somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অসম প্রেম

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুইটা বাজতে চলল। আরান বাস টারমিনালে অপেক্ষা করছে অহিনের জন্য। অনেক দিনের স্বপ্ন অহিন কে নিজের করে পাওয়ার। কিন্তু তাই বলে এভাবে নয়। কিন্তু আর কোনো উপায়ও নেই। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে অহিনের।
আরান বিশ্বাস করে, পৃথিবীতে ২ ধরনের মানুষ আছে। একটা হচ্ছে তারা যারা জীবিত। আর অন্যটা হচ্ছে তারা যারা জীবিত থেকেও মৃত। যাদের স্বপ্নের সাজানো বাগানে এখন আর কোনো ফুল ফোটে না। কোনো অনুভূতি যাদের স্পর্শ করেনা। আর আরানের একটাই স্বপ্ন, যাকে কেন্দ্র করে তাঁর পৃথিবী গড়ে তুলছে, তা হল অহিন।
নিম্ন বৃত্ত পরিবারে মানুষ হওয়ায় আরানের বড় কোনো কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস ছিল না, তাই অহিন কে পছন্দ করলেও তা কখনো প্রকাশ করেনি। হাই-হ্যালো পর্যন্তই।
ভর দুপুরে রমনা পার্কে আরান কে দেখে অবাক হল অহিন, তাও এবার ত্রিশ-চল্লিশ জন ভিক্ষুকের সাথে!
-আরান, এই ভর দুপুরে কি করছো এখানে ভিক্ষুকদের সাথে! অহিন বলল।
-নাহ, তেমন কিছু না। একটু খাবার বিতরণ করছিলাম, লজ্জা পেয়ে বলল আরান। আসলে সারা দিনে ১ বেলা ঠিক মত খেতে পারেনা, এমন মানুষ গুলর মুখে একটু হাসি ফুটানোর চেষ্টা।
এসব দেখে আর আরানের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না অহিন কারণ যত টুকু জানে সে আরান সম্পর্কে তা হল অনেক কষ্ট করে কোন রকমে পড়াশোনার টাকা উপার্জন করে টিউশুনি করে। গত বছর ফর্ম ফিল আপ করার টাকা ছিল না বলে আর একটু হলে ফর্ম ফিল্ আপ মিস করতে যাচ্ছিল। পরে বন্ধুরা ম্যানেজ করে। তাই এমন কিছু দেখে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
অহিন তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু আরানের খাবার বিতরণ করা দেখছিল।
-আল্লাহ তোমার মেলা ভালা করুক বাবা। আজকে তো ভাবসিলাম খাওনই পামু না কোথাও। আজ কাল মানুষের টাকা আসে, কিন্তু মন নাই। বলতে বলতে কেঁদে দিলো ষাট ঊর্ধ্ব বৃদধা মহিলাটি। মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল অহিনের।
-ভাইজান, ভাইজান, কেমন আসেন? আট-নয় বছরের একটা মেয়ে বলল।
-কিরে টুকটুকি, কেমন আছিস?
-জি, ভাইজান ভালা।
-তোর ছোট ভাইটা না অসুস্থ ছিল, এখন কেমন আছে?
-জি ভাইজান, অই দিন আফনে ডাক্তার দেখানোর পর এখন অনেক ভালা আসে। তয় ওষুধ শেষ।
মানিব্যাগ খুলে ১০০ টাকার দুইটা নোট ধরিয়ে দিল টুকটুকির হাতে।
-আফ্যা, আমার ভাইজানের মত মানুষ দুনিয়াতে খালি একজনই আসে।
অহিন খালি একটু হাসলো। টুকটুকি চলে গেল। অহিন বাসার পথ ধরল আরান কে কিছু না বলে।
বাসায় বসে আজকের ফটোগ্রাফীর ছবি গুলো দেখার সময় ষাট ঊর্ধ্ব বৃদধা মহিলাটির ক্রন্ধনরত অবস্থায় আরান কে মাথায় দোয়া করে দেওয়ার ছবিতে থেমে গেল। ছবিতে দেখে কেনো যেন অনেক ভালো লাগল অহিনের।

-ভাই, দশটা আইসক্রিম দাও। আনন্দে হই হই করে উঠলো টোকাই ছেলে মেয়ে গুলো।
-কত?
-২০০ টাকা।
আরান মানিব্যাগে শুধু ১০০ টাকা খুঁজে পেল। ৫ টা আইসক্রিম হাঁতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করা যায়। মন খারাপ হয়ে গেল আরানের।
- মামা, ৭ টা আইসক্রিম দিন। এই নাও তোমার আইসক্রিম। অহিন বলল। একটা তোমার, আরেকটা আমার। বাকি গুলো ওদের।
অবাক হয়ে দেখল আরান অহিন কে। কোথায় থেকে জানি এসে হাজির হলো মেয়েটা।
-দিদি, এই লউ তোমার জন্য আমাগো থেইকা একখান ছোট্ট গোলাপ।
চোখে পানি আটকাতে পারলো না অহিন। আরান ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অহিনের দিকে। লজ্জা পেয়ে গেলো অহিন।
কাঁদলে যে কাউকে সুন্দর লাগতে পারে, আজ না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতে পারতো না। তারপর ওপর কান্না দেখে ফেলায় যখন অহিন লজ্জায় মুখ রক্তিম হয়ে উঠলো তাকে সূর্যদয়ের লাল আভার সাথেই কেবল তুলনা চলে। ইচ্ছে করছিলো চুমু দিয়ে তাঁর অশ্রু সজল দুই চোখের সব টুকু অশ্রু মুছে দিতে।
-ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, যাবেনা???
-তুমি যাও, আমি আসছি।
গাড়িতে উঠে এসো বলছি।
তুমি যাও, আমার দেরি হবে।
অহিন গাড়ির জানালা দিয়ে দেখতে পেলো আরান হেঁটে হেঁটে আসছে।
কেনও গাড়িতে উঠলো না আরান, তা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল অহিনের।
আরান জানে স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। জানে এই দুইয়ের মাঝে যে দূরত্ব তা কখনো দূর হবে না। পরিণামে শুধু সমুদ্র সমান দুঃখই পেতে হবে। তাই আগে থেকে ভাবনা আর অনুভূতি গুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা।
সারা রাত না ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে অহিনের।
আরানও অবাক হয়ে গেল দেখে।
-কি হয়েছে তোমার? আরান জিজ্ঞেস করলো অহিন কে।
টপাটপ করে অহিনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
আরান অহিনের একটু কাছে যেতেই শক্ত করে আরান কে জড়িয়ে ধরে আর জোরে কান্না করা সুরু করলো।
-কখনো আমাকে দূরে সরিয়ে দেবে না, প্রমিস করো।
-আচ্ছা, প্রমিস করলাম।
মেয়ে গুলো কান্না দিয়ে কত সহজেই বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে। কারো শক্তি নেই সেই বন্ধনকে ভেদ করার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪১
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×