আসসালামু আলাইকুম,
শান্তি বর্ষিত হোক সেই ব্যক্তির উপর উপর যে সত্যের অনুসরণ করে, সত্য অনুসন্ধান করে কাফেরদের মধ্য থেকে, মুশরিকদের মধ্য থেকে, মুনাফিকদের মধ্য থেকে বা নাস্তিকদের মধ্য থেকে।
--------------------------------------------------------------------------------
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গোবেষক দুঃখিত গবেষক "ম জ বাশার" ইসলাম সম্পর্কে বলিষ্ঠ লেখনীর কুনিপুন দুঃখিত সুনিপুন ছোয়ায় বিভিন্ন লেখনীতে মিথ্যাচারে ভরিয়ে অনেক আলোড়ন তুলেছেন ব্লগে। তার কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো।
নমুনা-১:
২. হযরত আদম গন্দম ফল খাওয়ার অপরাধে আল্লাহর দরবারে সেজদায় লুটিয়ে পড়েন। অতঃপর মাথা তুলেই দেখলেন আল্লাহর আরশের গায়ে লেখা, “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাছুলাল্লাহ।” আদম ঐ নামের রহস্য জানতে চাইলে, আল্লাহ আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আদম! তুমি এ নাম কোথা থেকে শিখলে? আদম বললেন, আপনার আরশের গায়ে লেখা দেখেছি। অতঃপর আল্লাহ বললেন, তুমি ঠিকই দেখেছ এবং ঠিকই বলেছ; মোহাম্মদ আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্দা, সবকিছু সৃষ্টির পূর্বে সর্ব প্রথম আমি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছি; অতঃপর তারই নূরে বিশ্ব ব্রম্মান্ড সৃষ্টি করেছি। মোহাম্মদকে সৃষ্টি না করলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না। তাকে পাঠাবো সর্বশেষে।” অতঃপর মোহাম্মদ নামের দোহাই দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ বলেন, ঠিক আছে আমার হাবিবের (দোস্ত) দোহাই দিয়ে তুমি যখন ক্ষমা চাইলে, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম-। [ বোখারী, আজিজুল হক; ৫ম খ. ৫ম সংস্করণ, পৃ: ৫-৭; হামিদিয়া লাইব্রেরী]।
-------------------------------------------------------------------
আসুন এবার আলোচনা করি।
এটা একটা জাল/বানোয়াট/বাতিল হাদিস যা বুখারী ৫ম খন্ড হামিদিয়া লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত আজিজুল হক সাহেব কর্তৃক রচিত গ্রন্থে উল্লেখ আছে। কিন্তু এটা হাদিস আকারে নাই। বুখারীর হাদিসগুলোর মধ্যে এটা নাই।
আজিজুল হক সাহেব তার ৫ম খন্ডের ভূমিকাতে মহানবী সাঃ সম্পর্কে তার অভিমত লিখতে গিয়ে এই হাদিস টা উল্লেখ করেন যা যোরকানী নামক গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৬২ পৃষ্ঠা থেকে কপি করেছেন। কিন্তু বুখারীর মূল হাদিসগুলোর অন্তুর্ভূক্ত না। লেখক একটা দুর্বল ও জাল অভিমতকে বুখারীর হাদিস বলে চালাইয়া দিতেছেন।
ম জ বাশার যেভাবে বোখারী লেখছেন তাতে তো ধর্মপ্রাণ মানুষদের একেবারে দ্বিতীয় বেইজ মেন্ট এ আঘাত করছেন। সাধারণ মুসলিমগণ একটু দ্বিধান্বিত হবেন। কিন্তু আজিজুল হক যদিও এই হাদিসের রেফারন্স উল্লেখ করছেন, ম জ বাশার সাহেব তা উল্লেখ করেন নাই। উল্টা বুখারী বইলা চালাইয়া দিছেন। আবার বাইহাকির নাম, আরবী উদ্ধৃতি বইলা সত্যের পক্ষে স্বাক্ষী বানানির চেষ্টা করছেন।
এ হাদিসটি হাকিম আল মুসতাদরাক (২/৬১৫) গ্রন্থে, ইবনু আসাকীর 'তারীখ' (২/৩২৩/২) গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাক্বী 'দালায়িলুন নবুওয়াত' (৫/৪৮৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে হাদিসটি জাল।
আল্লামা মোল্লা আলী কারী তার আল মাউযুআতুল কাবীর গ্রন্থে বলেন এ হাদিসটি জাল।
হাফিয যাহাবী 'তালখীসুল মুসতাদরাক' এবং মিজানুল ই'তিদাল গ্রন্থে হাদিসটিকে জাল এবং বাতিল বলেছেন।
ইমাম বায়হাক্বি এ হাদিসের এক রাবীকে 'দুর্বল' সাব্যস্ত করেছেন।
হাফিজ ইবনু কাসীর 'তারীখ গ্রন্থে এবং হাফিজ ইবনু হাজার 'লিসান' গ্রন্থে একই কথা বলেছেন।
মুহাদ্দিস হায়সামা 'মাজমাউযু যাওয়ায়িদ' (৫/২৫৩) গ্রন্থে বলেছেন, ইমাম তাবারানী 'আউসাত' এবং 'সাগীর গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু তথায় দুর্বল রাবী আছে।
(আরো দেখুন আত তাহরীক মে-২০০৫)
সব নাস্তিকদের তথা কাফেরদের এই একটা সমস্যা "গোড়ায় গলদ"। লেখে সুন্দর, কিন্তু মাঝখানে প্যাচ রাইখা দেয়।
পরবর্তীতে তার সাথে হওয়া আমার কথপোকথনগুলো নিচে তুলে
লেখক বলেছেন: ছালাম,
১. হাদিছটি সম্বন্ধে আপনার মন্তব্য দুধর্ষ ডাহা মিথ্যা; কারণ হাদিছটি ২য় খলিফা হ. উমারের নামে একাধিক হাদিছে বর্ণিত আছে বলে স্বীকার করত স্ব ঘোষিত সায়খ (বৃদ্ধ) আজীজুল হক বোখারীর ৫ম খন্ডে সত্যের পক্ষেই সাক্ষি হিসাবে আরবি উদ্বৃতিসহ ব্যবহার করেছেন।
আমি বললাম: "সত্যের পক্ষেই সাক্ষি হিসাবে আরবি উদ্বৃতিসহ" আরবি উদ্ধতি দিলেই কি সত্যের পক্ষে সাক্ষি হইয়া যায়?
--------------------------------------------------------------------
লেখক বলেছেন: ছালাম, হক সাহেব যোরকানীর উদ্বৃতি দিলেয়ো আরবি হাদিছটি বাইহাকির বরাতে লেখা এবং উভয়ই হাজার কোটী আজীজুল হকের গুরু।
আমি বললাম: হক সাহেব যোরকানীর উদ্বৃথি দিছে কিন্তু আপনে তো সেইটা উল্লেখ করেন নাই। ডাইরেক্ট বোখারীর হাদিস বইলা চালাইয়া দিলেন। আর বাইহাকির বরাতে লেখা হইলেই কি হাদিস সহীহ হইয়া যায়?
--------------------------------------------------------------------
নমুনা-২
মা কানা মোহাম্মাদুন আবা আহদিম ম্মির রিজ্জালিক্বুম অলা কির রাছুলিল্লাহি অ খাতামান্নাবিন। [৩৩: ৪০]
অনুবাদ: মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহেন; বরং তিনি আল্লাহর রাছুল ও নবিদের সিল্/শেষ নবি।
তিনি বললেন কোরআন ভূল বলছে, তারপর বললেন-
ট. মুলতঃ মহানবি নারী-পুরুষ উভয়েরই পিতা। ৫ ছেলে: কাসেম, তৈয়ব, তাহের, ইব্রাহিম, আব্দুল্লাহ; ৪ মেয়ে: জয়নব, কুলসুম, রুকাইয়া ও ফাতেমা মোট ৯ জন ছেলে-মেয়ের পিতা ছিলেন। [দ্র: বেহেশতী জেওর, ৬ষ্ঠ খ. পৃ: ৬৫১ আশরাফ আলী থানভি]
-------------------------------------------------------------------
আসুন এবার আলোচনা করি।
মা কানা মোহাম্মাদুন আবা আহদিম ম্মির রিজালিক্বুম অলা কির রাছুলিল্লাহি অ খাতামান্নাবিন। [৩৩: ৪০]
রিজ্জালিকুম নাই, আছে রিজালিকুম।
অনুবাদ: মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহেন; বরং তিনি আল্লাহর রাছুল ও নবিদের সিল্/শেষ নবি।
আল্লাহর রাসুল কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না এটা ঠিক, কিন্তু শিশুর পিতা ছিলেন। আর উনার যত সন্তান ছিল তারা সবাই খুবই কম বয়সে মারা যান। রিজালুন বলতে সাধারণত পুরুষকে বুঝায় যা তিনি নিজেও উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তো এখানে বলেন নাই "মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন "শিশুর" পিতা নহেন , বরং তিনি বলছেন পুরুষের পিতা।
শিশু বয়স হিসেবে সাধারণত আমরা ধরি ০-১২
কিশোর হিসেবে ১২-১৭
যুবক হিসেবে ১৮-৩০
পুরুষ হিসেবে ৩১-৫০
বৃদ্ধ হিসেবে ৫১- আমৃতু্ পর্যন্ত।
(সবক্ষেত্রে কম বেশীও হতে পারে)
এই একটা ইজি জিনিস বুঝলনা না বুঝেও না বোঝার ভান করল বুঝলাম না?
আসলে নাস্তিক তথা কাফিরগুলো অহংকারে জর্জরিত। তারা শিখতে চায় না।
আল্লাহ এদের সত্যের অনুসন্ধান করার তৌফিক দান করুন। আমীন।