এক।
- এই হাসান, এই দিকে আয়। কি প্লান করলি অধঁরার গাঁয়ে হলুদ নিয়ে??? রেহান বলল।
- কি গাঁয়ে হলুদ??? আমি অবাক হলাম।
- আমাদের বান্ধুবীর বিয়ে, তাই আমাদের একটা দায়িত্ব আছে না!!! শোন, অধঁরার খুব ইচ্ছে ছিল ওর গাঁয়ে হলুদে অনেক মজা হবে, গানের আয়োজন হবে, অনেক অনেক নাচবে।
- দেখ, অধঁরার ফ্যামিলি এসব পছন্দ করে না, তাছাড়া এসব আয়োজন করতে টাকা পয়সা লাগবে অনেক। আর অধঁরার পরিবার রাজী না থাকলে এতো টাকা আসবে কোথায় থেকে! বুঝতে হবে তোকে।
- আমি এতো কিছু জানতে ও চাই না, বুঝতে ও চাই না। আমি শুধু বুঝি অধঁরা কি চায়। রেহান বলল। তুই এরেঞ্জ করা শুরু কর, বাকী সব আমি সামলাবো। রেহান কে দেখে অবাক হলাম।
- আর শোন ডেকোরেটর আর মিউজিক সিস্টেম কে খবর দে আর বলবি তাহসানের গান গাইতে হবে, অধঁরার অনেক প্রিয় তাহসানের গান। সন্ধায় আমি টাকা দিয়ে যাব। রেহান বলল।
- তোরতো দেখি অধঁরার পছন্দ-অপছন্দ সব জানা!!! আচ্ছা, আমি দেখছি। আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
- জানিসতো, আমি মেয়েদের সাথে অনেক ভালো মিশতে পারি।
-তাতো দেখতেই পাচ্ছি। আমি বললাম।
দুই।
- আরে শোন রাজীব, এভাবে না, অধঁরা এভাবে পছন্দ করবেই না। রেহান বলল।
- উফফ! তোর জ্বালায় কিছু পারতেছি না। তোর এতো শখ থাকলে তুই নিজে এসে স্টেজ সাঁজা। তোর ভাব দেখে মনে হচ্ছে তোরই দিয়ে!!! রাজীব বলল।
- মন খারাপ হয়ে গেলো রেহানের।
- যা তোকে করতে হবে না, আমি করবো। আর হাসান শোন, এই নে টাকা।
- কোথায় পেলি এতো টাকা। আমি অবাক হলাম। তোর কাছে না টাকা নাই।
- যা তো এখান থেকে।
- হেটে চলে গেল রেহান। আমি টাকা নিয়ে শুধু রেহানের চলে যাওয়া পথের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম।
চারটা বাজতে চলল। তখন ও রেহান এস্টেজ সাজাচ্ছে দেখে অবাক হল হাসান।
- কিরে, ঘুমাবি না। হাসান বলল।
- ঘুম আসচ্ছে নারে।
- কিরে, তোর চোখে পানি!
- পানি না। আর বলিস না, পোকা পড়েছে অনেকক্ষণ হল। চোখ জ্বালা করছে। তাই পানি এসে পড়ছে।
- কই দেখিতো। নাহ, নেইতো।
- যাক, বের হয়ে গেছে তাহলে, আলতো করে হাসলো রেহান। কিন্তু কেন জানি হাসিটা বড্ড শুষ্ক মনে হল।
-সত্যি অনেক সুন্দর হয়েছে। অধরার অনেক পছন্দ হবে স্টেজ । আমি বললাম।
- দেখতে হবে না কে সাজিয়েছে। রেহান বলল। তুই ঘুমাতে যা, আমি শেষ করে ঘুমাতে যাবো।
তিন।
- কিরে রাজীব ১০টা বাজতে চলল। রেহান কই!! আমি বললাম।
-আমি কি জানি, খুজেইতো পাচ্ছি না ওকে!!! তার ওপর মোবাইল ও বন্ধ। রাজীব উত্তর দিলো।
আরে!!! তুই বাসায় যাস নি!!! আমি বললাম।
-নারে, অনেক ঘুম পাচ্ছিলো , তাই এখানেই অধঁরার এস্টেজে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-শালা তরে নিয়ে আর পারি না। পাগল হয়ে যাবিতো এভাবে কাজ করলে। আমি বললাম।
-নারে, অন্য রকম এক আনন্দ আছে, তুই বুঝবি নারে হাসান।
-আর কুত্তা তোর মোবাইল বন্ধ কেন???? আমি বললাম।
- ছিনতাই হয়ে গেছে।
আমি অবাক হলাম। বুঝলাম রেহান এতো টাকা কোথায় থেকে পেয়েছিল, কিন্তু কেনো তাই বুঝলাম না!!!
- কেন তুই এসব করছিস???? নাহ তুই আমার সেই চির চেনা বন্ধুর মত আচরণ করছিস, ঠিক যেন অন্য রকম। আমি বললাম।
- বুঝবি নারে। সব কিছু বলে বোঝানো যায় না, কিছু কিছু ব্যাপার অজানা, আর অচেনা রাখাই ভালো।
চার।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। এক এক করে অতিথিরা ও আসা শুরু করলো। লাল-নীল আলোতে চারিদিক ঝিকমিক করছে। সবাই বিয়ের সাঁজে সেজে এসেছে, কিন্তু দুইটি মানুষের মনে অঝোরে ঝরনা ধারার মত বৃষ্টি ঝরছে । এস্টেজে লোকাল ব্যান্ড গান করছে তাহসানের গান গুলো।
- ভাই শোনেন, কনে যখন আসবে, তখন এ যেন সহজ স্বীকারত্বী গানটা গাইবেন। রেহান বলল।
- ঠিক আছে ভাই।
আলতো আলতো পায়ে এগিয়ে আসছে অধঁরা । অধঁরা এতো সুন্দর জানতাম নারে। অনেক সুন্দর লাগছে নারে অধঁরার কে। যেন অপ্সরী, আমি বললাম
- ধুর ছাই!!! আমার বউরে দেখিস। চোখ ফেরাতে পারবি না। রেহান বলল।
- তোর আর বউ!!! ফাউল!! আমি বললাম। কত ভালো আর সুন্দর একটা মেয়ে ছিলো অধরা। এতো করে বললাম প্রেমটা কর। করলি না।
- অদ্ভুত!!! এতো করে তোকে বললাম তোর বান্ধুবীর সাথে আমার প্রেম করিয়ে দে, তার লাইফটা বদলে দেই, করিয়ে দিলি না। রেহান বলল।
- তোর মত ফাউল পোলার সাথে প্রেম করিয়ে দিয়ে কি অধঁরার লাইফটা ছারখার করমু নাকি!!! আমি বললাম। কেন জানি রেহান মুখটা শুকিয়ে গেলো।
অধঁরার এসে আমাদের সামনে থামল।
- অনেক সুন্দর সাজিয়েছ রেহান ঠিক যেভাবে আমি কল্পনায় ভেবেছিলাম। কাজের ছেলের মত লাগছে, একটা পাঞ্জাবী পরো, অধরার বলে হেঁটে চলে গেল।
কিসের যেন একটা অভিমানের সুর ছিল বুঝলাম না। তবে যেতে যেতে অধঁরা শুধু আমদের দিকেই তাকিয়ে ছিল।
পাঁচ।
অনুষ্ঠান ভালোই চলল। সবাই হলুদ লাগালো। শুধু রেহানই হলুদ লাগালো না। কেন জানি অবাক করে দিয়ে অধঁরাও ওকে কিছু বলল না, অথচ অধঁরাই সবসময় রেহানের পক্ষে সাহাই গাইতো।
- রেহান, তুই একটা গান গাইবি, দেব বলল।
রেহান গিটার তুলে নিলো।
- আমি আসলে গান গাইতে পারি না, কিন্তু আমার খুব স্পেশাল একটা মানুষ কে মাঝে মাঝে গান শোনানো হয়, তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বেসুরে গান গেঁয়ে বিরক্ত করার জন্য।
গিটার বাজানো শুরু করলো সুর ধরল----
[sb]“ অবাক চাদের আলোয় দেখ, ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী।
আড়াল হতে দেখেছি তোমার, নিস্পাপ মুখ খানি ।।
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝি নি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়।।
ভুল গুলো জমিয়ে রেখে বুকের মনিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে…
ভালবাসব তোমায়… ভালবাসব তোমায়।
তোমার চির চেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাব হারিয়ে.
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে
এক বার শুধু একটিবার হাতটা দাও বাড়িয়ে ।।
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনদিন
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন ।“
হাজার বছর এমনি করে আকাশের চাদ টা আলো দেবে,
আমার পাশে ক্লান্ত ছায়া আজীবন রয়ে যাবে,
তবুও এ অসহায় আমি ভালবাসবো তোমাকে, শুধু যে তোমাকে…
ভালবাসবো তোমাকেই… ( গানঃ চির অধরা- মেহফুজ জামান)
- আরে তুই কাঁদছিস কেন অধঁরা !!! আমি অবাক হয়ে বললাম
- গানের কথা গুলো শূনে। রেহান কে দেখে রাখিস। একা ছাড়িস না। আর কিছু বলল না।
- কিছুই বুঝলাম না!!! আমি বললাম।
- কিছু কিছু ব্যাপার না বোঝাই ভালো। অধঁরা বলল।
এই কথাটা রেহানের পর অধঁরার কাছে আবার শুনলাম। আগের বারের মত এবারো কিছু বুঝলাম না।
সবাইকে খাবার এনে দিলো। সবাই অনেক হই হুল্লোড় করলো। অধঁরাকে নিয়ে সবাই নাচলাম, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও রেহান কে আনা গেল না। শুধু বলল আমি নাচ পারি না, আর মাথা ব্যথা করছে। এক পাশে বসে শুধু আমাদের হই হুল্লোড় দেখলো।
ছয়।
- খাবার নিয়ে কোথায় চললি রে অধঁরা ??? আমি বললাম।
- রেহান কে খেতে দেখেছিলি ??? ও খায় নি।
রেহান সামনা সামনি বসে আছে অধঁরা। প্লেট টা এগিয়ে দিল রেহানের দিকে।
-খাও নি কেন??? তোমার তো অনেক শখ বিয়ে খাওয়ার। কেমন লাগছে ভালোবাসার মানুষের বিয়ে খেতে অধঁরাবলল।
- তোমার কি মনে করে ভাবলে এই খাবার আমার গোলা দিয়ে নামবে?? রেহান বলল।
- তুমি কি চাও আমার কাছে। সব তো শেষ হয়ে গেছে। তুমি প্লীজ তুমি চলে যাও। কাল থেকেও না।
- তোমার হাতটা ধরতে খুব ইচ্ছে করছে ঠিক আগের বারের মত। ঠিক আগের বারের মত হাত ধরে খুব বলতে ইচ্ছে করছে তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি, দেখতে ইচ্ছে করছে, আমি স্পর্শ করলে এখন আমার স্পর্শের শিহরণে তোমার চোখ বন্ধ হয় কিনা । তোমার স্নিগ্ধ কোমল গালটা একটু স্পর্শ করতে দেবে??? রেহান বলল।
- আমার হাতটা ক্ষণিকের জন্য ধরতে চাইছো, কিন্তু পারবেনা আমাকে আর আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাত আজীবনের মত ধরে রাখতে । অধঁরা আর কিছু না বলে কাদতে কাদতে চলে গেল। রেহান শুধু এই পথের দিকে তাকিয়ে রইল। অধঁরা ও জানে আসলে তাদের দু জনেরই হাত-পা বাঁধা।
আড়াল থেকে ভাগ্য বিধাতা আর হাসান সব দেখতে পেলো। বুঝতে বাকি রইল না যে বন্ধুদের অগোচরে ওদের মাঝে সম্পর্ক ছিল। ওদের দুজনেরই হাত-পা পারিবারিক শিকলে বাঁধা। অনেক চেষ্টা করেছে সব কিছু উপেক্ষা করতে, কিন্তু পারেনি পারিবারিক ঋণ কে উপেক্ষা করতে দু জনের কেউই।
প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা অনেক। কিন্তু সেই বেদনাটা আরও অনেক পরিমাণে বেশি হয় যখন সেই মানুষটা একা থাকে। অন্য একটা মানুষই পারে সেই বেদনা ভুলিয়ে দিতে। রেহান জানে না, কতটা সময় তাঁকে এভাবে একা থাকতে হবে, কত সময় লাগবে বেদনার নীল বিষে জর্জরিত মনটা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে, যদিও মৃত্যু অবধি সম্পুরণ ভোলা সম্ভব নয় সে জানে। অধরার প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনায় জর্জরিত হবে, কিন্তু অতটা না যতটা রেহান হবে। কারণ তার পাশে অন্য এক মানুষ থাকবে তাঁকে ভালোবাসার জন্য। তাই একটু সময় নিলেও অধরা ভুলে যাবে। কিন্তু রেহানের সেই সুযোগ নেই। তার জীবনে আর কেউ আসবে না।
সাত।
আজ অধঁরার বিয়ে।
-তোকে যেতে হবে না। আমি বললাম রেহান কে।
রেহান নিজে থেকেই পাঞ্জাবী পরে তৈরি হল। গাড়ী থেকে কমিউনিটি সেন্টারে কোলে করে নিতে হবে কনে কে। রেহান এগিয়ে গেলো। পাঁজ কোলে করে গেটের দিকে অধঁরাকে নিয়ে চলল। অধঁরা শুধু রেহানের দিকে তাকিয়ে চেয়ে রইল আর টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে চলল। অন্য সবার কাছে, এই অশ্রু কনের স্বাভাবিক অশ্রু মনে হলেও আমার কাছে জানতে বাকি রইলো না, এই অশ্রু প্রিয়জন কে হারানোর যতটা দুঃখ, তার থেকেও বেশি দুঃখ নিজ হাতে সেই ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কার হাতে সঁপে দেওয়ার দুঃখ। আমি বুঝলাম না মানুষ কি করে পারছে এতো কষ্ট হাসি মুখে সইতে রেহান আর অধঁরা। রেহান অধঁরাকে নিয়ে কনের আসনে বসিয়ে দিল।
- অনেক সুন্দর লাগছে নারে আমার স্বপ্ন পরীটাকে??? খুব ইচ্ছে ছিলো আমার ছোট্ট পরী টাকে লাল বেনারশীতে বউয়ের সাঁজে দেখবো।
- অনেক হয়েছে, চল এবার। আমি বললাম।
- অনেক খিদে পেয়েছে রে, হাসান তুই খাবি ??? রেহান বলল।
আমি অবাক হলাম। মানুষ কি করে পারে এতো কষ্টের মাঝেও হাসতে পারে।
- তুই পাগল হয়ে যাবি রেহান। চল এখান থেকে প্লীজ, আমি বললাম। ও কিছু বলল না।
পেট ভরে খেতে লাগলো। ওঁই আরেক পিস রোস্ট দিতে বলল না, অনেক মজা হইসে রে। বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরল। অনেক ঝাল ও হইসে, দেকছিস না, পানি চলে আসছে।
এই প্রথম কোন প্রেমিক কে দেখলাম ভালোবাসার মানুষের বিয়েতে এসে এতো মজা করে খেতে। মানুষ কি করে পারে এতো ভালো থাকার অভিনয় করতে। আমি জানি না, অধঁরা কে নিয়ে দুষ্টামি তে ভরা রেহানের কথার মাঝে এতো ভালবাসা যে লুকিয়ে ছিলো তা আমাদের অগোচরেই ছিল এতোটা কাল। আসলেই ওকে আমরা চিনতে পারিনি। পুরোটা সময় অধঁরা তাকিয়ে ছিল রেহানের দিকে।
- চল, উঠ। অনেক খেয়েছিস। আর ভাব ধরতে হবে না। আমি টেনে নিয়ে চলালাম রেহান কে।
- হাসান! অধঁরাডা কল।
তুই দাড়া রেহান, আমি আসতেছি এখনই। রেহান কে চেয়ারে বসিয়ে রেখে আমি চললাম কথা বলতে।
- রেহান কে একা ছাড়িস না। পাশে পাশে থাকিস।
আমি ঘুরে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু রেহান চেয়ারে নেই। সবাই পাত্র পাত্রীর আর কাজির বিয়ে পরানো নিয়ে বিজি। অধরার কে আর কিছু বলতে পারলাম না। অনেক ঘুরে ফিরেও রেহান কে কোঁথাও পেলাম না।
আট।
প্রায় ছয় মাস হতে চলল। অধরার বিয়ে হল। অনেক বিজি হয়ে পড়েছে শ্বশুর বাড়ী নিয়ে। হাসান বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার সময়ই হয়ে উঠে না। ইচ্ছে যে করে না, তা না। শ্বশুর বাড়ীর লোকজন খারাপ ভাবে দেখবে তাই যোগাযোগ করেনি।
অধরার হাজবেন্ড অনেক বিজি মানুষ। ব্যবসা নিয়ে অনেক বিজি থাকে। তাই হানিমুন করা হয়ে উঠেনি।
তাই ছয় মাস পর পরিবারের চাপে পড়ে অবশেষে অধঁরাকে নিয়ে হানিমুন করতে গেল সেন্ট-মাটিন। ভালই কাটল হানিমুন।
সেন্ট-মাটিনে অধঁরাকে নিয়ে তার কোলে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো রেহানের। অনেক দিন পড় মনে পরলো পাগলটার কথা অধঁরার। হাসান কে কল দিল।
- কেমন আছিস হাসান ???
- এতো দিন পড় মনে পরলো আমদের কথা???
- কিছু বলল না অধঁরা। কেমন আছে রেহান????
- কেন জানিস না তুই????
- রাখিরে , ও ডাকছে বলেই লাইনটা কেটে দিল অধঁরা।
- ব্যাগ গুছিয়ে নাও, আমরা এখনই বের হব। বন্ধুর সাথে দেখে করতে যেতে হবে। অধঁরার হাজবেন্ড সফিক বলল।
- পাবনায় আমার কিছু কাজ আছে, আমার এক ডাক্তার বন্ধু আসে, দেখা করতে বলেছে তোমাকে নিয়ে। পাগলটা আমার মাথা খারাপ করে ফেলল। সফিক বলল।
- ভাবী এমন জায়গায় আসলেন, যেখানে পাগল ছাড়া দেখার কিছু নাই। মাঝে মাঝে ভাবি আমি না কবে পাগল হয়ে যাই। হেসে উঠলো সবাই। চলুন পাগলা গারদ টা ঘুরিয়ে দেখাই। তবে সাবধান।
পাগল দের দেখে অধঁরার অনেক খারাপ লাগলো। সফিক চল, আমরা ফিরে যাই, আমার ভালো লাগছে না। অধঁরা বলল।
আচ্ছা, ঠিক আচ্ছে, চল। সফিক বলল।
- আরে দাড়া, আমাদের এখানে এক নাম করা এক পাগল আছে, অনেক সুন্দর গান করে। গিটার ও বাজায়। অবশ্য শুধু একটাই গান গায় সব সময়। ওটা দিয়েই শেষ করি। সফিক ও আগ্রহী হয়ে উঠলো গানের কথা শূনে। আর মানা করলো না।
সেলের সামনে দাড়িয়ে গান শোনার অপেক্ষা করছে অধঁরা, সফিক আর তার ডাক্তার বন্ধু। নিরাপত্তার জন্য পাগলের চারপাশ বন্ধ। শুধু ছোট্ট জানালা দিয়ে তাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অন্য দিকে চেয়ে আছে।
- এই পাগলা, একটা গান ধরত, তোর গান শোনার জন্য গেস্ট অপেক্ষা করছে। নিরাপত্তা কর্মী বলল।
কিন্তু গান গাইলো না।
- চল, অধঁরা। গান গাইবে না বোধ হয়। ওরা ফিরতে লাগলো।
ঠিক তখনই গিটারের শব্দ আসতে লাগলো।
সবাই ফিরে তাকালো সেলের দিকে, কিন্তু মুখটা দেখতে পেল না উলটো দিকে ফিরে থাকায়। গুন গুন সুর ধরলো সেলে আটকে থাকা পাগলটা। অনেক চেনা লাগলো সেই সুরটা অধঁরার কাছে।
“ অবাক চাদের আলোয় দেখ, ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী।
আড়াল হতে দেখেছি তোমার, নিস্পাপ মুখ খানি ।।
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝি নি কভু সেই মায়া তো আমার তরে নয়।।
ভুল গুলো জমিয়ে রেখে বুকের মনিকোঠায়
আপন মনের আড়াল থেকে…
ভালবাসব তোমায়… ভালবাসব তোমায়।
তোমার চির চেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাব হারিয়ে।
চোখের গভীরে তবু মিছে ইচ্ছে জড়িয়ে
এক বার শুধু একটিবার হাতটা দাও বাড়িয়ে ।।
ডাকবেনা তুমি আমায় জানি কোনদিন
তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন ।
হাজার বছর এমনি করে আকাশের চাদ টা আলো দেবে,
আমার পাশে ক্লান্ত ছায়া আজীবন রয়ে যাবে,
তবুও এ অসহায় আমি ভালবাসবো তোমাকে, শুধু যে তোমাকে…
ভালবাসবো তোমাকেই… “
চোখ দিয়ে ঠিক গাঁয়ে হলুদের সন্ধার মতই অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকলো অধঁরার চোখ বেয়ে।
- কি হল তোমার??? সফিক জিজ্ঞেস করল।
অনেক অনেক কষ্টের গানটা তাই আর কি।
- পাগলটা নাম কি? কোথায় থাকে? কি করে পাগল হল কিছু জানেন? অধঁরা জিজ্ঞেস করল।
- বাড়ী কোথায় জানি না, মাস চারেক আগে কিছু লোকাল এলাকবাসী এনে ভর্তি করে দিয়ে যায়। অনেক দিন নাকি রাস্তার মধ্যে পড়েছিলো। নিরাপত্তাকর্মীরা তো রেহান পাগলা বলেই জানে। শুনেছি একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসতো, কিন্তু তার অন্য কোঁথাও বিয়ে হয়ে যায়। জামার পকেটে পাওয়া কাগজ পড়ে এটুকুই জানা গেছে।
সফিক, অধঁরা আর ডাক্তার বন্ধু হাঁটা ধরল। সফিক আর তার বন্ধু এগিয়ে গেলে শেষ বারের মত সেলের দিকে তাকালো অধঁরা। দেখতে পেলো সেলের ছোট্ট জানালা দিয়ে উশকো খুশকো চুলের মুখ ভর্তি দাড়িতে ভরা রেহানের সেই প্রিয় মুখটা। ফিরতি পথ ধরলো অধরা আর মাথার মাঝে শুধু ঘুরতে থাকলো রেহানের গাওয়া সেই গানটা-
তোমার চির চেনা পথের ঐ সীমা ছাড়িয়ে, এই প্রেম বুকে ধরে আমি হয়তো যাব হারিয়ে।
ডাকবে না তুমি আমায় জানি কোনদিন, তবু প্রার্থনা তোমার জন্য হবেনা মলিন ।
হাজার বছর এমনি করে আকাশের চাদ টা আলো দেবে, আমার পাশে ক্লান্ত ছায়া আজীবন রয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৯