। কঠিন চোখে তাকিয়ে আছেন। ইক! পালটা উপহার ঠোটেই মিলিয়ে গেল।
মেয়েকে কঠিন ধমক দিলেন মা, মেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলো। আবার আমার দিকে অগ্নি-দৃষ্টি!
বুঝে ফেললাম যানজট কাব্যের এখানেই সমাপ্তি।
দেখলেন, কে হরণ করলো নারী অধিকার? নারীই। মেয়ের কি তাকানোর অধিকার নাই? এইটা তার জন্মগত অধিকার, পার্সোনাল অধিকার, অভারওল নারীর অধিকার। আমার চোখ আমি দেখবো, যাকে খুশি তাকে দেখবো। দিলো না দেখতে! কত খারাপ!
আর যে বলছিলাম, একটা-দুইটা অধিকার বাদ গেলে হবে না, পুরোটা নিশ্চিত করা লাগবে; দেখছেন, মায়ে করলোটা কি! মেয়ের এখানে পুরোটা অধিকার নাই। তাই আমার, সরি, মানে, পুরো ব্যাপারটার কি অবস্থা।
এবং, এরই সাথে সাথে নারী অধিকার হরণের বিরূপ প্রভাব পড়তে লাগলো। আমি বুঝতে পারলাম, রোদে আমি ঘামছি, আমার ২টা টিস্যু খরচ হয়ে গেল এবং আমাকে একটা সিএনজি ম্যানেজ করতেই হবে, নাইলে এই ব্রিজ পাড়ি দেয়া যাবে না, ৫ টাকা শ্যাষ!
আমাদের তাই নারী অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। বুঝতেই পারছেন কেন।
[ ]