somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূলুল্লাহ (সঃ) সম্পর্কে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদিসসমূহ (৫ম পর্ব)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহর যার হাতে আমার জীবন। অসংখ্য দুরুদ ও সালাম সর্বশেষ ও চুড়ান্ত নবী মোহাম্মদ সাঃ এর উপর। এবারের বিষয় সমূহ:
১১. রাসূলুল্লাহ (সঃ) তারকা-রূপে ছিলেন
=> নবী নুরের তৈরী নাকি মাটির। নুরের তৈরী ফেরেশতা তো মানুষকে সিজদা করেছে। তাহলে নুরের তৈরী বললে নবীকে কি উপরে তোলা হয় নাকি নিচে নামানো হয়?
=> সূরা মায়িদাহ এর ১৫ নং নূর সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যা।
=============================================
১১. রাসূলুল্লাহ (সঃ) তারকা-রূপে ছিলেন
আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আদম সৃষ্টির পূর্বে তারকারূপে বিদ্যমান ছিলেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন ভাষ্য প্রচলিত। যেমন, রাসূলুল্লাহ () ফাতেমাকে (রা) বলেন, জিবরাঈল তোমার ছোট চাচা… ইত্যাদি। এ বিষয়ে প্রচলিত সকল কথাই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।

আমাদের দেশের সুপ্রসিদ্ধ একটি ইসলামী কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত একটি খুতবার বইয়ে লেখা হয়েছে:
عن أبي هريرة  قال: قال رسول الله : إنه سأل جبرائيل فقال: يا جبرائيل، كم عمرت من السنين؟ فقال: يا رسول الله، لست أعلم غير أن في الحجاب الرابع نجماً يطلع في كل سبعين ألف سنة مرة، رأيته اثنين وسبعين ألف مرة. فقال: يا جبرائيل، وعزة ربي جلا جلاله، أنا ذلك الكوكب. رواه البخاري
উপরের কথাগুলির অনুবাদে উক্ত পুস্তকে বলা হয়েছে: “হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে কারীম (সঃ) হযরত জিব্রাঈল (আ)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে জিব্রাঈল, আপনার বয়স কত? তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি যে, চতুর্থ পর্দায় (আসমানে) একটি সিতারা আছে যা প্রতি ৭০ হাজার বছর পর সেখানে উদিত হয়। আমি উহা এ যাবত ৭০ হাজার বার উদিত হতে দেখেছি। এতদশ্রবণে হুজুর (সঃ) বল্লেন, হে জিব্রাঈল, শপথ মহান আল্লাহর ইজ্জতের, আমি সেই সিতারা। (বুখারী শরীফ)।”

এ সকল কথা সবই ভিত্তিহীন মিথ্যা কথা যা হাদীস নামে প্রচলন করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, এই ভিত্তিহীন কথাটিকে বুখারী শরীফের বরাত দিয়ে চালানো হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, সীরাহ হালাবিয়া গ্রন্থের লেখক একজন অজ্ঞাতনামা লেখকের উপর নির্ভর করে এই জাল হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু আমরা কি একটু যাচাই করব না? এ সকল ইসলামী কেন্দ্রে এমন অনেক আলিম রয়েছেন যারা যুগ যুগ ধরে ‘বুখারী’ পড়াচ্ছেন। বুখারী শরীফের অনেক কপি সেখানে বিদ্যমান। কিন্তু কেউই একটু কষ্ট করে পুস্তকটি খুলে দেখার চেষ্টা করলেন না। শুধু সহীহ বুখারীই নয়, বুখারীর লেখা বা অন্য কারো লেখা কোনো হাদীসের গ্রন্থেই এই কথাটি সনদ-সহ বর্ণিত হয় নি। অথচ সেই জাল কথাটিকে বুখারীর নামে চালানো হলো।

কেউ কেউ এই ভিত্তিহীন কথাটিকে শুধু বুখারীর নামে চালানোর চেয়ে ‘বুখারী ও মুসলিম’ উভয়ের নামে চালানোকে উত্তম (!) বলে মনে করেছেন। উক্ত প্রসিদ্ধ দ্বীনী কেন্দ্রের একজন সম্মানিত মুহাদ্দিস, যিনি বহু বৎসর যাবত ছাত্রদেরকে ‘সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম’ পড়িয়েছেন তিনি এই হাদীসটি উল্লেখ করে লিখেছেন: “মুসলিম শরীফ ও বুখারী শরীফ”।


আমরা মনে করি যে, এ সকল বুযুর্গ ও আলিম জেনেশুনে এইরূপ মিথ্যা কথা বলেন নি। তাঁরা অন্য আলিমদের উদ্ধৃতির উপর নির্ভর করেছেন। কিন্তু আলিমদের জন্য এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য ওযর নয়। এখন আমরা যতই বলি না কেন, যে এই হাদীসটি বুখারী শরীফ বা মুসলিম শরীফের কোথাও নেই, আপনারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম খুলে অনুসন্ধান করুন… সাধারণ মুসলমান ও ভক্তগণ সে সকল কথায় কর্ণপাত করবেন না। তাঁরা কোনোরূপ অনুসন্ধান বা প্রমাণ ছাড়াই বলতে থাকবেন, এতবড় আলিম কি আর না জেনে লিখেছেন!!

=============================================

রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নূরত্ব বনাম মানবত্ব

নূরে মুহাম্মাদী বিষয়ে আরো অনেক জাল ও সনদবিহীন কথা ইবনু আরাবীর পুস্তকাদি, সীরাহ হালাবিয়া, শারহুল মাওয়াহিব ইত্যাদি পুস্তকে বিদ্যমান। এসকল পুস্তকের উপর নির্ভর করে আমাদের দেশে ‘সাইয়েদুল মুরসালীন’ ও অন্যান্য সীরাতুন্নবী বিষয়ক পুস্তকে এগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলির বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নূর দ্বারা তৈরি করা হয়েছে অর্থে বর্ণিত ও প্রচলিত সকল হাদীসই বানোয়াট। পাঠক একটু খেয়াল করলেই বিষয়টি অনুভব করতে পারবেন। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ হিজরী শতাব্দীতে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ সহ অনেক হাদীসের গ্রন্থ সংকলন করা হয়েছে। এ সকল গ্রন্থে অনেক ‘অতি সাধারণ’ বিষয়েও অনেক হাদীস সংকলন করা হয়েছে। সহীহ, হাসান ও যয়ীফ হাদীসের পাশাপাশি অনেক জাল হাদীসও কোনো কোনো পুস্তকে সংকলন করা হয়েছে। কিন্তু ‘রাসূলুল্লাহ (সঃ) নূর দ্বারা তৈরি’ অর্থে একটি হাদীসও কোনো পুস্তকে পাওয়া যায় না।

মুহাদ্দিসগণ হাদীসের গ্রন্থসমূহে কত ছোটখাট বিষয়ে অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ লিখেছেন। অথচ ‘নূরে মুহাম্মাদী’ বিষয়ে কোনো মুহাদ্দিস তাঁর হাদীস গ্রন্থে একটি অনুচ্ছেদও লিখেন নি। অনেক তাফসীরের গ্রন্থে বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেক সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীস আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সূরা মায়েদার উপর্যুক্ত ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় কোনো প্রাচীন মুফাস্সিরই রাসূলুল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি বিষয়ক কোনো হাদীস উল্লেখ করেন নি।


ইতিহাস ও সীরাত বিষয়ক বইগুলিতে অগণিত যয়ীফ ও ভিত্তিহীন রেওয়ায়াতের ভিত্তিতে অনেক অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ রচনা করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামের প্রথম ৫০০ বৎসরে লেখা কোনো একটি ইতিহাস বা সীরাত গ্রন্থে ‘নূরে মুহাম্মাদী’ বিষয়টি কোনোভাবে আলোচনা করা হয় নি। আসলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগ থেকে পরবর্তী ৫/৬ শত বৎসর পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর কোনো ব্যক্তি বা দল ‘নূরে মুহাম্মাদী’ তত্ত্বের কিছুই জানতেন না।

=============================================
এখন আমাদের সামনে শুধু থাকল সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতটি, যে আয়াতের তাফসীরে কোনো কোনো মুফাস্সির বলেছেন যে, এখানে ‘নূর’ বলতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। এখানে আমাদের করণীয় কী?

আমাদেরকে নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে:

(১) কুরআন-হাদীসের নির্দেশনাকে নিজের পছন্দ অপছন্দের ঊর্ধ্বে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করার নামই ইসলাম। সুপথপ্রাপ্ত মুসলিমের দায়িত্ব হলো, ওহীর মাধ্যমে যা জানা যাবে তা সর্বান্তকরণে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করা এবং নিজের পছন্দ ও মতামতকে ওহীর অনুগত করা। পক্ষান্তরে বিভ্রান্তদের চিহ্ন হলো, নিজের পছন্দ-অপছন্দ অনুসারে ওহীকে গ্রহণ করা বা বাদ দেওয়া।

(২) কুরআন কারীমে বারংবার অত্যন্ত স্পষ্টভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ‘বাশার’ বা মানুষ রূপে ঘোষণা করা হয়েছে। এরশাদ করা হয়েছে: ‘আপনি বলুন, আমি মানুষ রাসূল ভিন্ন কিছুই নই’, ‘আপনি বলুন, ‘আমি তোমাদের মতই মানুষ মাত্র।’ অনুরূপভাবে অগণিত সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বারংবার বলেছেন যে, ‘আমি মানুষ’, ‘আমি তোমাদের মতই মানুষ’।

এর বিপরীতে কুরআন কারীমে বা হাদীস শরীফে এক স্থানেও বলা হয় নি যে, আপনি বলনু ‘আমি নূর’। কোথাও বলা হয় নি যে, ‘মুহাম্মাদ নূর’। শুধু কুরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো মুফাস্সির বলেছেন যে, তোমাদের কাছে ‘নূর’ এসেছে বলতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। এই ব্যাখ্যাও রাসূলুল্লাহ (সঃ) বা কোনো সাহাবী থেকে প্রমাণিত নয়, বরং পরবর্তী কোনো কোনো মুফাস্সির একথা বলেছেন।

(৩) এখন আমরা যদি কুরআন ও হাদীসের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাই তবে আমাদের করণীয় কী তা পাঠক খুব সহজেই বুঝতে পারছেন। আমরা কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন নির্দেশকে দ্ব্যর্থহীনভাবেই গ্রহণ করব। আর মুফাস্সিরদের কথাকে তার স্থানেই রাখব।

আমরা বলতে পারি: কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ অনুসারে নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মানুষ। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় নূর বলতে আমরা ‘কুরআন’-কে বুঝাবো। কারণ কুরআনে স্পষ্টত ‘কুরআন’কে নূর বলা হয়েছে, কিন্তু কুরআন-হাদীসের কোথাও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে স্পষ্টত নূর বলা হয় নি; কাজেই তাঁর বিষয়ে একথা বলা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

অথবা আমরা বলতে পারি: কুরআন-হাদীসের নির্দেশ অনুসারে নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মানুষ। তবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মানব জাতির পথ প্রদর্শনের আলোক-বর্তিকা হিসেবে তাঁকে নূর বলা যেতে পারে।

(৪) কিন্তু যদি কেউ বলেন যে, তিনি ‘হাকীকতে’ বা প্রকৃত অর্থে নূর ছিলেন, মানুষ ছিলেন না, শুধু মাজাযী বা রূপক অর্থেই তাঁকে মানুষ বলা যেতে পারে, তবে আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি নিজের মন-মর্জি অনুসারে কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন নির্দেশনা বাতিল করে এমন একটি মত গ্রহণ করলেন, যার পক্ষে কুরআন ও হাদীসের একটিও দ্ব্যর্থহীন বাণী নেই।
=============================================

রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মর্যাদার প্রাচীনত্ব বিষয়ক সহীহ হাদীস
উপর্যুক্ত বাতিল ও ভিত্তিহীন কথার পরিবর্তে আমাদের সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের উপর নির্ভর করা উচিত। সহীহ হাদীসে ইরবাদ ইবনু সারিয়া (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি:
إني عند الله مكتوب بـخاتـم النبيين وإن آدم لـمنـجدل في طيـنته وسأخبـركم بأول ذلك دعوة أبي إبراهيم وبشارة عيسى ورؤيا أمي التي رأت حيـن وضـعتنـي أنه خرج منها نور أضاءت لها منه قصور الشام
“যখন আদম তার কাদার মধ্যে লুটিয়ে রয়েছেন (তাঁর দেহ তৈরি করা হয়েছে কিন্তু রূহ প্রদান করা হয় নি) সেই অবস্থাতেই আমি আল্লাহর নিকট খাতামুন নাবিয্যীন বা শেষ নবী রূপে লিখিত। আমি তোমাদেরকে এর শুরু সম্পর্কে জানাব। তা হলো আমার পিতা ইবরাহীমের (আ) দোয়া, ঈসার (আ) সুসংবাদ এবং আমার আম্মার দর্শন। তিনি যখন আমাকে জন্মদান করেন তখন দেখেন যে, তাঁর মধ্য থেকে একটি নূর (জ্যোতি) নির্গত হলো যার আলোয় তাঁর জন্য সিরিয়ার প্রাসাদগুলি আলোকিত হয়ে গেল।”

অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন,
قالوا يا رسول الله متى وجبت لك النبوة قال وآدم بين الروح والـجسـد
“তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, কখন আপনার জন্য নবুয়ত স্থিরকৃত হয়? তিনি বলেন: যখন আদম দেহ ও রূহের মধ্যে ছিলেন তখন।”

ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ গরীব বলেছেন।

অন্য হাদীসে মাইসারা আল-ফাজর (রা) বলেন,
قلت لرسول الله  متى كنت (كتبت) نبيا قال وآدم بين الروح والجسد
“আমি রাসূলুল্লাহ ()-কে বললাম, আপনি কখন নবী ছিলেন (অন্য বর্ণনায়: কখন আপনি নবী হিসেবে লিখিত হয়েছিলেন?) তিনি বলেন, যখন আদম দেহ ও রূহের মধ্যে ছিলেন।”

হাদীসটি হাকিম সংকলন করেছেন ও সহীহ বলেছেন। যাহাবীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন,
قيل للنبي  متى وجبت لك النبوة قال بين خلق آدم ونفخ الروح فيه
“নবী (সা:)-কে বলা হলো, কখন আপনার জন্য নবুয়ত স্থিরকৃত হয়? তিনি বলেন, আদমের সৃষ্টি ও তার মধ্যে রূহ ফুঁক দেওয়ার মাঝে।”

এই অর্থে একটি যায়ীফ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ৫ম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আবূ নু‘আইম ইসপাহানী (৪৩০হি) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটি সংকলন করেছেন। তাঁরা তাঁদের সনদে দ্বিতীয় হিজরী শতকের একজন রাবী সাঈদ ইবনু বাশীর (১৬৯হি) থেকে হাদীসটি গ্রহণ করেছেন। এই সাঈদ ইবনু বাশীর বলেন, আমাকে কাতাদা বলেছেন, তিনি হাসান থেকে, তিনি আবূ হুরাইরা থেকে,

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন :
كُـنْـتُ أَوَّلَ النَّـبِـيِّـيْنَ فِيْ الْـخَـلْـقِ وَآَخِرُهم في البَعْـثِ
“আমি ছিলাম সৃষ্টিতে নবীগণের প্রথম এবং প্রেরণে নবীগণের শেষ।”

এই সনদে দুটি দুর্বলতা রয়েছে।

প্রথমত, হাসান বসরী মুদাল্লিস রাবী ছিলেন। তিনি এখানে (عن: আন) বা ‘থেকে’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।

দ্বিতীয়ত, এই হাদীসের বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনু বাশীর হাদীস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। কোনো কোনো মুহাদ্দিস তাকে চলনসই হিসাবে গণ্য করেছেন। অনেকে তাকে অত্যন্ত দুর্বল বলে গণ্য করেছেন। যাহাবী, ইবনু হাজার আসকালানী প্রমুখ মুহাদ্দিস তাঁর বর্ণিত হাদীসগুলির নিরীক্ষা করে এবং সকল মুহাদ্দিসের মতামত পর্যালোচনা করে তাকে ‘যয়ীফ’ বা দুর্বল বলে গণ্য করেছেন।

এই হাদীসটিকে কেউ কেউ তাবিয়ী কাতাদার নিজের মতামত ও তাফসীর হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ইবনু কাসীর এই হাদীসের বিষয়ে বলেন,
“সাঈদ ইবনু বাশীরের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। সাঈদ ইবনু আবূ আরূবাও হাদীসটি কাতাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কাতাদার পরে হাসান বসরী ও আবূ হুরাইরার নাম বলেন নি, তিনি কাতাদা থেকে বিচ্ছিন্ন সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর কেউ কেউ হাদীসটিকে কাতাদার নিজের বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।”

এই সর্বশেষ হাদীসটি ছাড়া উপরের ৪টি হাদীসই সহীহ বা হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। এ সকল হাদীস স্পষ্টরূপে প্রমাণ করে যে, আদম (আ)-এর সৃষ্টি প্রক্রিয়া পূর্ণ হওয়ার আগেই তাঁর শ্রেষ্ঠতম সন্তান, আল্লাহর প্রিয়তম হাবীব, খালীল ও রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নবূয়ত, খতমে নবুয়ত ও মর্যাদা সম্পর্কে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ভিত্তিহীন, সনদবিহীন কথাগুলিকে আন্দাযে, গায়ের জোরে বা বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নামে বলার প্রবণতা ত্যাগ করে এ সকল সহীহ হাদীসের উপর নির্ভর করা আমাদের উচিত।

=============================================
সত্য কথা হলো নবীজি সা: সত্য কথা বলে হইছেন মিথ্যুক। আর আমরা সত্য কথা কইলে হই মৌলবাদী, ওহাবী।

সর্বশেষ যেই আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই সেটা হলো
সূরা বনি ইস্রাইল-৮১> সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তার প্রকৃতিগত কারণেই বিলুপ্ত হয়।

আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

১ম পর্ব
২য় পর্ব
(৩য় পর্ব)
(৪র্থ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২০
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×