somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোক আবহ ও ঝটিকা ভ্রমন

০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়েক দিন আগে সংবাদটা পেলাম। খালাতো ভাইয়ের বিয়ে। অবশ্য এটাকে সুসংবাদ বলার কোন কারণ নেই। অনুষ্ঠান মানেই বিশাল খরচের বোঝা। খালাতো ভাইয়ের বিয়ে একটু খরচ তো করতেই হবে। না হলে ভাই কিসের। বাড়ি যাওয়ার আগের দিন ভাতিজির মৃত্যুর সংবাদ পেলাম।

ছোট্ট মেয়ে। বয়স বড় জোর দুই বছর। অত্যন্ত চঞ্চল, মিশুক। সবার সাথে গলায় গলায় ভাব। আমাকে খুব একটা দেখেনি। বাড়ি গেলে ঘরে উঁকি দিত। কাছে আসত না। দূর থেকে দেখত। আমি চলে গেলে আমাকে খুঁজতো। আমার রুমে দেখত আমি আছি কিনা।
ভোরে আব্বুর ফোন। ঘুম ভেঙ্গে দেখে অনেকগুলো কল। জানতে পারি, নানু (আম্মুর খালা) মারা গিয়েছে। তাকে ডাকতাম বেজোড়ার নানু। এর এক সপ্তাহ আগে তার আরেক বোন মারা গিয়েছে। বেজোড়ার নানুর বাড়ি গিয়েছে একবার বা দুইবার। অস্পষ্ট স্মৃতি, খণ্ড খণ্ড স্মৃতি। নানুর পানের ঘ্রাণ আমাকে মোহিত করে। দাদুও পান খেতো। তিনি পান চিবুতে পারতেন না ঠিক ভাবে। তাই হাম্বল দিস্তা দিছে ছেঁচে পান খেতো। ছোট্ট বয়সেই আমি ছেঁচা পান চেয়ে নিতাম। এটা নিয়ে পরিবারে অভিযোগ কম ছিল না। এই দুইজনকে দেখেই আমার পান খাওয়ার সূচনা। অবশ্য অনেক বছর আগেই পান খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

দুই

বিকেল ৪টা। অফিস শেষ করে বেরিয়েছি। কমলাপুর থেকে কুমিল্লা যাবো। বাস ছেড়ে দিবে, তাড়াহুড়া করে আসন গাড়লাম। পাশের সিটে বসল ৩০-৩৫ বয়সী ভদ্রলোক। সাথে ছোট্ট ব্যাগ, একটা প্যাকেটে চিপস, বিস্কিট, স্প্রাইড। বাড়ির ছোট সদস্যের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন বোধহয়। তিনি খুব সম্ভব, সারা সপ্তাহ অফিস করে বৃহস্পতিবার বাড়ি যাচ্ছে। শুক্রবার ছুটি কাটিয়ে শনিবার অফিস করবে। কুমিল্লার কর্মজীবীরা এমনটা করে। নারাগঞ্জের কর্মজীবীরা বাড়ি থেকে অফিস করে। কামলাপুর নারায়নগঞ্জ প্লাটফর্মে তাদের ভিড়ই বেশি।

বাস চলছে ঢাকার জ্যামের মধ্যে। সারাদিনের ক্লান্তি চোখে ভর করল। রাজ্যের ঘুম নেমে আসল। অফিস শেষে ঘুমানো আমার অনেক দিনের অভ্যেস। নিয়ম মাফিক বাসের সিট এলিয়ে ঘুমালাম। ঘুম ভাঙ্গল যখন, বাস সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়ায়। সূর্য ডুবছে। আকাশ লালাভ আকার ধারণ করেছে। অন্ধকারে বাস চলছে। আবার চোখ বন্ধ করলাম। ঘুম ভাঙ্গল চান্দিনা এসে। পাশের সিটের ভদ্রলোক চান্দিনা নামবেন। চান্দিনা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব খুব বেশি না। ঘুমালাম না আর। কুমিল্লা ক্যান্টরম্যান্টের আগে কিছু হোটেল, সিএনজি স্টেশন রয়েছে। রাতে রঙ-বেরঙয়ের বাতি হোটের সুন্দর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। হোটেলের পাশেই ধানী জমি। গ্রামীন আবহে শহুরে হোটেল। অদ্ভুত সৌন্দর্য উপভোগ করে ক্যান্টম্যান্ট পার হয়ে আলেখারচর বিশ্বরোড নামলাম। অটোরিক্সায় করে শাসনগাছা।

কুমিল্লাকে রিক্সা বা অটোরিক্সার শহর বললে ভুল হবে না। ৫৩.০৪ বর্গ কিলোমিটার শহরের মতো অন্য কোথায় আছে কিনা সন্দেহ আছে। কুমিল্লার অধিকাংশ জ্যাম এই রিক্সার কারণে। রিক্সা চালকরা যেখানে ফাঁকা পাচ্ছে রিক্সা ঢুকিয়ে দিচ্ছে, বিপরিত লাইনে চলে যাচ্ছে। বেপরোয়া রিক্সা চলাচল। কুমিল্লা শহরে জন্ম হলেও এই শহরে খুব বেশি দিন থাকা হয়নি। ছোট বেলায় ২ ক্লাস পড়েছি। তখন ছিলাম পলিটেকনিকেল কোয়াটারে। সেখানে একটা স্কুল আছে। ফুফুর বাসায় থেকে পড়তাম। দীর্ঘ সময় পর ফুফাতো বোনের বিয়েতে এসেছি। গত দুই বছরে দুইবার এসেছি। আগের তেমন কিছুই মনে নেই। শেষ দুইবারে যা দেখেছি, চিনেছি। পুলিশ লাইন স্কুল হয়ে ফুফুর বাসায় যাবো। হেঁটেই যাচ্ছি। শুরুর রাতে কুমিল্লা দেখার ইচ্ছে। শহরে ঢুকতেই কাবাবের ঘ্রাণ স্বাগত জানালো। একে একে চোখে পড়তে লাগলো বাহারি খাবারের দোকান, মিষ্টির দোকান। খাবারের ঘ্রাণে মোহিত হয়ে হাঁটছি।

কুমিল্লার ইতিহাস অনেক পুরোনো। এই শহরে আগের ধাঁচের বাড়িগুলো এখনো চোখে পড়ে। উঁচু উঁচু দালান। এর মাঝে দোতলা, তেতলা বাড়ি। অনেক পুরোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কয়েক যুগ আগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান।

কুমিল্লার ঐতিহ্য খদ্দরের আড়ৎ। মিষ্টির দোকান। মানুষের চিন্তা বড় অদ্ভুত। কুমিল্লার রসমলাই বিখ্যাত। কুমিল্লায় এসে রসমলাই খেয়ে যায়নি, নিয়ে যায়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। অনেক পুরোনো কয়েকটা দোকান আছে। সবগুলোই ১০০ বছরের পুরোনো দোকান। একটু আগে পরে হবে। তবে মাতৃভান্ডার বেশ পরিচিত। কুমিল্লার রসমলাই মানেই মাতৃভান্ডার। মাতৃভান্ডারের একটি মাত্র দোকান থাকলেও খোদ কুমিল্লায় মাতৃভান্ডার নামে দোকান আছে শ’খানেক। সারা দেশের কথা বাদ দিলাম। এসব দোকানের নামগুলো অদ্ভুত। আদি মাতৃভান্ডার, মায়ের দোয়া মাতৃভান্ডার, মাতৃভান্ডার ছোট করে লেখা আমরাই আসল, আমাদের কোন শাখা নেই। আরও কত নাম। মজার বিষয় হলো এক বাজার বা পাশাপাশি মাতৃভান্ডারের দোকানও কম নেই। ঘুরতে আসা ভ্রমন পিপাসুদের ধোঁকা দিয়ে তাদের দোকান চলে। স্থানীয়রা তাদের থেকে রসমলাই কিনে না এমন না। যাতায়াত যন্ত্রনার জন্যই হয়ত কিনে। কুমিল্লা শহরে কাছে কোথায়ও গেলেও বেশ সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। দায় অহেতুক জ্যামের।

কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের আসল দোকান কুমিল্লার মনোহরপুরে। কান্দিরপার থেকে একটু এগিয়ে। জলযোগ কান্দিরপারে। পরিচিত স্থানীয়দের থেকে জিজ্ঞাস করে দোকানগুলোর ঠিকানা না জেনে কুমিল্লার রসমলাই কিনা নেহায়েত বোকামী।

প্রাচীন শহর হিসেবে কুমিল্লায় দর্শনীয়স্থানের সংখ্যা কম নয়। দুই দিন বাদে দর্শনীয়স্থান না দেখেই ঢাকা ফিরলাম। চিরচেনা শহরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×