somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আবদুল্লাহ ০২৬
আমি অতি সাধারন একজন মানুষ। পেশাগত জীবনে মাইক্রোবায়োলজিস্ট। চাকুরীর সুবাদে এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছি। দেশ ও দেশের মানুষকে প্রতিনিয়তই অনেক অনুভব করি। আর তাই খুব তাড়াতাড়িই দেশে ফেরার আশা রাখি। অবসর সময়ে বই পড়তে, ঘুরে বেড়াতে ও প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটাত

আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি ভালবাসা

২৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মু’মিনরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও নবীর প্রতি ভালোবাসা সমুন্নত রাখে। রাসূলের প্রতি যদি ভালবাসা না থাকে, তবে তার শিক্ষা, আদর্শ ও নেতৃত্ব পরিপূর্ন ভাবে মেনে নেয়া ও বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব না। সবচেয়ে বড় কথা, রাসূলের প্রতি ভালবাসা কোন সাধারন বিষয় নয়, বরং এটি ঈমানের অপরিহার্য অংশ। একজন বান্দা পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ পাবে তখনই, যখন তার মাঝে রাসূলের প্রতি ভালবাসা বিদ্যমান থাকবে।

হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তিনটি জিনিস এমন, যার মধ্যে সেগুলো পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে।
১) আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে অন্য সবকিছু থেকে প্রিয় হওয়া
২) কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং
৩) জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেভাবে অপছন্দ করে, তেমনি পুনরায় কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করাকে অপছন্দ করে। (বুখারী)

সহীহ হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউই ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত নিজ পিতা, পুত্র ও অন্যান্য লোক অপেক্ষা আমার সাথে অধিক ভালবাসা না রাখে। (বুখারী ও মুসলিম)

তিনি আরও বলেছেন, মানুষ যতক্ষন না আমার সাথে তার স্ত্রী-পুত্র এবং অন্যান্য যাবতীয় ধনসম্পত্তি অপেক্ষা অধিক ভালবাসা জন্মাবে, ততক্ষন তারা ঈমানদার হতে পারবে না। (মুসলিম)

বুখারী শরীফে বর্ণিত, হযরত উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি নিজের প্রান ব্যাতীত অন্যান্য সকল বস্তু থেকে আপনার সাথে বেশী মহব্বত রাখি অর্থাৎ, নিজের প্রাণের যতটুকূ মহব্বত অনুভব করি, আপনার জন্য ততটুকু মহব্বত অনুভব করি না। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কেউই প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজের প্রান অপেক্ষাও আমার সাথে অধিক মহব্বত না রাখবে। হযরত উমর (রাঃ) কিছুক্ষন চিন্তা করে অন্তরকে ঠিক করে বললেন, এখন আপনার মহব্বত নিজের প্রান অপেক্ষা অধিক অনুভব করছি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর! এখন তুমি পূর্ণ ঈমানদার হলে।

হাদীস ব্যাখ্যাকারীদের অনুযায়ী উমর(রাঃ)র কথাটা এভাবে বুঝে নেয়া যায় যে, প্রথমে হযরত উমর(রাঃ) চিন্তা না করেই ভেবেছিলেন যে, নিজের কষ্টে যেমন কষ্ট লাগে, অন্যের কষ্টে তেমন কষ্ট লাগে না। অতএব বুঝা যায় যে, নিজের জীবনকেই বেশী ভালবাসেন। তারপর চিন্তা করে দেখলেন যে, যদি জীবন দেয়ার সময় আসে, তবে নিশ্চয় মুসলমান মাত্রই হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন রক্ষার জন্য নিজের জীবন আনাসায়ে দিয়ে দিবে। একইভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীনের জন্য প্রাণ দিতে কোন মুসলমানই দ্বিধাবোধ করবে না। এ থেকে বোঝা যায় যে, হুজুরের সাথে নিজের জীবন অপেক্ষাও বেশী মহব্বত আছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভা্‌ই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তার নিজ ফয়সালা প্রকাশ করেন। আর আল্লাহ অবাধ্যদের হেদায়েত করেন না”। (সূরা আত তাওবাঃ আয়াত ২৪)

এখানে, ফয়সালা দ্বারা শাস্তির ফয়সালা বোঝানো হয়েছে। এ আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, অর্থ-সম্পদ, ঘর-বাড়ী, ব্যবসা-বানিজ্য সবই আল্লাহর নিয়ামত। তবে ততক্ষন, যতক্ষন না এইগূলো আল্লাহ তা’লার হূকুম পালনে বাধা হবে। যদি বাধা হয়ে যায় তবে এসব জিনিসই মানুষের জন্য আযাবে পরিনত হবে। তারা সঠিক পথ ও আল্লাহর হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।(আল্লাহ তা’আলা আমাদের তা থেকে রক্ষা করুন)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদিন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একজন এসে জিজ্ঞাসা করল, “হুজুর! কিয়ামত কোন সময়ে হবে?” হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি কিয়ামতের জন্য কি সম্বল করেছ?” (যে কিয়ামত আস্র এত আগ্রহ) লোকটি বলল, “আমি এর জন্য বহু নামায রোযার সম্বল তো করতে পারি নাই, কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে আমার গভীর ভালবাসা আছে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে যার সাথে ভালবাসা রাখবে, কিয়ামতের দিন সে তার সাথে থকবে।” অতএব তুমি আমার সাথে থাকবে। আর যে ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহর সাথে সে আল্লাহরও সাথে। হযরত আনাস (রাঃ) বললেন, “আমি মুসলমানদেরকে ঈমান পাওয়ার পর (খুশীর) পরে এত খুশী হতে আর দেখিনি। (বুখারী ও মুসলিম)

এই হাদীসে কত বড় সুসংবাদ দেয়া হয়েছে! কেউ যদি অনেক ইবাদত-বন্দেগী না করেও থাকে, তবে শুধু আল্লাহ ও রাসূলের মহব্বতের কারনেও এত উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারে।

আল্লাহ তা’আলা, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুপম চারিত্রিক সৌন্দর্য, সত্যবাদীতা ও মহত্বের নিদর্শন হিসেবে বিশ্ব মানবতার কল্যানের জন্য পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন। নবীর প্রতি ভালোবাসার দাবী হচ্ছে, সর্বক্ষেত্রে তার প্রতি আনুগত্যের তথা সুন্নাতের অনুসরন করা এবং আদেশ-নিষেধ গ্রহন করা ইত্যাদি। তিনি মানুষের প্রতি সবচেয়ে বড় এহসানকারী। মুসলমানদের জন্য বড়ই লজ্জার বিষয়, নবীকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে (i.e. any celebrity) অনুসরন করা। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে অবাক হয়ে যেতে হয়। আজকে নবীর প্রতিটি সুন্নাহকে নিজের মাঝে ধারন করা দূরে থাক, সুন্নাহ নিয়ে ঠাট্টা-উপহাস করতেও আমাদের বাধে না। রাসুলের প্রতি সহস্র উপহাস ও অপমানেও আমাদের হৃদয়ে একটুও রক্তক্ষরন হয় না।

অথচ তিনি সেই আল্লাহর রাসূল, যিনি সারারাত্রি উম্মতের মাগফিরাতের জন্য ক্রন্দনরত অবস্থায় কাটিয়ে দিতেন। যিনি মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত ব্যাকুল ছিলেন উম্মতের মুক্তির চিন্তায়। বলে গেছেন, ইয়া উম্মাতি! ইয়া উম্মাতি! অর্থাৎ, হে আমার উম্মত! হে আমার উম্মত!

আমার মুসলমান ভাই ও বোনেরা!
আসুন, একটূ ভাবি। এটাই কি ছিল আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি আমাদের ভালবাসার দাবী? নিজেকেই প্রশ্ন করি, আসলে কার আদর্শে আমি আমার জীবন চালাতে চাই? সীরাত অর্থাৎ রাসূলের জীবন আদর্শের গ্রন্থগুলো একটু পড়ে দেখি, কেমন ছিলেন আমাদের রাসূল? আজও সারাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ রাসূল প্রেমিকেরা কেনই বা বিনা দ্বিধায় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের ভালবাসায় তাদের সমস্ত কিছু, এমনকি নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতেও চির উন্মুখ? আমার জীবনের গতিপথকে পাল্টাতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট। আর সিদ্ধান্ত নেবার আধিকারও কিন্তু একান্তই আমার! আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×