somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোছনার ছায়া

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব সাবধানে কাশি দিতে গিয়েও ধরা পড়ে গেল শাহেদ। পাশের ঘর থেকে রুনু ছুটে আসে,
“শরীর খারাপ লাগছে? পানি দিবো?”
“এত অস্থির হচ্ছো কেন? কাশিই তো দিয়েছি। তুমি শান্ত হয়ে বসো”।
“এখন বসতে পারবো না, কাজ আছে”। রুনু চলে যায় পাশের ঘরে।

রুনুর অস্থির হওয়া ঠিকই আছে। রাতে শাহেদের শরীর মারাত্মক খারাপ হয়ে যায়। অসুখটাও তো মারাত্মক। কেমো এখন খুব একটা কাজে আসছে না। শাহেদের মনে হচ্ছিলো, এই শেষ! এমনই হুট করে চলে আসলো মৃত্যু! রুনু সেজন্য অস্থির। সারা রাত অসহায়ের মত কেঁদে কেটে গেছে। এখনো কোরআন শরীফ পড়ছিলো। মন শান্ত করার চেষ্টা।

বিয়ের মাত্র ৪/৫ বছর হলো। রোগটাও ধরা পড়লো তাঁর কিছুদিন পরেই। শাহেদের খুব খারাপ লাগে, প্রচন্ড কষ্ট হয় রুনু মেয়েটার জন্য। ও চলে গেলে একা কি করবে রুনু? এত কম বয়সেই এত বড় শাস্তি তাকে কেন দিচ্ছেন উপরওয়ালা শাহেদ বুঝতে পারে না।

“আমি স্কুলে যাচ্ছি। হেড স্যার একটা মিটিং ডেকেছেন। সেরেই ফিরবো ছুটি নিয়ে”। রুনু এসে শাহেদের হাত ধরে, “একটুও খারাপ লাগলেই ফোন দিও”।
“আচ্ছা, দিবো, তুমি গিয়ে তাড়াতাড়ি আসো”।
রুনু বের হয়ে যায়।

শাহেদ কাগজের ভাঁজ খুলে। দুটো ফোন নাম্বার লেখা। একই মানুষের। একটা টিএনটি, আরেকটা মোবাইল নাম্বার। অনেক ভেবে টিএনটি নাম্বারে ডায়াল করা শুরু করলো সে।


শোবার ঘরে ল্যান্ডফোন বাজছে। সায়মা বিরক্ত হয়। এ অসময়ে ফোন।
“হ্যালো”।
“সায়মা”?
সায়মা চমকে উঠে। এই স্বর খুব চেনা, অনেক দিন পর শুনলো সে। তবু চিনতে অসুবিধা হয়নি। কিছুটা সময় নীরব কাটে, কথা খুঁজতে গিয়ে।
“সায়মা?” শাহেদ কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
“জ্বি। কে বলছেন?”
“শাহেদ। ভালো আছো?”
সায়মার কান ঝা ঝা করছে।
“ভালো আছো?” আবার জিজ্ঞেস করে শাহেদ।
“হ্যাঁ, তুমি?”
“তোমার বর? বাচ্চা-কাচ্চা হয়েছে? কেমন আছে?”
“হু, একটা ছেলে আছে। আছে সবাই ভালোই। বিয়ে করেছো?”
“হ্যাঁ, তা করেছি। আমার জীবনে সব খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, বলেছিলাম না? বিয়েটাও দেরী হয়নি।” শাহেদ হাসার চেষ্টা করে, কাশিতে হাসিটা বিকৃত হয়ে যায়, “সেই ক্লাস এইটে সবাই যখন পড়াশোনা আর খেলায় ব্যস্ত, আমি তখনই তোমাকে নিয়ে ঘুরছি! সময়ের আগেই যেন!” আবার হাসি দেয় শাহেদ।
“হু, আজ হঠাৎ এসব কথা? এগুলো বলার জন্য ফোন দিয়েছো?” হিসহিস করে ওঠে সায়মা।
“মনে হলো, একটু কথা বলি”।
“ও আচ্ছা। বলো তাহলে”।
“নিজেকে খুব অপরাধী লাগতো, জানো। তোমার বিয়ের কথা উঠলো যখন, কিছুই করতে পারলাম না! পারবোই বা কিভাবে, পায়ের তলার মাটি তো আর শক্ত ছিল না!”
“হু”
“এখন আর অপরাধী লাগে না। অনেক হালকা লাগে। মনে হয়, ভালোই করেছি”।
রিসিভারে সায়মার হাত শক্ত হয়ে যায় আক্রোশে। চাপা গলায় ফুঁসে উঠে, “তাই মনে হচ্ছে?”
“হ্যাঁ। ভালোই হয়েছে। উপরওয়ালা যা করেন, ভালোর জন্যই। এই তো স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে আরও কিছু দিন কাটাতে পারছো। আমি হলে কি আর সেটা সম্ভব হতো?”
“মানে? কি বলছো তুমি, আমি বুঝতে পারছি না”। খানিকটা ভড়কে যায় সায়মা।
“কিছু না। সায়মা, আমি জানি এই কথাগুলো শুধু নিজেকে প্রবোধ দেয়ার জন্য। সত্য হচ্ছে, তোমার সাথে অন্যায় করে ফেলেছি, পারলে ক্ষমা করে দিও”।
“কি সব বলছো! আশ্চর্য্য, আমাকে বুঝতে তো দিবা”। সায়মা অজানা আশংকায় অস্থির হয়ে যায়।
“কিছু না, সায়মা। ভালো থাকো”।
"শোন... শোন..."

ফোন রেখে দেয় শাহেদ। রুদ্ধশ্বাসে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে। ১ মিনিট কেটে গেল। কোন ফোন আসলো না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। সায়মার ফোনে কলার আইডি নেই তাহলে। এমনটাই চাইছিলো।

হতভম্ব হয়ে ল্যান্ডফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে সায়মা। ভেতরটা কেমন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। কোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে বুঝার উপায় নেই এই ফোনে। অস্থির অসহায় আক্রোশে রিসিভার নামিয়ে রাখে ক্রেডলে।


আকাশে বিশাল চাঁদ উঠেছে। পর্দা সরিয়ে দেয় শাহেদ। চাঁদের আলো এসে পড়ে রুনুর ঘুমন্ত মুখে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে অপরূপ মুখটার দিকে। বুকের ভেতর দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে শাহেদের, কিভাবে যাবো আমি ওকে ছেড়ে! রুনুর হাত বুকে নিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে শাহেদ।

পূর্ণিমা মনে হয় আজ। বড় গোল চাঁদের দিকের তাকিয়ে থাকে শাহেদ।
“এই তো জীবন, শেষ হয়ে যাচ্ছে! কি আস্তে ধীরে, জানিয়ে আসছে মৃত্যু! কিন্তু আসবে যখন, ঠিক হুট করে এসে পড়বে। আচ্ছা, কাকে ভালোবাসলাম জীবনে? কেন আজকে ফোন দিলাম সায়মাকে?”
শাহেদের ভাবনা ক্রমশ এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে,
“কোনটা ভালোবাসা? মোহ নাকি কৃতজ্ঞতা? যুক্তি নাকি আবেগ?”
"এই পৃথিবীর মানেই বা কি? আসতে কি চেয়েছিলাম? যেতেই বা কি চাইছি? মায়া! ব্যাপারটা খুব খারাপ। ক্ষণিকের জীবনে মায়া কি অহেতুক না?"
"এত অল্প সময় কি ভালোবাসা যায়? ওপাড়ে কি ওর সাথে আমার দেখা হবে?" থমকে যায় ভাবনা। উত্তর জানা নেই। হবে তো?
এলোমেলো ভাবতে ভাবতে শাহেদ রুনুর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বুকে,
"হবে, নিশ্চয়ই হবে।"

কোন রাতেই রুনুর ঘুম হয় না, সে শুধু ঘুমের ভান করে চোখ বুজে থাকে। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে শাহেদের সাথে থাকার সময়। শাহেদ প্রতি রাতেই ফুঁপিয়ে কাঁদে, তখন সে চুপ করে থাকে ঘুমের ভানে।
শাহেদের কোন সাড়া পাচ্ছে না রুনু অনেকক্ষণ, আরেকটু চেপে এসে জড়িয়ে ধরে।

শেষ রাতের চাঁদ ডুবে যাচ্ছে।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজে যেতে থাকে রুনুর।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×