somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসিজির লিডঃ পানির মত সহজ নাকি পানির মত কঠিন??

২২ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই ইসিজি সম্বন্ধে ছোটখাটো ধারণা পেয়েছেন। এই পোস্টে আমরা আলাপ করব ইসিজির লিড (lead) নিয়ে।

মনে করুন, আপনার পোষা বেড়ালটা খুব অসুস্থ। কেমন যেন করে, লাফায় না, দৌড়ায় না। আপনি তাকে কোলে নিয়ে ভালমত লক্ষ্য করা শুরু করলেন।

আপনি সামনে থেকে তাকে দেখলেন। আপনার চোখে ধরা পড়ল, বেড়ালের মুখের কাছে কেমন যেন ঘা ঘা ভাব।



আপনি বেড়ালের বাম পাশটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে এই দিক থেকে বেড়ালটাকে দেখলেন। এবার দেখলেন, শরীরের বাম পাশের একটা অংশে লেগে আছে রক্তের দাগ।

এবার আপনি বেড়ালের ডান দিকটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। এবার দেখলেন, ডান দিকটা ভাল, কোন সমস্যা নেই।



এবার আপনি বেড়ালের নিচের দিকটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন এবং দেখলেন, বেড়ালের নিচের অংশে ক্ষতের দাগ।



একইভাবে আপনি বেড়ালকে দেখতে পারেন উপর থেকে। দেখতে পারেন পিছন থেকে। অর্থাৎ, আপনি আপনার বেড়ালটাকে কয়েক দিক থেকে দেখতে পারেন। একেক দিক থেকে দেখার সময় বেড়ালের শরীরের একেকটা অংশ আপনি ভাল দেখতে পাবেন, আর প্রত্যেকবারই চারপাশের অংশের কিছুটা দেখতে পাবেন। যেমন, উপর থেকে দেখলে আপনি বেড়ালের মাথা ও পিঠ ভালোভাবে দেখতে পারবেন, কিন্তু পাগুলো ভালোভাবে দেখতে পাবেন না। আবার ডান পাশ থেকে দেখলে খালি ডান পাশের শরীর ভালোভাবে দেখতে পাবেন, মাথা ও পিঠ বুঝতে পারবেন কিন্তু ভালোভাবে দেখতে পারবেন না।

ইসিজির লিডও কিন্তু তাই। এটা আর কিছুই না, হৃদপিণ্ডকে কয়েকটা আলাদা দিক থেকে দেখার একটা পদ্ধতি মাত্র।

কয়েকটা আলাদা দিক থেকে দেখার কারণ হল, একেক দিক থেকে হৃদপিণ্ডের একেক অংশ ভাল বোঝা যায়। আপনি যেমন আপনার পোষা বেড়ালটাকে সবদিক থেকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন বিড়ালের কোথায় কোথায় ক্ষত, ইসিজিতেও হৃদপিণ্ডকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখে বুঝতে হয় হৃদপিণ্ডের কোথায় কোথায় সমস্যা।

আপনি যদি আপনার বেড়ালটাকে খালি ডান দিক থেকে দেখতেন, আপনার মনে হত বেড়াল সুস্থ, তার কোন সমস্যা নেই। একইভাবে আমরা যদি শুধু একটা লিড বা একটা দিক থেকে হৃদপিণ্ডকে দেখি, আমরা শুধু সেই লিড হৃদপিণ্ডের যে অংশের কাছাকাছি আছে সেটারই সমস্যা নিরূপণ করতে পারব, অন্য অংশগুলোর সমস্যা এই লিডে ধরা পড়বে না।

সব দিক থেকে দেখে যাচাই বাছাই না করে যেমন ফল থেকে ফ্ল্যাট, কোনটাই কেনা হয় না, তেমনি সব দিক বা লিড থেকে না দেখে হৃদপিণ্ড সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না।




এক কথায় লিড মানে, হৃদপিণ্ডের দিকে তাকানোর আলাদা আলাদা দিক।

ইসিজি যন্ত্রটাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটা হল মূল যন্ত্র, যেটা দিয়ে বর্গ আঁকা কাগজে আঁকাবাঁকা ইসিজি বের হয়ে আসে। আরেকটা হল সাপের মত কিলবিলে ১০ টা ইলেক্ট্রোড, যেগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়।



কোন ইলেক্ট্রোড কোথায় বসানো হয় এটা জানার কোনই প্রয়োজন নেই আমাদের। আমাদের শুধু জানতে হবে, ইসিজি মেশিন ১২ টা দিক থেকে হৃদপিণ্ডকে দেখে। এই ১২ টা দিকের নাম lead.

lead দুই প্রকার। limb leads আর chest leads.

limb lead শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই লিডগুলো limb বা হাত পায়ের সাথে সম্পর্কিত। লিম্ব লিড ৬ টি। এরা হচ্ছে I, II, III, AVL, AVR এবং AVF.

chest lead শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই লিডগুলো chest বা বুকের সাথে সম্পর্কিত। চেস্ট লিডও ৬ টি। এরা হচ্ছে V1, V2, V3, V4, V5 এবং V6.

এবার লিম্ব লিডগুলোর একটা ছবি দেখুন। বুঝতে পারবেন কোন লিড কোন দিক থেকে হৃদপিণ্ডকে দেখে।



অর্থাৎ, মানবদেহে স্থাপিত একটা হৃদপিণ্ডকে ঠিক বাম দিক থেকে দেখে লিড I

উপরের বাম কোণ থেকে দেখে লিড AVL

নিচের বাম কোণ থেকে দেখে লিড II

একদম নিচ থেকে দেখে লিড AVF

নিচের ডান কোণ থেকে দেখে III

একদম ডান দিক থেকে দেখে লিড AVR

এবার চেস্ট লিডগুলোর একটা ছবি দেখুন।



আজকের পুরো আলোচনা থেকে আপনার মনে রাখতে হবে শুধু এটুকুই...

right ventricle দেখা যায় লিড V1, V2 এ

interventricular septum দেখা যায় লিড V3, V4 এ

left ventricle দেখা যায় লিড V5, V6 এ

anterior aspect of heart দেখা যায় V1 থেকে V6 পর্যন্ত সব লিডে

inferior aspect of heart দেখা যায় II, III, AVF এ

left lateral aspect of heart দেখা যায় I, AVL, V5, V6 এ

চার্টগুলো দিলাম সহজে মনে রাখার জন্য...




বিশ্বাস করুন, লিড সম্বন্ধে আর কিছুই জানার প্রয়োজন নেই আপনার। কোন লিড কোন দিক থেকে দেখে এর সাথে সেদিকে হৃদপিণ্ডের কি আছে মনে করবেন, কাহিনী শেষ। সেটাও কঠিন মনে হলে অন্তত এটুকু তো বুঝতে পেরেছেন যে হৃদপিণ্ডের নিচ থেকে যে লিড দেখবে সে হৃদপিণ্ডের শুধু নিচের অংশটাই ভালোভাবে দেখবে, রাইট?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×