ভাবতে পারিনি আবার কখনো দেখা হবে, একটুও বদলায়নি নিহিন, ঠিক আগের মতই অপরূপ সুন্দরীই আছে এখনও, বরং এখন হয়তো আগের থেকে একটু বেশি!
“স্যার, ওনাকে কি ডাকবো? এত রাতে মেয়ে মানুষের বাহিরে থাকা নিরাপদ না” ড্রাইভার রফিক সাহেবের কথায় হুঁশ আসলো।
“আচ্ছা, আপনি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসুন।” জ্যাম ছুটতে দেখে তাড়াহুড়ো করেই ড্রাইভার বের হয়ে গেল নিহিন কে ডাকতে।
“আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা, এত রাতে রাস্তায় আমি একা ভাবতেই আমার আত্মা খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে আসার মত অবস্থা” নিহিন বলল।
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকাতে ও আমাকে চিনতে পারল না। আমিও আর ওকে অপ্রস্তুত অবথায় বিব্রত করতে চাইনি।
একটা সময় দু জনের ঘুমানর আগে কথা না বললে ঘুম আসতো না।
কি রাত, কি দিন, সারাক্ষন শুধু ফেইসবুক বা মোবাইলে চ্যাট করতাম।
ক্লাস শেষ করেই ব্যাস্ত হয়ে পরতাম নিহিনের সাথে দেখা করার জন্য।
কখনো কখনো বলতো ক্লাস এর বাহিরে আছি, এখনই বের হও!
বের হয়ে গিয়ে দেখি কেউ নেই, কল দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলতো মেসেজ এর উত্তর দিচ্ছিলে না দেখে বের করলাম!
রাগ হব নাকি তার পাগলামি দেখে হাসব ভেবে পেতাম না!
ওর জ্বর আসলে ডাক্তারের আগে আমাকে যেতে হত ওষুধ নিয়ে!
খাবার নিয়ে না গেলেতো বোধহয় না খেয়েই জ্বরের সময় থাকতো!
“তুমি আসবা নাকি ফোনটা ভাঙ্গবো!’’ কত থ্রেট যে শুনেছি আর বাধ্য হয়ে এক্সাম বাদ দিয়ে দেখা করতে গেছি!!!
নিহিনর সাথে যখন থাকতাম, মনে হয় যেন একটা নেশা কাজ করত।
বিশেষ করে অন্যরা যখন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতো! অদ্ভুত সে অনুভুতি!
“এই তোমার চশমা খোলো” আমি বলতাম নিহিনকে
অবাক হয়ে বলতো “কেন!!! ”
“আমি বলেছি তাই”
“তাহলে তো আমি দেখতে পাব না”
আমার পাশে থাকলে তোমার আবার দেখতে পাওয়ার কি কোনো দরকার আছে কি!!!
তখন সে চশমা খুলে আমার হাতে দিত আর আর শক্ত করে আমার বাহু ধরে রাখত।
মাঝে মাঝে নিয়ন আলোর নিচে বসে অবাক হয়ে নিহিনকে দেখতাম, মনে হত পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যটা আমি এখনেই উপভোগ করেছি।
নিয়ন আলোর সেই আলো আধারি সেই মুখ!
“স্যার, ম্যামকে কি ডেকে তুলব”, ড্রাইভারের কথায় খেয়াল ফিরে আসলো আমার
ঠিক আগের মতই নিয়ন আলো এসে পরেছে নিহিনর ঘুমন্ত মুখ জুড়ে!
কখনো ভাবিনি আবার দেখার সুযোগ হবে, তাও আবার এভাবে!
“ঘুম ভেঙ্গে যেতেই বলল আজ কি আর বাসায় যেতে হবে না!!’’ কিছু জানতে পেরেছেন আর কতক্ষণ এভাবে আর থাকতে হবে!!”
“হ্যালো! জানি একটু বিরক্ত করছি, তাই বলে এতটাও না যে উত্তর দেয়া যাবে না!!”
“একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, আর বেশ কিছুক্ষণ লাগবে!” আমি বললাম
নিহিনের মুখটা ফ্যাকাসে লাগলো।
আমাকে কি চিনেছে নাকি আরো কিসুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে তাই কে জানে।
অনেক বছর পর মোবাইলে টোকিয়ো ড্রিফটের টোন টা বেজে উঠলো।
বুঝতে বাকি রইল না নিহিন বুঝতে পেরেছে কার গাড়ীতে ও লিফট চেয়েছে।
তার সাথে এক সাথে বাড়ী যাব, ত্রজন্য কত বাহানা করেছিলাম, কিন্তু যাই যাই করেও দুর্ভাগ্যের কারনের যাওয়া হয়নি।
আজকে সেই ভাগ্যই সেই একই পথে আমাদের দেখা করিয়ে দিল!
“একটুও বদলাওনি তুমি” আমি বললাম
“কিন্তু তুমি অনেক বদলে গেছো।“ নিহিন বলল
এই দুটি কথার মাঝেও যেন অনেক না বলা কথা বলা হয়ে গেছে।
গাড়ী ছুটতে শুরু করলো, কিন্তু তার থেকেও বেশি গতিতে সম্ভবত আমাদের ভাবনা গুল চলছিল।
একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম, আমাদের জীবনের পথটা বৃত্তের মত, যেখান থেকেই শুরু হোকনা কেন, শেষটা অই একই বিন্দুতেই হবে এবার যত সময়ই লাগুক না কেন। …..
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৩