শিক্ষার উদ্দেশ্য ও শিক্ষকদের শিক্ষার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন নিয়ে প্রাচীন গ্রীসে একবার বিবাদ দেখা গেল দার্শনিকদের মধ্যে। এক দলের কাছে উহার উদ্দেশ্য অর্থোপর্জন, সুতরাং এর বিনিময়ে অর্থ নেয়া যায়। আরেকদল মনে করত যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন, সুতরাং এর বিনিময়ে অর্থ নেয়া উচিত নয়। আরেক দল মনে করত যে, বিদ্যার জন্য অর্থের ঠিকই প্রয়োজন আছে তবে কিন্তু বিদ্যাকে মোটেও অর্থের দাসে পরিণত করা উচিত নয়। আরো সহজভাবে বলতে গেলে একদলের কাছে জ্ঞানের বিনিময়ে টাকা নেয়া পাপ, আরেক দল জ্ঞানের বিনিময়ে রীতিমত ব্যবসা সাজিয়ে বসে আছে, আরেক দল মনে করত যে শিক্ষকরা জীবিকা প্রয়োজনে অর্থ নিবেন তবে তা সীমিত ও এ্ অর্থ তাদের কাছে গৌণ হবে। প্রথম দলে লোকরা এতোটাই গোড়াঁ ছিল যে , তারা ধারণা করতে শিক্ষার বিনিময়ে অর্থ নেয়াটাকে তারা দেহব্যবসার সাথে তুলনা করেছিলেন।
যে মতবাদগুলো নীতিনির্ধারক পর্যায়েই বিভাজিত ছিল সেগুলো সামাজিক প্রেক্ষাপটে আরও বিভাজিত হয় এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে দাড়ায়ঁ আরো অনেক। তোমার পড়ালেখার উদ্দেশ্য কি? এই প্রশ্নটি নিয়ে আমার কাছাকাছি থাকা অনেকের কাছে গিয়েছিলাম। সেই উত্তরগুলো নিয়েই আজকের লিখাটি:
বেশকিছু দ্বীনিভাই মনে করে যে তাহার শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে জান্নাত নিশ্চিত করা। এই বিদ্যাই তাকে জান্নাতের পথ দেখাবে বলে উত্তরদাতার ধারণা। অর্থকড়ি তার কাছে গৌণ। সে তার শিক্ষাগুরুর নিদের্শে পরপারে সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারবে।
বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ভাইকে প্রশ্ন করলে সে যা বলল, শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা অর্জন করা। ব্যস তারপর একটা চাকরি হয়ে সফলতার চড়কিতে চড়ে সব ভুলে শুধু টাকা কামাই করব আর নীতির পাঠ সব ডাস্টবিনে ফেলে দিব। এই চাকরি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে লাখ লাখ টাকা দিয়ে হলেও শিক্ষিত মানুষের লেভেল (সার্টিফিকেট) লাগাতে কোন পরোয়া করা চলবে না। কেননা একবার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি হলে এক বছরেই পুরো টাকা উঠে আসবে।
এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তুমি কি মনে কর তোমার শিক্ষার উদ্দেশ্য কি? কেন ভাই উদ্দেশ্যতো একটাই শিক্ষিত হওয়া। আমার বুঝে আসল না যে ছেলেটা কি বুঝাতে চাইছে। বললাম যে আরে ভাই আমি তোমার এই শিক্ষিত হওয়া উদ্দেশ্যই জানতে চাই। সোজা সাপ্টা উত্তর ছেলেটার, ভাই শিক্ষিত না হলে আমি সমাজের নিচু শ্রেণীর লোক হিসেবে গণ্য হব। বাংলা মাটিতে ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, বিবিএ, অনার্স পাশ এদের ছাড়া বাকি সব হলো নিচু শ্রেণীর লোক যারা শুধুমাত্র রাজনীতির বাজার ছাড়া আর প্রতিটি বাজারে (চাকরি, বিয়ে) মুখ থুবড়ে পড়বে নিশ্চিত ভাবে।
এবার আসি আমার ভাবনায়। হৃদপিন্ডটা ধুপধুপ করলেই আপনি বেচে আছেন একথা সত্য। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে বাচতেঁ আপনাকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা আর একটু আধটু বিনোদন নিশ্চিত করবে। এখন হয়তোবা অনেকেই আমার ভুল ধরবেন যে কেন শিক্ষা লিখি নাই। কেননা শিক্ষাকেও নামমাত্র মধ্যবিত্ত পা-চাঁটা ধনতান্ত্রিক দেশে পণ্য ভাবা হয়, একে মৌলিক চাহিদা বলা হয় নামে মাত্র। কেননা এখানে শিক্ষার্জন করা হয় সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের নিমিত্তে, জ্ঞানর্জন নয়। আসলে শিক্ষার্থীদেরকে যদি বিদ্যাপিঠে গিয়ে জ্ঞানার্জন বাদ দিয়ে চাকরির চিন্তা ও প্রস্তুতিতে বুদ হয়ে থাকতে হয় সেখানে তাদের অনেকে হয়তো আত্মহত্যা হতে বিরত থাকলেও নৈতিকতার হত্যা অবশ্যম্ভাবী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১১