somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল সার্ভিস/ আকাশ

১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসের একটা জরুরী কাজে খুলনা যেতে হবে। একটা জুট মিলের ডাইরেক্টর এর সাথে মিটিং । মঙ্গলবার বিকাল ৫ টায়। আমার সাথে আমার এমডি সাহেব ও যাবেন। আমি মঙ্গলবার সকাল ৭:১০ এর ২টি টিকেট কাটলাম। সোহাগ পরিবহন স্ক্যানিয়া। টিকেটের মুল্য ১০৫০. টাকা। যে গরম পড়েছে টিকেটটা পেয়ে মনে হল এবার একটু আরামেই যাওয়া যাবে। ঘুমানোর আগে ভোর ৫টায় এলার্ম দিয়ে রাখলাম যাতে গাড়ি মিস না করি। ঘুম থেকে সময় মত উঠে ফ্রেশ হয়ে না¯তা করতে বসেছি, এরই মধ্যে সোহাগ পরিবহন এর কাউন্টার থেকে ফোনে জানানো হলো ‘গাড়ি দের ঘন্টা লেট হবে। উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর আসতে ৯ টা বেজে যাবে, আপনারা ৮:৪৫ এ মধ্যে অবশ্যই কাউন্টারে থাকবেন।’ মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি সাইফুল ভাইকে জানিয়ে দিলাম গাড়ি লেট হবে। বাসা থেকে ৮:৩০ এ বের হয়ে সাইফুল ভাই কে নিয়ে কাউন্টারে পৌছাতে ৮:৫০ বেজে গেল। কাউন্টারে ভেতরে পর্যাপ্ত বসার জায়গা নেই। ছোট একটা রুমে ২০-২৫ জন গাদাগাদি করে বসে আছেন। আমি কাউন্টারে বসা একজন কে খুলনা গšতব্যের গাড়ি কখন আব্দুল্লাহপুর পৌছাবে তা জিজ্ঞেস করতেই বল্ল ‘ ভাই গাড়ি বাড্ডাতে’। আমার মত অনেকেই কাউন্টারের ভদ্রলোক কে গাড়ির কথা জিজ্ঞেস করছিল এবং তাতে ঐ ভদ্রলোক খুবই বিরক্ত হচ্ছিল। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেল। আমি ফ্যান এর দিকে তাকিয়ে রইলাম কিন্তু কোন ফ্যানই চলেনা। জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল এখনে কোন জেনারেটর বা আই.পি.এস নেই। শুধু কম্পিউটারে আই.পি.এস এর লাইন দেওয়া আছে। গাড়ি যখন আব্দুল্লাহপুর তখন প্রায় ১০.৪০ বাজে। ৯টা-- ১১ টা এক অসহ্য গরমের মধ্যে কাউন্টার-বাহির, বাহির-কাউন্টার করতে করতে কেটে গেল। এত বড় একটা নামকরা গাড়ির কাউন্টারে এ.সি নেই ! এমন কি জেনেরেটর বা আই.পি.এস নেই!! যাইহোক গাড়িতে চেপে বসলাম। একটু পর গাইড ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ‘গান-বাজনা, টিভি এগুলো ঠিক আছেতো ? গাইড মুচকি হেসে বললো ‘সার, গান-বাজনা, টিভি সব ঠিক আছে।’ আমি সাইফুল ভাই কে বল্লাম ‘ভাইযান, ওরা গরমে কষ্ট দিয়েছে এবার গান-বাজনাদিয়ে পুশিয়ে দেব। আশুলিয়া পৌছাতেই একটা নাটক চালানোর চেষ্টা করল কিন্তু ৫ মিনিট যেতে না যেতেই শো শো শব্দ হয় কোন কথা শোনা যায় না। বুঝতেই পারছেন মেজাজ কতটা খারাপ হতে পারে। খুলনা পৌছাতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যে ৭টা বেজে গেল। মিটিং টা চেন্জ করে বুধবার সকাল ১০টায় দেওয়া হলো। এই হচ্ছে আমাদের ভলভো/স্ক্যানিয়া গাড়ির মান।
এবার ফেরার পালা! যেহেতু সোহাগ পরিবহন এর সার্ভিস সম্পর্কে ভাল ধারনা পেয়েছি এবার টিকেট করলাম গ্রিন-লাইন স্ক্যানিয়া । ‘সার্ভিস খুবই ভাল, এসি ঠিকমত কাজ করে, গান-বাজনা, টিভি সবই ভাল’। কথাগুলো কাউন্টারে বসা লোকের। আমরা আশ্ব¯ত হয়ে টিকেট করলাম। সময় বুধবার রাত্র ৯টা। যথারিতি আমরা হোটেল থেকে চেক-আউট করে ৯ টার মধ্যেই কাউন্টারে এসে দেখলাম সামনের রা¯তায় একটা ভাঙ্গাচোড়া গাড়ি দাড়ানো আছে। সাইফুল ভাই গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ‘আকাশ, এই ভাঙ্গা গাড়িই মনে হয় আমাদের কপালে পরবে’। আমি কপাল কুচকে বললাম ‘আপনি খামাখা মন খারাপ করা কথা বলছেন। আমাদের টিকেটতো গ্রিন-লাইন স্ক্যানিয়া গাড়ির। ফাটাফাটি গাড়ি! এটা মনে হয় এমনি দাড়িয়ে আছে।’ আমি কাউন্টারে বসা একজন কে জিজ্ঞেস করলাম ‘৯ টার ঢাকাগামী গাড়ি কোনটা ?’ ভদ্রলোক কম্পিউটারের মনিটর থেকে মুখ ফিরিয়ে বললেন ‘সামনে দাড়ানো’। আমারতো মাথাখারাপ অবস্থা। আমি পকেট থেকে টিকেট বের করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম ‘ভাই আমারতো স্ক্যানিয়া গাড়ির টিকেট কিন্তিু এটাতো অনেক পুড়ানো ভলভো।’ ভদ্রলোক বললেন ‘আপনার কথা ঠিক আছে। স্কেনিয়াতে একটু প্রবলেম হয়েছে তাই ঢাকা থেকে এই গাড়িটা পাঠিয়েছে। অসুবিধা নেই এটা অনেক ভাল গাড়ি।’ আমি কোন কথা না বলে সাইফুল ভাইকে নিয়ে গাড়িতে বসলাম। ভেতরে গুমোট গন্ধ, মনে হচ্ছে কেও বমি করেছে, ঠিকমত পরিস্কার করা হয়নি। গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্টার ত্যাগ করল। এখন দেখাগেল এ.সি ঠিকমত কাজ করেনা। গাইড কে জানানো হলে তার উত্তর ‘কাউন্টারে জানান’। সাইফুল ভাই বললেন পানির বোতল দিতে। গাইড বিরক্ত মুখে জানালো পানি যশোর কাউন্টার থেকে দেবে। পেছনের সিটে বসা ভদ্রলোক বেশ জোড়ে বললেন ‘এই ব্যাটা, আমার পানি দরকার এখন আর তুই দিবি যশোর থেকে, ফাইজলামি পাইছস, যা পানি নিয়ে আয়।’ গাইড কিছু না বলে সামনের দিকে হাটা দিল। পেছনের ভদ্রলোক আবার বললেন ‘গান ছাড়’। আবার একটু পর বললেন ‘গান না তুই নাটক চালা। নাটক দেখতে দেখতে যাই।’ গাইড বলল ‘ভাই গাড়ির টি.ভি নষ্ট, গান বাজে না।’ মেজাজ এই পরিমান খারাপ হলো শালারে লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেই। আমাদের কিছুই করার নেই শুধু মনে মনে কথা বলা। গাড়ি তার নিজের গতিতেই চলতে লাগলো। মনে হলো আমরা ঘোড়ার গাড়িতে যাচ্ছি। গাড়ি হেলে দুলে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে বিকট শব্দ হচ্ছে, শ্যালো মেশিনের শব্দ। উপরে তাকিয়ে দেখি এ.সি মেসিন আমাদের মাথার উপরে, তাই বিকট শব্দ হচ্ছে। আমি মনে মনে আল্লাহ্ কে স্বরণ করলাম, ঠিকমত বাসায় পৌছাতে পারব কি না। যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার প্রিয়জনেরা।

যে যার মত ব্যবসা করছে। বলছে স্কেনিয়া-ছাড়ার সময়ে ভাঙ্গা ভলভো। এ মধু মাসে বাজার থেকে কোন ফল কিনে খেতে সাহস পাচ্ছিনা, এই বুঝি ফরমালিন দিয়েছে। তারপরেও দিন চলে যায় রাত আসে, আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আর স্বপ্ন দেখি ।

Engr. Zubaydur Rahman Aakash
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×