আমি বরাবরই বাংলার দিবস পালনকারীদের উপর ক্ষিপ্ত ছিলাম। কেননা তারা আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করে না। ইহা পুরোপুরি লিঙ্গ বৈষ্যম্য।
আমার পায়ের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। টের পেয়েছিলাম তখন সখা ব্যথা কাহারে কয়? কিন্তু তখনও জানতাম না যে আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা ২০টি হাড় একসাথে ভাঙ্গার সমান ব্যথা সহ্য করেছেন। (যদিও এর কোন বৈজ্ঞানিক কিংবা নির্ভরযোগ্য দালিলিক প্রমাণ কেউ দিতে পারেন নি) সেই মায়ের জন্য বছরের কেবল একটি দিন বিশেষভাবে উৎসর্গ করাটা আমার কাছে নেহায়েৎ কমই মনে হয়। মায়ের হাতের রান্নার তুলনা নেই। ইন্দোনেশিয়ার ৭৪.১১ শতাংশ মায়েরা গুগলে রান্নার রেসেপি খুজে বেড়ান। (সূত্র: জ্যাকপট, ১ নম্বর মোবাইল সার্ভে কোম্পানী)। সিএন এন-এর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে পিতা মাতা ৯ ঘন্টার বেশী সময় অনলাইনে কাটান। (সূত্র: কমন সেন্স মিডিয়া) । বাহ এইযে আমরা ডিজিটাল বাবা মা হচ্ছি !
মা দিবসের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে এই মা দিবসের মা (প্রথম স্বীকৃত প্রস্তাবকারী) কে হবেন তা নির্ণয় করতে এনা জারভিস কোর্টে পর্যন্ত যান। সেই সাথে মা দিবসকে নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত বলে দাবী করেন। উনি একজন আমেরিকান মা ছিলেন। মায়েদের অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ও স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতন করতে উনি অনেক ভাল কাজে করে গেছেন পৃথিবীতে। তবে তার এই বানানো মা দিবসে এক আমেরিকায়ই শুধু ২৩.৬ বিলিয়ন ডলারে ব্যবসা হয়েছে (সূত্র: এন আর এফ)
১৮৫৮ সালে মিসেস জার্ভিস মা দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতের তার মেয়ে ও মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশনের সফল প্রচার-প্রচারণার কারণে ১৯১৪ সালে আমেরিকার কংগ্রেস এই দিবসটিকে পালনের জন্য আইন পাস করে (১৯০৮ সালে কিন্তু এই একই আইন পাশ হয়নি)। সেই থেকেই মূলত: ঘটা করে মা দিবস পালনের শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহল তাদের অতিরিক্ত লাভের কথা ভেবে খুব দ্রুতই একে সারা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। এমনকি এহেন ব্যবসায়ীকতার পরিচয়ের সমালোচনা এনা জার্ভিস নিজেও করে গেছেন অনেক আগেই।
যাই হোক প্রথমত বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর তার উপর উন্নত বিশ্বের সবাই পালন করছে। সুতরাং একের পর এক তাল মিলেয়ে চলা দেশেগুলোও এই দিবস পালন শুরু করল।
গ্রিক দেবী সবিলে উদ্দেশ্যে মাতৃ আরাধনার জন্য এদিবস পালন করতনে তারা। মাদারিং সানডে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচারের অংশ। প্রিয় পাঠক আসুন এবার একটু ধর্মের নিরীখে দেখি মা দিবস নিয়ে ধর্মগুলো কি বলছে। ক্যাথলিকরা এই পবিত্র দিবসে ভার্জিন মেরীর (যিশু খ্রিষ্ট্রর মা) প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তারা বিশেষ প্রার্থনা করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা (বিশেষ করে নেপালের) “মাতা তীর্থ অংশী” নামে মা দিবস পালন করেন। বৈশাখের কোন পূর্ণিমার রাতে তারা বিশেষ আচার পালন করেন। আমেরিকা নয় বরং তারও অনেক আগে থেকেই তারা এটি করে থাকেন। বৌদ্ধদের “ঘোস্ট ফেস্টিভাল” এর পেছন মাকে নিয়ে একটি লোককথা প্রচলিত আছে।
এবার আসি নারীদের সবচেয়ে কম অধিকার দেয়া ধর্মের কাছে। এখানেও সে বড় এক বাঁধা তৈরী করে রেখেছে। ইসসস একটু মাকে নিয়ে একদিন ঘুরব, জানাব তাকে কতো ভালবাসি, তাকে একটি দিন একটু জড়িয়ে ধরে সেলফি তুলব নাহ সেটিতেও মানা। ইসলামে মা’দের নিয়ে কোন উৎসব বা দিবস নেই। কিন্তু আমি আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম আরব বিশ্বতেও এই দিবস পালন হয়। এই জন্যেই হয়তোবা হাদীসে বলা হয়েছিল “তোমরা তোমাদের পূর্বের লোকদের প্রথা ধাপে ধাপে পূর্ণরূপে অনুসরণ করবে। “ মিসরে ১৯৫৬ সাল থেকে মা দিবস পালন হয়। অধিকাংশ আরব দেশে ২১ মার্চ মা দিবস পালন করা হয় উইকিপিডিয়ার মতে।
“আমার ভাল ব্যবহারের সবচেয়ে বেশী হকদার কে? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমার মা। সে লোক বলল: তারপর? তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন: তোমার মা। সেই লোক বলল: অতঃপর? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার মা। অতঃপর তোমার পিতা।” [বুখারী, অধ্যায়,আ্দব,নং৫৯৭১]
আনাস (রা) বলেন, “রাসুল (সা) মদীনায় আগমন করে দেখলেন যে, মদীনাবাসীরা দুটি ঈদ (আনন্দের দিন) পালন করছে ৷ তা দেখে রাসূল (সা)বললেন, জাহীলিয়াতের যুগে তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা, আনন্দ-ফুর্তি করতে এখন ঐ দিনগুলির পরিবর্তে আল্লাহ্তো তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন, ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহার দিন। ( নাসাই: ৩/১৯৯ হাদীস নং ১৫৫৫ হাদীস সহীহ আবূ দাউদ: ১০০৪,)
আমরা আমাদের কল্যাণ বুঝেছি। ইসলাম অপূর্ণ রয়ে গেছে (নাউযুবিল্লাহ)। আরও দু’চারটি দিবস বেশী করার অনুমতি দিলে খারাপ হতো নাহ। এ যুগে কোন নবী আসলে অবশ্যই দিবস ১০০ টা হতো। অবশ্যই নাহ। মনে রাখবেন, আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন আল কোরাআনে "আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম আর দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম।" (সূরা আল মায়িদাহ্ঃ আয়াত ৩)।
সেই নিম্ন মাধ্যমিক স্তর থেকে ইসলাম শিক্ষা বইয়ে মায়ের মর্যাদার উপর নীতি বাক্য শুনে আসছি। আমি আর সেই সব হাদীস পুনরায় আমার মনে করিয়ে দিতে চাই নাহ। খেয়াল করে দেখবেন যে, চোখ কান খোলা রাখা মানুষই দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হন, জন্মান্ধ কিংবা প্রতিবন্ধীরা কমই সড়ক দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। আমরা যারা জন্মসূত্রেই নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিচ্ছি তাদেরকে বিবেককে একটু নাড়া দেয়াই আমার লক্ষ্য।
“খেয়াল করুন করছেন অনুসরণ কার কু-পদাঙ্ক
সেকি দ্বীনে বিশ্বাসী নাকি টম ডিক হ্যারী শশাঙ্ক”
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:২৩