somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: একদল দুষ্ট ছেলে

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাইলের পর মাইল নিচু জমি। ঋতুর পরিবর্তনে বদলায় তার দৃশ্য। কখনো বিলের রূপ ধারণ করে তো কখনো শুকনো মাঠ। কখনো এর মাঝে খেলা করে ধান। কখনো চাষ হয় পাট। সরিষার হলদে রংয়ে হয়ে ওঠে অষ্টদশী যুবতী। তার বুক চিড়ে চলে গেছে রাস্তা। পিচ ঢালাই করা পাকা রাস্তা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেহগনী, কড়ই, শীল কড়ই, খেজুর গাছ।

ছোট, মাঝারি, বড়, দানবাকৃতির গাড়ি চলে এ রাস্তায়। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার একমাত্র পথ। এই পথে আনন্দ উচ্ছ্বাস, এই পথে বেদনা। প্রতিটা সময় গল্প নামে এ পথে।

গাড়ি থেকে নামতেই মৃদু বাতাস ছুয়ে দেয় শুভকে। চোখ বন্ধ করে খানিকটা সময় অনুভব করে শীতল স্পর্শ। শহর, বড় বড় বাড়ি, কোলাহল, জ্যাম ভাল লাগে না শুভর। তার ভাল লাগে সবুজ, খোলা জায়গা, মাঠ, মেঠো পথ, গাছ-গাছলি। বাবা-মার সাথে ঢাকায় থাকে শুভ। তার বড় চাচা গ্রামে থাকে। ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে আসে সে।

কী এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি, নাকি বাড়ি যাবি।
শুভ দেখে শিহাব, আলামিন, হাছিব হাসছে। আরে তোমরা, কেমন আছো?
ভাল।
তুমি।
আর বলো না, রাস্তার যা অবস্থা ভাল থাকার উপায় আছে। জ্যামে অবস্থা একেবারে কাহিল করে দিয়েছে।

শিহাব শুভর চাচাতো ভাই। আলামিন, হাছিব, শাওন শিহাবের ক্লাসমেট। তাদের বাড়ি পাশাপাশি। এরা একেকটা বাদর। সারাক্ষণ মাথায় কূটবুদ্ধি নিয়ে ঘুরে। বাড়িতে কাজ থাকাায় শাওন আসতে পারে নি।

আলামিন বলল, বাড়ি যাবি? নাকি এন থেইক্কাই ঢাকা চইল্যা যাইবি?
শুভ হেসে বলল, না বাবা, এই জ্যামে ঢাকা যেতে পারব না।
শুভর কথা সবাই হেসে ওঠল। শিহাব বলল, চল বাড়ি যাই। রোদটা বেশি। গা একেবারে পুড়ে যাচ্ছে।

স্টেশন থেকে রাস্তা দুই দিকে গেছে। একটা পাকা রাস্তা, অন্যটা কাঁচা রাস্তা। পাকা রাস্তা দিয়েই সাধারণত গাড়ি চলে। কাঁচা রাস্তায় গায়ের মানুষ হেঁটে চলাচল করে। পিচ ঢালা পথ ছেড়ে মেঠো পথে হাঁটছে তারা। এতদিনের জমানো সব কথা বলতে বলতে এগুচ্ছে। স্টেশন থেকে ৩-৪ মাইল দূরে তাদের বাড়ি।

এটাকে অজপাড়া গাঁ বললে ভুল হবে না। মেঠো পথে রিক্সা, ভ্যান বা সাইকেল ছাড়া অন্য কিছু চলে না। মাঝে মাঝে মোটর সাইকেল চলে। কালে ভাদ্রে মাইক্রোর দেখা পাওয়া যায়। পাকা রাস্তা দিয়ে গেলে অনেক ঘুর পথে যেতে হয়। তাই র্শটকাট পথ নেয় কেউ কেউ। মাটির রাস্তায় তাদের ভোগান্তি কম হয় না। বর্ষাকালে তো কথাই নেই। গাঁয়ের মানুষ হেঁটেই চলাফেরা করে। তাদের কাছে এটা খুব দূরের পথ না, কিছুক্ষণের পথমাত্র। দুই তিনজন মিলে গল্প করতে করতে চলে যায়। বিভিন্ন উৎসবে গ্রামে যারা বেড়াতে আসে তারা রিক্সায় আসা-যাওয়া করে।

কাছাকাছি দোকান-পাট নেই। নেই হাট-বাজার। সাড়া গ্রামে একটা বাজার। সেখানে কয়েকটা দোকান। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় সেখানে। চাল-ডাল থেকে শুরু করে, মহিলাদের রূপচর্চার সামগ্রী পর্যন্ত সব পাওয়া যায় এসব দোকানে। কাছাকাছি পাওয়া যায় টং দোকান। এসব দোকান থেকে কেউ কিছু কিনুক আর না কিনুক দোকানের সামনে মানুষ সব সময়ই থাকে। কোথায় কি হয়েছে তার খবর এখানে পাওয়া যায়। খেটে খাওয়া মানুষগুলো বিনোদনের অন্যতম জায়গা এটা। অবসর, বাড়িতে ঝামেলা, হাটে ভালো বিক্রি না হলে এখানে আসে। চুটিয়ে আড্ডা মারে। কেউ না থাকলে নিশ্চিন্তে ঘুমায়।

পাশের গ্রামে হাটবসে। সেটাও সপ্তাহে একদিন। হাটের দিন আশেপাশের গ্রামের মানুষজন আসে। বেচা-কেনা করে। মানুষে গমগম করে সেদিন। অবশ্য পাড়ায় পাড়ায় বা প্রতি গ্রামে হাটের দরকার হয় না। মানুষ তার চাহিদা পূরণের জন্য ক্ষেত্র বানিয়ে নেয়। গ্রামের এক জায়গায় কিছু দোকান পাট তৈরি হয়েছে। সেটাকে কেন্দ্র করে ছোট খাট বাজার বসে। গাঁয়ের মানুষগুলো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাড়া-প্রতিবেশি থেকে কিনে বা ধার নেয়। খুব ছোট থেকে ছোট জিনিসের চাহিদা এভাবেই পূরণ করে তারা। কারো প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া। নিজের প্রয়োজনে অন্যকে কাছে পেতে অভ্যস্ত। তারা অন্যের প্রয়োজনে যেমন এগিয়ে যায় তেমনই অন্যের সুখ-দুখেরও ভাগ নেয়।

কথা বলতে বলতে শুভরা বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে। অন্য তেমন দিকে খেয়াল নেই; নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। পরিচিতদের দেখলে সালাম দিচ্ছে।

বড় ইদুরটাকে আনতে সবাই গিয়েছে দেখছি, বিদ্রুপ করে কথাটা ছেলেটা।
সাজু তার দল নিয়ে বসে রয়েছে দেখলো শুভ। সাজুর জবাবে শুভ কিছু বলে না, না দেখার ভান করে মুচকি হেসে বাড়ির ভিতরে যায়।

রাগে ফুসতে থাকে সাজু। আনমনে বলে, এবার যদি তাদের উচিত শিক্ষা না দিয়েছে তাহলে আমার নাম সাজু না। এমন প্লান করব তারা হাড়ে-হাড়ে টের পাবে।

সাজু আর শুভদের বাড়ি পাশাপাশি। তাদের গ্রুপের সম্পর্ক সাপ বেজীর। তারা সব সময় চেষ্টা করে শুভদের অপদস্ত করতে। শুভরাও কম যায় না সাজুদের নাকানি চুবানি খাইয়ে ছাড়ে।

বাচ্চু সাজুর চাচা। সম্পর্কে চাচা হলেও তারা প্রায় সমবয়সি। রফিক সাজুর বন্ধু। একটু বোকা টাইপের। আরমান তার নানার বাড়ি থেকে পড়ালেখা করে। শুভর গ্রুপে জায়গা না পেয়ে সাজুর গ্রুপে যোগ দিয়েছে।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×