মটিভেশন বলুন আর প্রেরণা বলুন কিংবা উৎসাহ খেলাটা ঐ একই ধরনের। আপনি যদি পাশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকান তবে দেখবেন এটি ওখানকার একটি জনপ্রিয় পেশার নাম মটিভেশনাল স্পিকার। মানুষকে মটিভেশন দেয়া কাজটি খুব কঠিন। কারণ মটিভেশন বিষয়টি মানসিক এবং কারো পক্ষেই অন্যের মষ্কিষ্কে কি চলছে তা পরিষ্কার ভাবে বুঝা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আপনি জোর করে কারো মনে অবস্থান গড়তে সক্ষম নন। সুতরাং আপনাকে এমন কোন ক্যারিশমা জানতে হবে যেটি দিয়ে তার মনে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান গড়ে বাহ্যিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারেন।কাজটি যতোটা কঠিনই মনে হোক না কেন টনি রবিনস কিংবা লেস ব্রা্উনের বক্তব্য শুনলে আপনাকে কখনোই তা মনে হবে না। আরও অবাক হই যখন দেখি বুনা দাহাল-এর মতো অন্ধ একজন বক্তা্ও নেতৃত্ব, লক্ষ্য আরো কুটিল বিষয় নিয়ে কথা বলে মানুষের চলার পথকে মসৃণ করার চেষ্টা করছেন।কখন্ও তো ইউটিউব ভিডিও দেখলে মনে হয় যেন আমি বাসায় নেই, চলে গিয়েছি স্টেডিয়ামে যেখানে ব্রাউন সাহেবের সাথে লক্ষাধিক মানুষ চিল্লাচ্ছে একই সুরে। টনি রবিনস সাহেবদের এই প্রেষণার ব্যবসা বহুদিনের। তাহাদের বই অহরহ বেস্ট সেলারর তালিকায় থাকে। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ ঐসব দেশে গিয়ে তাদের সেমিনারের টিকিট কিনে তাহা ফেবুতে আপলোড দিয়ে ব্যাপক গর্ববোধ করেন। তবে যতো দোষ এই বঙ্গদেশের মটিভেশনাল দাতাদের।কেননা তাহাদের দোষ তাহার পয়সাপাতি কামাচ্ছিলেন মটিভেশন দিয়ে।
আপনি ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ ভিডিও পাবেন কিন্তু তারপরও মানুষ রবিনস, ব্রাউন, রবিন শর্মা, নিক, লিসা, স্বন্দিপ, ড. বিবেক প্রভৃতি লেখকদের বক্তব্য সরাসরি শুনতে চায়। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনারা সবাই জানেন। যে কারণে ঘরে বসে খেলা না দেখে স্টেডিয়ামে জেতে চান, ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কিনেন। বিনোদনের জন্য একটি খেলা দেখে আপনি যতোটা শিহরিত হন তার চেয়ে অনেক বেশী শিহরিত হবেন যদি স্বন্দীপ কিংবা এরিক থমাসের বক্তব্য আপনি সরাসরি শুনেন। বিশ্বজুড়ে এমন লক্ষাধিক ব্যক্তি আপনি খুজে পাবেন যারা তাদের দু’চারটা কথা শুনেই বদলে গিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিনা পয়সায় আপনার প্রেরণার যোগান দিতে সাহায্য করবেন।যাদের মধ্যে স্বন্দীপ মহেশ্যরী অন্যতম। পুরো ভারত জুড়ে তিনি হতাশা আর সমস্যায় জর্জরিত তরুণদের সাহস জুগিয়ে চলেছেন। অনেকেই আছেন ওনার মতো যারা পেশা নয় বরং পাগলামী কিংবা প্যাশন হিসেবে এই কাজটি করেন। তাদের শুভাকাঙ্খী অজস্র। তবে যারা এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। তবে এ বিতর্ক সবচেয়ে বেশী দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। কেননা তাদের সেমিনার চার্জ অনেকটাই লাগামছাড়া। এটি অনেকটা নির্ভর করে হিসাববিজ্ঞানের সুনামের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির মতো।
পৃথিবীতে কেউই সফল হয়ে জন্মাননি। সেহেতু শুরুটা সবারই জিরো থেকে এটি নিদ্বিধায় বলা যায়। কোন না কোন মানদন্ডে অবশ্যই আপনি সফল। আর সেই সফলতার পেছনের কাহিনী কিংবা ব্যর্থতা থেকে উঠে আসবার কাহিনী আপনি যতোটা উপভোগ্য স্টাইলে বলতে পারবেন আপনি ঠিক ততোটাই সফল প্রেষণাদায়ক বক্তা। মানুষ যে সেই বক্তার মতন হতে চান বিষয়টি তেমন নয়। তারা শুধু তার মতন করে সমস্যার সমাধানটা খুজেঁ নেন। পৃথিবীতে আপনার প্রেষণার উৎস হয়ে উঠতে পারেন আপনার বাবা কিংবা মসজিদের ইমাম কিংবা স্কুলের শিক্ষক কিংবা হাসপাতালের রোগী কিংবা সিনেমার অভিনেতা কিংবা নাটকের চরিত্র কিংবা বইয়ের লেখক কিংবা কোন বই।আপনি আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুযায়ী কোথা হতে কার কাছ থেকে মটিভেশন নিবেন এটি একান্তই আপনার ব্যাপার। আপনি যারা কাছ থেকে নিবেন তার কাছ থেতেই যে সবাই নিবেন বিষয়টি এমন নয় মোটেও।
দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশ মুখবই, চোখবই, কনসার্ট ও বিনোদন পার্কে অবসর সময় কাটাতো 2010 সাল পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে একটা বড় পরির্তন আসা শুরু করল। ট্রাভেলিং, ব্লগিং ও লাইভ নলেজ শেয়ারিং প্লাটফর্মের প্রসার হলো খুব দ্রুত। এখন এই লাইভ নলেজ শেয়ারিং প্লাটফর্মটাকে ফিজিক্যাল রূপ দেয়াটাই যতো নষ্টের মূলে চলে যায়।যতোদিন শুধুমাত্র অনলাইনে ছিল কোন সমস্যা হতো না। কেননা এতে আয়োজকদের খরচ বেড়ে যায় যদিও সেশন গুলো বেশী ইন্টারএকটিভ হয়।এই খরচের টাকার সাথে আয়োজকরা মুনাফা ধার্য করে ভালরকম একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা খুলে বসল। আপনি খেয়াল করে দেখবেন জনপ্রিয় বক্তারা প্রত্যেকেই অন্য পেশায় সফল ও ভাল আয় করেন। যখনই মুনাফর বিষয়টি বক্তারা টের পেলেন তারাও এদের লভ্যাংশে ভাগ বসাতে।ব্যস্ প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয় সামাজিক মাধ্যম আর আয়োজনে থাকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম। আর আয়োজনের স্পন্সর ও উপস্থিতি অনুযায়ী চার্জ ঠিক করেন মটিভেশনাল বক্তারা। আপামর ছাত্র জনতা এদেরকে দেবতার আসনে বসিয় রেখেছিল। ধর রেখেছিল এরা জীবনে কোন পাপ করেনি, এরাই সফল। কিন্তু বাধ সাধে যখন এরা জানতে পারে যে এরা মুখ বেচেঁ খান। এক প্রবাসী বাঙ্গালী এদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে মটিভেশনাল স্পিকাররা ছাত্রদের ইমোশন বেচে টাকা কামান। ব্যস্ চেতনায় বুদ হওয়া বাঙ্গালীকে আর ঠেকায় কে। ঐ বেটার মা-বাপ সব উদ্ধার করে ছাড়ল। এর ফলে যেটা হল তা হচ্ছে অনলাইনে সবাই সামনা সামনি কারো দৃষ্টিকটু বিষয় বলা বাদ দিয়ে আমরা এখন অনলাইনে সবার সামনে দোষ-ত্রুটি তুলে ধরছি। কিন্তু এর উদ্দেশ্য মোটেও তাকে সংশোধন নয়, বরং নিজেকে শ্রেয় ও তাকে হেয় করা।
কিন্তু বাংলার জমিনে যে অসংখ্য ধর্মীয় মটিভেশনাল বক্তা আছেন যারা গাজাখুরী কিচ্ছা শুনিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তারা বরাবরই দৃষ্টির আড়ালে থেকে যান।বিল গেটস, রকফেলার, কার্নেগীরা কিভাবে যেন সময় বের করে ধর্মগ্রন্থ নিয়মিত পড়তেন।এতো সফল ব্যক্তিরা কি জন্যে যে এই সব গ্রন্থ পড়েন কে-ই বা জানে। কিন্তু এই ঘটনা জানার পর হঠাৎ মাথায় একটা বিষয় নাড়া দিল যে, এরাতো অন্য ধর্মের অনুসারী। আর আর আমরাতো ভুলেই বসে আছি যে আমরা পৃথিবীর সর্বকালের সর্বসেরা মটিভেশনাল ও ইনফ্লুয়েনসার বক্তা ও নেতারই উম্মত। আমরা ভুলতে বসেছি যে মুসলিম জাতির মটিভেশনের দুটি উৎস আল কুরআন ও সহীহ্ হাদীস আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে এমনকি নিজেদেরই মাতৃভাষায়ও।মটিভেশন নিয়ে কামড়া কামড়ি করার কিছু নেই। শুধু একটা বিষয়ই অনুরোধ করব নিজের দ্বীনকে জানুন, পড়ুন ও বুঝুন এবং এরপর ধারণ করুন।জীবন বদলাতে বাধ্য।
বিধর্মী ও ভন্ডদের মাঝে মুসলমানরা মটিভেশন খুজতে থাকবে যতোদিন,
সিরাতুল মোস্তাকিমের পথ খুজে পাবে না তারা কোনদিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৯